কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ৯

76005
Total
Visitors

১যেতে যেতে তিনি এক জন্মান্ধকে দেখতে পেলেন। ২তাঁর সাহাবিরা তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, “হুজুর, কার গুনাহর কারণে এই লোকটি অন্ধ হয়ে জন্মেছে, তার নিজের নাকি তার বাবা-মার?” ৩হযরত ইসা আ. উত্তর দিলেন, “এই লোকটি কিংবা তার বাবামা গুনাহ করেনি। এ অন্ধ হয়ে জন্মেছে যেনো আল্লাহর কাজ তার মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয়। ৪যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন, দিন থাকতে থাকতেই আমাদেরকে তাঁর কাজ করতে হবে। রাত আসছে, তখন কেউ কাজ করতে পারে না। ৫আমি যতোদিন দুনিয়াতে আছি, ততোদিন আমিই দুনিয়ার আলো।”

৬একথা বলে তিনি মাটিতে থুথু দিয়ে কাদা বানালেন এবং তা লোকটির চোখে লেপটে দিলেন, ৭আর তাকে বললেন, “সিলো নামক পুকুরে গিয়ে ধুয়ে ফেলো।” অতঃপর সে গিয়ে ধুয়ে ফেললো এবং দেখতে পেয়ে ফিরে এলো। ৮তার প্রতিবেশীরা এবং যারা তাকে আগে ভিক্ষা করতে দেখেছিলো, তারা বলতে লাগলো, “এই লোকটি না এখানে বসে ভিক্ষা করতো?”

৯কেউ কেউ বলছিলো, “এ সে-ই।” অন্যেরা বলছিলো, “না কিন্তু তারই মতো একজন।” সে বলতে থাকলো, “আমিই সেই লোক।” 

১০কিন্তু তারা তাকে জিজ্ঞেস করতেই থাকলো, “তাহলে তোমার চোখ কীভাবে খুললো?” ১১সে উত্তর দিলো, “ইসা নামের এক লোক মাটিতে কাদা বানিয়ে আমার চোখে লেপটে দিলেন এবং আমাকে বললেন, ‘সিলো নামক পুকুরে গিয়ে ধুয়ে ফেলো।’ তখন আমি গিয়ে ধুয়ে ফেললাম এবং দেখতে পেলাম।” ১২তারা তাকে বললো, “কোথায় তিনি?” সে বললো, “আমি জানি না।”

১৩আগে যে-লোকটি অন্ধ ছিলো, তারা তাকে ফরিসিদের কাছে নিয়ে গেলো। ১৪যেদিন হযরত ইসা আ. কাদা তৈরি করে লোকটির চোখ খুলে দিয়েছিলেন, সেদিন ছিলো সাব্বাত। ১৫তখন ফরিসিরাও তাকে জিজ্ঞেস করলেন, কীভাবে সে দেখার শক্তি পেয়েছে। সে তাদের বললো, “তিনি আমার চোখে কাদা লাগিয়ে দিলেন। তারপর আমি ধুয়ে ফেললাম এবং এখন আমি দেখতে পাচ্ছি।” ১৬কয়েকজন ফরিসি বললেন, “এই লোক আল্লাহর কাছ থেকে আসেনি, কারণ সে সাব্বাত পালন করে না।” কিন্তু অন্যেরা বললেন, “একজন গুনাহগার কীভাবে এরকম মোজেজা দেখাতে পারে?” এবং তারা দু’দলে ভাগ হয়ে গেলেন। ১৭তাই তারা সেই অন্ধ লোকটিকে আবার বললেন, “তুমি তার সম্পর্কে কী বলো? তোমার চোখ তো সে-ই খুলে দিয়েছে।” সে বললো, “তিনি একজন নবি।”

১৮ইহুদিরা লোকটির বাবা-মাকে ডেকে এনে জিজ্ঞেস না করা পর্যন্ত বিশ্বাস করলো না যে, লোকটি আগে অন্ধ ছিলো এবং এখন দেখতে পাচ্ছে। ১৯তারা তাদের জিজ্ঞেস করলো, “এ কি তোমাদের ছেলে, যে অন্ধ হয়ে জন্মেছিলো? তাহলে এখন সে কীভাবে দেখতে পাচ্ছে?” ২০তার বাবা-মা উত্তর দিলেন, “আমরা জানি এ আমাদের ছেলে এবং এ অন্ধ হয়ে জন্মেছিলো। ২১কিন্তু আমরা জানি না যে, সে কীভাবে এখন দেখতে পাচ্ছে; এবং এ-ও জানি না যে, কে তার চোখ খুলে দিয়েছেন। তাকে জিজ্ঞেস করুন, সে প্রাপ্তবয়স্ক। সে নিজের কথা নিজেই বলবে।”

২২ইহুদিদের ভয়ে তার বাবামা একথা বললেন।

কারণ ইহুদিরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো যে, যে কেউ হযরত ইসাকে মসিহ বলে স্বীকার করবে, তাকে সিনাগোগ থেকে বের করে দেয়া হবে। ২৩আর তাই তার বাবা-মা বললেন, “সে প্রাপ্তবয়স্ক, তাকেই জিজ্ঞেস করুন।” ২৪সুতরাং যে-লোকটি আগে অন্ধ ছিলো, তারা দ্বিতীয়বার তাকে ডাকলো এবং বললো, “আল্লাহর প্রশংসা করো! আমরা জানি যে, সেই লোকটি গুনাহগার।” ২৫সে উত্তর দিলো, “তিনি একজন গুনাহগার কিনা তা আমি জানি না কিন্তু একটি বিষয় আমি জানি যে, আমি অন্ধ ছিলাম এবং এখন দেখতে পাচ্ছি।”

২৬তারা তাকে বললো, “সে তোমাকে কী করেছে? কীভাবে সে তোমার চোখ খুলে দিয়েছে?” ২৭সে তাদের উত্তর দিলো, “আমি আপনাদের বলেছি এবং আপনারা শুনছেন না। আপনারা আবার শুনতে চান কেনো? আপনারাও কি তাঁর সাহাবি হতে চান?” ২৮তখন তারা তাকে গালি দিয়ে বললো, “তুই তার সাহাবি কিন্তু আমরা হযরত মুসা আ.র উম্মত। ২৯আমরা জানি যে, আল্লাহ মুসার সাথে কথা বলেছেন কিন্তু এই লোক কোথা থেকে এসেছে তা আমরা জানি না।”

৩০লোকটি উত্তর দিলো, “খুবই আশ্চর্যের বিষয়! আপনারা জানেন না তিনি কোথা থেকে এসেছেন অথচ তিনিই আমার চোখ খুলে দিয়েছেন। ৩১আমরা জানি যে, আল্লাহ গুনাহগারদের কথা শোনেন না কিন্তু যে তাঁর এবাদত করে ও তাঁর বাধ্য হয়, তার কথা শোনেন। ৩২দুনিয়ার শুরু থেকে একথা কখনো শোনা যায়নি যে, কেউ কোনো জন্মান্ধের চোখ খুলে দিয়েছে। ৩৩যদি এই লোক আল্লাহর কাছ থেকে না এসে থাকেন, তাহলে তিনি কিছুই করতে পারতেন না।” ৩৪তারা তাকে উত্তর দিলো, “একেবারে গুনাহর মধ্যে তোর জন্ম হয়েছে, আর তুই আমাদের শিক্ষা দিতে চাচ্ছিস?” এবং তারা তাকে বাইরে বের করে দিলো।

৩৫হযরত ইসা আ. শুনলেন যে, তারা তাকে বের করে দিয়েছে এবং তিনি যখন তাকে পেলেন, তখন বললেন, “তুমি কি ইবনুল-ইনসানের ওপর ইমান এনেছো?” ৩৬সে উত্তর দিলো, “হুজুর, তিনি কে? আমাকে বলুন, যেনো আমি তাঁর ওপর ইমান আনতে পারি।”

৩৭হযরত ইসা আ. তাকে বললেন, “তুমি তাঁকে দেখেছো এবং যিনি তোমার সাথে কথা বলছেন, তিনিই ইবনুল-ইনসান।” ৩৮সে বললো, “হুজুর, আমি ইমান এনেছি।” এবং সে নিচু হয়ে তাঁর পায়ে পড়ে তাঁকে সালাম করলো।

৩৯হযরত ইসা আ. বললেন, “আমি এই দুনিয়ায় বিচার নিয়ে এসেছি, যেনো যারা দেখতে না পায়, তারা দেখতে পায় এবং যারা দেখতে পায়, তারা অন্ধ হয়ে যায়।” ৪০কয়েকজন ফরিসি তাঁর কাছে দাঁড়িয়ে থেকে একথা শুনলেন এবং তাঁকে বললেন, “নিশ্চয়ই আমরা অন্ধ নই?” ৪১হযরত ইসা আ. তাদের বললেন, “যদি তোমরা অন্ধ হতে, তাহলে তোমাদের গুনাহ হতো না। যেহেতু তোমরা বলো যে, ‘আমরা দেখতে পাই,’ তাই তোমাদের গুনাহ রয়েছে।

Facebook
WhatsApp
Telegram
Email
কালিমাতুল্লাহ: রুকু - ১

কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ১

১-৫শুরু থেকেই আল্লাহ আছেন। আল্লাহর কালাম তাঁর নিজের মধ্যেই ছিলো, এই কালামই হলো আল্লাহর কথা। আল্লাহ্ তাঁর কথা দ্বারাই সব ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু - ২

কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ২

১তৃতীয় দিনে গালিলের কান্না গ্রামে একটি বিয়ের অনুষ্ঠান ছিলো এবং হযরত ইসা আ.র মা সেখানে ছিলেন। ২হযরত ইসা আ. এবং ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু - ৩

কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ৩

১নিকদিম নামে একজন ফরিসি ছিলেন; তিনি ছিলেন ইহুদিদের একজন নেতা। ২তিনি রাতের বেলায় হযরত ইসা আ.র কাছে এলেন এবং বললেন, ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু - ৪

কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ৪

১যখন হযরত ইসা আ. বুঝতে পারলেন যে, ফরিসিরা শুনতে পেয়েছেন, “ হযরত ইসা আ. হযরত ইয়াহিয়া আ.র থেকে বেশি উম্মত ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু - ৫

কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ৫

১এরপর ইহুদিদের আরেকটি ইদের সময় হলো এবং হযরত ইসা আ. জেরুসালেমে গেলেন। ২জেরুসালেমের মেষ-দরজার কাছে একটি পুকুর ছিলো। ৩হিব্রু ভাষায় ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু - ৬

কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ৬

১অতঃপর হযরত ইসা আ. গালিল লেকের ওপারে গেলেন। একে তিবিরিয়া লেকও বলা হয়। ২বিশাল এক জনতা তাঁর পেছনে পেছনে যাচ্ছিলো, ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু - ৭

কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ৭

১এরপর হযরত ইসা আ. গালিলে চলাফেরা করছিলেন। তিনি ইহুদিয়ায় যেতে চাইলেন না, কারণ ইহুদিরা তাঁকে হত্যা করার সুযোগ খুঁজছিলো। ২এই ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু - ৮

কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ৮

১অতঃপর তারা প্রত্যেকে বাড়ি চলে গেলেন। এদিকে হযরত ইসা আ.ও জৈতুন পাহাড়ে চলে গেলেন। ২এবং খুব ভোরে উঠে তিনি আবার ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু - ৯

কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ৯

১যেতে যেতে তিনি এক জন্মান্ধকে দেখতে পেলেন। ২তাঁর সাহাবিরা তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, “হুজুর, কার গুনাহর কারণে এই লোকটি অন্ধ হয়ে ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু - ১০

কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ১০

১আমি তোমাদের সত্যি সত্যিই বলছি, যে কেউ দরজা দিয়ে না ঢুকে অন্য উপায়ে ভেড়ার খোঁয়াড়ে ঢোকে, সে চোর ও ডাকাত। ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু - ১১

কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ১১

১বেথানিয়া গ্রামের লাসার নামে এক লোকের অসুখ হয়েছিলো। মরিয়ম ও তার বোন মার্থা সেই একই গ্রামে থাকতেন। ২ইনি সেই মরিয়ম, ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু - ১২

কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ১২

১ইদুল-ফেসাখের ছয়দিন আগে হযরত ইসা আ. বেথানিয়ায় লাসারের বাড়িতে এলেন। এই লাসারকেই তিনি মৃত থেকে জীবিত করে তুলেছিলেন। ২সেখানে তারা ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু - ১৩

কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ১৩

১ইদুল-ফেসাখের আগে হযরত ইসা আ. বুঝতে পারলেন যে, তাঁর এই দুনিয়া ছেড়ে প্রতিপালকের কাছে চলে যাবার সময় হয়ে গেছে। এই ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু - ১৪

কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ১৪

১তোমরা অন্তরে অস্থির হয়ো না। আল্লাহর ওপর ইমান রাখো, আমার ওপরও ইমান রাখো। ২আমার প্রতিপালকের কাছে থাকার অনেক জায়গা আছে। ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু - ১৫

কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ১৫

১আমি প্রকৃত আঙুরগাছ এবং আমার প্রতিপালক চাষী। ২আমার যেসব ডালে ফল ধরে না, সেগুলো তিনি কেটে ফেলেন আর যেসব ডালে ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু - ১৬

কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ১৬

১আমি এসব কথা তোমাদের জানাচ্ছি, যেনো তোমরা বাধা না পাও। ২তারা তোমাদেরকে সিনাগোগ থেকে বের করে দেবে। প্রকৃতপক্ষে এমন এক ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু - ১৭

কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ১৭

১এসব কথা বলার পর হযরত ইসা আ. আকাশের দিকে তাকিয়ে বললেন, “হে আমার প্রতিপালক, সময় এসেছে, তোমার একান্ত প্রিয় মনোনীতজনকে ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু - ১৮

কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ১৮

১এসব কথা বলার পর হযরত ইসা আ. তাঁর হাওয়ারিদের নিয়ে কিদরোন উপত্যকা পার হয়ে একটি জায়গায় গেলেন। সেখানে একটি বাগান ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু - ১৯

কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ১৯

১অতঃপর পিলাত হযরত ইসা আ.কে চাবুক মারালেন। ২আর সৈন্যরা কাঁটালতা দিয়ে মুকুট বানিয়ে তাঁর মাথায় পরালো এবং তাঁকে একটি বেগুনি ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু - ২০

কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ২০

১সপ্তাহের প্রথম দিন খুব ভোরে অন্ধকার থাকতে মগ্‌দলিনি মরিয়ম কবরের কাছে এলেন এবং দেখলেন যে, কবরের মুখ থেকে পাথরটি সরিয়ে ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু - ২১

কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ২১

১এসবের পরে তিবিরিয়া লেকের পাড়ে হযরত ইসা আ. আবার তাঁর হাওয়ারিদের দেখা দিলেন। তিনি নিজেকে তাদের কাছে এভাবে দেখালেন: ২হযরত ...