১তখন আগ্রিপ্প হযরত পৌল রা.-কে বললেন, “তোমার নিজের পক্ষে কথা বলার জন্য তোমাকে অনুমতি দেয়া গেলো।” ২তখন তিনি হাত বাড়িয়ে দিয়ে নিজের পক্ষে এই কথা বলতে লাগলেন, “হে বাদশাহ আগ্রিপ্প, আপনার সামনে দাঁড়াবার সুযোগ পেয়ে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি। ইহুদিরা আমার বিরুদ্ধে যে-সব অভিযোগ করেছে, আজ আমি তার সব খন্ডন করবো। ৩কারণ বিশেষ করে আপনি ইহুদিদের রীতিনীতি এবং মত বিরোধের বিষয়গুলো জানেন। এ-জন্য ধৈর্য ধরে আমার কথাগুলো শুনতে আপনাকে বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।
৪ইহুদিরা সবাই আমার ছেলেবেলা থেকে শুরু করে আমার জীবনের সবকিছু জানে, যে-জীবন আমি আমার লোকদের মধ্যে ও জেরুসালেমে কাটিয়েছি। ৫তারা অনেকদিন ধরেই আমাকে চেনে এবং ইচ্ছা করলে তারা এই সাক্ষ্য দিতে পারে যে, আমি আমাদের ধর্মের ধর্মীয় গোঁড়া দলের লোক এবং ফরিসী হিসাবেই জীবন কাটিয়েছি।
৬এখন আমি বিচারের সামনে দাঁড়িয়েছি এ-জন্য যে, আল্লাহ আমার পূর্বপুরুষদের কাছে যে-ওয়াদা করেছিলেন, তাতে আমি আশা রাখি। ৭কেবল একটি ওয়াদার পূর্ণতা দেখার আশায় আমাদের বারো গোষ্ঠীর লোকেরা দিনরাত মন-প্রাণ দিয়ে আল্লাহর এবাদত করে। মহারাজ, সেই আশার জন্যই ইহুদিরা আমাকে দোষারোপ করছে।
৮আপনারা কেনো বিশ্বাস করতে পারেন না যে, আল্লাহ মৃতদের জীবিত করে তুলতে পারেন? ৯আমি নিজেই বিশ্বাস করতাম যে, নাসরতের হযরত ইসা আ.-এর নামের বিরুদ্ধে যা করা যায়, তার সবই আমার করা উচিত। আর জেরুসালেমে আমি ঠিক তা-ই করছিলাম।
১০প্রধান ইমামদের কাছ থেকে ক্ষমতা পেয়ে আমি কামেলদের শুধু জেলেই বন্দি করিনি, তাঁদের হত্যা করার সময় তাঁদের বিরুদ্ধে সায়ও দিতাম।
১১আমি প্রায় প্রতিটি সিনাগোগে গিয়ে তাঁদের শাস্তি দিয়েছি এবং আল্লাহর নিন্দা করার জন্য তাঁদের ওপর জোর খাটিয়েছি। তাঁদের ওপর আমার এতো রাগ ছিলো যে, তাঁদের ওপর এতো জুলুম করেছি যে, তাঁদের বিতাড়িত করে বিদেশে ঠেলে দিয়েছি। ১২এভাবে একবার প্রধান ইমামদের কাছ থেকে ক্ষমতা ও হুকুম নিয়ে আমি দামেস্কে যাচ্ছিলাম।
১৩মহারাজ, তখন বেলা প্রায় দুপুর। আমি দেখলাম, পথের মধ্যে সূর্য থেকেও উজ্জ্বল একটি আলো আসমান থেকে আমার ও আমার সঙ্গীদের চারদিকে জ্বলতে লাগলো। ১৪আমরা সবাই মাটিতে পড়ে গেলাম এবং আমি শুনলাম, একটি কণ্ঠস্বর ইব্রানি ভাষায় আমাকে বলছেন, ‘শৌল, শৌল, কেনো তুমি আমার ওপর জুলুম করছো? কাঁটা বসানো লাঠির মুখে লাথি মারলে তোমার ক্ষতি হবে।’
১৫আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘মালিক, আপনি কে?’ ১৬তিনি উত্তর দিলেন, ‘আমি ইসা, যাঁর ওপর তুমি জুলুম করছো। কিন্তু এখন ওঠো, তোমার পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়াও, কারণ আমি তোমাকে দেখা দিলাম, যেনো তুমি আমাকে যেভাবে দেখলে এবং আমি তোমাকে যা দেখাবো, তার সাক্ষী ও সেবাকারী হিসাবে তোমাকে নিযুক্ত করতে পারি। ১৭আমি তোমাকে যাদের কাছে পাঠাচ্ছি, তোমার সেই নিজের লোকদের ও অইহুদিদের হাত থেকে আমি তোমাকে উদ্ধার করবো, যেনো তুমি তাদের চোখ খুলে দাও; ১৮তারা অন্ধকার থেকে আলোর দিকে ও শয়তানের কর্তৃত্ব থেকে আল্লাহর দিকে ফিরে এবং আমার ওপর ইমান এনে গুনাহের মাফ ও পাকসাফ হওয়া লোকদের মধ্যে স্থান পায়।’
১৯বাদশাহ আগ্রিপ্প, এরপর থেকে আমি এই বেহেস্তি দর্শনের অবাধ্য হইনি। ২০কিন্তু যাঁরা দামেস্কে আছে, তাঁদের কাছে প্রথমে, তারপর জেরুসালেমে এবং গোটা ইহুদিয়া প্রদেশে এবং অইহুদিদের কাছেও প্রচার করেছি যে, যেনো তাঁরা তওবা করে আল্লাহর দিকে ফেরে এবং সব সময় তওবার উপযোগী কাজ করে। ২১এ-জন্যই ইহুদিরা আমাকে বায়তুল-মোকাদ্দসে ধরে হত্যা করার চেষ্টা করছিলো।
২২আজ পর্যন্ত আল্লাহ্ আমাকে সাহায্য করেছেন এবং এ-জন্যই আমি এখানে দাঁড়িয়ে ছোট-বড়ো সবার কাছে সাক্ষ্য দিচ্ছি। নবিরা এবং হযরত মুসা আ. যা-যা ঘটার কথা বলেছেন, তার বাইরে আমি কিছুই বলছি না। ২৩তাহলো এই যে, মসিহকে কষ্টভোগ করতে হবে এবং মৃতদের মধ্য থেকে প্রথমে জীবিত হয়ে উঠে তাঁর নিজের জাতির লোকদের ও অইহুদিদের কাছে আলোর বিষয়ে ঘোষণা করতে হবে।”
২৪এভাবে যখন তিনি নিজের পক্ষে কথা বলছিলেন, তখন ফাস্তুস তাকে বাধা দিয়ে চিৎকার করে বললেন, “পৌল, তুমি পাগল হয়ে গেছো! অনেক পড়াশোনা তোমাকে পাগল করে তুলেছে।” ২৫কিন্তু হযরত পৌল রা. বললেন, “মাননীয় ফাস্তুস, আমি পাগল হইনি। কিন্তু আমি সত্যি ও যুক্তিপুর্ণ কথা বলছি। ২৬নিশ্চয়ই বাদশাহ এসব বিষয়ে জানেন এবং আমি তাঁর সংগে খোলা-খুলিভাবে কথা বলি। আর এ-কথা আমি নিশ্চয়ই জানি যে, এর কিছুই তাঁর চোখ এড়ায়নি, কারণ এসব তো গোপনে করা হয়নি।
২৭বাদশাহ আগ্রিপ্প, আপনি কি নবিদের কথা বিশ্বাস করেন? আমি জানি আপনি করেন।” ২৮তখন আগ্রিপ্প হযরত পৌল রা.-কে বললেন, “তুমি কি এতো অল্পতেই আমাকে মসিহের অনুসারী করে ফেলতে চাও?” ২৯হযরত পৌল রা. বললেন, “অল্প হোক বা বেশি হোক, আমি আল্লাহর কাছে এই মোনাজাত করি যে, কেবল আপনি নন কিন্তু যারা আজ আমার কথা শুনছেন, তারা সবাই যেনো আমার মতো হন-কেবল এই শেকল ছাড়া।”
৩০তখন বাদশাহ উঠে দাঁড়ালেন এবং তার সাথে-সাথে গভর্নর ফাস্তুস ও বার্নিকি এবং যারা তাদের সংগে বসেছিলেন, সবাই উঠে দাঁড়ালেন। ৩১তারপর তারা সেই ঘর ছেড়ে চলে যাবার সময় একে অন্যকে বলতে লাগলেন, “এই লোকটি মৃত্যুর শাস্তি পাবার বা জেলখাটার মতো কিছুই করেনি।” ৩২আগ্রিপ্প ফাস্তুসকে বললেন, “এই লোকটি যদি সম্রাটের কাছে আপিল না-করতো, তাহলে তাকে ছেড়ে দেয়া যেতো।”
Facebook
WhatsApp
Telegram
Email
হাওয়ারিনামা: রুকু – ১
১,২মাননীয় থিয়ফিল, হযরত ইসা আ.কে বেহেস্তে তুলে নেবার আগ পর্যন্ত তিনি যা করেছিলেন ও শিক্ষা দিয়েছিলেন, তার সমস্তই আমি আগের ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ২
১পঞ্চাশতম দিনের ইদে যখন তারা সবাই এক জায়গায় মিলিত হলেন, ২তখন হঠাৎ আসমান থেকে জোর বাতাসের শব্দের মতো একটি শব্দ ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ৩
১এক দিন বিকেল তিনটার এবাদতের সময় হযরত সাফওয়ান রা. ও হযরত ইউহোন্না রা. বায়তুল-মোকাদ্দসে যাচ্ছিলেন। এবং জন্ম থেকেই খোঁড়া এক ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ৪
১হযরত সাফওয়ান রা. ও হযরত ইউহোন্না রা. যখন লোকদের সংগে কথা বলছিলেন, তখন ইমামেরা, বায়তুল-মোকাদ্দসের প্রধান কর্মচারী ও সদ্দুকিরা তাদের ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ৫
১আনানিয়াস নামে এক লোক ও তার স্ত্রী সাফিরা একটি সম্পত্তি বিক্রি করলো। ২তার স্ত্রীর জানা মতেই বিক্রির কিছু টাকা সে ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ৬
১ঐ দিনগুলোতে যখন উম্মতদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছিলো, তখন গ্রীকরা ইহুদিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলো যে, প্রতিদিন খাবার বিতরণের সময় তাদের বিধবাদের ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ৭
১তখন প্রধান ইমাম হযরত স্তিফান র.কে জিজ্ঞেস করলেন, “এসব কি সত্যি?”২হযরত স্তিফান র. উত্তর দিলেন, “হে আমার ভাইয়েরা ও আমার ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ৮
১ হযরত শৌল রা. তাকে হত্যার অনুমোদন দিচ্ছিলেন।সেদিন জেরুসালেমে হযরত ইসা আ. এর অনুসারীদের ওপরে ভীষণ জুলুম শুরু হলো। তাতে ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ৯
১-২এদিকে হযরত শৌল রা. হযরত ইসা মসিহের উম্মতদের হত্যা করার ভয় দেখাচ্ছিলেন।তিনি মহা-ইমামের কাছে গিয়ে দামেস্ক শহরের সিনাগোগগুলোতে দেবার জন্য ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ১০
১কৈসরিয়া শহরে কর্নেলিয়াস নামে একজন লোক ইতালিয় সৈন্যদলের লেফটেন্যান্ট ছিলেন। ২তিনি আল্লাহ্ভক্ত ছিলেন এবং তিনি ও তার পরিবারের সবাই আল্লাহর ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ১১
১অইহুদিরাও যে আল্লাহর কালামের ওপর ইমান এনেছেন, সে-কথা হাওয়ারিরা এবং সমস্ত ইহুদিয়ার ইমানদার ভাইয়েরা শুনলেন। ২এ-জন্য হযরত সাফওয়ান রা. যখন ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ১২
১সেই সময় বাদশাহ হেরোদ জুলুম করার জন্য কওমের কয়েকজনকে ধরে এনেছিলেন। ২তিনি হযরত ইউহোন্না রা.-র ভাই হযরত ইয়াকুব রা.-কে তরবারি ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ১৩
১ আন্তিয়খিয়ার অনুসারীদের মধ্যে কয়েকজন ওলি ও শিক্ষক ছিলেন। তাদের নাম হযরত বার্নবাস র., হযরত নিগের র. নামে পরিচিত সিমোন, ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ১৪
১ইকোনিয়ম শহরেও একই ঘটনা ঘটলো। সেখানে হযরত পৌল রা. ও হযরত বার্নবাস র. ইহুদিদের সিনাগোগে গিয়ে এমনভাবে কথা বললেন যে, ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ১৫
১সেই সময় ইহুদিয়া থেকে কয়েকজন লোক এলেন এবং ভাইদের এই শিক্ষা দিতে লাগলেন যে, “হযরত মুসা আ. এর শরিয়ত মতে ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ১৬
১পরে হযরত পৌল রা. দেব্রা ও লুস্ত্রা শহরে গেলেন। সেখানে হযরত তিমথীয় র. নামে একজন উম্মত থাকতেন। তাঁর মা ছিলেন ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ১৭
১হযরত পৌল রা. ও হযরত সিল র. আমফিপলি ও আপল্লো নিয়া হয়ে থিসালোনিকিতে এসে পৌঁছলেন। সেখানে ইহুদিদের একটি সিনাগোগ ছিলো। ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ১৮
১এরপর হযরত পৌল রা. এথেন্স ছেড়ে করিন্থ শহরে গেলেন। সেখানে আকুইলা নামে এক ইহুদির সংগে তার দেখা হলো, জন্মসূত্রে তিনি ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ১৯
১আপল্লো যখন করিন্থে ছিলেন, সেই সময় হযরত পৌল রা. সে-সব এলাক ঘুরে ইফিসে এলেন। ২সেখানে তিনি কয়েকজন ইমানদারের দেখা পেলেন। ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ২০
১গোলমাল থামার পর হযরত পৌল রা. ইমানদারদের ডেকে পাঠালেন। তাঁদের উৎসাহ দেবার পর তাঁদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে তিনি মেসিডোনিয়ার ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ২১
১তাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আমরা সোজা কোস দ্বীপে গেলাম। পরদিন আমরা রোডস দ্বীপে এলাম। তারপর সেখান থেকে পাতারা গেলাম। ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ২২
১“ভাইয়েরা ও পিতারা, এখন নিজের পক্ষে আমার উত্তর শুনুন।” ২তারা তাঁকে ইব্রানী ভাষায় কথা বলতে শুনে একেবারে চুপ হয়ে গেলো।৩তখন ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ২৩
১হযরত পৌল রা. সোজা মহাসভার লোকদের দিকে তাকিয়ে বললেন, “আমার ভাইয়েরা, আজ পর্যন্ত আমি আল্লাহর সামনে পরিষ্কার বিবেকে জীবন-যাপন করছি।” ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ২৪
১পাঁচদিন পরে মহাইমাম অননিয় কয়েকজন ইহুদি বুজুর্গকে ও তর্তুল্লস নামে একজন উকিলকে নিয়ে সেখানে এলেন এবং গভর্নরের কাছে হযরত পৌল ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ২৫
১ফাস্তুস সেই প্রদেশে আসার তিনদিন পর কৈসরিয়া থেকে জেরুসালেমে গেলেন। ২সেখানে প্রধান ইমামেরা ও নেতারা তার কাছে গিয়ে পৌলের বিরুদ্ধে ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ২৬
১তখন আগ্রিপ্প হযরত পৌল রা.-কে বললেন, “তোমার নিজের পক্ষে কথা বলার জন্য তোমাকে অনুমতি দেয়া গেলো।” ২তখন তিনি হাত বাড়িয়ে ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ২৭
১যখন জাহাজে করে আমাদের ইতালিতে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হলো, তখন হযরত পৌল রা. এবং আরো কয়েকজন বন্দিকে জুলিয়াস নামে সম্রাটের ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ২৮
১,২আমরা নিরাপদে কিনারে পৌঁছে জানতে পারলাম যে, দ্বীপটার নাম মাল্টা। এর অধিবাসীরা আমাদের সংগে খুব দয়া দেখালো। তখন বৃষ্টি আরম্ভ ...