১সপ্তাহের প্রথম দিন খুব ভোরে অন্ধকার থাকতে মগ্দলিনি মরিয়ম কবরের কাছে এলেন এবং দেখলেন যে, কবরের মুখ থেকে পাথরটি সরিয়ে ফেলা হয়েছে।
২তাই তিনি দৌঁড়ে সাফওয়ান পিতর ও অন্য যে-হাওয়ারিকে হযরত ইসা আ. মহব্বত করতেন, তার কাছে গিয়ে বললেন, “তারা হুজুরকে কবর থেকে নিয়ে গেছে এবং আমরা জানি না তারা তাঁকে কোথায় রেখেছে।”
৩তখন হযরত পিতর রা. ও অন্য হাওয়ারি বের হয়ে কবরের দিকে গেলেন। ৪দু’জনই একসাথে দৌড়ে গেলেন কিন্তু সেই অন্য হাওয়ারি হযরত পিতর রা.কে পেছনে ফেলে প্রথমে কবরের কাছে পৌঁছলেন। ৫তিনি নিচু হয়ে ভেতরে তাকালেন এবং দেখলেন যে, লিনেন কাপড়ের টুকরোটি পড়ে আছে কিন্তু তিনি ভেতরে গেলেন না।
৬হযরত সাফওয়ান পিতর তার পরে কবরের কাছে পৌঁছলেন এবং কবরের ভেতরে ঢুকলেন। ৭তিনি দেখলেন, লিনেন কাপড়ের টুকরোটি সেখানে পড়ে আছে এবং যে-কাপড় দিয়ে হযরত ইসা আ.র মাথা মোড়ানো হয়েছিলো, সে টুকরোটিও ভাঁজ করে আলাদাভাবে রাখা হয়েছে। ৮তখন অন্য হাওয়ারি, যিনি প্রথমে কবরের কাছে পৌঁছেছিলেন, তিনিও ভেতরে গেলেন এবং দেখে বিশ্বাস করলেন। ৯যদিও তারা তখনো পূর্বের কিতাবের একথা বোঝেননি যে, তাঁকে মৃত থেকে জীবিত হয়ে উঠতে হবে। ১০এরপর হাওয়ারিরা তাদের বাড়ি ফিরে গেলেন।
১১কিন্তু মরিয়ম কবরের বাইরে দাঁড়িয়ে কাঁদতে থাকলেন। কাঁদতে কাঁদতে নিচু হয়ে যখন তিনি কবরের ভেতরে তাকালেন, ১২তখন দেখতে পেলেন, সাদা কাপড় পরা দু’জন ফেরেস্তা ইসার দেহমোবারক যেখানে ছিলো, সেখানে বসে আছেন- একজন তাঁর মাথার দিকে এবং অন্যজন তাঁর পায়ের দিকে। ১৩তারা তাকে বললেন, “হে নারী, তুমি কাঁদছো কেনো?” তিনি তাদের বললেন, “তারা আমার হুজুরকে নিয়ে গেছে এবং আমি জানি না তারা তাঁকে কোথায় রেখেছে।”
১৪একথা বলে তিনি যখন ঘুরলেন, তখন দেখলেন, হযরত ইসা আ. সেখানে দাঁড়িয়ে আছেন কিন্তু তিনি হযরত ইসা আ.কে চিনতে পারলেন না। ১৫হযরত ইসা আ. তাঁকে বললেন, “হে নারী, তুমি কাঁদছো কেনো? তুমি কার খোঁজ করছো?” তিনি তাঁকে বাগানের মালি মনে করে বললেন, “জনাব, আপনি যদি তাঁকে নিয়ে গিয়ে থাকেন, তাহলে আমাকে বলুন, আমি তাঁকে নিয়ে যাবো।”
১৬হযরত ইসা আ. তাকে বললেন, ‘মরিয়ম!’ তখন তিনি ঘুরে হিব্রু ভাষায় তাকে বললেন, ‘রাব্বুনি!’ যার অর্থ ওস্তাদ। ১৭হযরত ইসা আ. তাঁকে বললেন, “আমাকে ধরে রেখো না, কারণ আমি এখনো প্রতিপালকের কাছে যাইনি। তুমি আমার ভাইদের কাছে গিয়ে বলো, ‘আমি আমার ও তোমার প্রতিপালক আল্লাহর কাছে যাচ্ছি।’” ১৮মºলিনি মরিয়ম গিয়ে হাওয়ারিদের জানালেন যে, “আমি হুজুরকে দেখেছি।” এবং তিনি তাকে যা যা বলেছিলেন তাও তাদের জানালেন।
১৯সেদিন অর্থাৎ সপ্তাহের প্রথম দিন সন্ধ্যায় হাওয়ারিরা একটি ঘরে জমায়েত হলেন। ইহুদিদের ভয়ে সেই ঘরের দরজা বন্ধ ছিলো। হযরত ইসা আ. ঘরের ভেতরে এসে তাদের মধ্যে দাঁড়ালেন এবং বললেন, “আস্সালামু আলাইকুম।” ২০এরপর তিনি তাঁর দু’হাত ও পাঁজর তাদের দেখালেন। অতঃপর হাওয়ারিরা তাঁকে দেখে আনন্দিত হলেন।
২১হযরত ইসা আ. আবার তাদের বললেন, “শান্তি ও রহমত তোমাদের ওপর বর্তুক। আমার প্রতিপালক যেভাবে আমাকে পাঠিয়েছেন, সেভাবে আমিও তোমাদের পাঠাচ্ছি।” ২২একথা বলে তিনি তাদের ওপর ফুঁ দিলেন এবং বললেন, “সত্যের রুহকে গ্রহণ করো। ২৩যদি তোমরা কারো গুনাহ মাফ করে দাও, তাহলে তার গুনাহ মাফ করা হবে; আর যদি কারো গুনাহ ধরে রাখো, তাহলে তার গুনাহ ধরে রাখা হবে।”
২৪কিন্তু হযরত ইসা আ. যখন এসেছিলেন, তখন থোমা, যাকে জমজ বলা হয়, সেই বারোজনের একজন, সেখানে ছিলেন না। ২৫তাই অন্য হাওয়ারিরা যখন তাঁকে বললেন, “আমরা হুজুরকে দেখেছি,” তখন তিনি তাদের বললেন, “যতোক্ষণ না আমি তাঁর হাতে পেরেকের দাগ দেখছি ও আমার আঙুল পেরেকের গর্তে রাখছি এবং তাঁর পাঁজরে হাত দিচ্ছি, ততোক্ষণ পর্যন্ত আমি বিশ্বাস করবো না।”
২৬এক সপ্তাহ পরে আবার হাওয়ারিরা একটি ঘরে জমায়েত হলেন এবং থোমাও তাদের সাথে ছিলেন। যদিও ঘরের দরজা বন্ধ ছিলো, তবুও হযরত ইসা আ. ভেতরে এসে তাদের মধ্যে দাঁড়ালেন এবং বললেন, “আসসালামু আলাইকুম।” ২৭অতঃপর থোমাকে বললেন, “তোমার আঙুল এখানে দাও এবং আমার হাত দুটো দেখো।
হাত বাড়িয়ে আমার পাঁজরে তোমার হাত দাও। সন্দেহ করো না কিন্তু বিশ্বাস করো।” ২৮থোমা তাঁকে বললেন, “মনিব আমার, মালিক আমার!” ২৯হযরত ইসা আ. তাকে বললেন, “তুমি আমাকে দেখেছো বলে কি ইমান আনছো? ভাগ্যবান তারা, যারা আমাকে না দেখেই ইমান আনে।”
৩০হযরত ইসা আ. তাঁর হাওয়ারিদের সামনে চিহ্ন হিসেবে অনেক মোজেজা দেখিয়েছিলেন, যা এই কিতাবে লেখা হয়নি। ৩১কিন্তু এসব এখানে লেখা হলো, যেনো তোমরা ইমান আনতে পারো যে, হযরত ইসা আ.ই একান্ত প্রিয় মনোনীতজন, আল্লাহর মসিহ এবং তাঁর ওপর ইমান এনে তাঁর নামে নাজাত পেতে পারো।
Facebook
WhatsApp
Telegram
Email
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ১
১-৫শুরু থেকেই আল্লাহ আছেন। আল্লাহর কালাম তাঁর নিজের মধ্যেই ছিলো, এই কালামই হলো আল্লাহর কথা। আল্লাহ্ তাঁর কথা দ্বারাই সব ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ২
১তৃতীয় দিনে গালিলের কান্না গ্রামে একটি বিয়ের অনুষ্ঠান ছিলো এবং হযরত ইসা আ.র মা সেখানে ছিলেন। ২হযরত ইসা আ. এবং ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ৩
১নিকদিম নামে একজন ফরিসি ছিলেন; তিনি ছিলেন ইহুদিদের একজন নেতা। ২তিনি রাতের বেলায় হযরত ইসা আ.র কাছে এলেন এবং বললেন, ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ৪
১যখন হযরত ইসা আ. বুঝতে পারলেন যে, ফরিসিরা শুনতে পেয়েছেন, “ হযরত ইসা আ. হযরত ইয়াহিয়া আ.র থেকে বেশি উম্মত ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ৫
১এরপর ইহুদিদের আরেকটি ইদের সময় হলো এবং হযরত ইসা আ. জেরুসালেমে গেলেন। ২জেরুসালেমের মেষ-দরজার কাছে একটি পুকুর ছিলো। ৩হিব্রু ভাষায় ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ৬
১অতঃপর হযরত ইসা আ. গালিল লেকের ওপারে গেলেন। একে তিবিরিয়া লেকও বলা হয়। ২বিশাল এক জনতা তাঁর পেছনে পেছনে যাচ্ছিলো, ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ৭
১এরপর হযরত ইসা আ. গালিলে চলাফেরা করছিলেন। তিনি ইহুদিয়ায় যেতে চাইলেন না, কারণ ইহুদিরা তাঁকে হত্যা করার সুযোগ খুঁজছিলো। ২এই ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ৮
১অতঃপর তারা প্রত্যেকে বাড়ি চলে গেলেন। এদিকে হযরত ইসা আ.ও জৈতুন পাহাড়ে চলে গেলেন। ২এবং খুব ভোরে উঠে তিনি আবার ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ৯
১যেতে যেতে তিনি এক জন্মান্ধকে দেখতে পেলেন। ২তাঁর সাহাবিরা তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, “হুজুর, কার গুনাহর কারণে এই লোকটি অন্ধ হয়ে ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ১০
১আমি তোমাদের সত্যি সত্যিই বলছি, যে কেউ দরজা দিয়ে না ঢুকে অন্য উপায়ে ভেড়ার খোঁয়াড়ে ঢোকে, সে চোর ও ডাকাত। ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ১১
১বেথানিয়া গ্রামের লাসার নামে এক লোকের অসুখ হয়েছিলো। মরিয়ম ও তার বোন মার্থা সেই একই গ্রামে থাকতেন। ২ইনি সেই মরিয়ম, ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ১২
১ইদুল-ফেসাখের ছয়দিন আগে হযরত ইসা আ. বেথানিয়ায় লাসারের বাড়িতে এলেন। এই লাসারকেই তিনি মৃত থেকে জীবিত করে তুলেছিলেন। ২সেখানে তারা ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ১৩
১ইদুল-ফেসাখের আগে হযরত ইসা আ. বুঝতে পারলেন যে, তাঁর এই দুনিয়া ছেড়ে প্রতিপালকের কাছে চলে যাবার সময় হয়ে গেছে। এই ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ১৪
১তোমরা অন্তরে অস্থির হয়ো না। আল্লাহর ওপর ইমান রাখো, আমার ওপরও ইমান রাখো। ২আমার প্রতিপালকের কাছে থাকার অনেক জায়গা আছে। ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ১৫
১আমি প্রকৃত আঙুরগাছ এবং আমার প্রতিপালক চাষী। ২আমার যেসব ডালে ফল ধরে না, সেগুলো তিনি কেটে ফেলেন আর যেসব ডালে ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ১৬
১আমি এসব কথা তোমাদের জানাচ্ছি, যেনো তোমরা বাধা না পাও। ২তারা তোমাদেরকে সিনাগোগ থেকে বের করে দেবে। প্রকৃতপক্ষে এমন এক ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ১৭
১এসব কথা বলার পর হযরত ইসা আ. আকাশের দিকে তাকিয়ে বললেন, “হে আমার প্রতিপালক, সময় এসেছে, তোমার একান্ত প্রিয় মনোনীতজনকে ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ১৮
১এসব কথা বলার পর হযরত ইসা আ. তাঁর হাওয়ারিদের নিয়ে কিদরোন উপত্যকা পার হয়ে একটি জায়গায় গেলেন। সেখানে একটি বাগান ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ১৯
১অতঃপর পিলাত হযরত ইসা আ.কে চাবুক মারালেন। ২আর সৈন্যরা কাঁটালতা দিয়ে মুকুট বানিয়ে তাঁর মাথায় পরালো এবং তাঁকে একটি বেগুনি ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ২০
১সপ্তাহের প্রথম দিন খুব ভোরে অন্ধকার থাকতে মগ্দলিনি মরিয়ম কবরের কাছে এলেন এবং দেখলেন যে, কবরের মুখ থেকে পাথরটি সরিয়ে ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ২১
১এসবের পরে তিবিরিয়া লেকের পাড়ে হযরত ইসা আ. আবার তাঁর হাওয়ারিদের দেখা দিলেন। তিনি নিজেকে তাদের কাছে এভাবে দেখালেন: ২হযরত ...