ইবনুল-ইনসান: রুকু – ৩

76042
Total
Visitors
অডিও শুনতে এখানে ক্লিক করুন

১সম্রাট টাইবেরিয়াসের রাজত্বের পনের বছরের সময় পন্তিয়াস পিলাত যখন ইহুদিয়া প্রদেশের গভর্নর, হেরোদ গালিল প্রদেশ এবং তার ভাই ফিলিপ ইতুরিয়া ও ত্রাখোনিয়া প্রদেশের শাসনকর্তা, লুসানিয়া ছিলেন অবিলিনির শাসনকর্তা ২আর হান্নান ও কাইয়াফা ছিলেন ইহুদিদের মহাইমাম, তখন মরু প্রান্তরে হযরত ইয়াহিয়া ইবনে জাকারিয়ার ওপর আল্লাহর কালাম নাযিল হলো।

৩তিনি জর্দান নদীর চারদিকে, সমস্ত এলাকায়, গিয়ে গুনাহ মাফের জন্য তওবার বায়াত প্রচার করতে লাগলেন। ৪হযরত ইসাইয়া নবির সহিফায় যেমন লেখা আছে, “মরুপ্রান্তরে একজনের কণ্ঠস্বর চিৎকার করে ঘোষণা করছে, ‘তোমরা মালিকের পথ প্রস্তুত করো, তাঁর রাস্তা সোজা করো। ৫সমস্ত উপত্যকা ভরা হবে, পাহাড়-পর্বত নিচু করা হবে, আঁকাবাঁকা রাস্তা সোজা করা হবে, অ-সমান রাস্তা সমান করা হবে। ৬এবং গোটা দুনিয়া আল্লাহর নাজাত দেখতে পাবে।’”

৭বায়াত নিতে আসা জনতাকে হযরত ইয়াহিয়া আ. বললেন, “সাপের বংশধরেরা! আসন্ন গজব থেকে পালিয়ে যাবার জন্য কে তোমাদের সতর্ক করলো? ৮তওবার উপযুক্ত ফল দেখাও। নিজেদের মনে মনে ভেবো না যে, ‘ হযরত ইব্রাহিম আ. আমাদের পূর্বপুরুষ।’ আমি তোমাদের বলছি, এই পাথরগুলো থেকে আল্লাহ হযরত ইব্রাহিম আ.র বংশধর তৈরি করতে পারেন। ৯এমনকি এখনই গাছের গোড়ায় কুড়াল লাগানো আছে। যে-গাছে ভালো ফল ধরে না তা কেটে আগুনে ফেলে দেয়া হবে।”

১০লোকেরা তাঁকে জিজ্ঞেস করলো, “তাহলে আমরা কী করবো?” ১১উত্তরে তিনি তাদের বললেন, “যার দুটো জামা আছে, সে যার নেই, তাকে একটি দিক এবং যার খাবার আছে, সেও ওরকমই করুক।”

১২এমনকি করআদায়-কারীরাও বায়াত নেবার জন্য এসে তাঁকে জিজ্ঞেস করলো, “হুজুর, আমরা কী করবো?” ১৩তিনি তাদের বললেন, “আইনে যা আছে তার বেশি আদায় করো না।” ১৪সৈন্যরাও তাকে জিজ্ঞেস করলো, “কিন্তু আমরা কী করবো?” তিনি তাদের বললেন, “জুলুম করে বা মিথ্যা দোষ দেখিয়ে কারো কাছ থেকে কিছু আদায় করো না এবং তোমাদের বেতনেই সন্তুষ্ট থেকো।”

১৫লোকেরা খুব আশা নিয়ে মনে মনে ভাবছিলো যে, হয়তো-বা হযরত ইয়াহিয়া আ.ই মসিহ, ১৬তাই হযরত ইয়াহিয়া আ. তাদের সবাইকে বললেন, “আমি তোমাদের পানিতে বায়াত দিচ্ছি কিন্তু যিনি আমার চেয়ে ক্ষমতাবান, তিনি আসছেন। আমি তাঁর জুতার ফিতা খোলারও যোগ্য নই। তিনি আল্লাহর রুহে ও আগুনে তোমাদের বায়াত দেবেন। ১৭ফসল মাড়ানোর জায়গা পরিষ্কার করে ফসল গোলায় জমা করার জন্য তাঁর কুলা তাঁর হাতেই আছে। কিন্তু যে-আগুন কখনো নেভে না, সেই আগুনে তিনি তুষ পুড়িয়ে ফেলবেন।”

১৮আরো অনেক উপদেশের মধ্য দিয়ে তিনি লোকদের মনে উৎসাহ জাগিয়ে সুখবর প্রচার করলেন। ১৯শাসনকর্তা-হেরোদের সমস্ত অন্যায় কাজ ও তার ভাইয়ের স্ত্রী হেরোদিয়ার জন্য হযরত ইয়াহিয়া আ. তাকে তিরস্কার করেছিলেন। ২০হযরত ইয়াহিয়া আ.কে জেলে বন্দি করে ওগুলোর সাথে হেরোদ আরো একটি কু-কর্ম যোগ করলেন।

২১সব লোককে যখন বায়াত দেয়া হলো এবং হযরত ইসা আ.ও বায়াত নিয়ে যখন মোনাজাত করছিলেন, তখন আসমান খুলে গেলো, ২২এবং আল্লাহর রুহ কবুতরের আকার নিয়ে তাঁর ওপরে নেমে এলেন। আর বেহেস্ত থেকে এক কণ্ঠস্বর শোনা গেলো, “তুমিই আমার একান্ত প্রিয় মনোনীতজন, তোমার ওপর আমি খুবই সন্তুষ্ট।”

২৩প্রায় ত্রিশ বছর বয়সে হযরত ইসা আ. তাঁর কাজ শুরু করলেন। লোকে মনে করতো তিনি হযরত ইউসুফের ছেলে। ২৪হযরত ইউসুফ আলির ছেলে; আলি মাতাতের ছেলে; মাতাত লেবির ছেলে; লেবি মাল্কির ছেলে; মাল্কি ইয়ান্নার ছেলে; ইয়ান্না ইউসুফের ছেলে; ২৫ইউসুফ মাতাতিয়ার ছেলে; মাতাতিয়া আমোসের ছেলে; আমোস নাহুমের ছেলে; নাহুম হাসলির ছেলে; হাসলি নাজ্জার ছেলে;

২৬নাজ্জা মাতের ছেলে; মাত মাতাতিয়ার ছেলে; মাতাতিয়া সিমির ছেলে; সিমি ইউসেখের ছেলে; ২৭ইউসেখ ইহুদার ছেলে; ইহুদা ইউহোন্নার ছেলে; ইউহোন্না রিসার ছেলে; রিসা ঝারবাবিলের ছেলে; ঝারবাবিল সলতিয়েলের ছেলে; ২৮সলতিয়েল নিরের ছেলে; নির মালকির ছেলে; মালকি আদ্দার ছেলে; আদ্দা কুসামের ছেলে; কুসাম মুদামের ছেলে; মুদাম ইরের ছেলে; ২৯ইর ইয়াসুয়ার ছেলে; ইয়াসুয়া লায়াঝারের ছেলে; লায়াঝার ইউরিমের ছেলে; ইউরিম মাতাতের ছেলে; মাতাত লেবির ছেলে; ৩০লেবি সিমোনের ছেলে; সিমোন ইহুদার ছেলে; ইহুদা ইউসুফের ছেলে; ইউসুফ ইউনুসের ছেলে; ইউনুস আলি ইয়াকিমের ছেলে; ৩১আলি ইয়াকিম মালায়ার ছেলে; মালায়া মান্নার ছেলে; মান্না মাতাতার ছেলে; মাতাতা নাসোনের ছেলে; নাসোন দাউদের ছেলে; ৩২দাউদ ইয়াচ্ছার ছেলে; ইয়াচ্ছা ওবেদের ছেলে; ওবেদ বোয়াযের ছেলে; বোয়ায সালিমের ছেলে; সালিম নাহিসের ছেলে; ৩৩নাহিস আমিনাদাবের ছেলে; আমিনাদাব অরামের ছেলে; অরাম হাছিরের ছেলে; হাছির ফারিসের ছেলে; ফারিস ইহুদার ছেলে; ৩৪ হযরত ইহুদা হযরত ইয়াকুব আ.র ছেলে; হযরত ইয়াকুব হযরত ইসহাক আ.র ছেলে; হযরত ইসহাক আ. হযরত ইব্রাহিম আ.র ছেলে; হযরত ইব্রাহিম আ. তারহের ছেলে; তারহ নাহুরের ছেলে; ৩৫নাহুর সারুজের ছেলে; সারুজ রাউর ছেলে; রাউ ফালাকের ছেলে; ফালাক আবিরের ছেলে; আবির সালাহের ছেলে; ৩৬সালাহ কেনানের ছেলে; কেনান আরফাখসাদের ছেলে; আরফাখসাদ সামের ছেলে; সাম নুহের ছেলে; নুহ লামিকের ছেলে; ৩৭লামিক মাতুসালার ছেলে; মাতুসালা ইদ্রিসের ছেলে; ইদ্রিস ইয়ারিদের ছেলে; ইয়ারিদ মাহলালিলের ছেলে; মাহলালিল কেনানের ছেলে; ৩৮কেনান আনুসের ছেলে; আনুস সিসের ছেলে; সিস হযরত আদম আ.র ছেলে; হযরত আদম আ. আল্লাহর খলিফা।

Facebook
WhatsApp
Telegram
Email
ইবনুল-ইনসান: রুকু - ১

ইবনুল-ইনসান: রুকু – ১

১,২মাননীয় থিয়ফিল, আমাদের মধ্যে যেসব ঘটনা ঘটেছে তা যারা প্রথম থেকে নিজের চোখে দেখেছেন ও আল্লাহর কালাম প্রচার করেছেন, তারা ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু - ২

ইবনুল-ইনসান: রুকু – ২

১সেই সময় আগস্ত কাইসার তার গোটা সাম্রাজ্যে আদম-শুমারির হুকুম দিলেন। ২সিরিয়ার গভর্নর কুরিনিয়ের সময় এই প্রথমবারের মতো আদম-শুমারি হয়। ৩নাম ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু - ৩

ইবনুল-ইনসান: রুকু – ৩

১সম্রাট টাইবেরিয়াসের রাজত্বের পনের বছরের সময় পন্তিয়াস পিলাত যখন ইহুদিয়া প্রদেশের গভর্নর, হেরোদ গালিল প্রদেশ এবং তার ভাই ফিলিপ ইতুরিয়া ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু - ৪

ইবনুল-ইনসান: রুকু – ৪

১হযরত ইসা আ. আল্লাহর রুহে পূর্ণ হয়ে জর্দান থেকে ফিরে এলেন এবং সেই রুহের পরিচালনায় তাঁকে মরু প্রান্তরে যেতে হলো। ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু - ৫

ইবনুল-ইনসান: রুকু – ৫

১এক সময় হযরত ইসা আ. গিনেসরত লেকের পাড়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন এবং লোকেরা আল্লাহর কালাম শোনার জন্য তাঁর চারপাশে ভিড় করে ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু - ৬

ইবনুল-ইনসান: রুকু – ৬

১কোনো এক সাব্বাতে হযরত ইসা আ. ফসলের মাঠ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তাঁর হাওয়ারিরা শিষ ছিঁড়ে হাতে ঘষে ঘষে খেতে লাগলেন।২এতে কয়েকজন ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ৭

ইবনুল-ইনসান: রুকু – ৭

১তিনি লোকদের কাছে তাঁর সব কথা শেষ করে কফরনাহুমে চলে গেলেন। ২সেখানে একজন শত-সৈন্যের সেনাপতির এক গোলাম ছিলো, যে তার ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু - ৮

ইবনুল-ইনসান: রুকু – ৮

১এরপরই তিনি গ্রামে গ্রামে ও শহরে শহরে ঘুরে আল্লাহর রাজ্যের সুখবর প্রচার করতে লাগলেন। তাঁর সাথে সেই বারোজনও ছিলেন। ২কয়েকজন ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু - ৯

ইবনুল-ইনসান: রুকু – ৯

১অতঃপর তিনি সেই বারোজনকে একত্রে ডাকলেন এবং তাদেরকে সমস্ত ভূতের ওপরে ক্ষমতা ও অধিকার এবং রোগ ভালো করার ক্ষমতাও দিলেন। ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু - ১০

ইবনুল-ইনসান: রুকু – ১০

১অতঃপর মসিহ আরো সত্তরজনকে মনোনীত করলেন। তিনি নিজে যে যে গ্রামে ও যে যে জায়গায় যাবেন বলে ঠিক করেছিলেন, সেসব ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু - ১১

ইবনুল-ইনসান: রুকু – ১১

১তিনি কোনো এক জায়গায় মোনাজাত করছিলেন। মোনাজাত শেষ হলে তাঁর কোনো এক হাওয়ারি তাঁকে বললেন, “হুজুর, হযরত ইয়াহিয়া আ. যেভাবে ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু - ১২

ইবনুল-ইনসান: রুকু – ১২

১এর মধ্যে হাজার হাজার লোক এমনভাবে জড়ো হলো যে, তারা ঠেলাঠেলি করে একে অন্যের ওপর পড়তে লাগলো। তিনি প্রথমে তাঁর ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু - ১৩

ইবনুল-ইনসান: রুকু – ১৩

১ঠিক ওই সময় যারা উপস্থিত ছিলো, তারা হযরত ইসা আ.কে বললো, গালিলের কিছু লোক যখন কোরবানি করছিলো, তখন তাদেরকে হত্যা ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু - ১৪

ইবনুল-ইনসান: রুকু – ১৪

১এক সাব্বাতে হযরত ইসা আ. ফরিসিদের এক নেতার বাড়িতে খেতে গেলেন। তারা গভীরভাবে তাঁকে লক্ষ্য করছিলেন। ২ঠিক ওই সময় তাঁর ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু ১৫

ইবনুল-ইনসান: রুকু ১৫

১সমস্ত কর-আদায়কারী ও গুনাহগাররা যখন তাঁর কথা শোনার জন্য তাঁর কাছে আসছিলো, ২তখন ফরিসিরা ও আলিমরা বিরক্তি প্রকাশ করে বলতে ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু - ১৬

ইবনুল-ইনসান: রুকু – ১৬

১অতঃপর তিনি সাহাবিদেরকে বললেন, “কোনো এক ধনী লোকের ম্যানেজারকে এই বলে দোষ দেয়া হলো যে, সে তার মালিকের ধন-সম্পত্তি নষ্ট ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু - ১৭

ইবনুল-ইনসান: রুকু – ১৭

১হযরত ইসা আ. তাঁর সাহাবিদের বললেন, “বাধা অবশ্যই আসবে কিন্তু দুর্ভাগ্য সেই লোকের, যার মধ্য দিয়ে বাধা আসে! ২কেউ যদি ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু - ১৮

ইবনুল-ইনসান: রুকু – ১৮

১মোনাজাতের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে হযরত ইসা আ. তাদেরকে একটি দৃষ্টান্ত দিলেন, যেনো তারা সব সময় মোনাজাত করেন এবং নিরাশ না হোন। ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু - ১৯

ইবনুল-ইনসান: রুকু – ১৯

১তিনি জিরিহোতে এসে শহরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন। ২সেখানে সক্কেয় নামে এক লোক ছিলেন। তিনি প্রধান কর-আদায়কারী এবং ধনী ছিলেন। ৩হযরত ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু - ২০

ইবনুল-ইনসান: রুকু – ২০

১একদিন তিনি যখন বায়তুল-মোকাদ্দসে লোকদের শিক্ষা দিচ্ছিলেন এবং ইঞ্জিল প্রচার করছিলেন, তখন বুজুর্গদের সাথে প্রধান ইমামেরা ও আলিমরা এলেন। ২তারা ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু - ২১

ইবনুল-ইনসান: রুকু – ২১

১পরে তিনি চেয়ে দেখলেন, ধনী লোকেরা বায়তুল-মোকাদ্দসের দানবাক্সে তাদের দান রাখছে। ২তিনি এও দেখলেন যে, এক গরিব বিধবা ছোট্ট দুটো ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু - ২২

ইবনুল-ইনসান: রুকু – ২২

১সেই সময় ইদুল-মাত্ছ কাছে এসে গিয়েছিলো। এটিকে ইদুল-ফেসাখও বলা হয়। ২প্রধান ইমামেরা ও আলিমরা তাঁকে হত্যা করার পথ খুঁজছিলেন, কারণ ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু - ২৩

ইবনুল-ইনসান: রুকু – ২৩

১তখন মহাসভার সবাই উঠে হযরত ইসা আ.কে পিলাতের কাছে নিয়ে গেলেন। ২তারা এই বলে তাঁর বিরুদ্ধে দোষ দিতে লাগলেন, “আমরা ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু - ২৪

ইবনুল-ইনসান: রুকু – ২৪

১কিন্তু সপ্তাহের প্রথম দিন খুব সকালে সেই মহিলারা তাদের তৈরি করা সুগন্ধি মসলা নিয়ে কবরের কাছে গেলেন। ২তারা দেখলেন, কবরের ...