কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ২১

75945
Total
Visitors

১এসবের পরে তিবিরিয়া লেকের পাড়ে হযরত ইসা আ. আবার তাঁর হাওয়ারিদের দেখা দিলেন। তিনি নিজেকে তাদের কাছে এভাবে দেখালেন: ২হযরত সাফওয়ান পিতর রা., হযরত থোমা রা., যাকে জমজ বলা হয়, গালিলের কান্না গ্রামের নথনেল, জাবিদির ছেলেরা এবং তাঁর অন্য দু’জন হাওয়ারি এক জায়গায় জমায়েত হয়েছিলেন।

৩হযরত সাফওয়ান পিতর রা. তাদের বললেন, “আমি মাছ ধরতে যাচ্ছি।” তারা তাকে বললেন, “আমরাও তোমার সাথে যাবো।” তারা নৌকা নিয়ে মাছ ধরতে গেলেন কিন্তু সেই রাতে তারা কিছুই ধরতে পারলেন না।

৪সকাল হওয়ার সাথে সাথে হযরত ইসা আ. এসে লেকের পাড়ে দাঁড়ালেন কিন্তু হাওয়ারিরা জানতেন না যে, তিনি হযরত ইসা আ.। ৫হযরত ইসা আ. তাদের বললেন, “সন্তানেরা, তোমাদের কাছে কি কোনো মাছ আছে?” তারা তাঁকে উত্তর দিলেন, “না।” ৬তিনি তাদের বললেন, “নৌকার ডান পাশে তোমাদের জাল ফেলো, তাহলে তোমরা কিছু পাবে।” তারা জাল ফেললেন এবং এতো মাছ জালে পড়লো যে, তারা জাল টেনে তুলতে পারলেন না।

৭যে-হাওয়ারিকে হযরত ইসা আ. মহব্বত করতেন, তিনি হযরত পিতর রা.কে বললেন, “উনি হুজুর!” হযরত সাফওয়ান পিতর রা. যখন শুনলেন, “উনি হুজুর,” তখন কাপড় পরলেন, কারণ তিনি উলঙ্গ ছিলেন এবং ঝাঁপ দিয়ে সাগরে পড়লেন।

৮কিন্তু অন্য হাওয়ারিরা নৌকায় করে এলেন, মাছ ভর্তি জাল টেনে নিয়ে এলেন, কারণ তারা কিনার থেকে বেশি দূরে ছিলেন না, আনুমানিক দু’শ হাত দূরে ছিলেন।

৯কিনারে পৌঁছে তারা দেখলেন যে, সেখানে কয়লার আগুন জ্বলছে এবং তার ওপরে মাছ ও রুটি রয়েছে। ১০হযরত ইসা আ. তাদের বললেন, “তোমরা যে-মাছ ধরেছো, তার কয়েকটি নিয়ে এসো।” ১১হযরত সাফওয়ান পিতর রা. নৌকায় গিয়ে জাল টেনে কিনারে নিয়ে এলেন। জালে একশ তিপ্পান্নটি বড়ো মাছ ছিলো। যদিও এতো মাছ ছিলো, তবুও জাল ছিঁড়লো না। ১২হযরত ইসা আ. তাদের বললেন, “এসো, নাস্তা করো।” কোনো হাওয়ারিই তাঁকে একথা জিজ্ঞেস করতে সাহস পেলেন না যে, “আপনি কে?” কারণ তারা জানতেন উনি হুজুর। ১৩হযরত ইসা আ. এসে রুটি নিয়ে তাদের দিলেন এবং একইভাবে মাছও দিলেন। ১৪হযরত ইসা আ. মৃত থেকে জীবিত হওয়ার পর এই তৃতীয়বার হাওয়ারিদের দেখা দিলেন।

১৫তাদের নাস্তা খাওয়া শেষ হলে হযরত ইসা আ. সাফওয়ান পিতরকে বললেন, “সাফওয়ান ইবনে ইউহান্না, তুমি কি এসবের থেকে আমাকে বেশি মহব্বত করো?” তিনি বললেন, “জি, হুজুর, আপনি জানেন যে, আমি আপনাকে মহব্বত করি।” হযরত ইসা আ. তাকে বললেন, “আমার শিশু-মেষগুলো চরাও।”

১৬দ্বিতীয়বার তিনি তাকে বললেন, “সাফওয়ান ইবনে ইউহোন্না, তুমি কি আমাকে মহব্বত করো?” তিনি তাঁকে বললেন, “জি হুজুর, আপনি জানেন যে, আমি আপনাকে মহব্বত করি।” হযরত ইসা আ. তাঁকে বললেন, “আমার মেষদের দেখাশোনা করো।”

১৭তৃতীয়বার তিনি তাকে বললেন, “সাফওয়ান ইবনে ইউহোন্না, তুমি কি আমাকে মহব্বত করো?” তৃতীয়বার তাঁকে একথা বলার কারণে হযরত পিতর রা. কষ্ট পেলেন এবং বললেন, “হুজুর, আপনি সবই জানেন; আপনি জানেন যে, আমি আপনাকে মহব্বত করি।” ১৮হযরত ইসা আ. তাকে বললেন, “আমার মেষদের চরাও। আমি তোমাকে সত্যিই বলছি, তুমি যখন যুবক ছিলে, তখন নিজের বেল্ট নিজে বেঁধেছো এবং যেখানে ইচ্ছা সেখানে গিয়েছো;

কিন্তু তুমি যখন বৃদ্ধ হবে, তখন তুমি দু’হাত বাড়িয়ে দেবে এবং অন্য কেউ তোমার বেল্ট বেঁধে দেবে, আর তুমি যেখানে যেতে চাবে না, সেখানে নিয়ে যাবে।” ১৯হযরত পিতর রা. কীভাবে ইন্তেকাল করে আল্লাহর মহিমা প্রকাশ করবেন তা বোঝাতে গিয়ে তিনি একথা বললেন। এরপর তিনি তাকে বললেন, “আমার পেছনে এসো।”

২০হযরত পিতর রা. পেছন ফিরে দেখলেন যে, হযরত ইসা রা. যে-হাওয়ারিকে মহব্বত করতেন, তিনিও তাদের পেছনে পেছনে আসছেন। ইনি সেই হাওয়ারি, যিনি খাবার সময় ইসার পাশে বসেছিলেন এবং হযরত ইসা আ.র কোলের ওপর ঝুঁকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, “হুজুর, সে কে, যে আপনাকে ধরিয়ে দেবে?” ২১পিতর তাঁকে দেখে ইসাকে বললেন, “হুজুর, এর কী হবে?” ২২ ইসা তাকে বললেন, “যদি আমার ইচ্ছা হয় যে, আমি ফিরে না আসা পর্যন্ত সে থাকুক তাতে তোমার কী? তুমি আমার পেছনে এসো!”

২৩তখন সমাজে এই গুজব ছড়িয়ে পড়লো যে, এই হাওয়ারি ইন্তেকাল করবেন না। যদিও হযরত ইসা আ. তাকে বলেননি যে, তিনি ইন্তেকাল করবেন না, বরং বলেছিলেন, “যদি আমার ইচ্ছে হয় যে, আমি ফিরে না আসা পর্যন্ত সে থাকুক তাতে তোমার কী?”

২৪এই হাওয়ারিই এসব বিষয়ে সাক্ষ্য দিচ্ছেন ও লিখছেন এবং আমরা জানি যে, তার সাক্ষ্য সত্য। ২৫এসব ছাড়াও আরো অনেককিছু হযরত ইসা আ. করেছেন; যদি সেগুলোর প্রত্যেকটি লেখা হতো, তাহলে আমি মনে করি, এতো কিতাব হতো যে, দুনিয়ায় জায়গা হতো না।

Facebook
WhatsApp
Telegram
Email
কালিমাতুল্লাহ: রুকু - ১

কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ১

১-৫শুরু থেকেই আল্লাহ আছেন। আল্লাহর কালাম তাঁর নিজের মধ্যেই ছিলো, এই কালামই হলো আল্লাহর কথা। আল্লাহ্ তাঁর কথা দ্বারাই সব ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু - ২

কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ২

১তৃতীয় দিনে গালিলের কান্না গ্রামে একটি বিয়ের অনুষ্ঠান ছিলো এবং হযরত ইসা আ.র মা সেখানে ছিলেন। ২হযরত ইসা আ. এবং ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু - ৩

কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ৩

১নিকদিম নামে একজন ফরিসি ছিলেন; তিনি ছিলেন ইহুদিদের একজন নেতা। ২তিনি রাতের বেলায় হযরত ইসা আ.র কাছে এলেন এবং বললেন, ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু - ৪

কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ৪

১যখন হযরত ইসা আ. বুঝতে পারলেন যে, ফরিসিরা শুনতে পেয়েছেন, “ হযরত ইসা আ. হযরত ইয়াহিয়া আ.র থেকে বেশি উম্মত ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু - ৫

কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ৫

১এরপর ইহুদিদের আরেকটি ইদের সময় হলো এবং হযরত ইসা আ. জেরুসালেমে গেলেন। ২জেরুসালেমের মেষ-দরজার কাছে একটি পুকুর ছিলো। ৩হিব্রু ভাষায় ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু - ৬

কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ৬

১অতঃপর হযরত ইসা আ. গালিল লেকের ওপারে গেলেন। একে তিবিরিয়া লেকও বলা হয়। ২বিশাল এক জনতা তাঁর পেছনে পেছনে যাচ্ছিলো, ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু - ৭

কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ৭

১এরপর হযরত ইসা আ. গালিলে চলাফেরা করছিলেন। তিনি ইহুদিয়ায় যেতে চাইলেন না, কারণ ইহুদিরা তাঁকে হত্যা করার সুযোগ খুঁজছিলো। ২এই ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু - ৮

কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ৮

১অতঃপর তারা প্রত্যেকে বাড়ি চলে গেলেন। এদিকে হযরত ইসা আ.ও জৈতুন পাহাড়ে চলে গেলেন। ২এবং খুব ভোরে উঠে তিনি আবার ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু - ৯

কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ৯

১যেতে যেতে তিনি এক জন্মান্ধকে দেখতে পেলেন। ২তাঁর সাহাবিরা তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, “হুজুর, কার গুনাহর কারণে এই লোকটি অন্ধ হয়ে ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু - ১০

কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ১০

১আমি তোমাদের সত্যি সত্যিই বলছি, যে কেউ দরজা দিয়ে না ঢুকে অন্য উপায়ে ভেড়ার খোঁয়াড়ে ঢোকে, সে চোর ও ডাকাত। ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু - ১১

কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ১১

১বেথানিয়া গ্রামের লাসার নামে এক লোকের অসুখ হয়েছিলো। মরিয়ম ও তার বোন মার্থা সেই একই গ্রামে থাকতেন। ২ইনি সেই মরিয়ম, ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু - ১২

কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ১২

১ইদুল-ফেসাখের ছয়দিন আগে হযরত ইসা আ. বেথানিয়ায় লাসারের বাড়িতে এলেন। এই লাসারকেই তিনি মৃত থেকে জীবিত করে তুলেছিলেন। ২সেখানে তারা ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু - ১৩

কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ১৩

১ইদুল-ফেসাখের আগে হযরত ইসা আ. বুঝতে পারলেন যে, তাঁর এই দুনিয়া ছেড়ে প্রতিপালকের কাছে চলে যাবার সময় হয়ে গেছে। এই ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু - ১৪

কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ১৪

১তোমরা অন্তরে অস্থির হয়ো না। আল্লাহর ওপর ইমান রাখো, আমার ওপরও ইমান রাখো। ২আমার প্রতিপালকের কাছে থাকার অনেক জায়গা আছে। ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু - ১৫

কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ১৫

১আমি প্রকৃত আঙুরগাছ এবং আমার প্রতিপালক চাষী। ২আমার যেসব ডালে ফল ধরে না, সেগুলো তিনি কেটে ফেলেন আর যেসব ডালে ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু - ১৬

কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ১৬

১আমি এসব কথা তোমাদের জানাচ্ছি, যেনো তোমরা বাধা না পাও। ২তারা তোমাদেরকে সিনাগোগ থেকে বের করে দেবে। প্রকৃতপক্ষে এমন এক ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু - ১৭

কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ১৭

১এসব কথা বলার পর হযরত ইসা আ. আকাশের দিকে তাকিয়ে বললেন, “হে আমার প্রতিপালক, সময় এসেছে, তোমার একান্ত প্রিয় মনোনীতজনকে ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু - ১৮

কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ১৮

১এসব কথা বলার পর হযরত ইসা আ. তাঁর হাওয়ারিদের নিয়ে কিদরোন উপত্যকা পার হয়ে একটি জায়গায় গেলেন। সেখানে একটি বাগান ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু - ১৯

কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ১৯

১অতঃপর পিলাত হযরত ইসা আ.কে চাবুক মারালেন। ২আর সৈন্যরা কাঁটালতা দিয়ে মুকুট বানিয়ে তাঁর মাথায় পরালো এবং তাঁকে একটি বেগুনি ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু - ২০

কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ২০

১সপ্তাহের প্রথম দিন খুব ভোরে অন্ধকার থাকতে মগ্‌দলিনি মরিয়ম কবরের কাছে এলেন এবং দেখলেন যে, কবরের মুখ থেকে পাথরটি সরিয়ে ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু - ২১

কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ২১

১এসবের পরে তিবিরিয়া লেকের পাড়ে হযরত ইসা আ. আবার তাঁর হাওয়ারিদের দেখা দিলেন। তিনি নিজেকে তাদের কাছে এভাবে দেখালেন: ২হযরত ...