কালিমাতুল্লাহঃ রুকু-৩

3343
Total
Visitors

নিকদিম নামে একজন ফরিসি ছিলেন; তিনি ছিলেন ইহুদিদের একজন নেতা। তিনি রাতের বেলায় হযরত ইসা আ. এর কাছে এলেন এবং বললেন, “হুজুর, আমরা জানি যে, আপনি আল্লাহর কাছ থেকে আগত একজন শিক্ষক; কারণ আপনি চিহ্ন হিসেবে যে-মোজেজা দেখাচ্ছেন, আল্লাহ সাথে না থাকলে কেউ তা করতে পারে না।”

হযরত ইসা আ. তাঁকে উত্তর দিলেন, “আমি তোমাকে সত্যি সত্যিই বলছি, যদি কেউ ওপর থেকে জন্ম না নেয় তবে সে আল্লাহর রাজ্য দেখতে পাবে না।” নিকদিম তাঁকে বললেন, “মানুষ বৃদ্ধ হলে পর কীভাবে আবার জন্ম নিতে পারে? সে কি দ্বিতীয়বার মায়ের গর্ভে গিয়ে জন্ম নিতে পারে?” হযরত ইসা আ. উত্তরে বললেন, “আমি তোমাকে সত্যি সত্যিই বলছি, যদি কেউ পানি ও রুহ্ থেকে জন্ম না নেয় তা হলে সে আল্লাহর রাজ্যে ঢুকতে পারবে না। যা মাংস থেকে জন্মে তা মাংস এবং যা রুহ্ থেকে জন্মে তা রুহ্।

আমি তোমাকে একথা বলায় আশ্চর্য হয়ো না যে, ‘তোমাকে অবশ্যই ওপর থেকে জন্ম নিতে হবে। বাতাস যেদিকে ইচ্ছা সেদিকে যায় এবং তুমি তার শব্দ শুনতে পাও কিন্তু জানো না তা কোথা থেকে আসে এবং কোথায় যায়। তাই যারা রুহ্ থেকে জন্ম নেয়, তাদেরও এমন হয়।”

নিকদিম তাঁকে বললেন, “এটি কীভাবে সম্ভব?” হযরত ইসা আ. তাঁকে উত্তর দিলেন, “তুমি বনি-ইসরাইলের শিক্ষক হয়েও এসব বোঝো না? আমি তোমাকে সত্যিই বলছি, আমরা যা জানি, তাই বলি এবং যা দেখেছি, সে-বিষয়ে সাক্ষ্য দেই; তবুও তোমরা আমাদের সাক্ষ্য গ্রহণ করো না। আমি যদি তোমাকে দুনিয়ার বিষয়ে বলি আর তুমি বিশ্বাস না করো, তাহলে আমি বেহেস্তের বিষয়ে বললে কীভাবে বিশ্বাস করবে? যিনি বেহেস্ত থেকে নেমে এসেছেন, সেই ইবনুল-ইনসান ছাড়া কেউই বেহেস্তে যায়নি। এবং যেভাবে মরুপ্রান্তরে হযরত মুসা আ. সাপকে ওপরে তুলেছিলেন, সেভাবে ইবনুল-ইনসানকেও ওপরে তোলা হবে, যেনো যে তাঁর ওপর ইমান আনে, সে আল্লাহর সান্নিধ্য পায়।

কারণ আল্লাহ দুনিয়াকে এতো মহব্বত করলেন যে, তাঁর একমাত্র একান্ত প্রিয় মনোনীতজনকে দিলেন, যেনো যারা তাঁর ওপর ইমান আনে, তারা ধ্বংস না হয় কিন্তু তাঁর সান্নিধ্যলাভ করে। নিশ্চয়ই দুনিয়াকে দোষী করার জন্য আল্লাহ তাঁর একান্ত প্রিয় মনোনীতজনকে পাঠাননি, বরং পাঠিয়েছেন যেনো তাঁর দ্বারা দুনিয়া নাজাত পায়। যারা তাঁর ওপর ইমান আনে তাদের দোষী করা হয় না কিন্তু যারা ইমান আনে না তারা দোষী হয়েই গেছে, কারণ তারা আল্লাহর একান্ত প্রিয় মনোনীতজনের নামে ইমান আনেনি।

এটাই বিচার যে, দুনিয়াতে আলো এসেছে এবং মানুষ আলোর বদলে অন্ধকারকে ভালোবাসলো, কারণ তাদের কাজগুলো খারাপ। যারা খারাপ কাজ করে, তারা আলো ঘৃণা করে এবং আলোর কাছে আসে না, যেনো তাদের কাজ প্রকাশ না পায়; কিন্তু যারা যা সত্য তা করে, তারা আলোর কাছে আসে, যেনো পরিষ্কার দেখা যায় যে, তাদের কাজ আল্লাহর পছন্দের কাজ।”

অতঃপর হযরত ইসা আ. ও তাঁর সাহাবিরা ইহুদিয়ার গ্রামাঞ্চলে গেলেন। তিনি তাদের সাথে সেখানে কিছুদিন থাকলেন এবং তাদের বায়াত দিলেন। হযরত ইয়াহিয়া আ. ও সালিমের কাছে, ঐনোনে, বায়াত দিচ্ছিলেন, কারণ সেখানে বেশি পানি ছিলো। এবং লোকেরা আসতেই থাকলো ও বায়াত নিলো। হযরত ইয়াহিয়া আ.-কে তখনো জেলে বন্দি করা হয়নি। সেখানে তাঁর সাহাবি ও এক ইহুদির মধ্যে পাকসাফের বিষয়ে বাদানুবাদ দেখা দিলো। তারা হযরত ইয়াহিয়া আ. এর কাছে এসে বললো, “হুজুর, জর্দানের ওপারে যিনি আপনার সাথে ছিলেন, যাঁর বিষয়ে আপনি সাক্ষ্য দিয়েছিলেন, তিনি এখানে বায়াত দিচ্ছেন এবং সবাই তাঁর কাছে যাচ্ছে।”

হযরত ইয়াহিয়া আ. উত্তর দিলেন, “বেহেস্ত থেকে দেয়া না হলে কেউ কিছুই পেতে পারে না। তোমরা নিজেরাই আমার সাক্ষী যে, আমি বলেছি, ‘আমি মসিহ নই কিন্তু আমাকে তাঁর আগে পাঠানো হয়েছে।’ যার কনে আছে সেই তো বর। বরের বন্ধুরা বরের পক্ষে দাঁড়ায় ও তার কথা শোনে। বরের আওয়াজ পেলে তারা ভীষণভাবে আনন্দিত হয়। আর এই কারণেই আমার আনন্দ পূর্ণ হয়েছে। তাঁকে বেড়ে উঠতে হবে এবং আমাকে হ্রাস পেতে হবে।”

যিনি ওপর থেকে আসেন তিনি সবার ওপরে। যে দুনিয়া থেকে আসে সে দুনিয়ার এবং দুনিয়াদারির বিষয়ে কথা বলে। যিনি বেহেস্ত থেকে আসেন তিনি সবার ওপরে। তিনি যা দেখেছেন ও শুনেছেন, সেই বিষয়েই সাক্ষ্য দেন, তবুও কেউ তাঁর সাক্ষ্য গ্রহণ করে না। যে তাঁর সাক্ষ্য গ্রহণ করে, সে সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহই সত্য। আল্লাহ যাঁকে পাঠিয়েছেন তিনি আল্লাহর কালাম বলেন, কারণ রুহকে তিনি মেপে দেন না। আল্লাহ তাঁর একান্ত প্রিয় মনোনীতজনকে মহব্বত করেন এবং তিনি সবকিছুই তাঁর হাতে দিয়েছেন। যে কেউ একান্ত প্রিয় মনোনীতজনের ওপর ইমান আনে, সে আল্লাহর সান্নিধ্য পায়; যে-কেউ একান্ত প্রিয় মনোনীতজনের অবাধ্য হয়, সে জীবন পাবে না কিন্তু অবশ্যই আল্লাহর লা’নতের মধ্যে পড়বে।”