১এসব কথা বলার পর হযরত ইসা আ. তাঁর হাওয়ারিদের নিয়ে কিদরোন উপত্যকা পার হয়ে একটি জায়গায় গেলেন। সেখানে একটি বাগান ছিলো। তিনি তাঁর হাওয়ারিদের নিয়ে সেখানে ঢুকলেন।
২যে-ইহুদা তাঁকে ধরিয়ে দিয়েছিলেন, তিনি সেই জায়গা চিনতেন, কারণ হযরত ইসা আ. প্রায়ই তাঁর হাওয়ারিদের নিয়ে সেখানে মিলিত হতেন। ৩সেই ইহুদা প্রধান ইমামদের ও ফরিসিদের কাছ থেকে পুলিশ ও একদল সৈন্য নিয়ে এলেন। তারা সেখানে লন্ঠন, মশাল ও অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে এলো। ৪হযরত ইসা আ. জানতেন যে, তাঁর প্রতি এসব হবে। তিনি এগিয়ে এসে তাদের জিজ্ঞেস করলেন, “তোমরা কার খোঁজ করছো?” ৫তারা উত্তর দিলো, “নাসরতের হযরত ইসা আ.র।” হযরত ইসা আ. বললেন, “আমিই সে।” যে-ইহুদা তাঁকে ধরিয়ে দিয়েছিলেন, তিনিও তাদের সাথে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
৬হযরত ইসা আ. যখন তাদের বললেন, “আমিই তিনি,” তখন তারা পিছিয়ে গিয়ে মাটিতে পড়ে গেলো। ৭তিনি আবার তাদের জিজ্ঞেস করলেন, “তোমরা কার খোঁজ করছো?” তারা বললো, “নাসরতের হযরত ইসা আ.র।” ৮হযরত ইসা আ. উত্তর দিলেন, “আমি তোমাদের বলেছি যে, আমিই সে। যদি তোমরা আমাকেই খোঁজো, তাহলে এই লোকদের যেতে দাও।” ৯এটি হয়েছিলো যেনো তাঁর বলা একথা পূর্ণ হয়- “তুমি যাদের আমাকে দিয়েছো, তাদের একজনকেও আমি হারাইনি।”
১০হযরত সাফওয়ান পিতরের কাছে একটি তরবারি ছিলো, তিনি তা দিয়ে মহাইমামের গোলামকে আঘাত করে তার ডান কান কেটে ফেললেন। সেই গোলামের নাম ছিলো মালখুস।
১১হযরত ইসা আ. পিতরকে বললেন, “তোমার তরবারি খাপে রাখো। আমার প্রতিপালকের দেয়া পেয়ালা কি আমি পান করবো না?”
১২অতঃপর সৈন্যরা, তাদের অফিসাররা এবং ইহুদি পুলিশরা হযরত ইসা আ.কে ধরে বাঁধলো। ১৩প্রথমে তারা তাঁকে হান্নানের কাছে নিয়ে গেলো- ইনি হলেন সেই বছরের মহাইমাম কাইয়াফার শ্বশুর। ১৪এই কাইয়াফাই ইহুদিদের এই পরামর্শ দিয়েছিলেন যে, সব মানুষের হয়ে একজনের মৃত্যু ভালো।
১৫হযরত সাফওয়ান পিতর ও অন্য একজন হাওয়ারি হযরত ইসা আ.র পেছনে পেছনে গেলেন। ওই হাওয়ারি মহাইমামের পরিচিত ছিলেন বলে তিনি হযরত ইসা আ.র সাথে মহাইমামের বাড়ির উঠোন পর্যন্ত গেলেন। ১৬কিন্তু হযরত পিতর রা. বাইরে গেটের কাছে দাঁড়িয়ে রইলেন। তাই মহাইমামের পরিচিত সেই হাওয়ারি বাইরে গিয়ে যে-মহিলা গেট পাহারা দিচ্ছিলো, তার সাথে কথা বলে হযরত পিতর রা.কে ভেতরে আনলেন। ১৭সেই মহিলা হযরত পিতর রা.কে বললো, “তুমিও কি এই লোকের হাওয়ারিদের মধ্যে একজন নও?” তিনি বললেন, “আমি নই।” গোলামরা ও পুলিশরা কয়লার আগুন জ্বালালো, ১৮কারণ তখন খুব শীত ছিলো। তারা আগুনের চারদিকে দাঁড়িয়ে নিজেদের শরীর গরম করছিলো; হযরত পিতর রা.ও তাদের সাথে দাঁড়িয়ে আগুন পোহাচ্ছিলেন।
১৯অতঃপর মহাইমাম হযরত ইসা রা.কে তাঁর শিক্ষা ও তাঁর হাওয়ারিদের সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করলেন। ২০হযরত ইসা রা. উত্তর দিলেন, “আমি খোলাখুলিভাবে দুনিয়ার সামনে কথা বলেছি। আমি সব সময় সিনাগোগে ও বায়তুল-মোকাদ্দসে, যেখানে ইহুদিরা সবাই জমায়েত হয়, শিক্ষা দিয়েছি। আমি গোপনে কিছুই বলিনি। আমাকে কেনো প্রশ্ন করছেন? ২১আমি যাদের সাথে কথা বলেছি, তাদের জিজ্ঞেস করুন, তারা জানে আমি কী বলেছি।”
২২তিনি যখন কথা বলছিলেন, তখন সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা এক পুলিশ হযরত ইসা আ.র মুখে আঘাত করলো এবং বললো, “এভাবে তুমি মহাইমামের সাথে কথা বলছো?” ২৩হযরত ইসা রা. উত্তর দিলেন, “যদি আমি ভুল বলে থাকি, তাহলে সাক্ষ্য দিয়ে ভুল দেখাও; কিন্তু আমি যদি সত্য বলি, তাহলে তুমি আমাকে মারছো কেনো?” ২৪তখন হান্নান তাঁকে বেঁধে মহাইমাম কাইয়াফার কাছে পাঠালেন।
২৫হযরত সাফওয়ান পিতর দাঁড়িয়ে আগুন পোহাচ্ছিলেন। তারা তাঁকে জিজ্ঞেস করলো, “তুমিও কি তার হাওয়ারিদের একজন নও?” তিনি অস্বীকার করে বললেন, “আমি নই।” ২৬মহাইমামের গোলামদের একজন- হযরত পিতর রা. যার কান কেটে ফেলেছিলেন তার এক আত্মীয়- জিজ্ঞেস করলো, “আমি কি তোমাকে তাঁর সাথে বাগানে দেখিনি?” ২৭হযরত পিতর রা. আবারো অস্বীকার করলেন এবং তখনই মোরগ ডেকে উঠলো।
২৮অতঃপর তারা হযরত ইসা আ.কে কাইয়াফার কাছ থেকে পিলাতের প্রধান অফিসে নিয়ে গেলো। তখন সকাল হয়েছে। তারা নিজেরা অফিসে ঢুকলো না, যাতে তারা নাপাক হয়ে না যায় এবং ইদুল-ফেসাখের ভোজ খেতে পারে। ২৯তাই পিলাত বের হয়ে তাদের কাছে গেলেন এবং বললেন, “এই লোকটির বিরুদ্ধে তোমাদের অভিযোগ কী?” ৩০তারা উত্তর দিলো, “এই লোকটি দোষী না হলে আমরা তাকে আপনার হাতে তুলে দিতাম না।” ৩১পিলাত তাদের বললেন, “তোমরা তাকে নিয়ে যাও এবং তোমাদের শরিয়ত অনুসারে তার বিচার করো।” ইহুদিরা উত্তর দিলো, “কাউকে মৃত্যুর শাস্তি দেবার অধিকার আমাদের নেই।” ৩২হযরত ইসা আ. তাঁর নিজের মৃত্যু কীভাবে হবে, সে-বিষয়ে আগেই যে-ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, এতে সেটিই পূর্ণ হলো।
৩৩তখন পিলাত তার অফিসে গিয়ে হযরত ইসা আ.কে ডেকে নিলেন এবং তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি কি ইহুদিদের বাদশা?” ৩৪হযরত ইসা আ. উত্তর দিলেন, “আপনি কি আপনার নিজ থেকে আমাকে এ-প্রশ্ন করছেন, নাকি আমার বিষয়ে অন্যরা আপনাকে একথা বলেছে?” ৩৫পিলাত উত্তর দিলেন, “আমি কি ইহুদি? আমি ইহুদি নই। তোমার নিজের জাতি ও প্রধান ইমামেরা তোমাকে আমার হাতে তুলে দিয়েছে। তুমি কী করেছো?” ৩৬হযরত ইসা আ. উত্তর দিলেন, “আমার রাজত্ব এই দুনিয়ার নয়। যদি আমার রাজত্ব এই দুনিয়ার হতো, তাহলে আমার অনুসারীরা আমাকে ইহুদিদের হাতে তুলে না দেবার জন্য যুদ্ধ করতো; কিন্তু আমার রাজত্ব এই দুনিয়ার নয়।” ৩৭পিলাত তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, “তাহলে তুমি একজন বাদশা!” হযরত ইসা আ. উত্তর দিলেন, “আপনিই বলছেন, আমি একজন বাদশা। সত্যের বিষয়ে সাক্ষ্য দেবার জন্য আমার জন্ম হয়েছে এবং আমি এই দুনিয়াতে এসেছি; যারা সত্যের, তারা প্রত্যেকে আমার কথা শোনে।”
৩৮পিলাত আবার তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, “সত্য কী?” একথা বলে তিনি আবার বাইরে ইহুদিদের কাছে গেলেন এবং তাদের বললেন, “এই লোকের কোনো দোষ আমি পাইনি। ৩৯কিন্তু তোমাদের একটি নিয়ম আছে যে, প্রত্যেক ইদুল-ফেসাখের সময় আমি তোমাদের জন্য একজন বন্দিকে মুক্তি দেই। তোমরা কি চাও যে, আমি তোমাদের জন্য ইহুদিদের বাদশাকে মুক্তি দেই?” ৪০তারা চিৎকার করে উত্তর দিলো, “ওকে নয় কিন্তু বারাব্বাকে!” বারাব্বা ছিলো একজন ডাকাত।
Facebook
WhatsApp
Telegram
Email
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ১
১-৫শুরু থেকেই আল্লাহ আছেন। আল্লাহর কালাম তাঁর নিজের মধ্যেই ছিলো, এই কালামই হলো আল্লাহর কথা। আল্লাহ্ তাঁর কথা দ্বারাই সব ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ২
১তৃতীয় দিনে গালিলের কান্না গ্রামে একটি বিয়ের অনুষ্ঠান ছিলো এবং হযরত ইসা আ.র মা সেখানে ছিলেন। ২হযরত ইসা আ. এবং ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ৩
১নিকদিম নামে একজন ফরিসি ছিলেন; তিনি ছিলেন ইহুদিদের একজন নেতা। ২তিনি রাতের বেলায় হযরত ইসা আ.র কাছে এলেন এবং বললেন, ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ৪
১যখন হযরত ইসা আ. বুঝতে পারলেন যে, ফরিসিরা শুনতে পেয়েছেন, “ হযরত ইসা আ. হযরত ইয়াহিয়া আ.র থেকে বেশি উম্মত ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ৫
১এরপর ইহুদিদের আরেকটি ইদের সময় হলো এবং হযরত ইসা আ. জেরুসালেমে গেলেন। ২জেরুসালেমের মেষ-দরজার কাছে একটি পুকুর ছিলো। ৩হিব্রু ভাষায় ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ৬
১অতঃপর হযরত ইসা আ. গালিল লেকের ওপারে গেলেন। একে তিবিরিয়া লেকও বলা হয়। ২বিশাল এক জনতা তাঁর পেছনে পেছনে যাচ্ছিলো, ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ৭
১এরপর হযরত ইসা আ. গালিলে চলাফেরা করছিলেন। তিনি ইহুদিয়ায় যেতে চাইলেন না, কারণ ইহুদিরা তাঁকে হত্যা করার সুযোগ খুঁজছিলো। ২এই ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ৮
১অতঃপর তারা প্রত্যেকে বাড়ি চলে গেলেন। এদিকে হযরত ইসা আ.ও জৈতুন পাহাড়ে চলে গেলেন। ২এবং খুব ভোরে উঠে তিনি আবার ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ৯
১যেতে যেতে তিনি এক জন্মান্ধকে দেখতে পেলেন। ২তাঁর সাহাবিরা তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, “হুজুর, কার গুনাহর কারণে এই লোকটি অন্ধ হয়ে ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ১০
১আমি তোমাদের সত্যি সত্যিই বলছি, যে কেউ দরজা দিয়ে না ঢুকে অন্য উপায়ে ভেড়ার খোঁয়াড়ে ঢোকে, সে চোর ও ডাকাত। ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ১১
১বেথানিয়া গ্রামের লাসার নামে এক লোকের অসুখ হয়েছিলো। মরিয়ম ও তার বোন মার্থা সেই একই গ্রামে থাকতেন। ২ইনি সেই মরিয়ম, ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ১২
১ইদুল-ফেসাখের ছয়দিন আগে হযরত ইসা আ. বেথানিয়ায় লাসারের বাড়িতে এলেন। এই লাসারকেই তিনি মৃত থেকে জীবিত করে তুলেছিলেন। ২সেখানে তারা ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ১৩
১ইদুল-ফেসাখের আগে হযরত ইসা আ. বুঝতে পারলেন যে, তাঁর এই দুনিয়া ছেড়ে প্রতিপালকের কাছে চলে যাবার সময় হয়ে গেছে। এই ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ১৪
১তোমরা অন্তরে অস্থির হয়ো না। আল্লাহর ওপর ইমান রাখো, আমার ওপরও ইমান রাখো। ২আমার প্রতিপালকের কাছে থাকার অনেক জায়গা আছে। ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ১৫
১আমি প্রকৃত আঙুরগাছ এবং আমার প্রতিপালক চাষী। ২আমার যেসব ডালে ফল ধরে না, সেগুলো তিনি কেটে ফেলেন আর যেসব ডালে ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ১৬
১আমি এসব কথা তোমাদের জানাচ্ছি, যেনো তোমরা বাধা না পাও। ২তারা তোমাদেরকে সিনাগোগ থেকে বের করে দেবে। প্রকৃতপক্ষে এমন এক ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ১৭
১এসব কথা বলার পর হযরত ইসা আ. আকাশের দিকে তাকিয়ে বললেন, “হে আমার প্রতিপালক, সময় এসেছে, তোমার একান্ত প্রিয় মনোনীতজনকে ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ১৮
১এসব কথা বলার পর হযরত ইসা আ. তাঁর হাওয়ারিদের নিয়ে কিদরোন উপত্যকা পার হয়ে একটি জায়গায় গেলেন। সেখানে একটি বাগান ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ১৯
১অতঃপর পিলাত হযরত ইসা আ.কে চাবুক মারালেন। ২আর সৈন্যরা কাঁটালতা দিয়ে মুকুট বানিয়ে তাঁর মাথায় পরালো এবং তাঁকে একটি বেগুনি ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ২০
১সপ্তাহের প্রথম দিন খুব ভোরে অন্ধকার থাকতে মগ্দলিনি মরিয়ম কবরের কাছে এলেন এবং দেখলেন যে, কবরের মুখ থেকে পাথরটি সরিয়ে ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ২১
১এসবের পরে তিবিরিয়া লেকের পাড়ে হযরত ইসা আ. আবার তাঁর হাওয়ারিদের দেখা দিলেন। তিনি নিজেকে তাদের কাছে এভাবে দেখালেন: ২হযরত ...