(১) মসিহের সাথে যুক্ত থেকে আমি সত্য বলছি- আমি মিথ্যা বলছি না; আল্লাহর রুহের দ্বারা আমার বিবেক নিশ্চিত করছে যে- (২) আমার অন্তরে গভীর দুঃখ ও সীমাহীন যন্ত্রণা রয়েছে।
(৩) কারণ আমি এই কামনা করতে পারতাম যে আমার নিজের লোকদের অর্থাৎ মাংসিক ভাবে আমার স্বজাতিদের খাতিরে নিজে অভিশপ্ত ও মসিহের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হই। (৪,৫) তারা হলো বনি-ইস্রাইল এবং তাদেরকে দত্তক হিসাবে গৃহীত হওয়া, গৌরব, ওয়াদা-চুক্তি, শরিয়ত প্রদান, এবাদত ও প্রতিশ্রুতি; (৫) মহান ব্যক্তিরা ছিলেন তাদেরই পূর্বপুরুষ, শারীরিক দিক থেকে তাদের মধ্য থেকে এসেছেন সেই মসিহ, যিনি সবার ওপরে; যিনি চিরকাল সমস্ত প্রশংসা-ধন্য আল্লাহ। আমিন।
(৬) আল্লাহর কালাম যে ব্যর্থ হয়েছে এমন নয়; কেননা বনি-ইস্রাইলের সবাই প্রকৃত ইস্রাইলের মধ্যে পড়ে না,
(৭) আর হযরত ইব্রাহিম আ. এর সন্তানেরা সবাই তাঁর সত্যিকারের বংশধর নয়; কিন্তু “হযরত ইসহাক আ.এর বংশধরদেরকে তোমার বংশধর তোমার বংশ বলে নামকরণ করা হবে।”
(৮) একথার অর্থ এই, রক্তমাংসে কামনা-বাসনার যাদের জন্ম হয়েছে, তারা আল্লাহর মনোনীত বংশধর, বরং ওয়াদা অনুসারে যাদের জন্ম হয়েছে, তারাই বংশধর হিসেবে গণ্য।
(৯) কারণ প্রতিশ্রুতি তো একথা বলে- “ঠিক এই সময়ে আমি ফিরে আসবো এবং হযরত সায়েরা রা.র একটি ছেলে হবে।” (১০) শুধু তা-ই নয়, হযরত রেবেকা রা. বেলায়ও একই ঘটনা ঘটেছিলো, যখন তিনি আমাদের পূর্বপুরুষ হযরত ইসহাক আ. এর সন্তান গর্ভে ধারণ করেছিলেন। (১১) এমনকি তাদের জন্মের আগে অথবা ভালো-মন্দ কোনোকিছু করার আগেই (যাতে আল্লাহর নির্বাচনের উদ্দেশ্য বহাল থাকে- (১২) কাজের দ্বারা নয় কিন্তু তাঁর আহ্বানের দ্বারা) হযরত রিবিকা রা. কে বলা হয়েছিলো, “বড়োটি ছোটোটির গোলাম হবে।” (১৩) যেমনটি লেখা আছে, “আমি ইয়াকুবকে মহব্বত করেছি, কিন্তু ইশোকে করেছি ঘৃণা।”
(১৪) তাহলে আমরা কী বলবো? আল্লাহ কি অবিচার করেন? কখনোই না! (১৫) তিনি হযরত মুসা আ.কে বলেছিলেন, “যার প্রতি আমার দয়া আছে তাকেই আমি দয়া করবো, এবং যার প্রতি আমার মমতা আছে তাকেই মমতা দেখাবো।” (১৬) সুতরাং এটা কোনো মানুষের ইচ্ছা বা পরিশ্রমের ওপর নির্ভর করে না, কিন্তু যিনি অনুগ্রহ দেখান, সেই আল্লাহর ওপর নির্ভর করে।
(১৭) তাওরাত শরিফে আল্লাহ ফেরাউনকে একথা বলেছিলেন, “আমি তোমাকে এই উদ্দেশ্যে বাদশা বানিয়েছি যেনো তোমার মাধ্যমে আমার ক্ষমতা দেখাই, যেনো সারা দুনিয়ায় আমার নাম প্রচারিত হয়।” (১৮) সুতরাং তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে করুনা করেন, এবং যাকে ইচ্ছা তার মন কঠিন করেন। (১৯) তাহলে তুমি হয়তো আমাকে বলবে, “তাহলে তিনি আবার দোষ ধরেন কেনো? কে তাঁর ইচ্ছায় বাধা দিতে পারে?”
(২০) কিন্তু তুমি আসলে কে- একজন মানুষমাত্র- যে আল্লাহর বিপক্ষে যুক্তি দেখাচ্ছো? কোনো মানুষ যদি কিছু তৈরি করে, তাহলে সেই জিনিস কি তাকে বলতে পারে, “কেনো তুমি আমাকে এরকম তৈরি করেছো?” (২১) কুমারের কি মাটির উপর কোনো অধিকার নেই যে, সে একই মাটির দলা দিয়ে বিশেষ ব্যবহারের জন্য একটি পাত্র এবং সাধারণ ব্যবহারের জন্য আরেকটি পাত্র তৈরি করবে?
(২২) আল্লাহ যদি তাঁর রাগ ও ক্ষমতা দেখাবার ইচ্ছায়, যারা তাঁর রাগের ও শাস্তির অধীন, তাদেরকে অসিম ধৈর্যের সাথে সহ্য করেন, তাহলে তাতে সমস্যা কোথায়; (২৩, ২৪) এবং শুধু ইহুদিদের মধ্য থেকে নয়, বরং অইহুদিদের মধ্য থেকেও, আমাদেরকেসহ তিনি যাদেরকে আহ্বান করেছেন, যাদেরকে তিনি তাঁর মহিমার জন্য অনেক অগেই প্রস্তুত করেছেন, সেই সব রহমতের পাত্রদেরকে তাঁর মহিমার প্রাচুর্য দেখাবার জন্য তিনি যদি তা করেন, তাতেইবা সমস্যা কোথায়?
(২৫) নবি হযরত হোশেয়া আ. এর কিতাবে আল্লাহ যেমন বলেছেন, “যারা আমার লোক ছিলো না, আমি তাদেরকে ‘আমার লোক’ বলে ডাকবো, এবং যে আমার প্রিয়তমা ছিলো না, তাকে আমি ‘প্রিয়তমা’ বলে ডাকবো।” (২৬) “এবং যে-জায়গায় তাদেরকে বলা হয়েছিলো, ‘তোমরা আমার লোক নও,’ সেখানেই তাদেরকে চিরন্তন আল্লাহর সান্নিধ্যপ্রাপ্ত বা সন্তান বলে ডাকা হবে।” (২৭) এবং হযরত ইসাইয়া আ. ইস্রাইলের বিষয়ে চিৎকার করে বলেছিলেন, “বনি-ইস্রাইলের সংখ্যা সাগরের বালুকণার মতো হওয়ার পরেও তাদের অল্পই নাজাত পাবে; (২৮) কারণ আল্লাহ দুনিয়াতে শীঘ্রই তাঁর বিচার এবং চূড়ান্তভাবে তাঁর দণ্ডাদেশ কার্যকর করবেন।”
(২৯) হযরত ইসাইয়া আ. যেমন আগেই বলেছিলেন, “সর্বশক্তিমান আল্লাহ যদি আমাদের জন্য কিছু লোককে অবশিষ্ট না রাখতেন, তাহলে আমাদের অবস্থা সদোম ও গমোরার মতো হতো।” (৩০) তাহলে আমরা কী বলবো? অইহুদিরা, যারা ধার্মিকতার জন্য চেষ্টাও করেনি, তারা তা পেয়েছে; অর্থাৎ ইমানের মধ্য দিয়ে ধার্মিকতা লাভ করেছে; (৩১) কিন্তু বনি-ইস্রাইল, যারা সেই ধার্মিকতার জন্য চেষ্টা করেছে, যার ভিত্তি হলো শরিয়ত, কিন্তু সেই শরিয়তও তারা পূর্ণরূপে পালন করতে সক্ষম হয়নি।
(৩২) কেনো সক্ষম হয়নি? কারণ তারা ইমানের ওপর ভিত্তি করেনি বরং এমনভাবে চেষ্টা করেছে যেনো তা কাজের মাধ্যমে অর্জন করা যায়। তারা হোঁচট খাবার পাথরে হোঁচট খেয়েছে, (৩৩) যেমন লেখা আছে, “দেখো, আমি সিয়োনে এমন একটি পাথর স্থাপন করছি, যাতে মানুষ হোঁচট খাবে; এমন একটি পাথর যা তাদের হোঁচট খাওয়াবে, এবং যে কেউ তাঁর ওপর ইমান আনবে, সে লজ্জিত হবে না।”
Facebook
WhatsApp
Telegram
Email
রোমীয়: রুকু – ১
১:১ আমি পৌল, হযরত ইসা মসিহের গোলাম, হাওয়ারি হওয়ার জন্য আমাকে ডাকা হয়েছে। আল্লাহর সুখবর প্রচারের জন্য আমাকে আলাদা করা ...
রোমীয়: রুকু – ২
(২:১) অতএব, তুমি যে-ই হও না কেনো, তুমি যখন অন্যের বিচার করো, তখন তোমার কোনো অজুহাত নেই; কারণ অন্যের বিচারের ...
রোমীয়: রুকু – ৩
(৩:১) তাহলে একজন ইহুদির কি সুবিধা আছে? বা খত্না করানোর কি মূল্য আছে? (২) সবদিক দিয়েই অনেক লাভ আছে। প্রথমত ...
রোমীয়: রুকু – ৪
(৪:১) তাহলে দৈহিক সম্পর্কের দিক থেকে আমাদের পূর্বপুরুষ হযরত ইব্রাহিম আ. সম্বন্ধে আমরা কী বলবো? তিনি কী পেয়েছিলেন? (২) হযরত ...
রোমীয়: রুকু – ৫
(১) অতএব, ইমানের দ্বারা ধার্মিক বলে গণ্য হওয়ায়, আমাদের নেতা হযরত ইসা মসিহের মাধ্যমে আল্লাহর সাথে আমাদের শান্তি আছে, (২) ...
রোমীয়: রুকু – ৬
(৬:১) তাহলে আমরা কী বলবো? অনুগ্রহ যাতে উপচে পড়ে সেজন্য আমরা কি গুনাহ করতেই থাকবো? (২) কখনোই না! আমরা যারা ...
রোমীয়: রুকু – ৭
(৭:১) প্রিয় ভাই ও বোনেরা, তোমরা কি জানো না, কারণ আমি তাদের সাথে কথা বলছি, যারা শরিয়ত জানে একজন মানুষ ...
রোমীয়: রুকু – ৮
(৮:১) অতএব, যারা মসিহ ইসাকে গ্রহণ করেছে, তাদের ওপর আর কোনো শাস্তি নেই। (২) কারণ হযরত ইসা মসিহের জীবন দায়ী ...
রোমীয়: রুকু – ৯
(১) মসিহের সাথে যুক্ত থেকে আমি সত্য বলছি- আমি মিথ্যা বলছি না; আল্লাহর রুহের দ্বারা আমার বিবেক নিশ্চিত করছে যে- ...
রোমীয়: রুকু – ১০
(১) ভাই ও বোনেরা, তাদের জন্য আমার অন্তরের আকাঙ্ক্ষা ও আল্লাহর কাছে মোনাজাত এই যে, তারা যেনো নাজাত পায়।২) তাদের ...
রোমীয়: রুকু – ১১
(১) তাহলে আমার প্রশ্ন, আল্লাহ কি তাঁর লোকদেরকে পরিত্যাগ করেছেন? কখনোই না! আমি নিজে একজন ইস্রাইলীয়, হযরত ইব্রাহিম আ.র বংশধর, ...
রোমীয়: রুকু – ১২
(১) সুতরাং, ভাই ও বোনেরা, আল্লাহর অপার অনুগ্রহের জন্য, আমি তোমাদেরকে বিনীতভাবে অনুরোধ করছি, তোমরা তোমাদের শরীরকে আল্লাহর কাছে কবুল ...
রোমীয়: রুকু – ১৩
(১৩:১) প্রত্যেক ব্যাক্তি শাসনকর্তাদের অধীনতা মেনে চলুক; কারণ এমন কোনো কর্তৃত্ব নেই, যা আল্লাহর কাছ থেকে আসে না, এবং প্রচলিত ...
রোমীয়: রুকু – ১৪
(১৪:১) যাদের ইমান দুর্বল, তাদেরকে সাদরে গ্রহণ করো, কিন্তু অভিমত বা মতবাদ নিয়ে ঝগড়া করার জন্য নয়। (২) কেউ কেউ ...
রোমীয়: রুকু – ১৫
(১) আমরা যারা সবল, আমাদের উচিত নিজেদের সন্তুষ্ট না করে বরং দুর্বলদের দুর্বলতাগুলো সহ্য করা। (২) আমাদের প্রত্যেকের উচিত আমাদেও ...
রোমীয়: রুকু – ১৬
(১) আমি তোমাদের কাছে আমাদের বোন ফৈবির প্রশংসা করছি, তিনি কিংক্রিয়ার ইমানদার দলের একজন খাদেম, (২) তাই আল্লাহর দরবেশদের যেভাবে ...
















