১হযরত সাফওয়ান রা. ও হযরত ইউহোন্না রা. যখন লোকদের সংগে কথা বলছিলেন, তখন ইমামেরা, বায়তুল-মোকাদ্দসের প্রধান কর্মচারী ও সদ্দুকিরা তাদের কাছে এলেন। ২তারা খুবই বিরক্ত হয়েছিলেন; কারণ তাঁরা লোকদের শিক্ষা দিচ্ছিলেন এবং হযরত ইসা আ. এর মধ্য দিয়ে মৃতদের পুনরুত্থানের কথা ঘোষণা করছিলেন। ৩তাই তারা তাঁদের গ্রেফতার করে পরদিন পর্যন্ত হাজতে রাখলেন, কারণ তখন সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছিলো।
৪কিন্তু যারা কালাম শুনছিলো, তারা অনেকেই ইমান আনলো। এতে তাদের সংখ্যা বেড়ে কমবেশি পাঁচ হাজারে দাঁড়ালো।
৫পরদিন তাদের প্রধান ইমামেরা, বুজুর্গরা এবং আলিমরা জেরুসালেমে এক সংগে মিলিত হলেন। ৬সেখানে মহা-ইমাম আনানিয়াস, কাইয়াফা, ইউহোন্না, আলেকজান্ডার আর মহা-ইমামের পরিবারের অন্যান্য লোকেরাও উপস্থিত ছিলেন। ৭তারা বন্দিদেরকে তাদের মাঝখানে দাঁড় করিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “তোমরা কীসের শক্তিতে বা কার নামে এসব করেছো?”
৮তখন হযরত সাফওয়ান রা. আল্লাহর রুহে পূর্ণ হয়ে তাদের বললেন, “জনতার শাসকেরা ও বুজুর্গরা, ৯যদি একজন অসুস্থ লোকের উপকার করার কারণে আজ আমাদের জেরা ও প্রশ্ন করা হয় যে, লোকটি কেমন করে সুস্থ হলো; ১০তাহলে আপনারা প্রত্যেকে ও সমস্ত বনি-ইস্রাইল এ-কথা জেনে রাখুন যে, নাসরতের হযরত ইসা মসিহ, যাঁকে আপনারা সলিবে দিয়ে হত্যা করেছিলেন এবং আল্লাহ্ যাঁকে মৃত থেকে জীবিত করে তুলেছেন, তাঁরই নামে সে সুস্বাস্থ্য পেয়ে আপনাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
১১এই হযরত ইসা আ.-ই ‘সেই পাথর, যাঁকে আপনারা, রাজ-মিস্ত্রিরা বাদ দিয়েছিলেন, আর সেটাই কোনের প্রধান পাথর হয়ে উঠেছে।’ ১২নাজাত আর কারো কাছে নেই। কারণ আকাশের নিচে, মানুষের মধ্যে, আর এমন কোনো নাম নেই, যার নামে আমরা নাজাত পেতে পারি।”
১৩যখন তারা হযরত সাফওয়ান রা. ও হযরত ইউহোন্না রা. সাহস দেখলেন এবং বুঝলেন যে, এঁরা অশিক্ষিত ও সাধারণ লোক, তখন আশ্চর্য হয়ে গেলেন; আর এঁরা যে হযরত ইসা আ. এর সঙ্গী ছিলেন, তাও বুঝতে পারলেন। ১৪যে-লোকটি সুস্থ হয়েছিলো, তাকে হযরত সাফওয়ান রা. ও হযরত ইউহোন্না রা. সংগে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তারা তাঁদের বিরুদ্ধে আর কিছুই বলতে পারলেন না। ১৫তাই তারা তাঁদেরকে মহাসভা থেকে বাইরে যেতে হুকুম দিলেন, যেনো তারা নিজেদের মধ্যে পরামর্শ করতেপারেন।
১৬তারা বললেন, “এই লোকদের নিয়ে আমরা কী করবো? যারা জেরুসালেমে বাস করে তারা সবাই জানে যে, এরা একটি বিশেষ মোজেজা দেখিয়েছে, আর আমরা তা অস্বীকারও করতে পারি না। ১৭কিন্তু মানুষের মধ্যে যেনো কথাট আরো না-ছড়ায়, সে-জন্য এদের ভয় দেখাতে হবে, যেনো তারা এই নামে কারো সংগে কথা না-বলে।” তাই তারা তাঁদের ডাকলেন এবং হুকুম দিলেন, যেনো তাঁরা হযরত ইসা আ. এর নামে আর কোনো কথা না-বলেন বা শিক্ষা না-দেন।
১৮কিন্তু হযরত সাফওয়ান রা. ও হযরত ইউহোন্না রা. উত্তর দিলেন, “আপনারাই বলুন, আল্লাহর চোখে কোনটা ঠিক- ১৯আপনাদের হুকুম পালন করা, না-কি আল্লাহর হুকুম পালন করা? ২০কারণ আমরা যা দেখেছি ও শুনেছি তা না-বলে থাকতে পারবো না।”
২১তখন তারা তাঁদের আবারো ভয় দেখিয়ে ছেড়ে দিলেন। লোকদের ভয়ে তারা তাঁদের শাস্তি দেবার পথ পেলেন না। কারণ যা ঘটেছিলো, তার জন্য সবাই আল্লাহর প্রশংসা করছিলো। ২২যে-লোকটি আশ্চর্যভাবে সুস্থ হয়েছিলো, তার বয়স ছিলো চল্লিশ বছরেরও বেশি।
২৩তাঁরা ছাড়া পেয়ে তাঁদের বন্ধুদের কাছে গেলেন এবং ইমামেরা ও বুজুর্গরা তাঁদের যা-যা বলেছিলেন, তার সবই তাদের জানালেন। ২৪এসব কথা শুনে তাঁরা সবাই এক সংগে জোরে আল্লাহর কাছে মোনাজাত করে বললেন,
“হে জগতের মালিক, তুমিই আসমান, জমিন, সমুদ্র এবং এর মধ্যে যা-কিছু আছে, তার সবই সৃষ্টি করেছো । ২৫তুমি তোমার রুহের মধ্য দিয়ে তোমার বান্দা, আমাদের পূর্বপুরুষ হযরত দাউদ আ. এর মুখ দিয়ে বলেছো, ‘কেনো বিধর্মিরা অস্থির হয়ে চেঁচামেচি করছে? কেনোইবা লোকেরা অর্থহীন ষড়যন্ত্র করছে? ২৬দুনিয়ার বাদশাহরা ও শাসকরা এক হয়েছে দুনিয়ার মালিক ও তাঁর মসিহের বিরুদ্ধে! ২৭আর এই শহরেও হেরোদ ও পন্তীয় পিলাত, ইস্রাইল ও বিধর্মী লোকেরা এক হয়েছে তোমার বান্দা হযরত ইসা আ. এর বিরুদ্ধে, যাঁকে তুমি অভিষেক করেছো, ২৮যেনো তোমার পরিকল্পনা অনুসারে যা ঘটার কথা তা ঘটতে পারে। ২৯আর এখন, হে আল্লাহ্, এদের অন্তর তুমি দেখো। তোমার বান্দাদের এমন শক্তি দাও, যেনো সাহসের সংগে তোমার কালাম বলতে পারি। ৩০এবং তোমার পবিত্র বান্দা হযরত ইসা আ. এর নামে লোকদের সুস্থ করতে ও মোজেজা দেখাতে পারি।”
৩১যে-জায়গায় তারা মিলিত হয়ে মোনাজাত করছিলেন, মোনাজাতের পর সেই জায়গাটা কেঁপে উঠলো। এবং তাঁরা সবাই আল্লাহর রুহে পূর্ণ হয়ে সাহসের সংগে আল্লাহর কালাম বলতে লাগলেন।
৩২ইমানদারেরা সবাই মনে-প্রাণে এক ছিলেন এবং কোনো কিছুই তাঁরা নিজের বলে দাবি করতেন না। বরং সবকিছুই এক সংগে রাখা হতো এবং যাঁর যাঁর দরকার মতো তাঁরা ব্যবহার করতেন। ৩৩হযরত ইসা আ. এর পুনরুত্থানের বিষয়ে হাওয়ারিরা মহা-শক্তিতে সাক্ষ্য দিতে থাকলেন, আর তাঁদের সকলের ওপর অশেষ রহমত ছিলো। ৩৪-৩৫তাঁদের মধ্যে কোনো অভাবী লোক ছিলো না। কারণ যাদের জমি কিংবা বাড়ি ছিলো, তাঁরা সেগুলো বিক্রি করে টাকা-পয়সা এনে হাওয়ারিদের পায়ের কাছে রাখতেন এবং যাঁর যেমন দরকার, সেভাবে তাঁকে দেয়া হতো।
৩৬সেখানে হযরত ইউসুফ রা. নামে লেবিয় বংশের এক লোক ছিলেন, তিনি ছিলেন সাইপ্রাসদ্বীপের বাসিন্দা। ৩৭হাওয়ারিরা তাকে বার্নবাস, অর্থাৎ উৎসাহদাতা বলে ডাকতেন। তার কিছু জমি ছিলো। তিনি সেটা বিক্রি করে টাকা এনে হাওয়ারিদের পায়ের কাছে রাখলেন।
Facebook
WhatsApp
Telegram
Email
হাওয়ারিনামা: রুকু – ১
১,২মাননীয় থিয়ফিল, হযরত ইসা আ.কে বেহেস্তে তুলে নেবার আগ পর্যন্ত তিনি যা করেছিলেন ও শিক্ষা দিয়েছিলেন, তার সমস্তই আমি আগের ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ২
১পঞ্চাশতম দিনের ইদে যখন তারা সবাই এক জায়গায় মিলিত হলেন, ২তখন হঠাৎ আসমান থেকে জোর বাতাসের শব্দের মতো একটি শব্দ ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ৩
১এক দিন বিকেল তিনটার এবাদতের সময় হযরত সাফওয়ান রা. ও হযরত ইউহোন্না রা. বায়তুল-মোকাদ্দসে যাচ্ছিলেন। এবং জন্ম থেকেই খোঁড়া এক ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ৪
১হযরত সাফওয়ান রা. ও হযরত ইউহোন্না রা. যখন লোকদের সংগে কথা বলছিলেন, তখন ইমামেরা, বায়তুল-মোকাদ্দসের প্রধান কর্মচারী ও সদ্দুকিরা তাদের ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ৫
১আনানিয়াস নামে এক লোক ও তার স্ত্রী সাফিরা একটি সম্পত্তি বিক্রি করলো। ২তার স্ত্রীর জানা মতেই বিক্রির কিছু টাকা সে ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ৬
১ঐ দিনগুলোতে যখন উম্মতদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছিলো, তখন গ্রীকরা ইহুদিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলো যে, প্রতিদিন খাবার বিতরণের সময় তাদের বিধবাদের ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ৭
১তখন প্রধান ইমাম হযরত স্তিফান র.কে জিজ্ঞেস করলেন, “এসব কি সত্যি?”২হযরত স্তিফান র. উত্তর দিলেন, “হে আমার ভাইয়েরা ও আমার ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ৮
১ হযরত শৌল রা. তাকে হত্যার অনুমোদন দিচ্ছিলেন।সেদিন জেরুসালেমে হযরত ইসা আ. এর অনুসারীদের ওপরে ভীষণ জুলুম শুরু হলো। তাতে ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ৯
১-২এদিকে হযরত শৌল রা. হযরত ইসা মসিহের উম্মতদের হত্যা করার ভয় দেখাচ্ছিলেন।তিনি মহা-ইমামের কাছে গিয়ে দামেস্ক শহরের সিনাগোগগুলোতে দেবার জন্য ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ১০
১কৈসরিয়া শহরে কর্নেলিয়াস নামে একজন লোক ইতালিয় সৈন্যদলের লেফটেন্যান্ট ছিলেন। ২তিনি আল্লাহ্ভক্ত ছিলেন এবং তিনি ও তার পরিবারের সবাই আল্লাহর ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ১১
১অইহুদিরাও যে আল্লাহর কালামের ওপর ইমান এনেছেন, সে-কথা হাওয়ারিরা এবং সমস্ত ইহুদিয়ার ইমানদার ভাইয়েরা শুনলেন। ২এ-জন্য হযরত সাফওয়ান রা. যখন ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ১২
১সেই সময় বাদশাহ হেরোদ জুলুম করার জন্য কওমের কয়েকজনকে ধরে এনেছিলেন। ২তিনি হযরত ইউহোন্না রা.-র ভাই হযরত ইয়াকুব রা.-কে তরবারি ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ১৩
১ আন্তিয়খিয়ার অনুসারীদের মধ্যে কয়েকজন ওলি ও শিক্ষক ছিলেন। তাদের নাম হযরত বার্নবাস র., হযরত নিগের র. নামে পরিচিত সিমোন, ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ১৪
১ইকোনিয়ম শহরেও একই ঘটনা ঘটলো। সেখানে হযরত পৌল রা. ও হযরত বার্নবাস র. ইহুদিদের সিনাগোগে গিয়ে এমনভাবে কথা বললেন যে, ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ১৫
১সেই সময় ইহুদিয়া থেকে কয়েকজন লোক এলেন এবং ভাইদের এই শিক্ষা দিতে লাগলেন যে, “হযরত মুসা আ. এর শরিয়ত মতে ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ১৬
১পরে হযরত পৌল রা. দেব্রা ও লুস্ত্রা শহরে গেলেন। সেখানে হযরত তিমথীয় র. নামে একজন উম্মত থাকতেন। তাঁর মা ছিলেন ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ১৭
১হযরত পৌল রা. ও হযরত সিল র. আমফিপলি ও আপল্লো নিয়া হয়ে থিসালোনিকিতে এসে পৌঁছলেন। সেখানে ইহুদিদের একটি সিনাগোগ ছিলো। ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ১৮
১এরপর হযরত পৌল রা. এথেন্স ছেড়ে করিন্থ শহরে গেলেন। সেখানে আকুইলা নামে এক ইহুদির সংগে তার দেখা হলো, জন্মসূত্রে তিনি ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ১৯
১আপল্লো যখন করিন্থে ছিলেন, সেই সময় হযরত পৌল রা. সে-সব এলাক ঘুরে ইফিসে এলেন। ২সেখানে তিনি কয়েকজন ইমানদারের দেখা পেলেন। ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ২০
১গোলমাল থামার পর হযরত পৌল রা. ইমানদারদের ডেকে পাঠালেন। তাঁদের উৎসাহ দেবার পর তাঁদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে তিনি মেসিডোনিয়ার ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ২১
১তাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আমরা সোজা কোস দ্বীপে গেলাম। পরদিন আমরা রোডস দ্বীপে এলাম। তারপর সেখান থেকে পাতারা গেলাম। ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ২২
১“ভাইয়েরা ও পিতারা, এখন নিজের পক্ষে আমার উত্তর শুনুন।” ২তারা তাঁকে ইব্রানী ভাষায় কথা বলতে শুনে একেবারে চুপ হয়ে গেলো।৩তখন ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ২৩
১হযরত পৌল রা. সোজা মহাসভার লোকদের দিকে তাকিয়ে বললেন, “আমার ভাইয়েরা, আজ পর্যন্ত আমি আল্লাহর সামনে পরিষ্কার বিবেকে জীবন-যাপন করছি।” ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ২৪
১পাঁচদিন পরে মহাইমাম অননিয় কয়েকজন ইহুদি বুজুর্গকে ও তর্তুল্লস নামে একজন উকিলকে নিয়ে সেখানে এলেন এবং গভর্নরের কাছে হযরত পৌল ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ২৫
১ফাস্তুস সেই প্রদেশে আসার তিনদিন পর কৈসরিয়া থেকে জেরুসালেমে গেলেন। ২সেখানে প্রধান ইমামেরা ও নেতারা তার কাছে গিয়ে পৌলের বিরুদ্ধে ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ২৬
১তখন আগ্রিপ্প হযরত পৌল রা.-কে বললেন, “তোমার নিজের পক্ষে কথা বলার জন্য তোমাকে অনুমতি দেয়া গেলো।” ২তখন তিনি হাত বাড়িয়ে ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ২৭
১যখন জাহাজে করে আমাদের ইতালিতে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হলো, তখন হযরত পৌল রা. এবং আরো কয়েকজন বন্দিকে জুলিয়াস নামে সম্রাটের ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ২৮
১,২আমরা নিরাপদে কিনারে পৌঁছে জানতে পারলাম যে, দ্বীপটার নাম মাল্টা। এর অধিবাসীরা আমাদের সংগে খুব দয়া দেখালো। তখন বৃষ্টি আরম্ভ ...