অডিও শুনতে এখানে ক্লিক করুন
রুকু ১৩
১ বায়তুল-মোকাদ্দস থেকে বেরিয়ে যাবার সময় হাওয়ারিদের মধ্যে একজন তাঁকে বললেন, “হুজুর, দেখুন, কেমন বাছাই করা পাথর আর কি অপূর্ব সুন্দর দালানগুলো!” ২ হযরত ইসা আ. তাকে বললেন, “তুমি কি এই মস্ত বড় দালানগুলো দেখছো? কিন্তু এর একটি পাথরও আরেকটি পাথরের ওপর থাকবে না; সবই ভেঙে ফেলা হবে।”
৩ অতঃপর তিনি বায়তুল-মোকাদ্দসের বিপরীত দিকের জৈতুন পাহাড়ের ওপর বসলে হযরত সাফওয়ান রা., হযরত ইয়াকুব রা., হযরত ইউহোন্না রা. ও হযরত আন্দ্রিয়ান রা. তাঁকে গোপনে জিজ্ঞেস করলেন- ৪ “আমাদের বলুন, কখন এসব ঘটবে? এসব সম্পন্ন হওয়ার চিহ্নই-বা কী হবে?”
৫ তখন হযরত ইসা আ. তাদের বলতে লাগলেন, “সাবধান, কেউ যেনো তোমাদের না ঠকায়। ৬ অনেকেই আমার নাম নিয়ে এসে বলবে, ‘আমিই তিনি’ এবং তারা অনেককে বিপথে নিয়ে যাবে। ৭ যখন তোমরা যুদ্ধের আওয়াজ ও যুদ্ধের গুজব শুনবে, তখন ভয় পেয়ো না। এসব ঘটবেই কিন্তু তখনই শেষ নয়। ৮ জাতির বিরুদ্ধে জাতি, রাজ্যের বিরুদ্ধে রাজ্য দাঁড়াবে। জায়গায় জায়গায় ভূমিকম্প ও দুর্ভিক্ষ হবে। এসব কেবল প্রসব-বেদনার আরম্ভ।
৯ তোমরা নিজেদের বিষয়ে সতর্ক থেকো, কারণ তারা তোমাদেরকে আদালতে সমর্পণ এবং সিনাগোগের ভেতর মারধর করবে। আমার জন্য দেশের শাসনকর্তা ও রাজাদের সামনে তোমাদের দাঁড়াতে হবে। তাদের সামনে আমার বিষয়ে তোমাদের সাক্ষ্য দিতে হবে। ১০ এবং সমস্ত জাতির কাছে প্রথমে অবশ্যই ইঞ্জিল প্রচার করতে হবে।
১১ যখন তারা তোমাদের ধরে বিচারের জন্য নিয়ে যাবে, তখন যা বলতে হবে তা আগে থেকে চিন্তা কোরো না। সেই সময়ে যেকথা তোমাদের বলে দেয়া হবে, তোমরা তাই বলবে; কারণ তোমরাই যে বলবে তা নয়, বরং আল্লাহর রুহেই কথা বলবেন।
১২ ভাই ভাইকে, পিতা সন্তানকে মেরে ফেলার জন্য ধরিয়ে দেবে। সন্তানেরা বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে তাদের হত্যা করাবে। ১৩ আমার নামের জন্য তোমরা সকলের কাছে ঘৃণিত হবে কিন্তু যে শেষ পর্যন্ত স্থির থাকবে সে নাজাত পাবে।
১৪ সর্বনাশা ঘৃণার জিনিস যেখানে থাকা উচিত নয় তোমরা যখন তা সেখানে থাকতে দেখবে- যে পড়ে সে বুঝুক- তখন যারা ইহুদিয়াতে থাকবে তারা পাহাড়ি এলাকায় পালিয়ে যাক। ১৫যে ছাদের ওপর থাকবে সে নিচে না নামুক কিংবা কিছু নেবার জন্য তার ঘরের ভেতরে না যাক। ১৬ যে ক্ষেতের মধ্যে থাকবে সে তার গায়ের চাদর নেবার জন্য না ফিরুক। ১৭ যারা গর্ভবতী এবং যারা সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ায় তাদের জন্য সেই দিনগুলো কতোই-না বেদনার!
১৮ মোনাজাত করো এসব যেনো শীতকালে না হয়। ১৯ কারণ সেই সময় এমন কষ্ট হবে, যা আল্লাহ পাকের সৃষ্টির শুরু থেকে আজ পর্যন্ত হয়নি এবং আগামীতেও হবে না। ২০ আল্লাহ যদি সেই দিনগুলো কমিয়ে না দেন তাহলে কেউই রক্ষা পাবে না; কিন্তু তাঁর মনোনীতদের জন্য সেই দিনগুলো তিনি কমিয়ে দেবেন।
২১ সেই সময় কেউ যদি তোমাদের বলে, ‘দেখো, মসিহ এখানে!’ বা ‘দেখো, মসিহ ওখানে!’ তাদের বিশ্বাস কোরো না। ২২ ভণ্ড মসিহেরা ও ভণ্ড নবিরা আসবে এবং অনেক আশ্চর্য কাজ ও চিহ্ন দেখাবে, যেনো সম্ভব হলে মনোনীত লোকদেরকে বিভ্রান্ত করতে পারে। ২৩ কিন্তু তোমরা সতর্ক থেকো। আমি তোমাদের আগেই সবকিছু বলে রাখলাম।
২৪ সেই সময়ের কষ্টের ঠিক পরেই সূর্য অন্ধকার হয়ে যাবে, চাঁদ আর আলো দেবে না; ২৫ তারাগুলো আসমান থেকে খসে পড়বে এবং সৌরজগত দুলতে থাকবে। ২৬ সেই সময় তারা ইবনুল-ইনসানকে মহাশক্তি ও মহিমার সাথে মেঘে চড়ে আসতে দেখবে। ২৭ অতঃপর তিনি ফেরেস্তাদের পাঠিয়ে আসমান-জমিনের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত চারদিক থেকে তাঁর মনোনীতদের একত্র করবেন।
২৮ ডুমুর গাছ দেখে শিক্ষা নাও। যখন তার ডালপালা নরম হয়ে তাতে পাতা গজায়, তখন তোমরা জানতে পারো যে, গরমকাল এসেছে। ২৯ সেভাবে যখন তোমরা দেখবে এসব ঘটছে, তখন বুঝতে পারবে যে, তিনি কাছে এসেছেন, এমনকি দরজায় উপস্থিত। ৩০ আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, যতোক্ষণ এসব না ঘটবে ততোক্ষণ এ-কালের লোকেরা টিকে থাকবে।
৩১ আসমান ও জমিন শেষ হয়ে যাবে কিন্তু আমার কথা চিরদিন থাকবে। ৩২ সেই দিন ও সেই সময়ের কথা কেউই জানে না- বেহেস্তের ফেরেস্তারাও না, আল্লাহর একান্ত প্রিয় মনোনীতজনও না, কেবল প্রতিপালক আল্লাহই জানেন।
৩৩ সাবধান হও, জেগে থাকো, কারণ সেই সময় কখন আসবে তা তোমরা জানো না। ৩৪ যেমন ধরো, এক লোক, যে ভ্রমণে যাচ্ছে, বাড়ি ছেড়ে যাবার আগে সে তার গোলামদের হাতে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিলো। সে প্রত্যেক গোলামকে তার কাজ দিলো এবং দারোয়ানকে জেগে থাকতে বললো।
৩৫ কাজেই তোমরা জেগে থাকো, কারণ বাড়ির মালিক সন্ধ্যায়, কি মাঝরাতে, কি মোরগ ডাকার সময়, কি সূর্য ওঠার সময় আসবে তা তোমরা জানো না। ৩৬ হঠাৎ এসে সে যেনো না দেখে যে, তোমরা ঘুমিয়ে রয়েছো। ৩৭ তোমাদের যা বলছি তা সবাইকে বলি, জেগে থাকো।”
রুকু ১৪
১ ইদুল-ফেসাখ ও ইদুল-মাত্ছের তখন মাত্র দু’দিন বাকি। এই সময় প্রধান ইমামেরা ও আলিমরা গোপনে ইসাকে ধরে মেরে ফেলার উপায় খুঁজছিলেন। ২ কিন্তু তারা বললেন, “ইদের সময়ে নয়, তাতে লোকদের মধ্যে গোলমাল হতে পারে।”
৩ অতঃপর তিনি বেথানিয়ার কুষ্ঠী সিমোনের বাড়িতে পৌঁছলেন। তিনি খেতে বসার পর এক মহিলা একটি সাদা পাথরের পাত্রে করে খুব দামি ও খাঁটি সুগন্ধি তেল নিয়ে এলো এবং পাত্রটি ভেঙে তা তাঁর মাথায় ঢেলে দিলো। ৪ কিন্তু উপস্থিত লোকদের মধ্যে কেউ কেউ বিরক্ত হয়ে একে অন্যকে বলতে লাগলেন, “এভাবে কেনো এই সুগন্ধি তেল অপচয় করা হলো? এটি বিক্রি করলে তো তিনশ দিনারেরও বেশি হতো এবং তা গরিবদের দেয়া যেতো।” তারা তাকে দোষারোপ করতে লাগলেন।
৬ কিন্তু হযরত ইসা আ. বললেন, “থামো, কেনো তোমরা তাকে দুঃখ দিচ্ছো? সে তো আমার জন্য উত্তম কাজই করেছে। ৭ গরিবরা সব সময়ই তোমাদের মধ্যে আছে আর যখন ইচ্ছা তখনই তোমরা তাদের দয়া দেখাতে পারো; কিন্তু আমাকে তোমরা সব সময় পাবে না।
৮ তার যা করণীয় ছিলো সে তা-ই করেছে; সময়ের আগেই সে আমার শরীরকে অভিষিক্ত করে দাফনের জন্য প্রস্তুত করেছে। ৯ আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, দুনিয়ার যে-জায়গায় ইঞ্জিল প্রচার করা হবে, সেখানে এই মহিলার কথা মনে করিয়ে দেবার জন্য তার এই কাজের কথাও বলা হবে।”
১০ এর পরে হযরত ইহুদা ইস্কারিয়োত রা.- সেই বারোজনের মধ্যে একজন- প্রধান ইমামদের কাছে গেলেন, যেনো তাঁকে তাদের হাতে তুলে দিতে পারেন। ১১ তারা তার কথা শুনে আনন্দিত হলেন এবং তাকে টাকা দেবেন বলে ওয়াদা করলেন। সুতরাং তিনি তাঁকে তুলে দেবার জন্য সুযোগ খুঁজতে লাগলেন।
১২ ইদুল-মাত্ছের প্রথম দিনে ইদুল-ফেসাখের ভোজের জন্য বাচ্চা-ভেড়া কোরবানি করা হতো। তাঁর হাওয়ারিরা তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, “আপনার জন্য আমরা কোথায় গিয়ে ইদুল-ফেসাখের খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন করবো, যেনো আপনি গিয়ে খেতে পারেন?”
১৩ তখন তিনি তাঁর দু’জন সাহাবিকে এই বলে পাঠিয়ে দিলেন, “তোমরা শহরে যাও। সেখানে এমন এক লোকের দেখা পাবে, যে একটি কলসে করে পানি নিয়ে যাচ্ছে। তার পেছনে পেছনে যেয়ো। ১৪ সে যে-বাড়িতে ঢুকবে, সেই বাড়ির মালিককে বলো, ‘হুজুর বলছেন, আমার হাওয়ারিদের নিয়ে ইদুল-ফেসাখের খাওয়া-দাওয়া করার জন্য আমার সেই মেহমানখানা কোথায়?’
১৫ সে তোমাদের ওপরতলার একটি সাজানো বড়ো রুম দেখিয়ে দেবে। সেখানেই আমাদের জন্য সবকিছু প্রস্তুত করো।” ১৬ সুতরাং হাওয়ারিরা গিয়ে শহরে ঢুকলেন; আর তিনি যেমন বলেছিলেন, তারা সবকিছু তেমনই দেখতে পেলেন এবং তারা ইদুল-ফেসাখের আয়োজন করলেন।
১৭ সন্ধ্যায় তিনি সেই বারোজনকে নিয়ে সেখানে উপস্থিত হলেন। ১৮ তারা যখন বসে খাচ্ছিলেন, তখন হযরত ইসা আ. বললেন, “আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, তোমাদের মধ্যে একজন আমার সাথে বেইমানি করবে, আর সে আমার সাথে খাচ্ছে।” ১৯ তারা দুঃখিত হলেন এবং একজনের পর একজন বলতে লাগলেন, “নিশ্চয়ই আমি না?” ২০ তিনি তাদের বললেন, “সে এই বারোজনের মধ্যে একজন, যে আমার সাথে বাটির মধ্যে রুটি ডোবাচ্ছে।
২১ ইবনুল-ইনসানের বিষয়ে যেভাবে লেখা আছে, তিনি সেভাবেই যাচ্ছেন কিন্তু আফসোস সেই লোকের জন্য, যে তাঁকে তুলে দেবে! তার জন্ম না হলেই বরং তার জন্য ভালো হতো।”
২২ খাওয়া-দাওয়া চলছে, এমন সময় তিনি রুটি নিয়ে শুকরিয়া জানালেন এবং তা ভেঙে হাওয়ারিদের হাতে দিয়ে বললেন, “নাও, এটি আমার শরীর।” ২৩ তারপর তিনি গ্লাস নিয়ে শুকরিয়া জানালেন এবং তাদের দিলেন। তারা সকলে সেই গ্লাস থেকে পান করলেন।
২৪ তিনি তাদের বললেন, “এ আমার চুক্তির রক্ত, যা অনেকের জন্যই দেয়া হবে। ২৫ আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, আল্লাহর রাজ্যে নতুনভাবে আঙুররস পানের আগে আর কখনোই আমি তা পান করবো না।”
২৬ অতঃপর তারা একটি হামদ গেয়ে জৈতুন পাহাড়ে গেলেন। ২৭ হযরত ইসা আ. তাদের বললেন, “তোমরা প্রত্যেকে বাধা পাবে; কারণ লেখা আছে, ‘আমি রাখালকে আঘাত করবো এবং ভেড়াগুলো ছড়িয়ে পড়বে।’ ২৮ কিন্তু মৃত থেকে জীবিত হওয়ার পর আমি তোমাদের আগেই গালিলে যাবো।”
২৯ হযরত সাফওয়ান রা. তাঁকে বললেন, “সবাই আপনাকে ছেড়ে গেলেও আমি যাবো না।” ৩০ হযরত ইসা আ. তাকে বললেন, “আমি তোমাকে সত্যিই বলছি, আজ রাতে মোরগ দু’বার ডাকার আগেই তুমি আমাকে তিনবার অস্বীকার করবে। ৩১ কিন্তু তিনি আরো নিশ্চয়তার সাথে বললেন, “যদি আমাকে আপনার সাথে মরতেও হয়, তবুও আমি আপনাকে অস্বীকার করবো না!” এবং তারা সকলে একই কথা বললেন।
৩২ অতঃপর তারা গেতসিমানি নামে একটি জায়গায় এলেন এবং তিনি তাঁর হাওয়ারিদেরকে বললেন, “আমি যতোক্ষণ মোনাজাত করি, ততোক্ষণ তোমরা এখানে বসে থাকো।” ৩৩ তিনি হযরত সাফওয়ান রা., হযরত ইয়াকুব রা. ও হযরত ইউহোন্না রা.-কে নিজের সাথে নিলেন এবং মনে গভীর দুঃখ ও অশান্তিবোধ করতে লাগলেন। ৩৪ তিনি তাদের বললেন, “দুঃখে যেনো আমার প্রাণ বেরিয়ে যাচ্ছে। তোমরা এখানে থাকো এবং জেগে থাকো।”
৩৫ অতঃপর তিনি কিছুটা দূরে গিয়ে মাটিতে সেজদায় পড়ে মোনাজাত করলেন যে, সম্ভব হলে এই সময়টি যেনো তার কাছ থেকে সরে যায়।
৩৬ তিনি বললেন, “হে আমার আল্লাহ্, আমার প্রতিপালক, তোমার পক্ষে সবই সম্ভব; এই গ্লাস আমার কাছ থেকে সরিয়ে নাও; তবু আমার ইচ্ছামতো না হোক কিন্তু তোমার ইচ্ছামতোই হোক।”
৩৭ তিনি ফিরে এসে দেখলেন তারা ঘুমোচ্ছেন। তিনি হযরত সাফওয়ান রা.-কে বললেন, “হযরত সাফওয়ান রা., তুমি কি ঘুমাচ্ছো? তুমি কি এক ঘন্টাও জেগে থাকতে পারলে না? ৩৮ জেগে থাকো ও মোনাজাত করো, যেনো পরীক্ষায় না পড়ো। রুহে ইচ্ছা আছে বটে কিন্তু দেহ দুর্বল।”
৩৯ আবার তিনি ফিরে গিয়ে সেই একই মোনাজাত করলেন ৪০ এবং ফিরে এসে দেখলেন তারা ঘুমাচ্ছেন, কারণ তাদের চোখ ভারি হয়ে এসেছিলো; আর তারা বুঝতে পারলেন না যে, তাঁকে তারা কী উত্তর দেবেন।
৪১ তৃতীয়বার ফিরে এসে তিনি তাদের বললেন, “এখনো তোমরা ঘুমাচ্ছো আর বিশ্রাম করছো? যথেষ্ট হয়েছে। সময় এসে পড়েছে। দেখো, ইবনুল-ইনসানকে গুনাহগারদের হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে। ৪২ ওঠো, চলো, আমরা যাই। যে আমাকে শত্রুদের হাতে তুলে দেবে, সে এসে পড়েছে।”
৪৩ তিনি যখন কথা বলছেন, তখনই ইহুদা- সেই বারোজনের একজন- সেখানে এলেন। তার সাথে অনেক লোক তরবারি ও লাঠি নিয়ে এলো। প্রধান ইমামেরা, আলিমরা ও বুজুর্গরা এই লোকদের পাঠিয়েছিলেন। ৪৪ যিনি তাঁকে তুলে দিয়েছিলেন, তিনি ওই লোকদের সাথে একটি চিহ্ন ঠিক করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “যাঁকে আমি চুমু দেবো, তিনিই সেই লোক। তোমরা তাঁকে ধরে পাহারা দিয়ে নিয়ে যেয়ো।” ৪৫ ইহুদা তখনই তাঁর কাছে গিয়ে বললেন, “হুজুর!” এবং তাঁকে চুমু দিলেন।
৪৬ অতঃপর তাঁর ওপর হাত বাড়িয়ে তারা তাঁকে ধরলো। ৪৭ কিন্তু যারা হযরত ইসা আ.-র কাছে দাঁড়িয়ে ছিলেন, তাদের একজন তার তরবারি বের করলেন এবং মহাইমামের গোলামকে আঘাত করে তার একটি কান কেটে ফেললেন।
৪৮ তখন হযরত ইসা আ. তাদের বললেন, “চোর ধরার মতো করে তোমরা কি তরবারি ও লাঠি নিয়ে আমাকে ধরতে এসেছো? ৪৯ আমি প্রত্যেক দিনই বায়তুল-মোকাদ্দসে তোমাদের মাঝে শিক্ষা দিয়েছি কিন্তু তোমরা আমাকে ধরোনি। অবশ্য পাককিতাবের কথা পূর্ণ হতে হবে। ৫০ তারা সবাই তাঁকে ছেড়ে পালিয়ে গেলেন।
৫১ কোনো এক যুবক গায়ে শুধু লিনেন কাপড়ের চাদর জড়িয়ে তাঁর পেছনে পেছনে যাচ্ছিলো। ৫২ তারা তাকে ধরলো কিন্তু সে চাদরটি ফেলে দিয়ে উলঙ্গ অবস্থায় পালিয়ে গেলো।
৫৩ তারা হযরত ইসা আ.কে মহাইমামের কাছে নিয়ে গেলো। সেখানে বুজুর্গরা, আলিমরা ও প্রধান ইমামেরা একত্রিত হলেন। ৫৪ হযরত সাফওয়ান রা. দূরে দূরে থেকে তাঁর পেছনে পেছনে মহা-ইমামের উঠোনে গিয়ে ঢুকলেন এবং পাহারাদারদের সাথে বসে আগুন পোহাতে লাগলেন।
৫৫ প্রধান ইমামেরা এবং মহাসভার সবাই হযরত ইসা আ.কে মেরে ফেলার জন্য তাঁর বিরুদ্ধে সাক্ষীর খোঁজ করছিলেন; কিন্তু তারা কাউকেই পেলেন না। ৫৬ অনেকেই তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দিলো কিন্তু তাদের সাক্ষ্য মিললো না।
৫৭ তখন কয়েকজন উঠে তাঁর বিরুদ্ধে এই মিথ্যা সাক্ষ্য দিলো- ৫৮ “আমরা ওকে একথা বলতে শুনেছি, ‘আমি মানুষের তৈরি এই বায়তুল-মোকাদ্দস ভেঙে ফেলবো এবং তিন দিনের মধ্যে আমি আরেকটি গড়বো, যা মানুষের তৈরি নয়’।” ৫৯ তবুও তাদের সাক্ষ্য মিললো না।
৬০ তখন মহাইমাম মাঝখানে দাঁড়িয়ে হযরত ইসা আ.কে জিজ্ঞেস করলেন, “এসব লোক তোমার বিরুদ্ধে যেসব সাক্ষ্য দিচ্ছে, তুমি কি তার কোনো উত্তরই দেবে না?” ৬১ কিন্তু তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে চুপ করেই রইলেন। মহাইমাম আবার তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি কি মসিহ, সর্বশক্তিমান আল্লাহর একান্ত প্রিয় মনোনীতজন?”
৬২ হযরত ইসা আ. বললেন, “আমিই তিনি। আপনারা ইবনুল-ইনসানকে সর্বশক্তিমানের ডান দিকে বসে থাকতে এবং আসমানের মেঘের সাথে আসতে দেখবেন।” ৬৩ মহাইমাম তার কাপড় ছিঁড়ে বললেন, “আমাদের আর সাক্ষীর কী দরকার? ৬৪ আপনারা তো শুনলেন যে, সে কুফরি করলো! আপনাদের সিদ্ধান্ত কী?” ৬৫ তারা সকলে তাঁকে মৃত্যুর উপযুক্ত বলে স্থির করলেন। কয়েকজন তাঁর গায়ে থুথু দিলো এবং কাপড় দিয়ে তাঁর চোখ বেঁধে ঘুষি মেরে বললো, “ভবিষ্যদ্বাণী বলো দেখি!” পাহারাদাররাও তাঁকে মারতে মারতে নিজেদের জিম্মায় নিলো।
৬৬ হযরত সাফওয়ান রা. যখন আদালতের উঠোনের নিচের দিকে ছিলেন, তখন মহা-ইমামের এক চাকরানী সেখানে এলো।
৬৭ সে হযরত সাফওয়ান আ.কে আগুন পোহাতে দেখলো এবং একদৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে থেকে বললো, “আপনিও তো ওই নাসরতের হযরত ইসা আ.র সাথে ছিলেন।” ৬৮ কিন্তু তিনি অস্বীকার করে বললেন, “তুমি যা বলছো তা আমি জানিও না, বুঝিও না।” অতঃপর তিনি বাইরের দরজার কাছে গেলেন আর একটি মোরগ ডেকে উঠলো। ৬৯ চাকরানী তাকে আবার দেখতে পেলো এবং যারা সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলো তাদের বলতে লাগলো, “এই লোকটি ওদেরই একজন।” ৭০ কিন্তু তিনি আবার অস্বীকার করলেন। যারা কাছে দাঁড়িয়ে ছিলো, তারাও কিছুক্ষণ পর হযরত পিতর রা.কে বললো, “নিশ্চয়ই তুমি ওদের একজন, কারণ তুমি তো গালিলের লোক।” ৭১ কিন্তু তিনি নিজেকে অভিশাপ দিলেন এবং কসম খেয়ে বললেন, “তোমরা যাঁর কথা বলছো, আমি তাঁকে চিনি না!” ৭২ আর তখনই দ্বিতীয়বার মোরগ ডেকে উঠলো। হযরত ইসা আ. যে বলেছিলেন, “মোরগ দু’বার ডাকার আগেই তুমি আমাকে তিনবার অস্বীকার করবে,”- সেকথা তখন হযরত সাফওয়া রা.র মনে পড়লো এবং তাতে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়লেন।
Facebook
WhatsApp
Telegram
Email
আল-মসিহঃ রুকু -১ ও ২
রুকু: ১ বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম ১ হযরত ইসা মসিহ আ. এর ইঞ্জিলের শুরু; ইনি আল্লাহর একান্ত প্রিয় মনোনীতজন । ২ ...
আল-মসিহঃ রুকু -৩ ও ৪
রুকু ৩ ১ হযরত ইসা আ. আবার সিনাগোগে গেলেন। সেখানে এক লোক ছিলো, যার একটি হাত শুকিয়ে গিয়েছিলো। ২ সাব্বাতে ...
আল মসিহঃ রুকু – ৫ ও ৬
রুকু ৫ ১ তারা লেক পার হয়ে গেরাসেনিদের এলাকায় গেলেন। ২ তিনি নৌকা থেকে নামার সাথে সাথেই ভূতে পাওয়া এক ...
আল-মসিহঃ রুকু ৭ ও ৮
রুকু - ৭ ১ কয়েকজন ফরিসি ও আলিম জেরুসালেম থেকে এসে তাঁর চারপাশে জড়ো হলেন। ২ তারা দেখলেন, কয়েকজন উম্মত ...
আল-মসিহঃ রুকু ৯ ও ১০
রুকু - ৯ ১ তিনি তাদের বললেন, “আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, এখানে এমন কয়েকজন আছে, যাদের কাছে আল্লাহর রাজ্য মহাশক্তিতে ...
আল-মসিহঃ রুকু ১১ ও ১২
রুকু - ১১ ১ তারা জেরুসালেম যাবার পথে জৈতুন পাহাড়ের গায়ের বৈতফগি ও বেথানিয়া গ্রামের কাছে এলেন। সেখানে পৌঁছে তিনি ...
আল-মসিহ, রুকুঃ ১৩ ও ১৪
রুকু ১৩ ১ বায়তুল-মোকাদ্দস থেকে বেরিয়ে যাবার সময় হাওয়ারিদের মধ্যে একজন তাঁকে বললেন, “হুজুর, দেখুন, কেমন বাছাই করা পাথর আর ...
আল-মসিহঃ রুকু- ১৫ ও ১৬
রুকু ১৫ ১ফজরের পরেই প্রধান ইমামেরা বুজুর্গ, আলেম ও মহাসভার সমস্ত লোকের সাথে পরামর্শ করলেন। তারা হযরত ইসা আ.কে বেঁধে ...