১ হযরত শৌল রা. তাকে হত্যার অনুমোদন দিচ্ছিলেন।
সেদিন জেরুসালেমে হযরত ইসা আ. এর অনুসারীদের ওপরে ভীষণ জুলুম শুরু হলো। তাতে হাওয়ারিরা ছাড়া বাকি সবাই ইহুদিয়া ও সামেরিয়া প্রদেশের সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়লেন। ২ আল্লাহ্ভক্ত মানুষেরা হযরত স্তিফান র-কে দাফন করলেন এবং তার জন্য খুব বিলাপ করলেন।
৩কিন্তু হযরত শৌল রা. সেই দলের লোকদের ধ্বংস করার চেষ্টায় ঘরে-ঘরে গিয়ে পুরুষ ও মহিলাদের ধরে টেনে এনে জেলে দিতে লাগলেন। ৪যারা ছড়িয়ে পড়েছিলেন, তারা চারদিকে গিয়ে কালাম প্রচার করতে লাগলেন। ৫হযরত ফিলিপ র. সামেরিয়াতে গিয়ে হযরত ইসা মসিহকে প্রচার করতে লাগলেন। ৬লোকেরা একমনে তাঁর কথা শুনছিলো এবং তিনি যে-সব আশ্চর্য কাজ করছিলেন, তা দেখে তাঁর কথা তারা মন দিয়ে শুনলো। ৭অনেকের ভেতর থেকে ভূতেরা চিৎকার করে বের হয়ে গেলো এবং অনেক অবশ রোগী ও খোঁড়ারা সুস্থ হলো। ৮ফলে শহরে মহা-আনন্দ হলো।
৯সেই শহরে সিমোন নামে এক লোক অনেকদিন থেকে জাদু দেখাচ্ছিলো। ১০এতে সামেরিয়ার লোকেরা আশ্চর্য হয়েছিলো এবং সে নিজেকে একজন বিশেষ লোক বলে দাবি করতো। ছোট থেকে বড়ো, আর ধনী-গরিব সবাই তার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনতো। তারা বলতো, “আল্লাহর যে-শক্তিকে মহৎ শক্তি বলা হয়, এই লোকটিই সেই শক্তি।” ১১তারা মন দিয়ে তার কথা শুনতো। কারণ অনেক দিন ধরে সে তার জাদু দিয়ে তাদের বশ করে রেখেছিলো।
১২হযরত ফিলিপ র. আল্লাহর রাজ্য ও হযরত ইসা মসিহের নাম সম্পর্কে সুখবর প্রচার করছিলেন। যখন তারা তাঁর কথায় ইমান আনলো, তখন তাদের পুরুষ ও মহিলারা বায়াত গ্রহণ করলো। ১৩এমন কি সিমোনও ইমান এনে বায়াত গ্রহণ করলো। সে সব-সময় হযরত ফিলিপ র. সংগে থাকলো এবং তার চিহ্ন-কাজ ও আশ্চর্য কাজ দেখে অবাক হলো।
১৪জেরুসালেমের হাওয়ারিরা যখন শুনলেন যে, সামেরিয়ার লোকেরা আল্লাহর কালামের ওপর ইমান এনেছে। ১৫তখন তারা হযরত পিতর রা. ও হযরত ইউহোন্না রা.-কে তাদের কাছে পাঠালেন। তারা দু’জন গেলেন এবং তাদের জন্য মোনাজাত করলেন, যেনো তাঁরা আল্লাহর রুহকে পেতে পারেন। ১৬কারণ তখনো তাঁদের ওপরে আল্লাহর রুহ আসেননি।
তাঁরা কেবল হযরত ইসা মসিহের নামে বায়াত গ্রহণ করেছিলেন। ১৭হযরত পিতর রা. ও হযরত ইউহোন্না রা. তাঁদের ওপর হাত রাখলেন, আর তাঁরা আল্লাহর রুহকে পেলেন।
১৮যখন সিমোন দেখলো যে, হাওয়ারিদের হাত রাখার মধ্য দিয়ে আল্লাহর রুহকে দেয়া হলো, তখন সে তাদের কাছে টাকা এনে বললো, ১৯“আমাকেও এই শক্তি দিন, যেনো আমি কারো ওপরে হাত রাখলে সেও আল্লাহর রুহকে পায়। ২০কিন্তু হযরত পিতর রা. তাকে বললেন, “তোমার টাকা তোমার সংগেই ধ্বংস হোক। কারণ তুমি মনে করেছো, টাকা দিয়ে আল্লাহর দান কিনতে পারবে। ২১এর মধ্যে তোমার কোনো অংশ বা অধিকার নেই। কারণ আল্লাহর সামনে তোমার অন্তর ঠিক নয়।
২২তাই তোমার এই খারাপি থেকে তওবা করো ও আল্লাহর কাছে মোনাজাত করো, যেনো সম্ভব হলে তোমার মনের এই খারাপ চিন্তা তিনি মাফ করতে পারেন। ২৩আমি দেখতে পাচ্ছি, তোমার মন লোভে ভরা এবং তুমি মন্দতার কাছে বন্দি হয়ে আছো।” ২৪সিমোন বললো, “আমার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করুন, যেনো আপনারা যা বললেন, তার কিছুই আমার ওপর না-ঘটে।”
২৫তারপর হযরত পিতর রা. ও হযরত ইউহোন্না রা. সেখানে সাক্ষ্য দিয়ে ও আল্লাহর কালাম প্রচার শেষ করে সামেরিয়ার বিভিন্ন গ্রামে ইঞ্জিল প্রচার করতে-করতে জেরুসালেমে ফিরে গেলেন।
২৬সেই সময় আল্লাহর এক ফেরেস্তা হযরত ফিলিপ র.-কে বললেন, “ওঠো, দক্ষিণ দিকের যে-পথ জেরুসালেম থেকে গাজা শহরের দিকে গেছে, সেই পথে যাও।” পথটা ছিলো মরু-প্রান্তরের মধ্যদিয়ে। ২৭সুতরাং, তিনি উঠে সেই দিকে গেলেন। পথে ইথিয়পিয়ার একজন বিশেষ রাজকর্মচারীর সংগে তার দেখা হলো। তিনি ছিলেন খোজা। ইথিয়পিয়ার কান্দাকি রানীর ধন-রত্নের দেখাশোনা করার ভার তার ওপরে ছিলো। আল্লাহর এবাদত করার জন্য তিনি জেরুসালেমে গিয়েছিলেন।
২৮বাড়ি ফেরার পথে তিনি রথে বসে হযরত ইশাইয়া আ. এর সহিফা তেলাওয়াত করছিলেন। ২৯তখন আল্লাহর রুহ হযরত ফিলিপ র.-কে বললেন, “ঐ রথের কাছে যাও এবং তার সংগে-সংগে চলো।”
৩০এতে তিনি দৌড়ে তার কাছে গেলেন এবং শুনতে পেলেন যে, তিনি হযরত ইশাইয়া আ. এর সহিফা তেলাওয়াত করছেন। হযরত ফিলিপ র. তাকে জিজ্ঞেস করলেন, “আপনি যা তেলাওয়াত করছেন, তাকি বুঝতে পারছেন?”
৩১তিনি উত্তর দিলেন, “কেউ বুঝিয়ে না-দিলে কেমন করে বুঝতে পারবো?” এবং তিনি হযরত ফিলিপ র.-কে রথে উঠে এসে তার কাছে বসতে অনুরোধ করলেন। ৩২তিনি কিতাবের যে-অংশ তেলাওয়াত করছিলেন তা এই- “জবাই করার জন্য ভেড়াকে যেভাবে নেয়া হয়, তাকে সেভাবে নেয়া হলো এবং লোম সংগ্রহকারীর সামনে ভেড়া যেমন চুপকরে থাকে, তিনিও তেমনি মুখ খুললেন না। ৩৩তিনি অপমানিত হলেন। তাঁর ওপর ন্যায়বিচার করা হয়নি। কে তাঁর বংশের কথা বলতে পারে? কারণ তাঁর জীবন এই দুনিয়া থেকে নিয়ে নেয়া হয়েছে।”
৩৪খোজা হযরত ফিলিপ র.-কে বললেন, “নবি কার বিষয়ে এ-কথা বলেছেন? নিজের বিষয়ে, না অন্য কারো বিষয়ে? ৩৫তখন হযরত ফিলিপ র. কথা বলতে আরম্ভ করলেন। তিনি কিতাবের এই অংশ থেকে শুরু করে হযরত ইসা আ. এর বিষয়ে সুখবর তাকে বললেন। ৩৬পথে যেতে-যেতে তারা এমন এক জায়গায় এলেন, যেখানে কিছু পানি ছিলো। ৩৭তখন খোজা বললেন, “দেখুন, এখানে পানি আছে! আমার বায়াত নেবার কোনো বাধা আছে কি?”
৩৮তিনি গাড়ি থামাতে বললেন এবং হযরত ফিলিপ র. ও খোজা উভয়ে পানিতে নামলেন ও তিনি তাকে বায়াত দিলেন। ৩৯যখন তারা পানি থেকে উঠে এলেন, তখন আল্লাহর রুহ হঠাৎ হযরত ফিলিপ র.-কে নিয়ে গেলেন। খোজা তাকে আর দেখতে পেলেন না এবং তিনি আনন্দ করতে-করতে বাড়ির পথে চলে গেলেন। হযরত ফিলিপ র. নিজেকে অস্দোদ এলাকায় দেখতে পেলেন। ৪০তিনি কৈসরিয়াতে না-পৌঁছা পর্যন্ত গ্রামে-গ্রামে ইঞ্জিল প্রচার করতে থাকলেন।
Facebook
WhatsApp
Telegram
Email
হাওয়ারিনামা: রুকু – ১
১,২মাননীয় থিয়ফিল, হযরত ইসা আ.কে বেহেস্তে তুলে নেবার আগ পর্যন্ত তিনি যা করেছিলেন ও শিক্ষা দিয়েছিলেন, তার সমস্তই আমি আগের ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ২
১পঞ্চাশতম দিনের ইদে যখন তারা সবাই এক জায়গায় মিলিত হলেন, ২তখন হঠাৎ আসমান থেকে জোর বাতাসের শব্দের মতো একটি শব্দ ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ৩
১এক দিন বিকেল তিনটার এবাদতের সময় হযরত সাফওয়ান রা. ও হযরত ইউহোন্না রা. বায়তুল-মোকাদ্দসে যাচ্ছিলেন। এবং জন্ম থেকেই খোঁড়া এক ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ৪
১হযরত সাফওয়ান রা. ও হযরত ইউহোন্না রা. যখন লোকদের সংগে কথা বলছিলেন, তখন ইমামেরা, বায়তুল-মোকাদ্দসের প্রধান কর্মচারী ও সদ্দুকিরা তাদের ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ৫
১আনানিয়াস নামে এক লোক ও তার স্ত্রী সাফিরা একটি সম্পত্তি বিক্রি করলো। ২তার স্ত্রীর জানা মতেই বিক্রির কিছু টাকা সে ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ৬
১ঐ দিনগুলোতে যখন উম্মতদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছিলো, তখন গ্রীকরা ইহুদিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলো যে, প্রতিদিন খাবার বিতরণের সময় তাদের বিধবাদের ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ৭
১তখন প্রধান ইমাম হযরত স্তিফান র.কে জিজ্ঞেস করলেন, “এসব কি সত্যি?”২হযরত স্তিফান র. উত্তর দিলেন, “হে আমার ভাইয়েরা ও আমার ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ৮
১ হযরত শৌল রা. তাকে হত্যার অনুমোদন দিচ্ছিলেন।সেদিন জেরুসালেমে হযরত ইসা আ. এর অনুসারীদের ওপরে ভীষণ জুলুম শুরু হলো। তাতে ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ৯
১-২এদিকে হযরত শৌল রা. হযরত ইসা মসিহের উম্মতদের হত্যা করার ভয় দেখাচ্ছিলেন।তিনি মহা-ইমামের কাছে গিয়ে দামেস্ক শহরের সিনাগোগগুলোতে দেবার জন্য ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ১০
১কৈসরিয়া শহরে কর্নেলিয়াস নামে একজন লোক ইতালিয় সৈন্যদলের লেফটেন্যান্ট ছিলেন। ২তিনি আল্লাহ্ভক্ত ছিলেন এবং তিনি ও তার পরিবারের সবাই আল্লাহর ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ১১
১অইহুদিরাও যে আল্লাহর কালামের ওপর ইমান এনেছেন, সে-কথা হাওয়ারিরা এবং সমস্ত ইহুদিয়ার ইমানদার ভাইয়েরা শুনলেন। ২এ-জন্য হযরত সাফওয়ান রা. যখন ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ১২
১সেই সময় বাদশাহ হেরোদ জুলুম করার জন্য কওমের কয়েকজনকে ধরে এনেছিলেন। ২তিনি হযরত ইউহোন্না রা.-র ভাই হযরত ইয়াকুব রা.-কে তরবারি ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ১৩
১ আন্তিয়খিয়ার অনুসারীদের মধ্যে কয়েকজন ওলি ও শিক্ষক ছিলেন। তাদের নাম হযরত বার্নবাস র., হযরত নিগের র. নামে পরিচিত সিমোন, ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ১৪
১ইকোনিয়ম শহরেও একই ঘটনা ঘটলো। সেখানে হযরত পৌল রা. ও হযরত বার্নবাস র. ইহুদিদের সিনাগোগে গিয়ে এমনভাবে কথা বললেন যে, ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ১৫
১সেই সময় ইহুদিয়া থেকে কয়েকজন লোক এলেন এবং ভাইদের এই শিক্ষা দিতে লাগলেন যে, “হযরত মুসা আ. এর শরিয়ত মতে ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ১৬
১পরে হযরত পৌল রা. দেব্রা ও লুস্ত্রা শহরে গেলেন। সেখানে হযরত তিমথীয় র. নামে একজন উম্মত থাকতেন। তাঁর মা ছিলেন ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ১৭
১হযরত পৌল রা. ও হযরত সিল র. আমফিপলি ও আপল্লো নিয়া হয়ে থিসালোনিকিতে এসে পৌঁছলেন। সেখানে ইহুদিদের একটি সিনাগোগ ছিলো। ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ১৮
১এরপর হযরত পৌল রা. এথেন্স ছেড়ে করিন্থ শহরে গেলেন। সেখানে আকুইলা নামে এক ইহুদির সংগে তার দেখা হলো, জন্মসূত্রে তিনি ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ১৯
১আপল্লো যখন করিন্থে ছিলেন, সেই সময় হযরত পৌল রা. সে-সব এলাক ঘুরে ইফিসে এলেন। ২সেখানে তিনি কয়েকজন ইমানদারের দেখা পেলেন। ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ২০
১গোলমাল থামার পর হযরত পৌল রা. ইমানদারদের ডেকে পাঠালেন। তাঁদের উৎসাহ দেবার পর তাঁদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে তিনি মেসিডোনিয়ার ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ২১
১তাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আমরা সোজা কোস দ্বীপে গেলাম। পরদিন আমরা রোডস দ্বীপে এলাম। তারপর সেখান থেকে পাতারা গেলাম। ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ২২
১“ভাইয়েরা ও পিতারা, এখন নিজের পক্ষে আমার উত্তর শুনুন।” ২তারা তাঁকে ইব্রানী ভাষায় কথা বলতে শুনে একেবারে চুপ হয়ে গেলো।৩তখন ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ২৩
১হযরত পৌল রা. সোজা মহাসভার লোকদের দিকে তাকিয়ে বললেন, “আমার ভাইয়েরা, আজ পর্যন্ত আমি আল্লাহর সামনে পরিষ্কার বিবেকে জীবন-যাপন করছি।” ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ২৪
১পাঁচদিন পরে মহাইমাম অননিয় কয়েকজন ইহুদি বুজুর্গকে ও তর্তুল্লস নামে একজন উকিলকে নিয়ে সেখানে এলেন এবং গভর্নরের কাছে হযরত পৌল ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ২৫
১ফাস্তুস সেই প্রদেশে আসার তিনদিন পর কৈসরিয়া থেকে জেরুসালেমে গেলেন। ২সেখানে প্রধান ইমামেরা ও নেতারা তার কাছে গিয়ে পৌলের বিরুদ্ধে ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ২৬
১তখন আগ্রিপ্প হযরত পৌল রা.-কে বললেন, “তোমার নিজের পক্ষে কথা বলার জন্য তোমাকে অনুমতি দেয়া গেলো।” ২তখন তিনি হাত বাড়িয়ে ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ২৭
১যখন জাহাজে করে আমাদের ইতালিতে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হলো, তখন হযরত পৌল রা. এবং আরো কয়েকজন বন্দিকে জুলিয়াস নামে সম্রাটের ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ২৮
১,২আমরা নিরাপদে কিনারে পৌঁছে জানতে পারলাম যে, দ্বীপটার নাম মাল্টা। এর অধিবাসীরা আমাদের সংগে খুব দয়া দেখালো। তখন বৃষ্টি আরম্ভ ...