আল-মসিহঃ রুকু- ১৫ ও ১৬

অডিও শুনতে এখানে ক্লিক করুন

রুকু ১৫

১ফজরের পরেই প্রধান ইমামেরা বুজুর্গ, আলেম ও মহাসভার সমস্ত লোকের সাথে পরামর্শ করলেন। তারা হযরত ইসা আ.কে বেঁধে নিয়ে পিলাতের হাতে দিলেন। ২পিলাত তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি কি ইহুদিদের বাদশা?” তিনি তাকে উত্তর দিলেন, “আপনিই বললেন।”

৩তখন প্রধান ইমামেরা তাঁকে অনেক দোষ দিলেন। ৪পিলাত আবার তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি কি কোনো উত্তর দেবে না? দেখো, তারা তোমাকে কতো দোষ দিচ্ছেন।” ৫কিন্তু হযরত ইসা আ. আর কোনো উত্তর দিলেন না। এতে পিলাত আশ্চর্য হলেন।

৬ইদের সময় লোকেরা যে-কয়েদিকে চাইতো, তিনি তাকে ছেড়ে দিতেন। ৭সেই সময় বারাব্বা নামে এক লোক বিদ্রোহীদের সাথে জেলখানায় বন্দি ছিলো। বিদ্রোহের সময় সে হত্যা করেছিলো। ৮সুতরাং লোকেরা পিলাতের কাছে এসে সাধারণত তিনি যা করে থাকেন, তাদের জন্য তাই করতে বললো।

৯অতঃপর তিনি তাদের বললেন, “তোমরা কি চাও যে, আমি ইহুদিদের বাদশাকে তোমাদের জন্য ছেড়ে দেই?” ১০প্রধান ইমামেরা যে হিংসা করেই তাঁকে তার হাতে দিয়েছেন, তিনি তা বুঝতে পেরেছিলেন। ১১কিন্তু প্রধান ইমামেরা লোকদের উসকে দিলেন, যেনো তাঁর পরিবর্তে বারাব্বাকে তিনি তাদের কাছে মুক্তি দেন।

১২পিলাত আবার তাদের জিজ্ঞেস করলেন, “তাহলে তোমরা যাকে ইহুদিদের বাদশা বলো, তাকে আমি কী করবো?” ১৩তারা আবার চেঁচিয়ে বললো, “ওকে সলিবে দিন!” ১৪পিলাত তাদের বললেন, “কেনো, সে কী দোষ করেছে?” কিন্তু তারা আরো জোরে চেঁচিয়ে বলতে লাগলো, “ওকে সলিবে দিন!”

১৫সুতরাং পিলাত জনতাকে সন্তুষ্ট করার জন্য তখন বারাব্বাকে তাদের কাছে ছেড়ে দিলেন আর হযরত ইসা আ.কে চাবুক মেরে সলিবে দেবার জন্য দিয়ে দিলেন। ১৬তারপর সৈন্যরা তাঁকে প্রাসাদের উঠোনে- যা ছিলো প্রধান শাসনকর্তার কার্যালয়- নিয়ে গেলো। সেখানে তারা অন্যসব সৈন্যকে একত্রিত করলো। ১৭তারা তাঁকে বেগুনি রঙের কাপড় পরালো আর কাঁটার মুকুট গেঁথে তাঁর মাথায় পরিয়ে দিলো ১৮এবং তাঁকে স্বাগত জানিয়ে বলতে লাগলো, “খোশ আমদেদ, ইহুদিরাজ!”

১৯তারা একটি লাঠি দিয়ে তাঁর মাথায় বারবার আঘাত করতে লাগলো এবং তাঁর গায়ে থুথু দিলো আর হাঁটু গেড়ে তাঁকে সম্মান দেখাবার ভান করলো। ২০এভাবে তাঁকে ঠাট্টা-তামাসা করার পর তারা ওই বেগুনি রঙের কাপড় খুলে তাঁকে তাঁর নিজের কাপড় পরিয়ে দিলো এবং সলিবে দিয়ে হত্যা করার জন্য নিয়ে চললো।

২১সিমোন নামে কুরিনীয় এক লোক গ্রামের দিক থেকে এসে সেই পথ দিয়ে যাচ্ছিলো। সে ছিলো আলেকজান্ডার ও রুফের বাবা। তাকেই তারা হযরত ইসা আ.র সলিব বহন করতে বাধ্য করলো। ২২তারা হযরত ইসা আ.কে ‘গল্গথা’ অর্থাৎ ‘মাথার খুলির স্থান’ নামে একটি জায়গায় নিয়ে গেলো ২৩এবং তাঁকে গন্ধরস মেশানো আঙুররস খেতে দিলো কিন্তু তিনি তা খেলেন না।

২৪অতঃপর তারা তাঁকে সলিবে দিলো। তাঁর কাপড়-চোপড় ভাগ করে নিলো এবং কার ভাগে কী পড়ে তা ঠিক করার জন্য ভাগ্য পরীক্ষা করলো।

২৫সকাল ন’টায় তারা তাঁকে সলিবে দিলো। ২৬তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগনামায় লেখা হলো, “এ ইহুদিদের মনোনীত বাদশা”। ২৭,২৮তারা দু’জন ডাকাতকেও তাঁর সাথে সলিবে দিলো- একজনকে ডান দিকে ও অন্যজনকে বাঁ দিকে।

২৯যারা সে-পথ দিয়ে যাচ্ছিলো, তারা মাথা নেড়ে তাঁকে ঠাট্টা করে বললো, “এই যে, তুমি না বায়তুল-মোকাদ্দস ভেঙে আবার তিন দিনের ভেতর তা তৈরি করতে পারো! ৩০এখন সলিব থেকে নেমে এসে নিজেকে রক্ষা করো।” ৩১একইভাবে প্রধান ইমামেরা ও আলিমরা তাঁকে ঠাট্টা করার উদ্দেশ্যে নিজেদের মধ্যে বলাবলি করতে লাগলেন, “সে অন্যদের রক্ষা করতো কিন্তু নিজেকে রক্ষা করতে পারে না! ৩২ওই যে মসিহ, ইস্রাইলের বাদশা! সলিব থেকে সে নেমে আসুক, যেনো আমরা দেখে ইমান আনতে পারি।” তাঁর সাথে যাদের সলিবে দেয়া হয়েছিলো, তারাও তাঁকে বিদ্রুপ করলো।

৩৩দুপুর বারোটা থেকে বেলা তিনটে পর্যন্ত গোটা দেশ অন্ধকার হয়ে রইলো। ৩৪বেলা তিনটের সময় ইসা চিৎকার করে বললেন, “এলোই, এলোই, লেমা সাবাক্তানি?” অর্থাৎ “আল্লাহ আমার, আল্লাহ আমার, কেনো তুমি আমাকে ত্যাগ করেছো?” ৩৫যারা কাছে দাঁড়িয়ে ছিলো, তাদের কয়েকজন একথা শুনে বললো, “শোনো, শোনো, ও হযরত ইলিয়াসকে ডাকছে।” ৩৬এক লোক দৌড়ে গিয়ে একটি স্পঞ্জ তেতো আঙুররসে ভেজালো এবং তা একটি লাঠির মাথায় লাগিয়ে তাঁকে পান করতে দিলো। বললো, “থাক, দেখি, ইলিয়াস ওকে নামিয়ে নিতে আসেন কিনা।”

৩৭অতঃপর হযরত ইসা আ. চিৎকার করে ইন্তেকাল করলেন। ৩৮তখন বায়তুল-মোকাদ্দসের পর্দাটি ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত চিরে দু’ভাগ হয়ে গেলো। ৩৯যে লেফটেন্যান্ট তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন, তিনি তাঁকে এভাবে ইন্তেকাল করতে দেখে বললেন, “নিশ্চয়ই ইনি আল্লাহর একান্ত প্রিয় মনোনীতজন ছিলেন।”

৪০সেখানে কয়েকজন মহিলা দূরে দাঁড়িয়ে এসব দেখছিলেন। তাদের মধ্যে ছিলেন মগ্দলিনি মরিয়ম, ছোটো-ইয়াকুব ও জোসির মা মরিয়ম আর সালোমি। ৪১তিনি যখন গালিলে ছিলেন, তখন এরা তাঁর সাথে সব জায়গায় যেতেন এবং তাঁর সেবা করতেন। আরো অনেক মহিলা সেখানে ছিলেন, এরা তাঁর সাথে সাথে জেরুসালেমে এসেছিলেন।

৪২এটি ছিলো প্রস্তুতির দিন অর্থাৎ সাব্বাতের আগের দিন। ৪৩সন্ধ্যার দিকে অরিমাথিয়া গ্রামের হযরত ইউসুফ র.- যিনি মহাসভার একজন সম্মানিত সদস্য ছিলেন এবং আল্লাহর রাজ্যের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন- সাহসের সাথে পিলাতের কাছে গিয়ে হযরত ইসা আ.র দেহমোবারক চাইলেন।

৪৪তিনি যে এতো তাড়াতাড়ি ইন্তেকাল করেছেন, এতে পিলাত আশ্চর্য হলেন। সত্যি সত্যি তিনি ইন্তেকাল করেছেন কিনা তা লেফটেন্যান্টকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন। ৪৫তার কাছ থেকে নিশ্চিত হয়ে তিনি দেহমোবারক হযরত ইউসুফ র.-কে দিলেন। ৪৬হযরত ইউসুফ র. গিয়ে লিনেন কাপড় কিনে আনলেন এবং দেহমোবারক নামিয়ে সেই কাফনে জড়ালেন আর পাহাড় কেটে তৈরি করা একটি কবরে সেই দেহমোবারক দাফন করলেন। অতঃপর তিনি কবরের মুখে একটি পাথর গড়িয়ে দিলেন। ৪৭দেহমোবারক কোথায় দাফন করা হলো তা মগ্দলিনি মরিয়ম ও জোসির মা মরিয়ম দেখলেন।

রুকু ১৬

১সাব্বাত পার হয়ে গেলে মগ্দলিনি মরিয়ম, হযরত ইয়াকুব আ.র মা মরিয়ম এবং সালোমি হযরত ইসা আ.-র দেহমোবারকে মাখানোর জন্য সুগন্ধিদ্রব্য কিনে আনলেন; ২এবং সপ্তাহের প্রথম দিনের ফজরে সূর্য ওঠার সাথে সাথে কবরের কাছে এলেন। ৩তারা একে অন্যকে জিজ্ঞেস করছিলেন, “আমাদের হয়ে কবরের মুখ থেকে কে ওই পাথরটি সরিয়ে দেবে?”

৪এমন সময় তারা চেয়ে দেখলেন যে, পাথরটি সরানো হয়েছে- এটি ছিলো খুবই বড়ো। ৫কবরের ভেতরে ঢুকে তারা দেখলেন, সাদা কাপড় পরা এক যুবক ডান দিকে বসে আছেন। এতে তারা খুব আশ্চর্য হলেন। ৬তিনি তাদের বললেন, “আশ্চর্য হয়ো না; তোমরা তো খুঁজছো নাসরতের হযরত ইসা আ.কে, যাঁকে সলিবে দেয়া হয়েছিলো। তিনি জীবিত হয়ে উঠেছেন; তিনি এখানে নেই। দেখো, এখানেই তারা তাঁকে দাফন করেছিলো। ৭কিন্তু তোমরা গিয়ে তাঁর হাওয়ারিদেরকে ও হযরত সাফওয়ান রা.কে একথা বলো যে, তিনি তোমাদের আগে গালিলে যাচ্ছেন; তিনি যেমন বলেছিলেন, তেমনই তোমরা তাঁকে সেখানে দেখতে পাবে।”

৮তখন তারা কবর থেকে বেরিয়ে দ্রুত পালিয়ে গেলেন, কারণ তারা ভয়ে-বিস্ময়ে কাঁপছিলেন। তারা এতো ভয় পেয়েছিলেন যে, কাউকেই কিছু বললেন না।

Facebook
WhatsApp
Telegram
Email
আল-মসিহঃ রুকু -১ ও ২

আল-মসিহঃ রুকু -১ ও ২

রুকু: ১ বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম ১ হযরত ইসা মসিহ আ. এর ইঞ্জিলের শুরু; ইনি আল্লাহর একান্ত প্রিয় মনোনীতজন । ২ ...
আল-মসিহঃ রুকু -৩ ও ৪

আল-মসিহঃ রুকু -৩ ও ৪

রুকু ৩ ১ হযরত ইসা আ. আবার সিনাগোগে গেলেন। সেখানে এক লোক ছিলো, যার একটি হাত শুকিয়ে গিয়েছিলো। ২ সাব্বাতে ...
আল মসিহঃ রুকু - ৫ ও ৬

আল মসিহঃ রুকু – ৫ ও ৬

রুকু ৫ ১ তারা লেক পার হয়ে গেরাসেনিদের এলাকায় গেলেন। ২ তিনি নৌকা থেকে নামার সাথে সাথেই ভূতে পাওয়া এক ...
আল-মসিহঃ রুকু ৭ ও ৮

আল-মসিহঃ রুকু ৭ ও ৮

রুকু - ৭ ১ কয়েকজন ফরিসি ও আলিম জেরুসালেম থেকে এসে তাঁর চারপাশে জড়ো হলেন। ২ তারা দেখলেন, কয়েকজন উম্মত ...
আল-মসিহঃ রুকু ৯ ও ১০

আল-মসিহঃ রুকু ৯ ও ১০

রুকু - ৯ ১ তিনি তাদের বললেন, “আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, এখানে এমন কয়েকজন আছে, যাদের কাছে আল্লাহর রাজ্য মহাশক্তিতে ...
আল-মসিহঃ রুকু ১১ ও ১২

আল-মসিহঃ রুকু ১১ ও ১২

রুকু - ১১ ১ তারা জেরুসালেম যাবার পথে জৈতুন পাহাড়ের গায়ের বৈতফগি ও বেথানিয়া গ্রামের কাছে এলেন। সেখানে পৌঁছে তিনি ...
আল-মসিহ, রুকুঃ ১৩ ও ১৪

আল-মসিহ, রুকুঃ ১৩ ও ১৪

রুকু ১৩ ১ বায়তুল-মোকাদ্দস থেকে বেরিয়ে যাবার সময় হাওয়ারিদের মধ্যে একজন তাঁকে বললেন, “হুজুর, দেখুন, কেমন বাছাই করা পাথর আর ...
আল-মসিহঃ রুকু- ১৫ ও ১৬

আল-মসিহঃ রুকু- ১৫ ও ১৬

রুকু ১৫ ১ফজরের পরেই প্রধান ইমামেরা বুজুর্গ, আলেম ও মহাসভার সমস্ত লোকের সাথে পরামর্শ করলেন। তারা হযরত ইসা আ.কে বেঁধে ...