১বেথানিয়া গ্রামের লাসার নামে এক লোকের অসুখ হয়েছিলো। মরিয়ম ও তার বোন মার্থা সেই একই গ্রামে থাকতেন। ২ইনি সেই মরিয়ম, যিনি সুগন্ধি তেল দিয়ে মসিহকে অভিষেক করেছিলেন এবং নিজের চুল দিয়ে তাঁর পা মুছে দিয়েছিলেন। তারই ভাই লাসার অসুস্থ ছিলেন। ৩সুতরাং লাসারের বোনেরা ইসার কাছে খবর পাঠালেন, “হুজুর, আপনি যাকে মহব্বত করেন তিনি অসুস্থ। ৪কিন্তু হযরত ইসা আ. একথা শুনে বললেন, “এই অসুখ মৃত্যুর জন্য নয় বরং আল্লাহর মহিমা প্রকাশের জন্য হয়েছে, যেনো এর মাধ্যমে তাঁর একান্ত প্রিয় মনোনীতজনও মহিমান্বিত হন।”
৫যদিও হযরত ইসা আ. মার্থা ও তার বোন এবং লাসারকে মহব্বত করতেন, ৬তবুও লাসারের অসুখের খবর পেয়েও তিনি যেখানে ছিলেন, সেখানে আরো দু’দিন থাকলেন। ৭এরপর তিনি তাঁর হাওয়ারিদের বললেন, “চলো, আমরা আবার ইহুদিয়াতে যাই।” ৮হাওয়ারিরা তাঁকে বললেন, “হুজুর, এই ক’দিন আগে ইহুদিরা আপনাকে পাথর মারতে চেয়েছিলো, আর আপনি এখন আবার সেখানে যাবেন?” ৯হযরত ইসা আ. উত্তর দিলেন, “দিনের আলো কি বারো ঘন্টা থাকে না? যারা দিনে চলাফেরা করে, তারা হোঁচট খায় না, কারণ তারা দুনিয়ার আলো দেখে। ১০কিন্তু যারা রাতে চলাফেরা করে, তারা হোঁচট খায়, কারণ তাদের মধ্যে আলো নেই।”
১১এসব বলার পর তিনি তাদের বললেন, “আমাদের বন্ধু লাসার ঘুমিয়ে পড়েছে কিন্তু আমি তাকে জাগাতে যাচ্ছি।” ১২হাওয়ারিরা তাঁকে বললেন, হুজুর, যদি ঘুমিয়েই থাকে, তাহলে সে ভালো হয়ে যাবে।” ১৩হযরত ইসা আ. তার মৃত্যুর কথা বলছিলেন কিন্তু তারা মনে করলেন যে, তিনি স্বাভাবিক ঘুমের কথা বলছেন।
১৪তখন হযরত ইসা আ. তাদের পরিষ্কার করে বললেন, “লাসার মারা গেছে। ১৫তোমাদের জন্য আমি আনন্দিত, কারণ আমি সেখানে ছিলাম না, যেনো তোমরা ইমান আনতে পারো। কিন্তু এখন চলো, আমরা তার কাছে যাই।” ১৬থোমা, যাকে যমজ বলা হতো, অন্য হাওয়ারিদের বললেন, “চলো, আমরাও যাই, যেনো তার সাথে মরতে পারি।”
১৭হযরত ইসা আ. সেখানে পৌঁছে জানতে পারলেন যে, লাসারকে চার দিন আগে দাফন করা হয়েছে। ১৮,১৯জেরুসালেম থেকে বেথানিয়া প্রায় দু’মাইল দূরে ছিলো। মার্থা ও মরিয়মের ভাইয়ের মৃত্যুতে তাদের সান্ত্বনা দেবার জন্য ইহুদিরা অনেকেই এসেছিলো। ২০মার্থা যখন শুনলেন যে, হযরত ইসা আ. আসছেন, তখন তিনি গিয়ে তাঁর সাথে দেখা করলেন; এ-সময় মরিয়ম ঘরের ভেতরেই রইলেন। ২১মার্থা হযরত ইসা আ.কে বললেন, “হুজুর, আপনি যদি এখানে থাকতেন, তাহলে আমার ভাই মারা যেতো না। ২২কিন্তু আমি এখনো জানি, আপনি আল্লাহর কাছে যা চাবেন, তিনি তা দেবেন।”
২৩হযরত ইসা আ. তাঁকে বললেন, “তোমার ভাই আবার উঠবে।” ২৪মার্থা তাঁকে বললেন, “আমি জানি যে, কেয়ামতের দিনে সে আবার উঠবে।” ২৫হযরত ইসা আ. তাঁকে বললেন, “আমিই পুনরুত্থান ও জীবন। যারা আমার ওপর ইমান আনে, তারা মরলেও জীবিত হবে। ২৬এবং যে কেউ জীবিত আছে ও আমার ওপর ইমান আনে, সে মরবে না। তুমি কি এতে বিশ্বাস করো?” ২৭তিনি তাঁকে বললেন, “হ্যাঁ, হুজুর। আমি বিশ্বাস করি, দুনিয়াতে যাঁর আসার কথা, আপনিই সেই মসিহ- আল্লাহর একান্ত প্রিয় মনোনীতজন।”
২৮একথা বলার পর মার্থা চলে গেলেন। তিনি তার বোন মরিয়মকে ডেকে গোপনে বললেন, “ওস্তাদ এখানে এসেছেন এবং তোমাকে ডাকছেন।” ২৯তিনি একথা শুনে তাড়াতাড়ি করে তাঁর কাছে গেলেন। ৩০হযরত ইসা আ. তখনো গ্রামের ভেতরে আসেননি, মার্থা তাঁর সাথে যেখানে দেখা করেছিলেন, সেখানেই থেকে গিয়েছিলেন।
৩১যে ইহুদিরা তাকে সান্ত্বনা দেবার জন্য তার ঘরে এসেছিলো, মরিয়মকে তাড়াতাড়ি উঠে বাইরে যেতে দেখে তারা তার পেছনে পেছনে গেলো; কারণ তারা মনে করলো যে, তিনি কবরের কাছে কাঁদতে যাচ্ছেন। ৩২ইসা যেখানে ছিলেন, মরিয়ম সেখানে এসে তাঁকে দেখে তাঁর পায়ে পড়ে বললেন, “হুজুর, আপনি যদি এখানে থাকতেন, তাহলে আমার ভাই মারা যেতো না।”
৩৩হযরত ইসা আ. মরিয়মকে ও তাঁর সাথে যে ইহুদিরা এসেছিলো, তাদের কাঁদতে দেখে অন্তরে খুবই দুঃখিত ও ভীষণভাবে অস্থির হলেন। ৩৪তিনি বললেন, “তাকে কোথায় রেখেছো?” তারা তাঁকে বললো, “হুজুর, এসে দেখুন।”
৩৫হযরত ইসা আ. কাঁদতে লাগলেন। ৩৬এতে ইহুদিরা বললো, “দেখো, তিনি তাকে কতো মহব্বত করতেন!” ৩৭কিন্তু তাদের মধ্যে কেউ কেউ বললো, “যিনি অন্ধ মানুষের চোখ খুলে দিয়েছেন, তিনি কি এই লোকের মৃত্যু আটকাতে পারতেন না?”
৩৮তখন হযরত ইসা আ. আবার অন্তরে খুবই দুঃখিত হয়ে কবরের কাছে এলেন। কবরটা ছিলো একটি গুহা এবং মুখটা ছিলো পাথর দিয়ে বন্ধ করা। ৪০হযরত ইসা আ. বললেন, “পাথরটা সরিয়ে দাাও।” মৃত লোকটির বোন মার্থা বললেন, “হুজুর, এখন দুর্গন্ধ হয়ে গেছে, কারণ আজ চার দিন হয় তার মৃত্যু হয়েছে।” হযরত ইসা আ. তাকে বললেন, “আমি কি তোমাকে বলিনি যে, যদি তুমি বিশ্বাস করো, তাহলে আল্লাহর মহিমা দেখতে পাবে?”
৪১তাই তারা পাথরটা সরিয়ে ফেললো এবং হযরত ইসা আ. ওপরের দিকে তাকিয়ে বললেন, “হে আমার প্রতিপালক, আমার কথা শুনেছো বলে তোমার শুকরিয়া আদায় করি। ৪২আমি জানি, তুমি সব সময়ই আমার দোয়া কবুল করে থাকো; কিন্তু আমার চারপাশে দাঁড়িয়ে থাকা লোকদের জন্য একথা বললাম, যেনো তারা বিশ্বাস করতে পারে যে, তুমিই আমাকে পাঠিয়েছো।”
৪৩একথা বলার পর তিনি জোরে ডাক দিয়ে বললেন, “লাসার, বেরিয়ে এসো!” ৪৪মৃত মানুষটি বেরিয়ে এলেন। তার হাত ও পা কাপড়ের ফিতে দিয়ে পেঁচানো এবং তার মুখে একটি রুমাল বাঁধা ছিলো। হযরত ইসা আ. তাদের বললেন, “তার বাঁধন খুলে দিয়ে তাকে যেতে দাও।” ৪৫যে ইহুদিরা মরিয়মের সাথে এসেছিলো, ৪৬তাদের অনেকে ইসার কাজ দেখে তাঁর ওপর ইমান আনলো; কিন্তু তাদের কয়েকজন ফরিসিদের কাছে গিয়ে যা ঘটেছে তা জানালো।
৪৭তখন প্রধান ইমামেরা ও ফরিসিরা পরিষদের সভা ডাকলেন এবং বললেন, “আমাদের কী করা উচিত? এই লোকটি অনেক মোজেজা দেখাচ্ছে। ৪৮আমরা যদি তাকে এভাবে চলতে দেই, তাহলে সবাই তার ওপর ইমান আনবে এবং রোমীয়রা এসে আমাদের পবিত্র জায়গা ও জাতিকে ধ্বংস করে দেবে।”
৪৯কিন্তু তাদের মধ্যে কাইয়াফা নামে একজন ওই বছর প্রধান ইমাম ছিলেন।
৫০তিনি বললেন, তোমরা কিছুই জানো না! তোমরা বোঝো না যে, গোটা জাতি ধ্বংস হওয়ার চেয়ে সব মানুষের হয়ে একজনের মৃত্যু ভালো।” ৫১তিনি নিজ থেকে একথা বলেননি কিন্তু ওই বছর প্রধান ইমাম হওয়ার কারণে তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করলেন যে, হযরত ইসা আ. জাতির জন্য মৃত্যুবরণ করতে যাচ্ছেন; ৫২তবে শুধু এই জাতির জন্য নয় কিন্তু আল্লাহর যেসব প্রিয় বান্দা চারদিকে ছড়িয়ে রয়েছে তাদের জন্যও, যেনো তাদের এক করতে পারেন।
৫৩তাই সেদিন থেকেই তারা তাঁকে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করতে লাগলেন। অতঃপর হযরত ইসা আ. আর খোলাখুলিভাবে ইহুদিদের মধ্যে চলাফেরা করলেন না ৫৪কিন্তু মরুপ্রান্তরের কাছাকাছি এলাকায় ইফ্রাইম নামে এক শহরে চলে গেলেন এবং তাঁর হাওয়ারিদের সাথে সেখানেই থাকলেন।
৫৫ইহুদিদের ইদুল-ফেসাখ কাছে এসে পড়ায় দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকেরা জেরুসালেমে গেলো, যেনো ইদের আগে তারা পাকসাফ হতে পারে। ৫৬তারা হযরত ইসা আ.-র খোঁজ করছিলো এবং বায়তুল-মোকাদ্দসে দাঁড়িয়ে একে অন্যকে জিজ্ঞেস করছিলো, “তোমার কী মনে হয়? নিশ্চয়ই তিনি ইদে আসবেন না, তাই না?” ৫৭প্রধান ইমামেরা ও ফরিসিরা এই হুকুম দিয়েছিলেন যে, কেউ যদি জানে হযরত ইসা আ. কোথায় আছেন, তাহলে তাদের জানাতে হবে, যেনো তারা তাঁকে ধরতে পারেন।
Facebook
WhatsApp
Telegram
Email
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ১
১-৫শুরু থেকেই আল্লাহ আছেন। আল্লাহর কালাম তাঁর নিজের মধ্যেই ছিলো, এই কালামই হলো আল্লাহর কথা। আল্লাহ্ তাঁর কথা দ্বারাই সব ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ২
১তৃতীয় দিনে গালিলের কান্না গ্রামে একটি বিয়ের অনুষ্ঠান ছিলো এবং হযরত ইসা আ.র মা সেখানে ছিলেন। ২হযরত ইসা আ. এবং ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ৩
১নিকদিম নামে একজন ফরিসি ছিলেন; তিনি ছিলেন ইহুদিদের একজন নেতা। ২তিনি রাতের বেলায় হযরত ইসা আ.র কাছে এলেন এবং বললেন, ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ৪
১যখন হযরত ইসা আ. বুঝতে পারলেন যে, ফরিসিরা শুনতে পেয়েছেন, “ হযরত ইসা আ. হযরত ইয়াহিয়া আ.র থেকে বেশি উম্মত ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ৫
১এরপর ইহুদিদের আরেকটি ইদের সময় হলো এবং হযরত ইসা আ. জেরুসালেমে গেলেন। ২জেরুসালেমের মেষ-দরজার কাছে একটি পুকুর ছিলো। ৩হিব্রু ভাষায় ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ৬
১অতঃপর হযরত ইসা আ. গালিল লেকের ওপারে গেলেন। একে তিবিরিয়া লেকও বলা হয়। ২বিশাল এক জনতা তাঁর পেছনে পেছনে যাচ্ছিলো, ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ৭
১এরপর হযরত ইসা আ. গালিলে চলাফেরা করছিলেন। তিনি ইহুদিয়ায় যেতে চাইলেন না, কারণ ইহুদিরা তাঁকে হত্যা করার সুযোগ খুঁজছিলো। ২এই ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ৮
১অতঃপর তারা প্রত্যেকে বাড়ি চলে গেলেন। এদিকে হযরত ইসা আ.ও জৈতুন পাহাড়ে চলে গেলেন। ২এবং খুব ভোরে উঠে তিনি আবার ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ৯
১যেতে যেতে তিনি এক জন্মান্ধকে দেখতে পেলেন। ২তাঁর সাহাবিরা তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, “হুজুর, কার গুনাহর কারণে এই লোকটি অন্ধ হয়ে ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ১০
১আমি তোমাদের সত্যি সত্যিই বলছি, যে কেউ দরজা দিয়ে না ঢুকে অন্য উপায়ে ভেড়ার খোঁয়াড়ে ঢোকে, সে চোর ও ডাকাত। ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ১১
১বেথানিয়া গ্রামের লাসার নামে এক লোকের অসুখ হয়েছিলো। মরিয়ম ও তার বোন মার্থা সেই একই গ্রামে থাকতেন। ২ইনি সেই মরিয়ম, ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ১২
১ইদুল-ফেসাখের ছয়দিন আগে হযরত ইসা আ. বেথানিয়ায় লাসারের বাড়িতে এলেন। এই লাসারকেই তিনি মৃত থেকে জীবিত করে তুলেছিলেন। ২সেখানে তারা ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ১৩
১ইদুল-ফেসাখের আগে হযরত ইসা আ. বুঝতে পারলেন যে, তাঁর এই দুনিয়া ছেড়ে প্রতিপালকের কাছে চলে যাবার সময় হয়ে গেছে। এই ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ১৪
১তোমরা অন্তরে অস্থির হয়ো না। আল্লাহর ওপর ইমান রাখো, আমার ওপরও ইমান রাখো। ২আমার প্রতিপালকের কাছে থাকার অনেক জায়গা আছে। ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ১৫
১আমি প্রকৃত আঙুরগাছ এবং আমার প্রতিপালক চাষী। ২আমার যেসব ডালে ফল ধরে না, সেগুলো তিনি কেটে ফেলেন আর যেসব ডালে ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ১৬
১আমি এসব কথা তোমাদের জানাচ্ছি, যেনো তোমরা বাধা না পাও। ২তারা তোমাদেরকে সিনাগোগ থেকে বের করে দেবে। প্রকৃতপক্ষে এমন এক ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ১৭
১এসব কথা বলার পর হযরত ইসা আ. আকাশের দিকে তাকিয়ে বললেন, “হে আমার প্রতিপালক, সময় এসেছে, তোমার একান্ত প্রিয় মনোনীতজনকে ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ১৮
১এসব কথা বলার পর হযরত ইসা আ. তাঁর হাওয়ারিদের নিয়ে কিদরোন উপত্যকা পার হয়ে একটি জায়গায় গেলেন। সেখানে একটি বাগান ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ১৯
১অতঃপর পিলাত হযরত ইসা আ.কে চাবুক মারালেন। ২আর সৈন্যরা কাঁটালতা দিয়ে মুকুট বানিয়ে তাঁর মাথায় পরালো এবং তাঁকে একটি বেগুনি ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ২০
১সপ্তাহের প্রথম দিন খুব ভোরে অন্ধকার থাকতে মগ্দলিনি মরিয়ম কবরের কাছে এলেন এবং দেখলেন যে, কবরের মুখ থেকে পাথরটি সরিয়ে ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ২১
১এসবের পরে তিবিরিয়া লেকের পাড়ে হযরত ইসা আ. আবার তাঁর হাওয়ারিদের দেখা দিলেন। তিনি নিজেকে তাদের কাছে এভাবে দেখালেন: ২হযরত ...