১এক সাব্বাতে হযরত ইসা আ. ফরিসিদের এক নেতার বাড়িতে খেতে গেলেন। তারা গভীরভাবে তাঁকে লক্ষ্য করছিলেন। ২ঠিক ওই সময় তাঁর সামনে এক লোক বসে ছিলো, যার ছিলো শোত রোগ। ৩হযরত ইসা আ. আলিমদের ও ফরিসিদের জিজ্ঞেস করলেন, “সাব্বাতে কাউকে সুস্থ করা কি শরিয়ত-সম্মত, নাকি শরিয়ত-সম্মত নয়?” ৪কিন্তু তারা চুপ করে রইলেন। তখন হযরত ইসা আ. লোকটির গায়ে হাত দিয়ে তাকে ধরলেন এবং সুস্থ করলেন ও তাকে বিদায় করে দিলেন। ৫তারপর তিনি তাদের বললেন, “তোমাদের কারো ছেলে বা বলদ যদি সাব্বাতে কুয়োয় পড়ে যায়, তাহলে তোমরা কি তাকে তখনই তোলো না?” ৬তারা কোনো জবাব দিতে পারলেন না।
৭তিনি যখন দেখলেন যে, মেহমানরা কীভাবে সম্মানের জায়গাগুলো বেছে নিচ্ছে, তখন তিনি তাদের একটি দৃষ্টান্ত দিলেন- ৮“কেউ যখন তোমাকে বিয়েভোজে দাওয়াত করে, তখন সম্মানের জায়গায় গিয়ে বসবে না। হয়তো তোমার থেকেও সম্মানিত কাউকে দাওয়াত করা হয়েছে। ৯তাহলে যে তোমাকে ও তাকে দাওয়াত করেছে, সে এসে তোমাকে বলবে, ‘এই জায়গাটি ওনাকে ছেড়ে দাও।’ তখন তো তুমি লজ্জা পেয়ে সবচেয়ে নীচু জায়গায় বসতে যাবে। ১০কিন্তু তুমি যখন দাওয়াত পাবে, তখন বরং সবচেয়ে কম সম্মানের জায়গায় গিয়ে বসবে; তাহলে যে দাওয়াত করেছে, সে এসে তোমাকে বলবে, ‘বন্ধু, সামনে এসে বসো।’
তখন অন্য সব মেহমানদের সামনে তুমি সম্মান পাবে। ১১কারণ যে নিজেকে উঁচু করে, তাকে নীচু করা হবে; আর যে নিজেকে নীচু করে, তাকে উঁচু করা হবে।”
১২যিনি তাঁকে দাওয়াত করেছিলেন, তাকে তিনি বললেন, “যখন তুমি দুপুর কিংবা রাতে খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন করবে, তখন তোমার বন্ধুবান্ধব, ভাইবোন, আত্মীয়-স্বজন বা ধনী প্রতিবেশীদের দাওয়াত করবে না। হয়তো পরে তারাও এর বদলে তোমাকে দাওয়াত করবে আর এভাবেই তোমার দাওয়াত শোধ হয়ে যাবে। ১৩কিন্তু তুমি যখন বিশেষ খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন করবে, তখন গরিব, নুলা, খোঁড়া এবং অন্ধদের দাওয়াত করো। ১৪এতে তুমি রহমত পাবে। কারণ তারা তোমার সেই দাওয়াত শোধ করতে পারবে না। কেয়ামতের দিন দীনদারদের সাথে তুমি এর পুরস্কার পাবে।”
১৫যারা খেতে বসেছিলো, তাদের মধ্যে একজন একথা শুনে তাঁকে বললো, “ভাগ্যবান তিনি, যিনি আল্লাহর রাজ্যে খেতে বসবেন।” ১৬তখন হযরত ইসা আ. তাকে বললেন, “কোনো এক লোক বিরাট এক খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন করলো এবং অনেককে দাওয়াত দিলো। ১৭খাওয়ার সময় হলে সে তার গোলামকে দিয়ে মেহমানদের বলে পাঠালো, ‘আসুন, এখন সবই প্রস্তুত।’ ১৮কিন্তু তারা সবাই একজনের পর একজন অজুহাত দেখাতে লাগলো। প্রথমজন তাকে বললো, “আমি কিছু জমি কিনেছি, আমাকে গিয়ে তা দেখতে হবে; আমাকে ক্ষমা করো।’ ১৯আরেকজন বললো, ‘আমি পাঁচ জোড়া বলদ কিনেছি, সেগুলো পরীক্ষা করতে যাচ্ছি; আমাকে ক্ষমা করো।’ ২০অন্য আরেকজন বললো, ‘আমি সবেমাত্র বিয়ে করেছি, তাই যেতে পারছি না।’ ২১সেই গোলাম ফিরে গিয়ে তার মালিককে এসব জানালো। তাতে বাড়ির মালিক রাগ করে তার গোলামকে বললো, ‘তুমি তাড়াতাড়ি শহরের রাস্তায় রাস্তায় ও অলিগলিতে যাও এবং গরিব, নুলা, অন্ধ ও খোঁড়াদের নিয়ে এসো।’ ২২পরে সেই গোলাম বললো, ‘হুজুর, আপনার হুকুম অনুসারেই কাজ করা হয়েছে কিন্তু এখনো জায়গা রয়ে গেছে।’ ২৩এতে মালিক গোলামকে বললো, ‘শহরের বাইরে রাস্তায় রাস্তায় ও অলিগলিতে যাও এবং লোকদের ধরে নিয়ে এসো, যেনো আমার বাড়ি ভরে যায়। ২৪আমি তোমাদের বলছি, যাদের দাওয়াত করা হয়েছিলো, তাদের কেউই আমার এই খাবারের স্বাদ পাবে না।’”
২৫একবার এক বিশাল জনতা তাঁর সাথে সাথে যাচ্ছিলো। পেছন ফিরে তিনি তাদের বললেন, ২৬“যে আমার কাছে আসবে, সে যদি নিজের বাবা-মা, স্ত্রী, ছেলেমেয়ে, ভাইবোন, এমনকি নিজের জীবনকে পর্যন্ত আমার চেয়ে কম প্রিয় মনে না করে, তাহলে সে আমার উম্মত হতে পারে না। ২৭যে নিজের সলিব বয়ে নিয়ে আমার পেছনে না আসে, সে আমার উম্মত হতে পারে না।
২৮মনে করো তোমাদের মধ্যে কেউ একটি বড়ো দালান তৈরি করতে চায়, তাহলে সে কি প্রথমে বসে খরচের হিসেব করে না, যেনো ওটা শেষ করার জন্য তার যথেষ্ট টাকা আছে কিনা তা সে দেখতে পারে? ২৯তা না হলে ভিত্তি গাঁথার পরে যদি সে বাড়ির কাজ শেষ করতে না পারে, তাহলে যারা দেখবে, তারা সবাই তাকে নিয়ে ঠাট্টা করবে। ৩০তারা বলবে, ‘লোকটি গাঁথতে শুরু করেছিলো কিন্তু শেষ করতে পারলো না।’
৩১অথবা এক বাদশা যদি আরেক বাদশার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে যান, তাহলে তিনি প্রথমে বসে চিন্তা করবেন, ‘বিশ হাজার সৈন্য নিয়ে যিনি আমার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে আসছেন, মাত্র দশ হাজার সৈন্য নিয়ে আমি তাকে বাধা দিতে পারবো কি?’ ৩২যদি না পারেন, তাহলে সেই বাদশা দূরে থাকতেই তিনি লোক পাঠিয়ে শান্তির প্রস্তাব দেবেন। ৩৩অতএব, তোমরা যদি তোমাদের সবকিছু ছেড়ে না আসো, তাহলে তোমাদের মধ্যে কেউই আমার উম্মত হতে পারবে না।
৩৪লবণ ভালো জিনিস কিন্তু লবণের স্বাদ যদি নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে কেমন করে তা আবার নোনতা করা যাবে? ৩৫তখন তা না জমির, না সারের গাদার জন্য উপযুক্ত হয়; লোকে তা ফেলে দেয়। যার শোনার কান আছে সে শুনুক!”
Facebook
WhatsApp
Telegram
Email
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ১
১,২মাননীয় থিয়ফিল, আমাদের মধ্যে যেসব ঘটনা ঘটেছে তা যারা প্রথম থেকে নিজের চোখে দেখেছেন ও আল্লাহর কালাম প্রচার করেছেন, তারা ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ২
১সেই সময় আগস্ত কাইসার তার গোটা সাম্রাজ্যে আদম-শুমারির হুকুম দিলেন। ২সিরিয়ার গভর্নর কুরিনিয়ের সময় এই প্রথমবারের মতো আদম-শুমারি হয়। ৩নাম ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ৩
১সম্রাট টাইবেরিয়াসের রাজত্বের পনের বছরের সময় পন্তিয়াস পিলাত যখন ইহুদিয়া প্রদেশের গভর্নর, হেরোদ গালিল প্রদেশ এবং তার ভাই ফিলিপ ইতুরিয়া ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ৪
১হযরত ইসা আ. আল্লাহর রুহে পূর্ণ হয়ে জর্দান থেকে ফিরে এলেন এবং সেই রুহের পরিচালনায় তাঁকে মরু প্রান্তরে যেতে হলো। ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ৫
১এক সময় হযরত ইসা আ. গিনেসরত লেকের পাড়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন এবং লোকেরা আল্লাহর কালাম শোনার জন্য তাঁর চারপাশে ভিড় করে ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ৬
১কোনো এক সাব্বাতে হযরত ইসা আ. ফসলের মাঠ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তাঁর হাওয়ারিরা শিষ ছিঁড়ে হাতে ঘষে ঘষে খেতে লাগলেন।২এতে কয়েকজন ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ৭
১তিনি লোকদের কাছে তাঁর সব কথা শেষ করে কফরনাহুমে চলে গেলেন। ২সেখানে একজন শত-সৈন্যের সেনাপতির এক গোলাম ছিলো, যে তার ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ৮
১এরপরই তিনি গ্রামে গ্রামে ও শহরে শহরে ঘুরে আল্লাহর রাজ্যের সুখবর প্রচার করতে লাগলেন। তাঁর সাথে সেই বারোজনও ছিলেন। ২কয়েকজন ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ৯
১অতঃপর তিনি সেই বারোজনকে একত্রে ডাকলেন এবং তাদেরকে সমস্ত ভূতের ওপরে ক্ষমতা ও অধিকার এবং রোগ ভালো করার ক্ষমতাও দিলেন। ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ১০
১অতঃপর মসিহ আরো সত্তরজনকে মনোনীত করলেন। তিনি নিজে যে যে গ্রামে ও যে যে জায়গায় যাবেন বলে ঠিক করেছিলেন, সেসব ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ১১
১তিনি কোনো এক জায়গায় মোনাজাত করছিলেন। মোনাজাত শেষ হলে তাঁর কোনো এক হাওয়ারি তাঁকে বললেন, “হুজুর, হযরত ইয়াহিয়া আ. যেভাবে ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ১২
১এর মধ্যে হাজার হাজার লোক এমনভাবে জড়ো হলো যে, তারা ঠেলাঠেলি করে একে অন্যের ওপর পড়তে লাগলো। তিনি প্রথমে তাঁর ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ১৩
১ঠিক ওই সময় যারা উপস্থিত ছিলো, তারা হযরত ইসা আ.কে বললো, গালিলের কিছু লোক যখন কোরবানি করছিলো, তখন তাদেরকে হত্যা ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ১৪
১এক সাব্বাতে হযরত ইসা আ. ফরিসিদের এক নেতার বাড়িতে খেতে গেলেন। তারা গভীরভাবে তাঁকে লক্ষ্য করছিলেন। ২ঠিক ওই সময় তাঁর ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু ১৫
১সমস্ত কর-আদায়কারী ও গুনাহগাররা যখন তাঁর কথা শোনার জন্য তাঁর কাছে আসছিলো, ২তখন ফরিসিরা ও আলিমরা বিরক্তি প্রকাশ করে বলতে ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ১৬
১অতঃপর তিনি সাহাবিদেরকে বললেন, “কোনো এক ধনী লোকের ম্যানেজারকে এই বলে দোষ দেয়া হলো যে, সে তার মালিকের ধন-সম্পত্তি নষ্ট ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ১৭
১হযরত ইসা আ. তাঁর সাহাবিদের বললেন, “বাধা অবশ্যই আসবে কিন্তু দুর্ভাগ্য সেই লোকের, যার মধ্য দিয়ে বাধা আসে! ২কেউ যদি ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ১৮
১মোনাজাতের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে হযরত ইসা আ. তাদেরকে একটি দৃষ্টান্ত দিলেন, যেনো তারা সব সময় মোনাজাত করেন এবং নিরাশ না হোন। ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ১৯
১তিনি জিরিহোতে এসে শহরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন। ২সেখানে সক্কেয় নামে এক লোক ছিলেন। তিনি প্রধান কর-আদায়কারী এবং ধনী ছিলেন। ৩হযরত ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ২০
১একদিন তিনি যখন বায়তুল-মোকাদ্দসে লোকদের শিক্ষা দিচ্ছিলেন এবং ইঞ্জিল প্রচার করছিলেন, তখন বুজুর্গদের সাথে প্রধান ইমামেরা ও আলিমরা এলেন। ২তারা ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ২১
১পরে তিনি চেয়ে দেখলেন, ধনী লোকেরা বায়তুল-মোকাদ্দসের দানবাক্সে তাদের দান রাখছে। ২তিনি এও দেখলেন যে, এক গরিব বিধবা ছোট্ট দুটো ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ২২
১সেই সময় ইদুল-মাত্ছ কাছে এসে গিয়েছিলো। এটিকে ইদুল-ফেসাখও বলা হয়। ২প্রধান ইমামেরা ও আলিমরা তাঁকে হত্যা করার পথ খুঁজছিলেন, কারণ ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ২৩
১তখন মহাসভার সবাই উঠে হযরত ইসা আ.কে পিলাতের কাছে নিয়ে গেলেন। ২তারা এই বলে তাঁর বিরুদ্ধে দোষ দিতে লাগলেন, “আমরা ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ২৪
১কিন্তু সপ্তাহের প্রথম দিন খুব সকালে সেই মহিলারা তাদের তৈরি করা সুগন্ধি মসলা নিয়ে কবরের কাছে গেলেন। ২তারা দেখলেন, কবরের ...