মামলুকাতুল্লাহ: রুকু – ৩ ও ৪

75735
Total
Visitors
অডিও শুনতে এখানে ক্লিক করুন

রুকু - ৩

১ওই সময়ে হযরত ইয়াহিয়া আ. ইহুদিয়ার মরুপ্রান্তরে এসে একথা প্রচার করতে লাগলেন- ২“তওবা করো, কারণ বেহেস্তি রাজ্য কাছে এসে গেছে।” ৩ইনি সেই লোক, যাঁর সম্পর্কে নবি হযরত ইসাইয়া বলেছেন- “মরুপ্রান্তরে একজনের কণ্ঠস্বর ঘোষণা করছে- ‘তোমরা মালিকের পথ প্রস্তুত করো, তাঁর রাস্তা সোজা করো।’”

৪হযরত ইয়াহিয়া আ. উটের লোমের কাপড় পরতেন। তার কোমরে থাকতো চামড়ার কোমরবন্ধ। তিনি ফড়িং এবং বনমধু খেতেন। ৫তখন জেরুসালেম, সমগ্র ইহুদিয়া এবং জর্দান নদীর আশেপাশের সমস্ত লোক তার কাছে যেতে লাগলো এবং ৬গুনাহ স্বীকার করে জর্দান নদীতে তার কাছে বায়াত নিতে লাগলো।

৭কিন্তু তিনি যখন দেখলেন যে, অনেক ফরিসি ও সদ্দুকি বায়াত নেবার জন্য আসছেন, তখন তিনি তাদের বললেন, “সাপের বংশধরেরা! যে-গজব আসছে তা থেকে পালাবার জন্য কে তোমাদের সতর্ক করলো? ৮তওবার উপযুক্ত ফল দেখাও।

৯মনে মনে একথা বলতে পারার কথা চিন্তাও করো না যে, ‘ হযরত ইব্রাহিম আ. আমাদের পূর্বপুরুষ’; কেননা আমি তোমাদের বলছি, আল্লাহ এই পাথরগুলো থেকেও হযরত ইব্রাহিমের বংশধর সৃষ্টি করতে পারেন। ১০গাছের গোড়াতে কুড়াল লাগানোই আছে; যে-গাছে ভালো ফল ধরে না তা কেটে আগুনে ফেলে দেয়া হবে। ১১তওবা করেছো বলে আমি তোমাদের পানিতে বায়াত দিচ্ছি কিন্তু আমার পরে যিনি আসছেন, তিনি আমার চেয়ে মহান। আমি তাঁর জুতা বইবারও যোগ্য নই। তিনি আল্লাহর রুহ ও আগুনে তোমাদের বায়াত দেবেন। ১২তাঁর কুলা তাঁর হাতেই আছে এবং তাঁর ফসল মাড়ানোর জায়গা তিনি সাফ করবেন। তিনি তাঁর গম গোলায় জমা করবেন এবং যে-আগুন কখনো নেভে না, সেই আগুনে তুষ পুড়িয়ে ফেলবেন।”

১৩অতঃপর হযরত ইসা আ. হযরত ইয়াহিয়া আ.র কাছে বায়াত নেবার জন্য গালিল থেকে জর্দানে এলেন। ১৪ হযরত ইয়াহিয়া আ. তাঁকে বিরত রাখতে চেষ্টা করলেন; বললেন, “আমারই বরং আপনার কাছে বায়াত নেয়া দরকার অথচ আপনি কিনা এসেছেন আমার কাছে?” ১৫কিন্তু হযরত ইসা আ. তাকে বললেন, “এবার এরকমই হোক; কারণ আমাদের পক্ষে এভাবেই দীনের সমস্ত দাবি পূরণ করা উচিত।” তখন তিনি রাজি হলেন। ১৬বায়াত নেবার পর হযরত ইসা আ. পানি থেকে উঠে আসার সাথে সাথেই তাঁর সামনে আসমান খুলে গেলো আর তিনি দেখলেন, আল্লাহর রুহ কবুতরের মতো নেমে এসে তাঁর ওপরে বসছেন। ১৭এবং বেহেস্ত থেকে একটি কণ্ঠস্বর বললেন, “এ-ই আমার একান্ত প্রিয় মনোনীতজন, তার ওপর আমি খুবই সন্তুষ্ট।”

রুকু - ৪

১অতঃপর ইবলিসের দ্বারা পরীক্ষিত হওয়ার জন্য হযরত ইসা আ.কে আল্লাহর রুহের পরিচালনায় মরুপ্রান্তরে যেতে হলো। ২চল্লিশ দিন ও চল্লিশ রাত রোজা রাখার পর তাঁর খিদে পেলো। ৩তখন ইবলিস এসে তাঁকে বললো, “তুমি যদি আল্লাহর একান্ত প্রিয় মনোনীতজন হও, তাহলে এই পাথরগুলোকে রুটি হয়ে যেতে বলো।” ৪কিন্তু উত্তরে তিনি বললেন, একথা লেখা আছে- ‘মানুষ শুধু রুটিতেই বাঁচে না কিন্তু আল্লাহর মুখের প্রত্যেকটি কালামের দ্বারাই বাঁচে।’”

৫তখন ইবলিস তাঁকে পবিত্র শহরে নিয়ে গেলো এবং বায়তুল-মোকাদ্দসের চূড়ার ওপর দাঁড় করিয়ে তাঁকে বললো, ৬“তুমি যদি আল্লাহর একান্ত প্রিয় মনোনীতজন হও, তাহলে লাফ দিয়ে নিচে পড়ো। কারণ লেখা আছে- ‘তিনি তাঁর ফেরেস্তাদের তোমার বিষয়ে হুকুম দেবেন,’ এবং ‘তারা তাদের হাতে করে তোমাকে তুলে ধরবেন, যাতে তোমার পায়ে পাথরের আঘাত না লাগে।’” ৭ হযরত ইসা আ. তাকে বললেন, “আবার একথাও লেখা আছে- ‘তোমার আল্লাহ মালিককে পরীক্ষা করবে না।’”

৮ইবলিস আবার তাঁকে খুব উঁচু একটি পাহাড়ে নিয়ে গেলো, দুনিয়ার সব রাজ্য ও তার জাঁকজমক দেখালো এবং তাঁকে বললো, ৯“তুমি যদি নতজানু হয়ে আমাকে সেজদা করো, তাহলে এই সবই আমি তোমাকে দেবো।” ১০হযরত ইসা আ. তাকে বললেন, “দূর হ শয়তান! কারণ একথা লেখা আছে- ‘তুমি তোমার মালিক আল্লাহকেই সেজদা করবে এবং একমাত্র তাঁরই এবাদত করবে।’”

১১অতঃপর ইবলিস তাঁকে ছেড়ে চলে গেলো। আর তখনই ফেরেস্তারা এসে তাঁর সেবাযত্ন করতে লাগলেন।

১২তারপর হযরত ইসা আ. যখন শুনলেন যে, হযরত ইয়াহিয়া আ.কে জেলখানায় বন্দি করা হয়েছে, তখন তিনি গালিলে চলে গেলেন। ১৩তিনি নাসরত ছেড়ে লেকের পাড়ে জাবুলুন ও নাপ্তালি এলাকায় অবস্থিত কফরনাহুমে গিয়ে বাস করতে লাগলেন। ১৪এতে নবি হযরত ইসাইয়ার মাধ্যমে যেকথা বলা হয়েছিলো তা পূর্র্ণ হলো- ১৫“জাবুলুন দেশ ও নাপ্তালি দেশ, সমুদ্র-পথ, জর্দানের ওপার, অইহুদিদের গালিল, ১৬যে-জাতি অন্ধকারে ছিলো, তারা মহা-আলো দেখতে পেলো; এবং যারা মৃত্যুর দেশে ও ছায়ায় ছিলো, তাদের কাছে আলো দেখা দিলো।”

১৭সেই সময় থেকে হযরত ইসা আ. এই বলে প্রচার করতে শুরু করলেন, “তওবা করো, কারণ আল্লাহর রাজ্য কাছে এসে গেছে।”

১৮তিনি গালিল লেকের পাড় দিয়ে যাবার সময় দুই ভাইকে অর্থাৎ সাফওয়ান, যাকে পিতর বলা হয় এবং তার ভাই আন্দ্রিয়ানকে দেখতে পেলেন; তারা লেকে জাল ফেলছিলেন, কারণ তারা ছিলেন জেলে।

১৯তিনি তাদের বললেন, “আমাকে অনুসরণ করো, আমি তোমাদের মানুষ-ধরা জেলে করবো।” ২০তখনই তারা তাদের জাল ফেলে রেখে তাঁকে অনুসরণ করলেন।

২১সেই জায়গা থেকে কিছু দূর গেলে পর তিনি অন্য দুই ভাইকে অর্থাৎ হযরত ইয়াকুব ইবনে জাবিদি ও তার ভাই হযরত ইউহোন্না রা.কে দেখতে পেলেন। তারা তাদের পিতা জাবিদির সাথে নৌকায় বসে জাল মেরামত করছিলেন। তিনি তাদের ডাক দিলেন। ২২তারা তখনই তাদের পিতাকে ও নৌকা ছেড়ে তাঁকে অনুসরণ করলেন।

২৩হযরত ইসা আ. গালিলের সব জায়গায় ঘুরে ঘুরে তাদের বিভিন্ন সিনাগোগে গিয়ে শিক্ষা দিতে লাগলেন। আল্লাহর রাজ্যের সুখবর প্রচার এবং লোকদের সবরকম রোগ ও অসুস্থতা থেকে সুস্থ করতে লাগলেন। ২৪এর ফলে গোটা সিরিয়ায় তাঁর সুনাম ছড়িয়ে পড়লো। তারা সব রোগীদের- যারা নানা রকম রোগে ও ভীষণ যন্ত্রণায় কষ্ট পাচ্ছিলো, যাদের ভূতে ধরেছিলো এবং যারা মৃগী ও অবশরোগে ভুগছিলো- তাঁর কাছে নিয়ে এলো এবং তিনি তাদের সুস্থ করলেন। ২৫গালিল, দিকাপলি, জেরুসালেম, ইহুদিয়া এবং জর্দানের অন্য পাড়ের অনেক মানুষ তাঁর পেছনে পেছনে যেতে লাগলো।

Facebook
WhatsApp
Telegram
Email
মামলুকাতুল্লাহ: রুকু ১ ও ২
রুকু ১ ১হযরত ইসা মসিহের বংশতালিকা- হযরত ইসা মসিহ হযরত দাউদ আ.র বংশধর এবং হযরত দাউদ আ. হযরত ইব্রাহিম আ.র ...

মামলুকাতুল্লাহ: রুকু ১ ও ২

/
মামলুকাতুল্লাহ: রুকু - ৩ ও ৪
রুকু - ৩ ১ওই সময়ে হযরত ইয়াহিয়া আ. ইহুদিয়ার মরুপ্রান্তরে এসে একথা প্রচার করতে লাগলেন- ২“তওবা করো, কারণ বেহেস্তি রাজ্য ...

মামলুকাতুল্লাহ: রুকু – ৩ ও ৪

/
মামলুকাতুল্লাহ: রুকু - ৫ ও ৬
রুকু ৫ ১জনতার ঢল দেখে হযরত ইসা আ. পাহাড়ের ওপর উঠলেন। তিনি বসার পর তাঁর হাওয়ারিরা তাঁর কাছে এলেন। ২অতঃপর ...

মামলুকাতুল্লাহ: রুকু – ৫ ও ৬

/
মামলুকাতুল্লাহ: রুকু – ৭ ও ৮
রুকু ৭ ১বিচার করো না, তাহলে তোমরাও বিচারের মুখোমুখি হবে না। কারণ যেভাবে তোমরা বিচার করো, সেভাবেই তোমাদের বিচার করা ...

মামলুকাতুল্লাহ: রুকু – ৭ ও ৮

/
মামলুকাতুল্লাহ: রুকু – ৯ ও ১০
রুকু ৯ ১অতঃপর তিনি নৌকায় উঠে লেক পাড়ি দিয়ে তাঁর নিজের শহরে এলেন। ২তখনই কিছু লোক বিছানায় শোয়ানো এক অবশরোগীকে ...

মামলুকাতুল্লাহ: রুকু – ৯ ও ১০

/
মামলুকাতুল্লাহ: রুকু - ১১ ও ১২
রুকু ১১ ১অতঃপর হযরত ইসা আ. তাঁর বারোজন হাওয়ারিকে হুকুম দেয়া শেষ করে নিজে গ্রামে গ্রামে শিক্ষা দিতে ও প্রচার ...

মামলুকাতুল্লাহ: রুকু – ১১ ও ১২

/
মামলুকাতুল্লাহ: রুকু ১৩ ও ১৪
রুকু ১৩ ১ওই দিন হযরত ইসা আ. ঘর থেকে বেরিয়ে লেকের পাড়ে গিয়ে বসলেন। ২তাঁর কাছে এতো লোক এসে জড়ো ...

মামলুকাতুল্লাহ: রুকু ১৩ ও ১৪

/
মামলুকাতুল্লাহ: রুকু ১৫ ও ১৬
রুকু ১৫ ১অতঃপর জেরুসালেম থেকে কয়েকজন ফরিসি ও আলিম হযরত ইসা আ.র কাছে এসে বললেন, ২“বুজুর্গদের দেয়া যে-নিয়ম চলে আসছে, ...

মামলুকাতুল্লাহ: রুকু ১৫ ও ১৬

/
মামলুকাতুল্লাহ: রুকু ১৭ ও ১৮
রুকু ১৭ ১ছ’দিন পর হযরত ইসা আ. হযরত পিতর রা., হযরত ইয়াকুব রা. ও তার ভাই হযরত ইউহোন্না রা.কে সাথে ...

মামলুকাতুল্লাহ: রুকু ১৭ ও ১৮

/
মামলুকাতুল্লাহ: রুকু ১৯ ও ২০
রুকু ১৯ ১এসব কথা বলা শেষ করে হযরত ইসা আ. গালিল ছেড়ে জর্দান নদীর ওপারে ইহুদিয়ায় গেলেন। ২হাজার হাজার মানুষ ...

মামলুকাতুল্লাহ: রুকু ১৯ ও ২০

/
মামলুকাতুল্লাহ: রুকু ২১ ও ২২
রুকু ২১ ১তারা জেরুসালেমের কাছে জৈতুন পাহাড়ের বৈতফগি গ্রামে এলে হযরত ইসা আ. তাঁর দু’জন হাওয়ারিকে এই বলে পাঠিয়ে দিলেন, ...

মামলুকাতুল্লাহ: রুকু ২১ ও ২২

/
মামলুকাতুল্লাহ: রুকু ২৩ ও ২৪
রুকু ২৩ ১অতঃপর হযরত ইসা আ. জনতা ও তাঁর সাহাবিদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ২“আলিম ও ফরিসিরা নিজেরাই হযরত মুসা আ.র ...

মামলুকাতুল্লাহ: রুকু ২৩ ও ২৪

/
মামলুকাতুল্লাহ: রুকু ২৫ ও ২৬
রুকু ২৫ ১তখন বেহেস্তি রাজ্য হবে এমন দশ কুমারীর মতো, যারা বরকে বরণ করার জন্য তাদের বাতি নিয়ে বাইরে গেলো। ...

মামলুকাতুল্লাহ: রুকু ২৫ ও ২৬

/
মামলুকাতুল্লাহ: রুকু ২৭ ও ২৮
রুকু ২৭ ১ফজরের পরেই প্রধান ইমামেরা ও বুজুর্গরা একত্রে বসে হযরত ইসা আ.কে মেরে ফেলার বিষয়ে আলোচনা করলেন। ২তারা হযরত ...

মামলুকাতুল্লাহ: রুকু ২৭ ও ২৮

/