১ইদুল-ফেসাখের আগে হযরত ইসা আ. বুঝতে পারলেন যে, তাঁর এই দুনিয়া ছেড়ে প্রতিপালকের কাছে চলে যাবার সময় হয়ে গেছে। এই দুনিয়ায় তিনি যাদেরকে মহব্বত করেছিলেন, তাঁর সেই নিজের লোকদেরকে তিনি শেষ পর্যন্ত মহব্বত করে গেলেন।
২রাতের খাবারের সময় হলো। এর আগেই শয়তান ইহুদা ইবনে সিমোন ইস্কারিয়োতের মনে হযরত ইসা আ.র সাথে বেইমানি করার চিন্তা ঢুকিয়ে দিলো। ৩হযরত ইসা আ. জানতেন যে, আল্লাহ সবকিছুই তাঁর হাতে দিয়েছেন এবং তিনি আল্লাহর কাছ থেকে এসেছেন ও আল্লাহর কাছেই যাচ্ছেন। ৪তিনি টেবিল থেকে উঠলেন এবং ওপরের জামাটা খুলে রেখে কোমরে একটি গামছা বাঁধলেন। ৫একটি গামলায় পানি নিয়ে হাওয়ারিদের পা ধুয়ে এবং কোমরে জড়ানো গামছা দিয়ে তা মুছে দিতে লাগলেন।
৬তিনি হযরত সাফওয়ান পিতরের কাছে এলে তিনি বললেন, “হুজুর, আপনি কি আমার পা ধুয়ে দিতে যাচ্ছেন?” ৭হযরত ইসা আ. উত্তর দিলেন, “তুমি এখন জানো না আমি কী করছি কিন্তু পরে বুঝতে পারবে।” ৮হযরত পিতর রা. তাঁকে বললেন, “আপনি কখনো আমার পা ধোবেন না।” হযরত ইসা আ. উত্তর দিলেন, “আমি যদি তোমাকে না ধুই, তাহলে আমার সাথে তোমার কোনো অংশ নেই।” ৯হযরত সাফওয়ান পিতর তাঁকে বললেন, “হুজুর, শুধু আমার পা নয় কিন্তু আমার হাত এবং মাথাও ধুয়ে দিন!” ১০হযরত ইসা আ. তাকে বললেন, “যে গোসল করেছে, তার পা ছাড়া আর কোনোকিছু ধোয়ার প্রয়োজন নেই, সে সম্পূর্ণ পাকসাফ। এবং তোমরা তো পাকসাফ আছো- যদিও তোমাদের সবাই নয়।”
১১তিনি জানতেন কে তাঁর সাথে বেইমানি করবে, এজন্যই তিনি একথা বললেন, “তোমাদের মধ্যে সকলে পাকসাফ নয়।”
১২তাদের পা ধুয়ে দেবার পর তিনি তাঁর জামাটা গায়ে দিলেন এবং তাঁর জায়গায় গিয়ে বসে তাদের বললেন, “আমি তোমাদের প্রতি যা করলাম তা কি তোমরা বুঝতে পেরেছো?” ১৩তোমরা আমাকে মালিক এবং ওস্তাদ বলে থাকো, আর তোমরা তা ঠিকই বলো, কারণ আমি তা-ই। ১৪যদি আমি তোমাদের মালিক এবং ওস্তাদ হয়ে তোমাদের পা ধুয়ে দেই, তাহলে তোমাদেরও উচিত একে অন্যের পা ধুয়ে দেয়া। ১৫আমি তোমাদের সামনে একটি দৃষ্টান্ত রাখলাম, যেনো আমি যা করলাম, তোমরাও তা করো।
১৬আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, গোলাম তার মালিকের চেয়ে বড়ো নয়; যাকে পাঠানো হয় সে প্রেরকের চেয়ে বড়ো নয়। ১৭তোমরা রহমতপ্রাপ্ত, যদি তোমরা এসব জানো ও করো। ১৮আমি তোমাদের সবার কথা বলছি না; আমি জানি আমি কাদের বেছে নিয়েছি। কিন্তু পূর্বের কিতাবের কথা অবশ্যই পূর্ণ হবে, ‘এমন একজন রয়েছে, যে আমার রুটি খাচ্ছে, সে আমার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে।’ ১৯এসব ঘটার আগেই আমি তোমাদের বললাম, যেনো যখন এসব ঘটবে, তখন তোমরা বিশ্বাস করতে পারো যে, আমিই তিনি।
২০আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, আমি যাদের পাঠাই, তাদের একজনকে যে গ্রহণ করে, সে আমাকে গ্রহণ করে এবং যে আমাকে গ্রহণ করে, যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন, সে তাঁকেই গ্রহণ করে।” ২১একথা বলার পর হযরত ইসা আ. অন্তরে অস্থির হলেন এবং বললেন, “আমি তোমাদের সত্যি সত্যিই বলছি, তোমাদের মধ্যে একজন আমার সাথে বেইমানি করবে।” ২২হাওয়ারিরা একে অন্যের দিকে তাকাতে লাগলেন; বুঝতে পারলেন না যে, তিনি কার কথা বলছেন।
২৩তাঁর এক হাওয়ারি- যাকে হযরত ইসা আ. মহব্বত করতেন- তাঁর পাশেই বসেছিলেন। ২৪হযরত সাফওয়ান পিতর তাঁকে বললেন, যেনো তিনি হযরত ইসা আ.কে জিজ্ঞেস করেন যে, তিনি কার বিষয়ে বলছেন। ২৫তাই তিনি হযরত ইসা আ.-র দিকে ঝুঁকে তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, “হুজুর, সে কে?”
২৬হযরত ইসা উত্তর দিলেন, “এই রুটির টুকরো পাত্রে ডুবিয়ে আমি যাকে দেবো, সে-ই সে।” তিনি রুটি ডুবিয়ে ইহুদা ইবনে সিমোন ইস্কারিয়োতকে দিলেন।
২৭রুটির টুকরো নেবার পর শয়তান তার ভেতরে ঢুকলো। হযরত ইসা আ. তাকে বললেন, “যা করতে যাচ্ছো তা তাড়াতাড়ি করো।” ২৮টেবিলে যারা বসেছিলেন, তারা কেউ জানতেন না যে, তিনি কেনো তাকে একথা বলছেন। ২৯কেউ কেউ মনে করলেন, যেহেতু তহবিল ইহুদার কাছে রয়েছে, তাই তিনি তাকে বলছেন, ‘ইদে আমাদের যা লাগবে তা কিনে আনো’; অথবা হয়তো গরিবদের কিছু দিতে বলছেন। ৩০রুটির টুকরো নেবার পর সাথে সাথেই তিনি বাইরে চলে গেলেন। তখন ছিলো রাত।
৩১তিনি বাইরে চলে যাবার পর হযরত ইসা আ. বললেন, “ইবনুল-ইনসান এখন মহিমান্বিত হয়েছেন এবং আল্লাহ তাঁর মধ্য দিয়ে মহিমান্বিত হয়েছেন। ৩২যদি আল্লাহ তাঁর মধ্য দিয়ে মহিমান্বিত হয়ে থাকেন, তাহলে আল্লাহও তাঁকে মহিমান্বিত করবেন এবং এখনই মহিমান্বিত করবেন।
৩৩আমার সন্তানেরা, আমি আর অল্প কিছুদিন তোমাদের সাথে আছি। তোমরা আমার খোঁজ করবে। আমি যেমন ইহুদিদের বলেছি, তেমনি তোমাদেরও বলছি, ‘আমি যেখানে যাচ্ছি, তোমরা সেখানে আসতে পারো না। ৩৪আমি তোমাদের একটি নতুন হুকুম দিচ্ছি যে, তোমরা একজন অন্যজনকে মহব্বত করো। আমি যেভাবে তোমাদের মহব্বত করেছি, একইভাবে তোমাদেরও উচিত একে অন্যকে মহব্বত করা। ৩৫যদি তোমাদের একজনের জন্য অন্যজনের মহব্বত থাকে, তাহলে সবাই জানবে যে, তোমরা আমার উম্মত।”
৩৬হযরত সাফওয়ান পিতর তাঁকে বললেন, “হুজুর, আপনি কোথায় যাচ্ছেন?” হযরত ইসা আ. উত্তর দিলেন, “আমি যেখানে যাচ্ছি, তোমরা এখন সেখানে যেতে পারো না কিন্তু পরে তোমরা আমার কাছে আসবে।” ৩৭হযরত পিতর রা. তাঁকে বললেন, “হুজুর, কেনো আমি এখনই আপনার সাথে যেতে পারবো না? আমি আপনার জন্য আমার জীবন দেবো।” ৩৮হযরত ইসা আ. উত্তর দিলেন, “তুমি কি আমার জন্য তোমার জীবন দেবে?
আমি তোমাকে সত্যিই বলছি, আজ মোরগ ডাকার আগেই তুমি আমাকে তিনবার অস্বীকার করবে।
Facebook
WhatsApp
Telegram
Email
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ১
১-৫শুরু থেকেই আল্লাহ আছেন। আল্লাহর কালাম তাঁর নিজের মধ্যেই ছিলো, এই কালামই হলো আল্লাহর কথা। আল্লাহ্ তাঁর কথা দ্বারাই সব ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ২
১তৃতীয় দিনে গালিলের কান্না গ্রামে একটি বিয়ের অনুষ্ঠান ছিলো এবং হযরত ইসা আ.র মা সেখানে ছিলেন। ২হযরত ইসা আ. এবং ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ৩
১নিকদিম নামে একজন ফরিসি ছিলেন; তিনি ছিলেন ইহুদিদের একজন নেতা। ২তিনি রাতের বেলায় হযরত ইসা আ.র কাছে এলেন এবং বললেন, ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ৪
১যখন হযরত ইসা আ. বুঝতে পারলেন যে, ফরিসিরা শুনতে পেয়েছেন, “ হযরত ইসা আ. হযরত ইয়াহিয়া আ.র থেকে বেশি উম্মত ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ৫
১এরপর ইহুদিদের আরেকটি ইদের সময় হলো এবং হযরত ইসা আ. জেরুসালেমে গেলেন। ২জেরুসালেমের মেষ-দরজার কাছে একটি পুকুর ছিলো। ৩হিব্রু ভাষায় ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ৬
১অতঃপর হযরত ইসা আ. গালিল লেকের ওপারে গেলেন। একে তিবিরিয়া লেকও বলা হয়। ২বিশাল এক জনতা তাঁর পেছনে পেছনে যাচ্ছিলো, ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ৭
১এরপর হযরত ইসা আ. গালিলে চলাফেরা করছিলেন। তিনি ইহুদিয়ায় যেতে চাইলেন না, কারণ ইহুদিরা তাঁকে হত্যা করার সুযোগ খুঁজছিলো। ২এই ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ৮
১অতঃপর তারা প্রত্যেকে বাড়ি চলে গেলেন। এদিকে হযরত ইসা আ.ও জৈতুন পাহাড়ে চলে গেলেন। ২এবং খুব ভোরে উঠে তিনি আবার ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ৯
১যেতে যেতে তিনি এক জন্মান্ধকে দেখতে পেলেন। ২তাঁর সাহাবিরা তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, “হুজুর, কার গুনাহর কারণে এই লোকটি অন্ধ হয়ে ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ১০
১আমি তোমাদের সত্যি সত্যিই বলছি, যে কেউ দরজা দিয়ে না ঢুকে অন্য উপায়ে ভেড়ার খোঁয়াড়ে ঢোকে, সে চোর ও ডাকাত। ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ১১
১বেথানিয়া গ্রামের লাসার নামে এক লোকের অসুখ হয়েছিলো। মরিয়ম ও তার বোন মার্থা সেই একই গ্রামে থাকতেন। ২ইনি সেই মরিয়ম, ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ১২
১ইদুল-ফেসাখের ছয়দিন আগে হযরত ইসা আ. বেথানিয়ায় লাসারের বাড়িতে এলেন। এই লাসারকেই তিনি মৃত থেকে জীবিত করে তুলেছিলেন। ২সেখানে তারা ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ১৩
১ইদুল-ফেসাখের আগে হযরত ইসা আ. বুঝতে পারলেন যে, তাঁর এই দুনিয়া ছেড়ে প্রতিপালকের কাছে চলে যাবার সময় হয়ে গেছে। এই ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ১৪
১তোমরা অন্তরে অস্থির হয়ো না। আল্লাহর ওপর ইমান রাখো, আমার ওপরও ইমান রাখো। ২আমার প্রতিপালকের কাছে থাকার অনেক জায়গা আছে। ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ১৫
১আমি প্রকৃত আঙুরগাছ এবং আমার প্রতিপালক চাষী। ২আমার যেসব ডালে ফল ধরে না, সেগুলো তিনি কেটে ফেলেন আর যেসব ডালে ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ১৬
১আমি এসব কথা তোমাদের জানাচ্ছি, যেনো তোমরা বাধা না পাও। ২তারা তোমাদেরকে সিনাগোগ থেকে বের করে দেবে। প্রকৃতপক্ষে এমন এক ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ১৭
১এসব কথা বলার পর হযরত ইসা আ. আকাশের দিকে তাকিয়ে বললেন, “হে আমার প্রতিপালক, সময় এসেছে, তোমার একান্ত প্রিয় মনোনীতজনকে ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ১৮
১এসব কথা বলার পর হযরত ইসা আ. তাঁর হাওয়ারিদের নিয়ে কিদরোন উপত্যকা পার হয়ে একটি জায়গায় গেলেন। সেখানে একটি বাগান ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ১৯
১অতঃপর পিলাত হযরত ইসা আ.কে চাবুক মারালেন। ২আর সৈন্যরা কাঁটালতা দিয়ে মুকুট বানিয়ে তাঁর মাথায় পরালো এবং তাঁকে একটি বেগুনি ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ২০
১সপ্তাহের প্রথম দিন খুব ভোরে অন্ধকার থাকতে মগ্দলিনি মরিয়ম কবরের কাছে এলেন এবং দেখলেন যে, কবরের মুখ থেকে পাথরটি সরিয়ে ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ২১
১এসবের পরে তিবিরিয়া লেকের পাড়ে হযরত ইসা আ. আবার তাঁর হাওয়ারিদের দেখা দিলেন। তিনি নিজেকে তাদের কাছে এভাবে দেখালেন: ২হযরত ...