১ কিছুদিন পর তিনি আবার কফরনাহুমে এলেন। শোনা গেলো যে, তিনি ঘরে আছেন। ২ তখন এতো লোক সেখানে জড়ো হলো যে, ঘর তো দূরের কথা, দরজার বাইরেও কোনো জায়গা রইলো না। আর তিনি তাদের কাছে কালাম প্রচার করতে লাগলেন। ৩ এমন সময় কিছু লোক চার ব্যক্তিকে দিয়ে এক অবশরোগীকে তাঁর কাছে নিয়ে আসছিলো। ৪ কিন্তু ভিড়ের কারণে তারা যখন তাকে হযরত ইসা আ. এর কাছে নিয়ে যেতে পারলো না, তখন তিনি যেখানে ছিলেন, ঠিক তার ওপরের ছাদের কিছু অংশ তারা সরিয়ে ফেললো। অতঃপর সেই খোলা জায়গা দিয়ে বিছানাসহ সেই অবশরোগীকে নিচে নামিয়ে দিলো।
৫ হযরত ইসা আ. তাদের ইমান দেখে সেই অবশরোগীকে বললেন, “বাছা, তোমার গুনা মাফ করা হলো।” ৬ সেখানে কয়েকজন আলিম বসে ছিলেন। তারা মনে মনে ভাবছিলেন, ৭ “লোকটি এরকম কথা বলছে কেনো? সে তো কুফরি করছে! এক আল্লাহ ছাড়া আর কে গুনা মাফ করতে পারে?”
৮ তারা যে এসব কথা ভাবছেন তা হযরত ইসা আ. নিজের অন্তরে তখনই বুঝতে পারলেন এবং তাদের বললেন, “কেনো তোমরা মনে মনে ওসব কথা ভাবছো? ৯ এই অবশরোগীকে কোনটি বলা সহজ, ‘তোমার গুনা মাফ করা হলো,’ নাকি ‘ওঠো, তোমার বিছানা তুলে নিয়ে হেঁটে বেড়াও’? ১০ কিন্তু তোমরা যেনো জানতে পারো যে, দুনিয়াতে গুনা মাফ করার ক্ষমতা আদম সন্তানের আছে।”- এ-পর্যন্তবলে তিনি সেই অবশরোগীকে বললেন, ১১ “আমি তোমাকে বলছি, ওঠো, তোমার বিছানা তুলে নিয়ে বাড়ি চলে যাও।” ১২ সে উঠলো এবং তখনই তার বিছানা তুলে নিয়ে সকলের সামনে দিয়ে বাইরে চলে গেলো। এতে সকলে অবাক হয়ে বললো, ‘‘সুবহান আল্লাহ, আমরা কখনো এরকম দেখিনি!”
১৩ অতঃপর হযরত ইসা আ. আবার লেকের পাড়ে গেলেন। তখন অনেক লোক তাঁর কাছে এলো আর তিনি তাদের শিক্ষা দিলেন। ১৪ তিনি যেতে যেতে দেখলেন, লেবি ইবনে আলফিয়াস কর আদায় করার ঘরে বসে আছেন। তিনি তাকে বললেন, “আমাকে অনুসরণ করো।” এতে তিনি উঠে তাঁকে অনুসরণ করলেন।
১৫ তারপর তিনি যখন লেবির বাড়িতে খেতে বসলেন, তখন অনেক কর-আদায়কারী এবং গুনাগারও হযরত ইসা আ. ও তাঁর উম্মতদের সাথে বসলেন, কারণ তারা ছিলেন অনেক এবং তারা তাঁর পেছনে পেছনে যাচ্ছিলেন। ১৬ ফরিসিদের আলিমরা যখন দেখলেন, তিনি কর-আদায়কারী ও গুনাগারদের সাথে খাচ্ছেন, তখন তারা তাঁর উম্মতদেরকে বললেন, “উনি কর-আদায়কারী ও গুনাগারদের সাথে খাওয়াদাওয়া করেন কেনো?”
১৭ একথা শুনে হযরত ইসা আ. তাদের বললেন, “সুস্থদের জন্য ডাক্তারের দরকার নেই কিন্তু অসুস্থদের জন্য দরকার আছে; আমি দীনদারদের নয় কিন্তু গুনাগারদের ডাকতে এসেছি।”
১৮ হযরত ইয়াহিয়া আ. এর সাহাবিরা ও ফরিসিরা রোজা রেখেছিলেন। লোকেরা তাঁর কাছে এসে বললো, “হযরত ইয়াহিয়া আ. এর সাহাবি ও ফরিসিদের অনুসারীরা রোজা রাখেন কিন্তু আপনার উম্মতেরা রাখেন না কেনো?” ১৯ হযরত ইসা আ. তাদের বললেন, “বর সাথে থাকতে বিয়েতে আমন্ত্রিত লোকেরা রোজা রাখতে পারে কি? যতোদিন বর সাথে থাকে ততোদিন তারা রোজা রাখতে পারে না। ২০ কিন্তু সময় আসছে, যখন তাদের কাছ থেকে বরকে নিয়ে যাওয়া হবে আর তখন তারা রোজা রাখবে।
২১ কেউ পুরোনো কাপড়ে নতুন কাপড়ের তালি দেয় না; যদি দেয় তাহলে সেই পুরোনো কাপড় থেকে নতুন তালিটি ছিঁড়ে আসে, তাতে সেই ছেঁড়া আরো বড়ো হয়। ২২ পুরোনো চামড়ার থলিতে কেউ টাটকা আঙুররস রাখে না; যদি রাখে, তাহলে টাটকা রসের দরুন থলি ফেটে গিয়ে রস ও থলি দুটোই নষ্ট হয় কিন্তু টাটকা রস নতুন থলিতেই রাখা হয়।”
২৩ এক সাব্বাতে তিনি ফসলের মাঠ দিয়ে যাচ্ছিলেন। যেতে যেতে তাঁর উম্মতেরা গমের শিষ ছিঁড়তে লাগলেন । ২৪ এতে ফরিসিরা তাঁকে বললেন, “দেখুন, সাব্বাতে যা করা উচিত নয়, ওরা তা করছে কেনো?” ২৫ তিনি তাদের বললেন, “যখন হযরত দাউদ আ. ও তার সঙ্গীরা ক্ষুধার্ত ছিলেন এবং তাদের খাবারের প্রয়োজন ছিলো, তখন তিনি যা করেছিলেন তা কি তোমরা কখনো পড়োনি? ২৬ প্রধান ইমাম অবিয়াথরের সময়ে তিনি আল্লাহর ঘরে প্রবেশ করে আল্লাহর উদ্দেশে দান করা রুটি, যা ইমামদের ছাড়া অন্য কারো জন্য খাওয়া ঠিক নয়, তা খেয়েছিলেন এবং সঙ্গীদেরও দিয়েছিলেন। ” ২৭ তিনি তাদের আরো বললেন, “মানুষের জন্যই সাব্বাতের সৃষ্টি হয়েছে কিন্তু সাব্বাতের জন্য মানুষের সৃষ্টি হয়নি। ২৮ সুতরাং আদম সন্তান সাব্বাতেরও মালিক।”