আল মসিহঃ রুকু – ৫ ও ৬

75587
Total
Visitors
অডিও শুনতে এখানে ক্লিক করুন

রুকু ৫

১ তারা লেক পার হয়ে গেরাসেনিদের এলাকায় গেলেন। ২ তিনি নৌকা থেকে নামার সাথে সাথেই ভূতে পাওয়া এক লোক গোরস্থান থেকে বের হয়ে তাঁর সামনে এলো। ৩ লোকটি গোরস্থানেই থাকতো এবং কেউ তাকে শেকল দিয়েও বেঁধে রাখতে পারতো না। ৪ তাকে প্রায়ই শেকল ও বেড়ি দিয়ে বাঁধা হতো কিন্তু সে শেকল ছিঁড়ে ফেলতো এবং বেড়ি ভেঙে ফেলতো। তাকে সামলানোর ক্ষমতা কারো ছিলো না। ৫ সে রাতদিন কবরে কবরে ও পাহাড়ে পাহাড়ে চিৎকার করে বেড়াতো এবং পাথর দিয়ে নিজেই নিজেকে আঘাত করতো।

৬ হযরত ইসা আ.-কে দূর থেকে দেখে সে দৌড়ে এসে তাঁর পায়ের ওপর উবুড় হয়ে পড়লো আর চিৎকার করে বললো, ৭ “হে ইসা, সর্বশক্তিমান আল্লাহর একান্তপ্রিয় মনোনীতজন! আমার সাথে আপনার কী? আমি আপনাকে আল্লাহর কসম দিয়ে বলছি, আপনি আমাকে কষ্ট দেবেন না।”
৮ সে একথা বললো, কারণ তিনি তাকে বলেছিলেন, “ভূত, এই লোকটির ভেতর থেকে বেরিয়ে যাও!” ৯ অতঃপর হযরত ইসা আ. তাকে জিজ্ঞেস করলেন, “তোমার নাম কী?” ১০ সে বললো, “আমার নাম ‘বাহিনী’, কারণ আমরা অনেকে আছি।” এরপর সে তাঁকে বারবার কাকুতি-মিনতি করে বললো, যেনো তিনি ওই এলাকা থেকে তাদের তাড়িয়ে না দেন।

১১ ওই সময় সেই জায়গায় পাহাড়ের গায়ে খুব বড়ো একপাল শূকর চরছিলো। ১২ ভূতেরা তাঁকে কাকুতি-মিনতি করে বললো, “ওই শূকরপালের মধ্যে আমাদের পাঠিয়ে দিন, যেনো আমরা ওদের ভেতর ঢুকতে পারি।” ১৩ সুতরাং তিনি তাদের অনুমতি দিলেন এবং ভূতেরা বের হয়ে শূকরগুলোর মধ্যে ঢুকে গেলো। এতে সমস্ত শূকর ঢালু পাড় দিয়ে জোরে দৌড়ে গিয়ে লেকে পড়ে ডুবে মরলো। সেই পালে প্রায় দু’হাজার শূকর ছিলো।

১৪ যারা শূকর চরাচ্ছিলো, তারা তখন দৌড়ে গিয়ে গ্রামে এবং খামারগুলোয় এ-খবর দিলো। তখন লোকেরা কী হয়েছে তা দেখতে এলো। ১৫ তারা হযরত ইসা আ. এর কাছে এসে দেখলো, যে-লোকটিকে অনেকগুলো ভূতে পেয়েছিলো, সে কাপড়চোপড় পরে সুস্থমনে বসে আছে। এটি দেখে তারা ভয় পেলো। ১৬ এ-ঘটনা যারা দেখেছিলো, তারা সেই ভূতে পাওয়া লোকটির ও সেই শূকরগুলোর বিষয়ে লোকদের জানালো। ১৭ অতঃপর তারা হযরত ইসা আ-কে অনুরোধ করতে লাগলো, যেনো তিনি তাদের এলাকা ছেড়ে চলে যান।

১৮ তিনি যখন নৌকায় উঠছিলেন, তখন যাকে ভূতে পেয়েছিলো, সেই লোকটি তাঁর সাথে যাবার জন্য কাকুতি-মিনতি করতে লাগলো। ১৯ কিন্তু হযরত ইসা আ. তাকে একথা বলে বিদায় করলেন, “তুমি তোমার বাড়িতে আপনজনদের কাছে ফিরে যাও এবং আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তোমার জন্য যে-মহৎ কাজ ও তোমার প্রতি যে-রহমত করেছেন তা তাদের জানাও।” ২০ সে তখন চলে গেলো এবং তিনি তার জন্য যা-কিছু করেছেন তা দিকাপলি এলাকায় বলে বেড়াতে লাগলো। এতে সকলে আশ্চর্য হলো।

২১ হযরত ইসা আ. যখন নৌকায় করে আবার লেকের অন্য পাড়ে গেলেন, তখন অনেক লোক এসে তাঁর চারপাশে ভিড় করলো। তিনি তখনো লেকের পাড়ে ছিলেন। ২২ সেই সময় জায়ির নামে সিনাগোগের এক নেতা সেখানে এলেন। তাঁকে দেখে তিনি তাঁর পায়ের ওপর উবুড় হয়ে পড়লেন এবং ২৩ অনেক কাকুতি-মিনতি করে বললেন, “আমার মেয়েটি মারা যাবার মতো হয়েছে। আপনি এসে তার ওপর আপনার হাত রাখুন, তাহলে সে সুস্থ হয়ে উঠবে এবং বাঁচবে।”

২৪ সুতরাং তিনি তার সাথে চললেন। অনেক লোক তাঁর সাথে সাথে যাচ্ছিলো এবং তাঁর চারপাশে ঠেলাঠেলি করছিলো। ২৫ সেই ভিড়ের মধ্যে এক মহিলা ছিলো, যে বারো বছর ধরে রক্তস্রাবে ভুগছিলো। ২৬ অনেক ডাক্তারের হাতে সে অনেক কষ্ট পেয়েছিলো আর তার যা-কিছু ছিলো, সবই সে খরচ করেছিলো; কিন্তু ভালো হওয়ার বদলে দিন দিন তার অবস্থা আরো খারাপ হচ্ছিলো।

২৭ হযরত ইসা আ. এর বিষয়ে শুনে সে ভিড়ের মধ্যেই তাঁর ঠিক পেছনে এসে তাঁর চাদরটি ছুঁলো। ২৮ কারণ সে বলছিলো, “যদি আমি তাঁর চাদরও ছুঁতে পারি, তাহলেই আমি ভালো হয়ে যাবো।” ২৯ সাথে সাথেই তার রক্তস্রাব বন্ধ হলো এবং সে তার নিজের শরীরের মধ্যেই বুঝতে পারলো যে, তার অসুখ ভালো হয়ে গেছে। ৩০ হযরত ইসা আ. তখনই বুঝলেন যে, তাঁর ভেতর থেকে শক্তি বের হয়েছে। সুতরাং তিনি ভিড়ের চারদিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “কে আমার চাদর ছুঁলো?”

৩১ তাঁর হাওয়ারিরা তাঁকে বললেন, “আপনি তো দেখছেন, লোকেরা আপনার চারপাশে ঠেলাঠেলি করছে, তবুও আপনি বলছেন, ‘কে আমাকে ছুঁলো’?” ৩২ তবুও একাজ কে করেছে তা দেখার জন্য তিনি চারদিকে তাকাতে লাগলেন। ৩৩ সেই মহিলা তার যা হয়েছে তা বুঝতে পেরে কাঁপতে কাঁপতে এসে তাঁর পায়ে পড়লো এবং সমস্ত সত্য ঘটনা জানালো। ৩৪ তিনি তাকে বললেন, “শোনো মা, তোমার ইমান তোমাকে সুস্থ করেছে, শান্তিতে চলে যাও এবং এই রোগ থেকে মুক্ত থাকো।”

৩৫ তখনো তিনি কথা বলছেন, এমন সময় সেই নেতার বাড়ি থেকে লোকেরা এসে বললো, “আপনার মেয়েটি মারা গেছে। হুজুরকে আর কেনো কষ্ট দিচ্ছেন?” ৩৬ তাদের কথা শুনে হযরত ইসা আ. সিনাগোগের নেতাকে বললেন, “ভয় করো না, কেবল বিশ্বাস করো।” ৩৭ তিনি কেবল হযরত সাফওয়ান রা., হযরত ইয়াকুব রা. ও তার ভাই হযরত ইউহোন্না রা.-কে তাঁর সাথে নিলেন। অতঃপর সিনাগোগের নেতার বাড়িতে এসে তিনি দেখলেন, খুব কোলাহল হচ্ছে। ৩৮ লোকেরা জোরে জোরে কান্নাকাটি ও মাতম করছে।
৩৯ ভেতরে গিয়ে তিনি তাদের বললেন, “তোমরা কেনো কোলাহল ও কান্নাকাটি করছো? মেয়েটি মরেনি, ঘুমোচ্ছে।” ৪০ একথা শুনে তারা হাসাহাসি করতে লাগলো। তিনি তাদের সবাইকে বের করে দিলেন এবং মেয়েটির বাবামা ও তাঁর সঙ্গীদের নিয়ে মেয়েটির ঘরে ঢুকলেন। ৪১ তিনি তার হাত ধরে বললেন, “টালিথা কুম!” অর্থাৎ “খুকি, ওঠো!” ৪২ আর তখনই মেয়েটি উঠে হেঁটে বেড়াতে লাগলো। এতে সবাই খুবই আশ্চর্য হলো। মেয়েটির বয়স ছিলো বারো বছর। ৪৩ তিনি তাদের কড়া হুকুম দিলেন, কেউ যেনো এটি না জানে এবং মেয়েটিকে কিছু খেতে দিতে বললেন।

রুকু ৬

১ তিনি সেই জায়গা ছেড়ে নিজের গ্রামে গেলেন এবং তাঁর সাহাবিরাও তাঁর সাথে গেলেন। ২ সাব্বাতে তিনি সিনাগোগে গিয়ে শিক্ষা দিতে লাগলেন। অনেক লোক তাঁর কথা শুনে আশ্চর্য হয়ে বলতে লাগলো, “এই লোক কোথা থেকে এসব শিক্ষা পেলো? এই যে-জ্ঞান তাকে দেয়া হয়েছে তা-ই বা কী? সে মোজেজাও দেখাচ্ছে! ৩ এ কি সেই কাঠমিস্ত্রি, মরিয়মের ছেলে, নয়? ইয়াকুব, জোসি, ইহুদা ও সিমোনের ভাই নয়? তার বোনেরা কি এখানে আমাদের মধ্যে নেই?” এভাবেই তাঁকে নিয়ে লোকেরা বাধা পেলো।

৪ তখন হযরত ইসা আ. তাদের বললেন, “নিজের গ্রাম, নিজের আত্মীয়-স্বজন ও নিজের বাড়ি ছাড়া আর সব জায়গাতেই নবিরা সম্মান পান।” ৫ তিনি সেখানে কয়েকজন অসুস্থের ওপর হাত রেখে তাদের সুস্থ করা ছাড়া আর কোনো মোজেজা দেখাতে পারলেন না। ৬ লোকেরা তাঁর ওপর ইমান আনলো না দেখে তিনি খুব আশ্চর্য হলেন এবং গ্রামে গ্রামে গিয়ে শিক্ষা দিতে লাগলেন।

৭ অতঃপর তিনি সেই বারোজনকে নিজের কাছে ডাকলেন এবং প্রচার করার জন্য দু’জন দু’জন করে পাঠিয়ে দিলেন। তিনি তাদের ক্ষমতা দিলেন ভূতদের ওপর। ৮ তিনি তাদের এই হুকুম দিলেন, তারা যেনো যাত্রাপথের জন্য একটি লাঠি ছাড়া আর কিছুই না নেন; এমনকি রুটি, থলি, টাকাপয়সাও না। ৯ তিনি তাদের জুতা পরতে বললেন বটে কিন্তু একটির বেশি দুটো জামা পরতে নিষেধ করলেন। ১০ তিনি তাদের বললেন, “তোমরা যেখানে যে-বাড়িতে ঢুকবে, সেই জায়গা ছেড়ে না যাওয়া পর্যন্ত সেই বাড়িতেই থেকো। ১১ কোনো জায়গায় লোকেরা যদি তোমাদের গ্রহণ না করে এবং তোমাদের কথা না শোনে, তবে সেই জায়গা ছেড়ে চলে যাবার সময় তোমাদের পায়ের ধুলো ঝেড়ে ফেলো, যেনো সেটিই তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষী হয়।”

১২ সুতরাং তারা গিয়ে প্রচার করতে লাগলেন যেনো লোকেরা তওবা করে। ১৩ তারা অনেক ভূত ছাড়ালেন এবং অনেক অসুস্থ লোকের মাথায় তেল দিয়ে সুস্থ করলেন।

১৪ হযরত ইসা আ. এর সুনাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছিলো বলে বাদশা হেরোদও তাঁর কথা শুনতে পেলেন। কোনো কোনো লোক বলছিলো, “উনিই সেই নবি হযরত ইয়াহিয়া আ.। তিনি মৃত থেকে জীবিত হয়ে উঠেছেন বলেই এসব মোজেজা দেখাচ্ছেন।” ১৫ কিন্তু অন্যরা বলছিলো, “উনি হযরত ইলিয়াস আ.” এবং কেউ কেউ বলছিলো, “অনেকদিন আগেকার নবিদের মতো উনিও একজন নবি।”

১৬ এসব কথা শুনে হেরোদ বললেন, “আমি যে-হযরত ইয়াহিয়া আ. এর মাথা কেটে ফেলেছিলাম, তিনি আবার বেঁচে উঠেছেন।” ১৭ হেরোদ লোক পাঠিয়ে তাঁকে বন্দি করেছিলেন এবং তাকে বেঁধে জেলে রেখেছিলেন। ১৮ তিনি তার ভাই ফিলিপের স্ত্রী হেরোদিয়ার জন্যই এটি করেছিলেন, কারণ তিনি হেরোদিয়াকে বিয়ে করেছিলেন। হযরত ইয়াহিয়া আ. হেরোদকে বলতেন, “আপনার ভাইয়ের স্ত্রীকে বিয়ে করা শরিয়ত-সম্মত হয়নি।” ১৯ এজন্য তাঁর ওপর হেরোদিয়ার খুব রাগ ছিলো। তিনি তাঁকে মেরে ফেলতে চেয়েছিলেন কিন্তু পারছিলেন না। ২০ হযরত ইয়াহিয়া আ. যে একজন দীনদার ও পবিত্রলোক, হেরোদ তা জানতেন বলে তাঁকে ভয় করতেন এবং তাঁকে বিপদের হাত থেকে রক্ষা করতেন। হযরত ইয়াহিয়া আ. এর কথা শোনার সময় মনে খুব অস্বস্তি বোধ করলেও হেরোদ তার কথা শুনতে ভালোবাসতেন।

২১ অবশেষে সেই সুযোগ এলো। হেরোদ নিজের জন্মদিনে তার বড়ো বড়ো, উচ্চপদস্ত রাজকর্মচারী, সেনাপতি ও গালিলের প্রধান প্রধান লোকদের জন্য ভোজের আয়োজন করলেন। ২২ হেরোদিয়ার মেয়ে সেই ভোজসভায় এসে নাচ দেখিয়ে হেরোদ ও তার মেহমানদের সন্তুষ্ট করলো। তখন বাদশা মেয়েটিকে বললেন, “তুমি যা চাবে, আমি তোমাকে তা-ই দেবো।” ২৩ তিনি তাকে শপথ করে বললেন, “তুমি আমার কাছে যা-কিছু চাবে, আমি তোমাকে তা-ই দেবো; এমনকি আমার রাজ্যের অর্ধেক পর্যন্ত হলেও দেবো!”

২৪ সে বাইরে গিয়ে তার মাকে বললো, “আমি কী চাবো?” তিনি বললেন, “হযরত ইয়াহিয়া আ.এর মাথা।” ২৫ সে তখনই গিয়ে বাদশাকে বললো, “আমার ইচ্ছে এই যে, আপনি এখনই একটি থালায় করে আমাকে হযরত ইয়াহিয়া আ. এর মাথা এনে দিন।” ২৬ বাদশা খুব দুঃখিত হলেন কিন্তু ভোজে যারা অংশ নিয়েছিলেন, তাদের সামনে কসম খেয়েছিলেন বলে মেয়েটিকে ফিরিয়ে দিতে চাইলেন না। ২৭ বাদশা তখনই হযরত ইয়াহিয়া আ. এর মাথা কেটে আনার জন্য একজন জল্লাদকে হুকুম দিলেন। ২৮ সে জেলখানায় গিয়ে তাঁর মাথা কেটে ফেললো এবং থালায় করে এনে মেয়েটিকে দিলো; ২৯ আর মেয়েটি তা নিয়ে গিয়ে তার মাকে দিলো। এই খবর পেয়ে তাঁর সাহাবিরা এসে তাঁর দেহমোবারক নিয়ে গিয়ে দাফন করলেন।

৩০ হাওয়ারিরা হযরত ইসা আ. এর কাছে ফিরে এলেন এবং তারা যা যা করেছেন ও শিক্ষা দিয়েছেন, তার সবই তাঁকে জানালেন। ৩১ সেই সময় অনেক লোক সেখানে আসাযাওয়া করছিলো বলে তারা কিছু খাবার সুযোগ পেলেন না। সেজন্য তিনি তাদের বললেন, “তোমরা কোনো একটি নির্জন জায়গায় এসে কিছুক্ষণ বিশ্রাম করো।”

৩২ তখন তারা নৌকায় করে একটি নির্জন জায়গার উদ্দেশে রওনা দিলেন। ৩৩ তাদের যেতে দেখে অনেকেই তাদের চিনতে পারলো; এবং আশেপাশের গ্রামগুলো থেকে দৌড়ে গিয়ে তাদের আগেই সেখানে উপস্থিত হলো। ৩৪ তিনি নৌকা থেকে নেমে অনেক লোক দেখতে পেলেন। তাদের জন্য তাঁর খুব মমতা হলো, কারণ তাদের অবস্থা রাখালহীন ভেড়ার মতো ছিলো। তিনি তাদের অনেক বিষয়ে শিক্ষা দিতে লাগলেন ।

৩৫ দিনের শেষে হাওয়ারিরা এসে তাঁকে বললেন, “জায়গাটি নির্জন, বেলাও প্রায় ডুবে গেছে; ৩৬ এদের বিদায় দিন, যেনো এরা আশেপাশের পাড়া ও গ্রামগুলোতে গিয়ে নিজেদের জন্য কিছু খাবার কিনতে পারে।” ৩৭ কিন্তু তিনি তাদের উত্তর দিলেন, “তোমরাই ওদের কিছু খেতে দাও।” তারা তাঁকে বললেন, “আমরা কি দু’শ দিনারের রুটি কিনে এনে এদের খাওয়াবো?” ৩৮ তিনি তাদের বললেন, “তোমাদের কাছে ক’টি রুটি আছে? গিয়ে দেখো।” তারা দেখে এসে বললেন, “পাঁচটি এবং দুটো মাছ।”

৩৯ তখন প্রত্যেককে সবুজ ঘাসের ওপর সারি সারি বসিয়ে দেবার জন্য তিনি তাদের হুকুম দিলেন। ৪০ সুতরাং লোকেরা একশ একশ ও পঞ্চাশ পঞ্চাশজন করে সারি সারি বসে গেলো। ৪১ তিনি সেই পাঁচটি রুটি আর দুটো মাছ নিয়ে আসমানের দিকে তাকিয়ে শুকরিয়া জানালেন আর লোকদের দেবার জন্য রুটি ভেঙে হাওয়ারিদের হাতে দিলেন। ৪২ তিনি সকলকে মাছ দুটোও ভাগ করে দিলেন। সকলে খেলো এবং সন্তুষ্ট হলো। ৪৩ তারা বাকি রুটি ও মাছের টুকরোগুলো কুড়িয়ে নিয়ে বারোটি ঝুড়ি ভর্তি করলেন। ৪৪ যারা রুটি খেয়েছিলো, তাদের মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ছিলো পাঁচ হাজার।

৪৫ তখনই তিনি হাওয়ারিদেরকে তাগাদা দিলেন, যেনো তারা নৌকায় উঠে তাঁর আগে লেকের ওপারে বেতসাইদা গ্রামে যান। ৪৬ এদিকে তিনি লোকদের বিদায় করে মোনাজাত করার জন্য পাহাড়ে উঠে গেলেন।

৪৭ সন্ধ্যায় হাওয়ারিদের নৌকাটি ছিলো লেকের মাঝখানে এবং তিনি একাই ডাঙায় ছিলেন। ৪৮ তিনি দেখলেন, হাওয়ারিরা খুব কষ্ট করে দাঁড় বাচ্ছেন, কারণ বাতাস তাদের উল্টো দিকে ছিলো। প্রায় শেষরাতের দিকে তিনি লেকের ওপর দিয়ে হেঁটে তাদের কাছে এলেন এবং তাদের ফেলে এগিয়ে যেতে চাইলেন। ৪৯ কিন্তু তারা তাঁকে পানির ওপর দিয়ে হাঁটতে দেখে ভূত মনে করে চিৎকার করে উঠলেন, ৫০ কারণ তাঁকে দেখে সকলেই ভয় পেয়েছিলেন। তখনই তিনি তাদের সাথে কথা বললেন। তিনি বললেন, “সাহস করো, এ তো আমি; ভয় করো না।” ৫১ তিনি তাদের নৌকায় ওঠার পর বাতাস থেমে গেলো। এতে তারা খুব আশ্চর্য হলেন; ৫২ কারণ রুটির ব্যাপারটি তারা বুঝতে পারেননি; তাদের মন কঠিন হয়ে ছিলো।

৫৩ অতঃপর তারা লেক পার হয়ে গিনেসরত এলাকায় এসে নৌকা বাঁধলেন। ৫৪ নৌকা থেকে নামতেই লোকেরা তাঁকে চিনতে পারলো ৫৫ এবং এলাকার সমস্ত জায়গায় দৌড়াদৌড়ি করতে লাগলো। তারপর তিনি কোথায় আছেন তা জেনে নিয়ে বিছানায় করে তাদের রোগীদের তাঁর কাছে বয়ে নিয়ে আসতে লাগলো।

৫৬ মাঠে-ময়দানে, গ্রামে বা নগরে, যেখানেই তিনি গেলেন, সেখানকার লোকেরা রোগীদের এনে বাজারের মধ্যে জড়ো করলো। তারা তাঁকে কাকুতি-মিনতি করলো, যেনো তারা কেবল তাঁর চাদরের ঝালরটি ছুঁতে পারে। আর যারা ছুঁলো তারা সুস্থ হলো।

Facebook
WhatsApp
Telegram
Email
আল-মসিহঃ রুকু -১ ও ২

আল-মসিহঃ রুকু -১ ও ২

রুকু: ১ বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম ১ হযরত ইসা মসিহ আ. এর ইঞ্জিলের শুরু; ইনি আল্লাহর একান্ত প্রিয় মনোনীতজন । ২ ...
আল-মসিহঃ রুকু -৩ ও ৪

আল-মসিহঃ রুকু -৩ ও ৪

রুকু ৩ ১ হযরত ইসা আ. আবার সিনাগোগে গেলেন। সেখানে এক লোক ছিলো, যার একটি হাত শুকিয়ে গিয়েছিলো। ২ সাব্বাতে ...
আল মসিহঃ রুকু - ৫ ও ৬

আল মসিহঃ রুকু – ৫ ও ৬

রুকু ৫ ১ তারা লেক পার হয়ে গেরাসেনিদের এলাকায় গেলেন। ২ তিনি নৌকা থেকে নামার সাথে সাথেই ভূতে পাওয়া এক ...
আল-মসিহঃ রুকু ৭ ও ৮

আল-মসিহঃ রুকু ৭ ও ৮

রুকু - ৭ ১ কয়েকজন ফরিসি ও আলিম জেরুসালেম থেকে এসে তাঁর চারপাশে জড়ো হলেন। ২ তারা দেখলেন, কয়েকজন উম্মত ...
আল-মসিহঃ রুকু ৯ ও ১০

আল-মসিহঃ রুকু ৯ ও ১০

রুকু - ৯ ১ তিনি তাদের বললেন, “আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, এখানে এমন কয়েকজন আছে, যাদের কাছে আল্লাহর রাজ্য মহাশক্তিতে ...
আল-মসিহঃ রুকু ১১ ও ১২

আল-মসিহঃ রুকু ১১ ও ১২

রুকু - ১১ ১ তারা জেরুসালেম যাবার পথে জৈতুন পাহাড়ের গায়ের বৈতফগি ও বেথানিয়া গ্রামের কাছে এলেন। সেখানে পৌঁছে তিনি ...
আল-মসিহ, রুকুঃ ১৩ ও ১৪

আল-মসিহ, রুকুঃ ১৩ ও ১৪

রুকু ১৩ ১ বায়তুল-মোকাদ্দস থেকে বেরিয়ে যাবার সময় হাওয়ারিদের মধ্যে একজন তাঁকে বললেন, “হুজুর, দেখুন, কেমন বাছাই করা পাথর আর ...
আল-মসিহঃ রুকু- ১৫ ও ১৬

আল-মসিহঃ রুকু- ১৫ ও ১৬

রুকু ১৫ ১ফজরের পরেই প্রধান ইমামেরা বুজুর্গ, আলেম ও মহাসভার সমস্ত লোকের সাথে পরামর্শ করলেন। তারা হযরত ইসা আ.কে বেঁধে ...