কালিমাতুল্লাহঃ রুকু-২

2388
Total
Visitors

তৃতীয় দিনে গালিলের কান্না গ্রামে একটি বিয়ের অনুষ্ঠান ছিলো এবং হযরত ইসা আ. এর মা সেখানে ছিলেন। তিনি এবং তাঁর সাহাবিদেরও বিয়েতে দাওয়াত করা হয়েছিলো। আঙ্গুররস শেষ হয়ে গেলে হযরত ইসা আ. এর মা তাঁকে বললেন, “তাদের আঙ্গুররস শেষ হয়ে গেছে।” এবং হযরত ইসা আ তাঁকে বললেন, “মা , এই বিষয়ে তোমার বা আমার কী? আমার সময় এখনো আসেনি।” তাঁর মা কর্মচারীদের বললেন, “ও তোমাদের যা বলে তা করো।”

সেখানে ইহুদিদের রীতি অনুসারে পাকসাফ হওয়ার জন্য পাথরের তৈরি ছ’টা পানির মটকা ছিলো। প্রত্যেকটিতে আশি থেকে একশো বিশ লিটার পানি ধরতো।  হযরত ইসা আ. তাদের বললেন, “মটকাগুলো পানি দিয়ে ভর্তি করো।” এবং তারা তা কানায় কানায় ভর্তি করলো। তিনি তাদের বললেন, “এখান থেকে কিছু নাও এবং ভোজের প্রধান কর্তার কাছে নিয়ে যাও।” তারা তা-ই করলো

ভোজের কর্তা যখন আঙ্গুররসে পরিণত হওয়া ওই পানির স্বাদ নিয়ে দেখলেন, তখন তিনি বরকে ডাকলেন- তিনি জানতেন না যে, তা কোথা থেকে এসেছে। যদিও যে-কর্মচারীরা পানি তুলেছিলো, তারা তা জানতো- এবং তাকে বললেন, “সবাই ভালো আঙ্গুররস প্রথমে দেয় এবং মেহমানরা যথেষ্ট পান করার পর কিছু খারাপটা দেয়; কিন্তু তুমি এখনো ভালো আঙ্গুররস রেখে দিয়েছো।

হযরত ইসা আ. গালিলের কান্না গ্রামে চিহ্ন হিসেবে প্রথম মোজেজা দেখিয়ে তাঁর মহিমা প্রকাশ করলেন এবং তাঁর সাহাবিরা তাঁর ওপর ইমান আনলেন। অতঃপর তিনি ও তাঁর মা, ভাইরা ও তাঁর সাহাবিরা কফরনাহুমে গেলেন এবং সেখানে কিছুদিন থাকলেন।

ইহুদিদের ইদুল-ফেসাখ কাছে এসে পড়ায় হযরত ইসা আ. জেরুসালেমে গেলেন। তিনি দেখলেন, লোকেরা বায়তুল-মোকাদ্দসে গরু, ভেড়া ও কবুতর বিক্রি করছে এবং টাকা বদলকারীরা তাদের টেবিলে বসে আছে। তিনি রশি দিয়ে একটি চাবুক তৈরি করে গরু ও ভেড়াসহ তাদের সবাইকে বায়তুল-মোকাদ্দস থেকে তাড়িয়ে দিলেন। টাকা বদলকারীদের টাকাপয়সা ছড়িয়ে ফেললেন এবং তাদের টেবিল উল্টে দিলেন।

যারা কবুতর বিক্রি করছিলো, তাদের তিনি বললেন, “এসব জিনিস এখান থেকে নিয়ে যাও! আমার প্রতিপালকের ঘরকে বাজারে পরিণত করো না।” তাঁর সাহাবিদের স্মরণ হলো যে, পূর্বের কিতাবে একথা লেখা আছে, “তোমার ঘরের জন্য আমার উদ্যোগ আমাকে গ্রাস করেছে।”

তখন ইহুদিরা তাঁকে বললো, “তুমি যে এ-কাজ করছো, তার জন্য চিহ্ন হিসেবে আমাদের কী মোজেজা দেখাতে পারো?” হযরত ইসা আ. তাদের উত্তর দিলেন, “এই বায়তুল-মোকাদ্দস ভেঙে ফেলো এবং আমি তিন দিনের মধ্যে তা গড়ে তুলবো।” তখন ইহুদিরা বললো, “এই বায়তুল-মোকাদ্দস তৈরি করতে ছেচল্লিশ বছর লেগেছিলো, আর তুমি তা তিন দিনের মধ্যে গড়ে তুলবে?” 

কিন্তু তিনি তাঁর দেহ-ঘরের কথা বলছিলেন। তাঁর মৃত থেকে জীবিত হয়ে ওঠার পর সাহাবিদের স্মরণ হলো যে, তিনি একথা বলেছিলেন এবং তাঁরা পূর্বের কিতাবের কথার এবং আল্লাহর রুহের বলা কথার ওপর ইমান আনলেন।

ইদুল-ফেসাখের সময় তিনি যখন জেরুসালেমে ছিলেন, তখন তিনি চিহ্ন হিসেবে যে-মোজেজা দেখিয়েছিলেন তা দেখে অনেকে তাঁর নামে ইমান আনলো। কিন্তু হযরত ইসা আ. নিজেকে তাদের কাছে ছেড়ে দিলেন না, কারণ তিনি ওই লোকদের জানতেন। কোনো মানুষের সাক্ষ্য তাঁর দরকার ছিলো না, কারণ তিনি তাদের প্রত্যেকের অন্তরের কথা জানতেন।