রোমীয়: রুকু – ৮

214465
Total
Visitors
(৮:১) অতএব, যারা মসিহ ইসাকে গ্রহণ করেছে, তাদের ওপর আর কোনো শাস্তি নেই। (২) কারণ হযরত ইসা মসিহের জীবন দায়ী রুহানি শরিয়ত তোমাদেরকে মৃত্যু ও গুনাহের শরিয়ত থেকে মুক্ত করেছে।

(৩) শরীরের দুর্বলতার কারণে শরিয়তের আইন-কানুন যা করতে পারেনি, আল্লাহ নিজে তা করেছেন: তিনি তাঁর একান্ত প্রিয় মনোনীতজনকে গুনাহময় শরীরের সাদৃশ্যে এবং গুনাহের মোকাবেলা করার জন্যে পাঠিয়ে দিয়ে শরীরের মাঝেই গুনাহকে ধ্বংস করেছেন, (৪) যেনো আমরা যারা দেহের অধীনে নই বরং রুহের অধীনে চলি, সেই আমাদের মাঝে শরিয়তের আইন-কানুনের ন্যায্য দাবিগুলো পূর্ণতা লাভ করে।

(৫) কারণ যারা শারীরিক কামনা-বাসনা অনুসারে জীবন-যাপন করে, তারা শারীরিক বিষয়গুলোর প্রতি মনোযোগ দেয়, কিন্তু যারা রুহের আকাঙ্ক্ষা অনুসারে জীবন-যাপন করে, তারা রুহানি বিষয়গুলোর প্রতি মনোযোগ দেয়। (৬) শারীরিক আকাঙ্ক্ষার প্রতি মনোযোগী হওয়ার মানে মৃত্যু, কিন্তু রুহানি আকাঙ্ক্ষার প্রতি মনোযোগী হওয়ার মানে জীবন ও শান্তি।

(৭) এজন্য, যে মন শারীরিক কামনা-বাসনার উপর স্থির থাকে, সেটি আল্লাহর প্রতি শত্রুভাবাপন্ন; এটি আল্লাহর শরিয়তের আইন-কানুনের অধীনতা স্বীকার করে না - আসলে এটি তা করতে পারে না। (৮) এবং যারা শারীরিক বা মাংসে আছে, তারা আল্লাহকে খুশী করতে পারে না।

(৯) কিন্তু তোমরা শারীরে বা মাংসে নও; তোমরা রুহে আছো; কেননা আল্লাহর রুহ তোমাদের মধ্যে বাস করেন। মসিহের রুহ যার মধ্যে নেই, সে তাঁর নয়।

(১০) কিন্তু যদি মসিহ তোমাদের অন্তরে থাকেন, তাহলে গুনাহের জন্য শরীর মৃত হলেও, ধার্মিকতার জন্য রুহ জীবিত। (১১) হযরত ইসা আ.কে যিনি মৃত থেকে জীবিত করে তুলেছেন, তাঁর রুহ যদি তোমাদের অন্তরে বাস করেন, তাহলে মসিহকে যিনি মৃতদের থেকে জীবিত করে তুলেছেন, তিনিই তোমাদের মধ্যে বাসকারী তাঁর রুহের দ্বারা তোমাদের এই মরণশীল দেহকেও জীবিত করবেন।

(১২) সুতরাং, প্রিয় ভাই ও বোনেরা, আমরা ঋণী; তবে আমাদের সেই ঋণ শারীরিক কামনা-বাসনা অনুসারে জীবন-যাপন করার জন্য শারীরি বা মাংসের কাছে নয়- (১৩) কারণ যদি শারীরিক চাহিদার বশে জীবন-যাপন করো, তাহলে তোমাদের মৃত্যু হবে; কিন্তু যদি রুহের দ্বারা শারীরিক কামনা-বাসনার মৃত্যু ঘটাও, তাহলে তোমরা জীবিত থাকবে।  (১৪) কারণ, যারা আল্লাহর রুহের দ্বারা পরিচালিত হয়, তারা সবাই আল্লাহর সন্তান।

(১৫) কারণ তোমরা তো গোলামির রুহকে পাওনি যে তোমরা ভয় পাবে, কিন্তু তোমরা দত্তক সন্তানের রুহুকে পেয়েছো। যখন আমরা “আব্বা! পিতা!” বলে সজোরে ডাক দেই, (১৬) তখন এই রুহ-ই আমাদের রুহের সাথে মিলে এই সাক্ষ্য দেয় যে, আমরা আল্লাহর সন্তান।

(১৭) আর আমরা যদি সন্তান হই, তাহলে আমরা উত্তরাধিকারী, আল্লাহর উত্তরাধিকারী এবং মসিহের সাথে সহঅধিকারী- যদি বাস্তবিকপক্ষে আমরা তাঁর সাথে দুঃখভোগ করে থাকি, যেনো তাঁর সাথে মহিমান্বিতও হই।

(১৮) আমি মনে করি, যে-মহিমা আমাদের কাছে প্রকাশ করা হবে, তার সাথে বর্তমান সময়ের দুঃখ-কষ্ট তুলনার যোগ্যই নয়। (১৯) কারণ সমস্ত সৃষ্টি আল্লাহর সন্তানদের প্রকাশিত হওয়ার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে; (২০) কারণ সৃষ্টিকে নিষ্ফলতার অধীন করা হয়েছে-তবে তার নিজের ইচ্ছায় নয় বরং যিনি এটিকে অধীন করেছেন, তাঁরই ইচ্ছায়; এই আশায় যে, (২১) সৃষ্টি নিজেই তার ধ্বংসের গোলামি থেকে মুক্ত হবে এবং আল্লাহর সন্তানেরা মহিমাময় স্বাধীনতা লাভ করবে।

(২২) আমরা জানি যে, সমস্ত সৃষ্টি এখনো পর্যন্ত প্রসব-বেদনায় আর্তনাদ করছে; (২৩) শুধু সৃষ্টি নয় কিন্তু আমরা নিজেরাও, যাদের রয়েছে রুহের প্রথম ফল, আমরাও অন্তরে আর্তনাদ করছি, দত্তক হিসাবে গৃহীত হবার জন্য, অর্থাৎ আমাদেও দেহের মুক্তির জন্য অপেক্ষা করছি।

(২৪) কারণ আশায় আমরা নাজাত পেয়েছি। যা দেখা যায় তা তো আশা নয়। কেননা যা দেখা যায় তার জন্য কে আশা করে? (২৫) কিন্তু যদি আমরা এমন কিছুর আশা করি যা আমরা দেখতে পাই না, তাহলে ধৈর্যের সাথে আমরা তার জন্য অপেক্ষা করি ।

(২৬) সেভাবে আমাদের দুর্বলতার মাঝে রুহ আমাদেরকে সাহায্য করেন; কারণ কীভাবে মোনাজাত করা উচিত তা আমরা জানি না, কিন্তু ঐ একই রুহ ভাষায় প্রকাশ করা অসম্ভব এমন গভীর আকুলতার সাথে মিনতি করেন। (২৭) এবং আল্লাহ, যিনি অন্তর অনুসন্ধান করেন, তিনি জানেন রুহের ইচ্ছা কী, কারণ রুহ আল্লাহর ইচ্ছা অনুসারে মুমিনদের পক্ষে মিনতি করেন।

(২৮) আমরা জানি যে, আল্লাহ তাঁর পরিকল্পনা অনুসারে যাদেরকে ডেকেছেন, এবং যারা আল্লাহকে মহব্বত করে, তাদের কল্যাণের জন্য সবকিছু একসাথে কাজ করে। (২৯) কারণ তিনি যাদের আগে থেকেই জানতেন, তাদেরকে তাঁর একান্ত প্রিয় মনোনীতজনের সাদৃশ্য হওয়ার জন্য আগেই মনোনীত করেছিলেন, যেনো এক বিরাট পরিবারের মধ্যে তিনিই জ্যেষ্ঠ হতে পারেন।

(৩০) তিনি যাদের আগেই মনোনীত করেছিলেন, তাদেরকেও তিনি আহ্বান করলেন; আর যাদের আহ্বান করলেন, তাদের তিনি ধার্মিকও করলেন; এবং যাদের তিনি ধার্মিকতাপূর্ণ করলেন, তিনি তাদের মহিমান্বিতও করলেন।

(৩১) তাহলে এসব বিষয়ে আমরা কী বলবো? যদি আল্লাহ আমাদের পক্ষে থাকেন, তাহলে আমাদের বিপক্ষে কে? (৩২) যিনি তাঁর একান্ত প্রিয় মনোনীতজনকে পর্যন্ত রেহাই দিলেন না, বরং আমাদের সবার জন্য তাঁকে দান করে দিলেন, তিনি কি তাঁর সাথে সাথে অন্যান্য সবকিছু আমাদেরকে দেবেন না?

(৩৩) আল্লাহ যাদের বেছে নিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে কে অভিযোগ আনবে? আল্লাহ নিজেই তাদের ধার্মিক বলে গ্রহণ করেছেন।  (৩৪) কে দোষী সাব্যস্ত করবে? মসিহ হযরত ইসা আ., যিনি জীবন দিয়ছেেিলন; হ্যাঁ, যাকে মৃত্যু থেকে জীবিত করে তুলা হয়েছে; তিনিই আল্লাহর ডানপাশে আছেন, যিনি আমাদের জন্য অনুরোধ করেন।

(৩৫) মসিহের মহব্বত থেকে কে আমাদেরকে আলাদা করবে? কি কষ্টকর পরিস্থিতি, কি নিদারুণ যন্ত্রণা, কি নির্যাতন, কি দুর্ভিক্ষ, কি কাপড়-চোপড়ের অভাব, কি ভয়ানক বিপদ কিংবা কি তরবারি? (৩৬) যেমন একথা লেখা আছে, “তোমার জন্য প্রতিদিন আমরা নিহত হচ্ছি; জবাই করার ভেড়ার মতোই আমাদের মনে করা হচ্ছে।”  (৩৭) যিনি আমাদের মহব্বত করেন, তাঁরই মাধ্যমে আমরা সমস্ত বিষয়ে বিজয়ী থেকেও বেশি বিজয়ী।

(৩৮) আমি একথা নিশ্চিতভাবে জানি যে, মৃত্যু কিংবা জীবন, কিংবা ফেরেস্তা, কিংবা শাসনকর্তা কিংবা বর্তমানের কোনো কিছু কিংবা ভবিষ্যতের কোনো কিছু, কিংবা ক্ষমতা, (৩৯) কিংবা উচ্চতা কিংবা গভীরতা কিংবা সমস্ত সৃষ্টির মধ্যে অন্য কোনো কিছুই হযরত ইসা মসিহের মাঝে বিদ্যমান আল্লাহর যে-মহব্বত, তা থেকে আমাদেরকে আলাদা করতে পারবে না।
Facebook
WhatsApp
Telegram
Email
রোমীয়: রুকু - ১

রোমীয়: রুকু – ১

১:১ আমি পৌল, হযরত ইসা মসিহের গোলাম, হাওয়ারি হওয়ার জন্য আমাকে ডাকা হয়েছে। আল্লাহর সুখবর প্রচারের জন্য আমাকে আলাদা করা ...
রোমীয়: রুকু - ২

রোমীয়: রুকু – ২

(২:১) অতএব, তুমি যে-ই হও না কেনো, তুমি যখন অন্যের বিচার করো, তখন তোমার কোনো অজুহাত নেই; কারণ অন্যের বিচারের ...
রোমীয়: রুকু - ৩

রোমীয়: রুকু – ৩

(৩:১) তাহলে একজন ইহুদির কি সুবিধা আছে? বা খত্‌না করানোর কি মূল্য আছে? (২) সবদিক দিয়েই অনেক লাভ আছে। প্রথমত ...
রোমীয়: রুকু - ৪

রোমীয়: রুকু – ৪

(৪:১) তাহলে দৈহিক সম্পর্কের দিক থেকে আমাদের পূর্বপুরুষ হযরত ইব্রাহিম আ. সম্বন্ধে আমরা কী বলবো? তিনি কী পেয়েছিলেন? (২) হযরত ...
রোমীয়: রুকু - ৫

রোমীয়: রুকু – ৫

(১) অতএব, ইমানের দ্বারা ধার্মিক বলে গণ্য হওয়ায়, আমাদের নেতা হযরত ইসা মসিহের মাধ্যমে আল্লাহর সাথে আমাদের শান্তি আছে, (২) ...
রোমীয়: রুকু - ৬

রোমীয়: রুকু – ৬

(৬:১) তাহলে আমরা কী বলবো? অনুগ্রহ যাতে উপচে পড়ে সেজন্য আমরা কি গুনাহ করতেই থাকবো? (২) কখনোই না! আমরা যারা ...
রোমীয়: রুকু - ৭

রোমীয়: রুকু – ৭

(৭:১) প্রিয় ভাই ও বোনেরা, তোমরা কি জানো না, কারণ আমি তাদের সাথে কথা বলছি, যারা শরিয়ত জানে একজন মানুষ ...
রোমীয়: রুকু - ৮

রোমীয়: রুকু – ৮

(৮:১) অতএব, যারা মসিহ ইসাকে গ্রহণ করেছে, তাদের ওপর আর কোনো শাস্তি নেই। (২) কারণ হযরত ইসা মসিহের জীবন দায়ী ...
রোমীয়: রুকু - ৯

রোমীয়: রুকু – ৯

(১) মসিহের সাথে যুক্ত থেকে আমি সত্য বলছি- আমি মিথ্যা বলছি না; আল্লাহর রুহের দ্বারা আমার বিবেক নিশ্চিত করছে যে- ...
রোমীয়: রুকু - ১০

রোমীয়: রুকু – ১০

(১) ভাই ও বোনেরা, তাদের জন্য আমার অন্তরের আকাঙ্ক্ষা ও আল্লাহর কাছে মোনাজাত এই যে, তারা যেনো নাজাত পায়।২) তাদের ...
রোমীয়: রুকু - ১১

রোমীয়: রুকু – ১১

(১) তাহলে আমার প্রশ্ন, আল্লাহ কি তাঁর লোকদেরকে পরিত্যাগ করেছেন? কখনোই না! আমি নিজে একজন ইস্রাইলীয়, হযরত ইব্রাহিম আ.র বংশধর, ...
রোমীয়: রুকু - ১২

রোমীয়: রুকু – ১২

(১) সুতরাং, ভাই ও বোনেরা, আল্লাহর অপার অনুগ্রহের জন্য, আমি তোমাদেরকে বিনীতভাবে অনুরোধ করছি, তোমরা তোমাদের শরীরকে আল্লাহর কাছে কবুল ...
রোমীয়: রুকু - ১৩

রোমীয়: রুকু – ১৩

(১৩:১) প্রত্যেক ব্যাক্তি শাসনকর্তাদের অধীনতা মেনে চলুক; কারণ এমন কোনো কর্তৃত্ব নেই, যা আল্লাহর কাছ থেকে আসে না, এবং প্রচলিত ...
রোমীয়: রুকু - ১৪

রোমীয়: রুকু – ১৪

(১৪:১) যাদের ইমান দুর্বল, তাদেরকে সাদরে গ্রহণ করো, কিন্তু অভিমত বা মতবাদ নিয়ে ঝগড়া করার জন্য নয়। (২) কেউ কেউ ...
রোমীয়: রুকু - ১৫

রোমীয়: রুকু – ১৫

(১) আমরা যারা সবল, আমাদের উচিত নিজেদের সন্তুষ্ট না করে বরং দুর্বলদের দুর্বলতাগুলো সহ্য করা। (২) আমাদের প্রত্যেকের উচিত আমাদেও ...
রোমীয়: রুকু - ১৬

রোমীয়: রুকু – ১৬

(১) আমি তোমাদের কাছে আমাদের বোন ফৈবির প্রশংসা করছি, তিনি কিংক্রিয়ার ইমানদার দলের একজন খাদেম, (২) তাই আল্লাহর দরবেশদের যেভাবে ...