১,২আমরা নিরাপদে কিনারে পৌঁছে জানতে পারলাম যে, দ্বীপটার নাম মাল্টা। এর অধিবাসীরা আমাদের সংগে খুব দয়া দেখালো। তখন বৃষ্টি আরম্ভ হলো এবং খুব ঠান্ডা ছিলো বলে তারা আগুন জ্বেলে আমাদের সবাইকে ডাকলো। ৩হযরত পৌল রা. এক বোঝা শুকনো কাঠ জড়ো করে আগুনে দেবার সময় আগুনের তাপে একটি বিষাক্ত সাপ সেই বোঝা থেকে বের হয়ে তার হাত পেঁচিয়ে ধরলো।
৪সাপটিকে তার হাতে ঝুলতে দেখে স্থানীয় লোকেরা বলাবলি করতে লাগলো, “এই লোকটা নিশ্চয়ই খুনি। সাগরের হাত থেকে রক্ষা পেলেও ন্যায়বিচার তাকে বাঁচতে দিলো না।” ৫তিনি হাত ঝাড়া দিয়ে সাপটি আগুনে ফেলে দিলেন। তার কোনোই ক্ষতি হলো না। ৬তারা ভাবছিলো যে, তার শরীর ফুলে উঠবে বা হঠাৎ তিনি মরে পড়ে যাবেন। কিন্তু অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেও তার কিছু হলো না দেখে তারা মত বদলে বলতে লাগলো, “উনি দেবতা।”
৭সেখানে কাছেই দ্বীপের প্রধানের একটি জমিদারি ছিলো। জমিদারের নাম পুবলিয়াস। তিনি তার বাড়িতে আমাদের গ্রহণ করলেন এবং তিনদিন ধরে খুব আদরের সংগে আমাদের সেবাযত্ন করলেন।
৮সেই সময় পুবলিয়াসের পিতা জ্বর ও আমাশয় রোগে বিছানায় পড়ে ভুগছিলেন। হযরত পৌল রা. ভেতরে তার কাছে গিয়ে মোনাজাত করলেন এবং তার গায়ে হাত দিয়ে তাকে সুস্থ করলেন। ৯এই ঘটনার পরে সেই দ্বীপের বাকি সমস্ত রোগী এসে সুস্থ হলো।
১০তারা নানাভাবেই আমাদের সম্মান দেখাতে লাগলো এবং পরে জাহাজ ছাড়ার সময় আমাদের দরকারি জিনিসপত্র জাহাজে বোঝাই করে দিলো। ১১তিন মাস পরে আমরা একটি জাহাজে করে যাত্রা করলাম। জাহাজটি সেই দ্বীপেই শীতকাল কাটিয়ে ছিলো। সেটা ছিলো আলেকজান্দ্রিয়ার জাহাজ এবং তার মাথায় যমজ দেবের প্রতিমা খোদাই করা ছিলো।
১২আমরা সুরাকুসে জাহাজ বেঁধে তিনদিন রইলাম। ১৩সেখান থেকে যাত্রা করে আমরা পুতয়লিতে পৌঁছলাম। ১৪এখানে আমরা কয়েকজন ইমানদার ভাইয়ের দেখা পেলাম। তাদের সংগে সপ্তাহ খানেক কাটাবার জন্য তারা আমাদের অনুরোধ করলো। এভাবে আমরা রোমে পৌঁছলাম।
১৫সেখানকার ইমানদার ভাইয়েরা যখন আমাদের আসার খবর শুনলো, তখন পথে আমাদের সংগে দেখা করার জন্য তাদের কেউ-কেউ আপ্পিয় হাট থেকে, কেউ-কেউ একশো মাইল দূর থেকেও এলো। এদের দেখে হযরত পৌল রা. আল্লাহর শুকরিয়া জানালেন এবং তিনি নিজে উৎসাহিত হলেন। ১৬আমরা রোমে পৌঁছার পর হযরত পৌল রা. আলাদা ঘরে থাকার অনুমতি পেলেন এবং একজন সৈন্য তাকে পাহারা দিতো।
১৭তিনদিন পর তিনি সেখানকার ইহুদি নেতাদের ডেকে তাদের সংগে মিলিত করলেন। তিনি তাদের বললেন, “আমার ভাইয়েরা, যদিও আমি আমাদের জাতির বিরুদ্ধে বা পূর্ব-পুরুষদের নিয়ম-নীতির বিরুদ্ধে কিছুই করিনি, তবুও জেরুসালেমে আমাকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং রোমীয়দের হাতে দেয়া হয়েছে। ১৮রোমীয়রা আমাকে জেরা করার পর ছেড়ে দিতে চেয়েছিলো, কারণ মৃত্যুর উপযুক্ত কোনো দোষ আমি করিনি।
১৯কিন্তু ইহুদিরা এতে বাঁধা দেয়ায় বাধ্য হয়ে আমি সম্রাটের কাছে আপিল করেছি। যদিও আমার নিজের লোকদের বিরুদ্ধে নালিস করার কিছু নেই। ২০এ-জন্যই আমি আপনাদের সংগে দেখা করতে ও কথা বলতে চেয়েছি। কারণ এটা বনি-ইস্রাইলের সেই আশা, যে-আশার জন্যই আমাকে এই শেকল পরানো হয়েছে।”
২১উত্তরে তারা বললেন, “আপনার সম্বন্ধে ইহুদিয়া থেকে আমরা কোনো চিঠি পাইনি। যে-ভাইয়েরা সেখান থেকে এসেছেন, তারাও কেউ আপনার সম্বন্ধে কোনো খারাপ কিছুই বলেননি। ২২তবে আমরা আপনার মতামত শুনতে চাই। কারণ আমরা জানি, সব জায়গাতেই লোকেরা ‘সেই দলের’ বিরুদ্ধে কথা বলে।”
২৩হযরত পৌল রা.-র সংগে মিলিত হবার জন্য তারা একটি দিন ঠিক করলেন। ২৩হযরত পৌল রা. যেখানে থাকতেন, সেখানে তারা ছাড়া আরো অনেকে এলেন। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তিনি আল্লাহর রাজ্যের বিষয়ে তাদের জানালেন ও বোঝালেন। হযরত মুসা আ. এর তওরাত ও নবিদের কিতাবের মধ্য থেকে হযরত ইসা আ. এর বিষয় দেখিয়ে তাঁর সম্বন্ধে তাদের বোঝাতে চেষ্টা করলেন।
২৪তিনি যা বলেছিলেন তাতে কেউ-কেউ ইমান আনলেন, আবার কেউ-কেউ ইমান আনতে অস্বীকার করলেন। ২৫তাই তাদের মধ্যে মতের অমিল হলো। আর যখন তারা সেখান থেকে চলে যাচ্ছিলেন, তখন হযরত পৌল রা. আরেকটা মন্তব্য করলেন, “আল্লাহর রুহ্ নবি হযরত ইসাইয়া আ. এর মাধ্যমে আপনাদের পূর্ব-পুরুষদের কাছে সত্যি কথাই বলেছিলেন, ২৬এই লোকদের কাছে যাও এবং বলো, ‘তোমরা শুনবে কিন্তু কোনো মতেই বুঝবে না; দেখবে কিন্তু কোনো মতেই জানবে না।
২৭কারণ এসব লোকের অন্তর অসাড় এবং কান বন্ধ হয়ে গেছে, আর তারা তাদের চোখও বন্ধ করে রেখেছে, যেনো তারা চোখ দিয়ে না-দেখে, কান দিয়ে না-শোনে এবং অন্তর দিয়ে না-বোঝে, আর ভালো হবার জন্য আমার কাছে ফিরে না-আসে।’ ২৮,২৯এ-জন্য আপনারা জেনে রাখুন, আল্লাহর নাজাত অইহুদিদের কাছে পাঠানো হয়েছে, আর তারাই সেই কথা শুনবে।”
৩০পুরো দু’বছর ধরে ২৩হযরত পৌল রা. তার নিজের ভাড়া বাড়িতে ছিলেন এবং যারা তাঁর সংগে দেখা করতে আসতো, তিনি তাদের সবাইকে গ্রহণ করতেন। ৩১তিনি সাহসের সংগে, বিনা বাধায়, আল্লাহর রাজ্যের বিষয়ে প্রচার করতেন এবং হযরত ইসা মসিহের বিষয়ে শিক্ষা দিতেন।
Facebook
WhatsApp
Telegram
Email
হাওয়ারিনামা: রুকু – ১
১,২মাননীয় থিয়ফিল, হযরত ইসা আ.কে বেহেস্তে তুলে নেবার আগ পর্যন্ত তিনি যা করেছিলেন ও শিক্ষা দিয়েছিলেন, তার সমস্তই আমি আগের ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ২
১পঞ্চাশতম দিনের ইদে যখন তারা সবাই এক জায়গায় মিলিত হলেন, ২তখন হঠাৎ আসমান থেকে জোর বাতাসের শব্দের মতো একটি শব্দ ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ৩
১এক দিন বিকেল তিনটার এবাদতের সময় হযরত সাফওয়ান রা. ও হযরত ইউহোন্না রা. বায়তুল-মোকাদ্দসে যাচ্ছিলেন। এবং জন্ম থেকেই খোঁড়া এক ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ৪
১হযরত সাফওয়ান রা. ও হযরত ইউহোন্না রা. যখন লোকদের সংগে কথা বলছিলেন, তখন ইমামেরা, বায়তুল-মোকাদ্দসের প্রধান কর্মচারী ও সদ্দুকিরা তাদের ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ৫
১আনানিয়াস নামে এক লোক ও তার স্ত্রী সাফিরা একটি সম্পত্তি বিক্রি করলো। ২তার স্ত্রীর জানা মতেই বিক্রির কিছু টাকা সে ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ৬
১ঐ দিনগুলোতে যখন উম্মতদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছিলো, তখন গ্রীকরা ইহুদিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলো যে, প্রতিদিন খাবার বিতরণের সময় তাদের বিধবাদের ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ৭
১তখন প্রধান ইমাম হযরত স্তিফান র.কে জিজ্ঞেস করলেন, “এসব কি সত্যি?”২হযরত স্তিফান র. উত্তর দিলেন, “হে আমার ভাইয়েরা ও আমার ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ৮
১ হযরত শৌল রা. তাকে হত্যার অনুমোদন দিচ্ছিলেন।সেদিন জেরুসালেমে হযরত ইসা আ. এর অনুসারীদের ওপরে ভীষণ জুলুম শুরু হলো। তাতে ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ৯
১-২এদিকে হযরত শৌল রা. হযরত ইসা মসিহের উম্মতদের হত্যা করার ভয় দেখাচ্ছিলেন।তিনি মহা-ইমামের কাছে গিয়ে দামেস্ক শহরের সিনাগোগগুলোতে দেবার জন্য ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ১০
১কৈসরিয়া শহরে কর্নেলিয়াস নামে একজন লোক ইতালিয় সৈন্যদলের লেফটেন্যান্ট ছিলেন। ২তিনি আল্লাহ্ভক্ত ছিলেন এবং তিনি ও তার পরিবারের সবাই আল্লাহর ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ১১
১অইহুদিরাও যে আল্লাহর কালামের ওপর ইমান এনেছেন, সে-কথা হাওয়ারিরা এবং সমস্ত ইহুদিয়ার ইমানদার ভাইয়েরা শুনলেন। ২এ-জন্য হযরত সাফওয়ান রা. যখন ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ১২
১সেই সময় বাদশাহ হেরোদ জুলুম করার জন্য কওমের কয়েকজনকে ধরে এনেছিলেন। ২তিনি হযরত ইউহোন্না রা.-র ভাই হযরত ইয়াকুব রা.-কে তরবারি ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ১৩
১ আন্তিয়খিয়ার অনুসারীদের মধ্যে কয়েকজন ওলি ও শিক্ষক ছিলেন। তাদের নাম হযরত বার্নবাস র., হযরত নিগের র. নামে পরিচিত সিমোন, ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ১৪
১ইকোনিয়ম শহরেও একই ঘটনা ঘটলো। সেখানে হযরত পৌল রা. ও হযরত বার্নবাস র. ইহুদিদের সিনাগোগে গিয়ে এমনভাবে কথা বললেন যে, ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ১৫
১সেই সময় ইহুদিয়া থেকে কয়েকজন লোক এলেন এবং ভাইদের এই শিক্ষা দিতে লাগলেন যে, “হযরত মুসা আ. এর শরিয়ত মতে ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ১৬
১পরে হযরত পৌল রা. দেব্রা ও লুস্ত্রা শহরে গেলেন। সেখানে হযরত তিমথীয় র. নামে একজন উম্মত থাকতেন। তাঁর মা ছিলেন ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ১৭
১হযরত পৌল রা. ও হযরত সিল র. আমফিপলি ও আপল্লো নিয়া হয়ে থিসালোনিকিতে এসে পৌঁছলেন। সেখানে ইহুদিদের একটি সিনাগোগ ছিলো। ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ১৮
১এরপর হযরত পৌল রা. এথেন্স ছেড়ে করিন্থ শহরে গেলেন। সেখানে আকুইলা নামে এক ইহুদির সংগে তার দেখা হলো, জন্মসূত্রে তিনি ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ১৯
১আপল্লো যখন করিন্থে ছিলেন, সেই সময় হযরত পৌল রা. সে-সব এলাক ঘুরে ইফিসে এলেন। ২সেখানে তিনি কয়েকজন ইমানদারের দেখা পেলেন। ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ২০
১গোলমাল থামার পর হযরত পৌল রা. ইমানদারদের ডেকে পাঠালেন। তাঁদের উৎসাহ দেবার পর তাঁদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে তিনি মেসিডোনিয়ার ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ২১
১তাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আমরা সোজা কোস দ্বীপে গেলাম। পরদিন আমরা রোডস দ্বীপে এলাম। তারপর সেখান থেকে পাতারা গেলাম। ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ২২
১“ভাইয়েরা ও পিতারা, এখন নিজের পক্ষে আমার উত্তর শুনুন।” ২তারা তাঁকে ইব্রানী ভাষায় কথা বলতে শুনে একেবারে চুপ হয়ে গেলো।৩তখন ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ২৩
১হযরত পৌল রা. সোজা মহাসভার লোকদের দিকে তাকিয়ে বললেন, “আমার ভাইয়েরা, আজ পর্যন্ত আমি আল্লাহর সামনে পরিষ্কার বিবেকে জীবন-যাপন করছি।” ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ২৪
১পাঁচদিন পরে মহাইমাম অননিয় কয়েকজন ইহুদি বুজুর্গকে ও তর্তুল্লস নামে একজন উকিলকে নিয়ে সেখানে এলেন এবং গভর্নরের কাছে হযরত পৌল ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ২৫
১ফাস্তুস সেই প্রদেশে আসার তিনদিন পর কৈসরিয়া থেকে জেরুসালেমে গেলেন। ২সেখানে প্রধান ইমামেরা ও নেতারা তার কাছে গিয়ে পৌলের বিরুদ্ধে ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ২৬
১তখন আগ্রিপ্প হযরত পৌল রা.-কে বললেন, “তোমার নিজের পক্ষে কথা বলার জন্য তোমাকে অনুমতি দেয়া গেলো।” ২তখন তিনি হাত বাড়িয়ে ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ২৭
১যখন জাহাজে করে আমাদের ইতালিতে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হলো, তখন হযরত পৌল রা. এবং আরো কয়েকজন বন্দিকে জুলিয়াস নামে সম্রাটের ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ২৮
১,২আমরা নিরাপদে কিনারে পৌঁছে জানতে পারলাম যে, দ্বীপটার নাম মাল্টা। এর অধিবাসীরা আমাদের সংগে খুব দয়া দেখালো। তখন বৃষ্টি আরম্ভ ...