ইবনুল-ইনসান: রুকু – ৫

84952
Total
Visitors
অডিও শুনতে এখানে ক্লিক করুন

১এক সময় হযরত ইসা আ. গিনেসরত লেকের পাড়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন এবং লোকেরা আল্লাহর কালাম শোনার জন্য তাঁর চারপাশে ভিড় করে ঠেলাঠেলি করছিলো। ২তিনি লেকের ধারে দুইটা নৌকা দেখতে পেলেন। জেলেরা নৌকা থেকে নেমে তাদের জাল ধুচ্ছিলো। ৩তখন তিনি একটি নৌকায় উঠে বসলেন। এটি ছিলো হযরত সাফওয়ান রা.র নৌকা এবং তিনি তাকে নৌকাটি কিনারা থেকে একটু দূরে নিয়ে যেতে বললেন। তারপর তিনি নৌকায় বসে লোকদের শিক্ষা দিতে লাগলেন। ৪শিক্ষা দেয়া শেষ করে তিনি সাফওয়ানকে বললেন, “মাছ ধরার জন্য গভীর পানিতে গিয়ে তোমাদের জাল ফেলো।” ৫হযরত সাফওয়ান রা. বললেন, “হুজুর, আমরা সারারাত পরিশ্রম করেও কিছুই ধরতে পারিনি, তবুও আপনার কথামতো আমি জাল ফেলবো।”

৬তারা যখন জাল ফেললেন, তখন এতো মাছ পেলেন যে, তাদের জাল ছিঁড়ে যেতে লাগলো। ৭তখন তারা সাহায্যের জন্য ইশারা করে অন্য নৌকার সঙ্গীদের ডাকলেন। তারা এসে দুটো নৌকায় এতো মাছ বোঝাই করলেন যে, সেগুলো ডুবে যেতে লাগলো। ৮তা দেখে হযরত সাফওয়ান পিতর হযরত ইসা আ.র সামনে হাঁটু গেড়ে বললেন, “মালিক, আমি গুনাহগার, আমার কাছ থেকে চলে যান।” ৯এতো মাছ ধরা পড়েছে দেখে তিনি ও তার সঙ্গীরা অবাক হলেন। ১০হযরত সাফওয়ান রা.র ব্যবসার অংশীদার হযরত ইয়াকুব রা. ও হযরত ইউহোন্না রা. নামে জাবিদির দু’ছেলেও আশ্চর্য হলেন। তখন হযরত ইসা আ. হযরত সাফওয়ান রা.কে বললেন, “ভয় করো না। এখন থেকে তুমি মানুষ ধরবে।” ১১তারপর তারা নৌকাগুলো কিনারে আনলেন এবং সবকিছু ফেলে রেখে হযরত ইসা আ.কে অনুসরণ করলেন।

১২একবার তিনি কোনো এক শহরে গেলেন। সেখানে এক লোকের সারা গায়ে কুষ্ঠরোগ ছিলো। হযরত ইসা আ.কে দেখে সে উবুড় হয়ে পড়ে কাকুতি-মিনতি করে বললো, “হুজুর, আপনি ইচ্ছা করলেই আমাকে পাকসাফ করতে পারেন।” ১৩তিনি হাত বাড়িয়ে তাকে ছুঁয়ে বললেন, “আমি তা-ই চাই, তুমি পাকসাফ হও।” আর তখনই কুষ্ঠরোগ তাকে ছেড়ে গেলো।

 

১৪আর তিনি তাকে এ-বিষয়ে কাউকে কিছু বলতে নিষেধ করে বললেন, “যাও, ইমামের কাছে গিয়ে নিজেকে দেখাও এবং তাদের কাছে সাক্ষ্য হিসেবে পাকসাফ হওয়ার জন্য হযরত মুসা আ. যা কোরবানি দেবার হুকুম দিয়েছেন তা আদায় করো।”

১৫কিন্তু এভাবে হযরত ইসা আ.র কথা আরো বেশি ছড়িয়ে পড়লো। তাঁর কথা শোনার ও রোগ থেকে সুস্থ হওয়ার জন্য অনেক লোক তাঁর কাছে আসতে লাগলো। ১৬কিন্তু তিনি প্রায়ই নির্জন জায়গায় মোনাজাত করার জন্য চলে যেতেন।

১৭একদিন তিনি যখন শিক্ষা দিচ্ছিলেন, তখন ফরিসিরা ও আলিমরা সেখানে বসে ছিলেন। তারা গালিল, ইহুদিয়া ও জেরুসালেমের প্রত্যেক গ্রাম থেকে এসেছিলেন। এবং সুস্থ করার জন্য আল্লাহর ক্ষমতা তাঁর সাথে ছিলো। ১৮তখনই কয়েক ব্যক্তি এক অবশরোগীকে খাটে করে বয়ে আনলো। তারা তাকে ভেতরে নিয়ে গিয়ে হযরত ইসা আ.র সামনে রাখার চেষ্টা করলো ১৯কিন্তু ভিড়ের জন্য ভেতরে যাওয়ার পথ পেলো না। তখন তারা ছাদে উঠলো এবং ছাদের টালি সরিয়ে বিছানাসহ তাকে লোকদের মাঝখানে, হযরত ইসা আ.র সামনে, নামিয়ে দিলো। ২০তাদের ইমান দেখে তিনি বললেন, “বন্ধু, তোমার গুনাহ মাফ করা হলো।” ২১এতে আলিমরা ও ফরিসিরা মনে মনে ভাবতে লাগলেন, “এই লোকটি কে, যে কুফরি করছে? একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কে গুনাহ মাফ করতে পারে?” ২২হযরত ইসা আ. তাদের মনের কথা বুঝতে পেরে বললেন, “কেনো তোমরা মনে মনে ওই কথা ভাবছো? ২৩কোনটি বলা সহজ, ‘তোমার গুনাহ মাফ করা হলো,’ নাকি ‘তুমি উঠে হেঁটে বেড়াও’? ২৪কিন্তু তোমরা যেনো জানতে পারো যে, দুনিয়াতে গুনাহ মাফ করার ক্ষমতা ইবনুল-ইনসানের আছে।”- এ-পর্যন্ত বলে তিনি সেই অবশরোগীকে বললেন, “আমি তোমাকে বলছি, ওঠো, তোমার বিছানা তুলে নিয়ে তোমার বাড়ি চলে যাও।” ২৫সে তখনই সকলের সামনে উঠে দাঁড়ালো এবং যে-বিছানার ওপর শুয়ে ছিলো তা তুলে নিয়ে আল্লাহর প্রশংসা করতে করতে নিজের বাড়ি চলে গেলো। ২৬তাতে সবাই খুব আশ্চর্য হলো এবং সশ্রদ্ধ ভয়ে আল্লাহর প্রশংসা করে বললো, “আজ আমরা কি আশ্চর্য ঘটনা দেখলাম!”

২৭এরপর হযরত ইসা আ. বাইরে গেলেন এবং কর আদায় করার ঘরে লেবি নামে এক কর-আদায়কারীকে বসে থাকতে দেখলেন। তিনি তাকে বললেন, “আমাকে অনুসরণ করো।” ২৮তিনি উঠলেন এবং সবকিছু ফেলে রেখে তাঁকে অনুসরণ করলেন। ২৯পরে লেবি তাঁর সম্মানে নিজের বাড়িতে একটি বড়ো ভোজের আয়োজন করলেন এবং তাদের সাথে অনেক কর-আদায়কারী ও অন্য লোকেরা খেতে বসলো। ৩০ফরিসিরা ও তাদের আলিমরা তাঁর হাওয়ারিদের কাছে অভিযোগ করে বললেন, “তোমরা কর-আদায়কারী ও গুনাহগারদের সাথে খাওয়া-দাওয়া করো কেনো?” ৩১হযরত ইসা আ. উত্তর দিলেন, “সুস্থদের জন্য ডাক্তারের দরকার নেই, বরং অসুস্থদের জন্যই দরকার আছে। ৩২আমি দীনদারদের নয় কিন্তু গুনাহগারদের তওবা করার জন্য ডাকতে এসেছি।”

৩৩পরে তারা তাঁকে বললেন, “ফরিসিদের অনুসারীদের মতো হযরত ইয়াহিয়া আ.র সাহাবিরা প্রায়ই রোজা রাখেন ও মোনাজাত করেন কিন্তু আপনার হাওয়ারিরা শুধু খাওয়া-দাওয়া করেন।” ৩৪হযরত ইসা আ. তাদের বললেন, “বর সাথে থাকতে তোমরা বিয়ে বাড়ির লোকদের রোজা রাখাতে পারো না, পারো কি? ৩৫কিন্তু এমন সময় আসবে, যখন তাদের কাছ থেকে বরকে নিয়ে যাওয়া হবে, আর তখন ওই দিনগুলোতে তারা রোজা রাখবে।”

৩৬তিনি তাদের একটি দৃষ্টান্তও দিলেন- “নতুন জামা থেকে কেটে নিয়ে কেউ পুরোনো জামায় তালি দেয় না। যদি দেয়, তাহলে নতুনটিও নষ্ট হয়ে যায়, আর সেই নতুন তালিটিও পুরোনো জামার সাথে মানায় না। ৩৭টাটকা আঙুররস কেউ পুরোনো চামড়ার থলিতে রাখে না। যদি রাখে, তাহলে টাটকা রসে থলি ফেটে যায়। তাতে রসও পড়ে যায়, থলিও নষ্ট হয়। ৩৮কিন্তু টাটকা আঙুররস নতুন চামড়ার থলিতেই রাখা হয়। ৩৯পুরোনো আঙুররস খাবার পরে কেউ টাটকা আঙুররস খেতে চায় না, বরং বলে, ‘পুরোনোটাই ভালো।’”

Facebook
WhatsApp
Telegram
Email
ইবনুল-ইনসান: রুকু - ১

ইবনুল-ইনসান: রুকু – ১

১,২মাননীয় থিয়ফিল, আমাদের মধ্যে যেসব ঘটনা ঘটেছে তা যারা প্রথম থেকে নিজের চোখে দেখেছেন ও আল্লাহর কালাম প্রচার করেছেন, তারা ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু - ২

ইবনুল-ইনসান: রুকু – ২

১সেই সময় আগস্ত কাইসার তার গোটা সাম্রাজ্যে আদম-শুমারির হুকুম দিলেন। ২সিরিয়ার গভর্নর কুরিনিয়ের সময় এই প্রথমবারের মতো আদম-শুমারি হয়। ৩নাম ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু - ৩

ইবনুল-ইনসান: রুকু – ৩

১সম্রাট টাইবেরিয়াসের রাজত্বের পনের বছরের সময় পন্তিয়াস পিলাত যখন ইহুদিয়া প্রদেশের গভর্নর, হেরোদ গালিল প্রদেশ এবং তার ভাই ফিলিপ ইতুরিয়া ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু - ৪

ইবনুল-ইনসান: রুকু – ৪

১হযরত ইসা আ. আল্লাহর রুহে পূর্ণ হয়ে জর্দান থেকে ফিরে এলেন এবং সেই রুহের পরিচালনায় তাঁকে মরু প্রান্তরে যেতে হলো। ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু - ৫

ইবনুল-ইনসান: রুকু – ৫

১এক সময় হযরত ইসা আ. গিনেসরত লেকের পাড়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন এবং লোকেরা আল্লাহর কালাম শোনার জন্য তাঁর চারপাশে ভিড় করে ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু - ৬

ইবনুল-ইনসান: রুকু – ৬

১কোনো এক সাব্বাতে হযরত ইসা আ. ফসলের মাঠ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তাঁর হাওয়ারিরা শিষ ছিঁড়ে হাতে ঘষে ঘষে খেতে লাগলেন।২এতে কয়েকজন ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ৭

ইবনুল-ইনসান: রুকু – ৭

১তিনি লোকদের কাছে তাঁর সব কথা শেষ করে কফরনাহুমে চলে গেলেন। ২সেখানে একজন শত-সৈন্যের সেনাপতির এক গোলাম ছিলো, যে তার ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু - ৮

ইবনুল-ইনসান: রুকু – ৮

১এরপরই তিনি গ্রামে গ্রামে ও শহরে শহরে ঘুরে আল্লাহর রাজ্যের সুখবর প্রচার করতে লাগলেন। তাঁর সাথে সেই বারোজনও ছিলেন। ২কয়েকজন ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু - ৯

ইবনুল-ইনসান: রুকু – ৯

১অতঃপর তিনি সেই বারোজনকে একত্রে ডাকলেন এবং তাদেরকে সমস্ত ভূতের ওপরে ক্ষমতা ও অধিকার এবং রোগ ভালো করার ক্ষমতাও দিলেন। ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু - ১০

ইবনুল-ইনসান: রুকু – ১০

১অতঃপর মসিহ আরো সত্তরজনকে মনোনীত করলেন। তিনি নিজে যে যে গ্রামে ও যে যে জায়গায় যাবেন বলে ঠিক করেছিলেন, সেসব ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু - ১১

ইবনুল-ইনসান: রুকু – ১১

১তিনি কোনো এক জায়গায় মোনাজাত করছিলেন। মোনাজাত শেষ হলে তাঁর কোনো এক হাওয়ারি তাঁকে বললেন, “হুজুর, হযরত ইয়াহিয়া আ. যেভাবে ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু - ১২

ইবনুল-ইনসান: রুকু – ১২

১এর মধ্যে হাজার হাজার লোক এমনভাবে জড়ো হলো যে, তারা ঠেলাঠেলি করে একে অন্যের ওপর পড়তে লাগলো। তিনি প্রথমে তাঁর ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু - ১৩

ইবনুল-ইনসান: রুকু – ১৩

১ঠিক ওই সময় যারা উপস্থিত ছিলো, তারা হযরত ইসা আ.কে বললো, গালিলের কিছু লোক যখন কোরবানি করছিলো, তখন তাদেরকে হত্যা ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু - ১৪

ইবনুল-ইনসান: রুকু – ১৪

১এক সাব্বাতে হযরত ইসা আ. ফরিসিদের এক নেতার বাড়িতে খেতে গেলেন। তারা গভীরভাবে তাঁকে লক্ষ্য করছিলেন। ২ঠিক ওই সময় তাঁর ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু ১৫

ইবনুল-ইনসান: রুকু ১৫

১সমস্ত কর-আদায়কারী ও গুনাহগাররা যখন তাঁর কথা শোনার জন্য তাঁর কাছে আসছিলো, ২তখন ফরিসিরা ও আলিমরা বিরক্তি প্রকাশ করে বলতে ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু - ১৬

ইবনুল-ইনসান: রুকু – ১৬

১অতঃপর তিনি সাহাবিদেরকে বললেন, “কোনো এক ধনী লোকের ম্যানেজারকে এই বলে দোষ দেয়া হলো যে, সে তার মালিকের ধন-সম্পত্তি নষ্ট ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু - ১৭

ইবনুল-ইনসান: রুকু – ১৭

১হযরত ইসা আ. তাঁর সাহাবিদের বললেন, “বাধা অবশ্যই আসবে কিন্তু দুর্ভাগ্য সেই লোকের, যার মধ্য দিয়ে বাধা আসে! ২কেউ যদি ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু - ১৮

ইবনুল-ইনসান: রুকু – ১৮

১মোনাজাতের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে হযরত ইসা আ. তাদেরকে একটি দৃষ্টান্ত দিলেন, যেনো তারা সব সময় মোনাজাত করেন এবং নিরাশ না হোন। ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু - ১৯

ইবনুল-ইনসান: রুকু – ১৯

১তিনি জিরিহোতে এসে শহরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন। ২সেখানে সক্কেয় নামে এক লোক ছিলেন। তিনি প্রধান কর-আদায়কারী এবং ধনী ছিলেন। ৩হযরত ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু - ২০

ইবনুল-ইনসান: রুকু – ২০

১একদিন তিনি যখন বায়তুল-মোকাদ্দসে লোকদের শিক্ষা দিচ্ছিলেন এবং ইঞ্জিল প্রচার করছিলেন, তখন বুজুর্গদের সাথে প্রধান ইমামেরা ও আলিমরা এলেন। ২তারা ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু - ২১

ইবনুল-ইনসান: রুকু – ২১

১পরে তিনি চেয়ে দেখলেন, ধনী লোকেরা বায়তুল-মোকাদ্দসের দানবাক্সে তাদের দান রাখছে। ২তিনি এও দেখলেন যে, এক গরিব বিধবা ছোট্ট দুটো ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু - ২২

ইবনুল-ইনসান: রুকু – ২২

১সেই সময় ইদুল-মাত্ছ কাছে এসে গিয়েছিলো। এটিকে ইদুল-ফেসাখও বলা হয়। ২প্রধান ইমামেরা ও আলিমরা তাঁকে হত্যা করার পথ খুঁজছিলেন, কারণ ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু - ২৩

ইবনুল-ইনসান: রুকু – ২৩

১তখন মহাসভার সবাই উঠে হযরত ইসা আ.কে পিলাতের কাছে নিয়ে গেলেন। ২তারা এই বলে তাঁর বিরুদ্ধে দোষ দিতে লাগলেন, “আমরা ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু - ২৪

ইবনুল-ইনসান: রুকু – ২৪

১কিন্তু সপ্তাহের প্রথম দিন খুব সকালে সেই মহিলারা তাদের তৈরি করা সুগন্ধি মসলা নিয়ে কবরের কাছে গেলেন। ২তারা দেখলেন, কবরের ...
error: <b>Alert: </b>Content selection is disabled!!