অডিও শুনতে এখানে ক্লিক করুন
রুকু - ৯
১ তিনি তাদের বললেন, “আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, এখানে এমন কয়েকজন আছে, যাদের কাছে আল্লাহর রাজ্য মহাশক্তিতে দেখা না দেয়া পর্যন্ত তারা মরবে না।”
২ ছ’দিন পর হযরত ইসা আ. কেবল হযরত সাফওয়ান রা., হযরত ইয়াকুব রা. ও হযরত ইউহান্না রা.-কে সাথে নিয়ে একটি উঁচু পাহাড়ে গেলেন ৩ এবং তাদের সামনে রূপান্তরিত হলেন। তাঁর কাপড়চোপড় এমন চোখ ঝলসানো সাদা হলো যে, দুনিয়ার কোনো মানুষের পক্ষে তেমন করে কাপড় কাচা সম্ভব নয়। ৪ সেখানে তাদের সামনে হযরত ইলিয়াস আ. ও হযরত মুসা আ. আবির্ভূত হলেন। তারা হযরত ইসা আ. এর সাথে কথা বলছিলেন।
৫ তখন হযরত সাফওয়ান রা. হযরত ইসা আ.-কে বললেন, “হুজুর, ভালোই হয়েছে যে, আমরা এখানে আছি। আমরা এখানে তিনটি কুঁড়েঘর তৈরি করি- একটি আপনার, একটি হযরত মুসা আ. এর ও একটি হযরত ইলিয়াস আ. এর জন্য।” ৬ তারা খুব ভয় পেয়েছিলেন, সেজন্য কী যে বলা উচিত, তিনি তা বুঝলেন না।
৭ এ-সময় একখন্ড সাদা মেঘ এসে তাঁদের ঢেকে ফেললো; আর সেই মেঘ থেকে একথা শোনা গেলো, “এ-ই আমার একান্তপ্রিয় মনোনীতজন, তোমরা তার কথা শোনো।” ৮ তখনই তারা চারদিকে তাকালেন কিন্তু হযরত ইসা আ. ছাড়া আর কাউকেই দেখতে পেলেন না।
৯ তিনি পাহাড় থেকে নেমে আসার সময় তাদের হুকুম দিলেন, ইবনুল-ইনসান মৃত থেকে জীবিত হয়ে না ওঠা পর্যন্ত তারা যা দেখেছেন তা যেনো কাউকেই না বলেন। ১০ সুতরাং তারা বিষয়টি নিজেদের মধ্যে রাখলেন; আর মৃত থেকে জীবিত হয়ে ওঠার অর্থ কী, তা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করতে লাগলেন।
১১ অতঃপর তারা তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, “আলিমরা কেনো বলেন, প্রথমেই হযরত ইলিয়াস আ. আসবেন?” ১২ তিনি তাদের বললেন, “প্রথমে হযরত ইলিয়াস আ. এসে সবকিছু আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনবেন। তবে ইবনুল-ইনসানের বিষয়ে কেমন করেই-বা লেখা আছে যে, তাঁকে খুব কষ্টভোগ করতে হবে এবং লোকে তাঁকে অগ্রাহ্য করবে? ১৩ কিন্তু আমি তোমাদের বলছি, হযরত ইলিয়াস আ. এর বিষয়ে যেভাবে লেখা আছে, সেভাবেই তিনি এসেছিলেন এবং তারা তার প্রতি যা ইচ্ছা তাই করেছে।”
১৪ অতঃপর তারা অন্য হাওয়ারিদের কাছে ফিরে এসে দেখলেন, তাদের চারপাশে অনেক লোক জড়ো হয়েছে এবং কয়েকজন আলিম তাদের সাথে তর্ক করছেন। ১৫ সমগ্র জনতা তাঁকে দেখার সাথে সাথে সশ্রদ্ধ ভয়ে ভীত হলো এবং তারা দৌড়ে গিয়ে তাঁকে সালাম জানালো। ১৬ তিনি তাদের জিজ্ঞেস করলেন, “তোমরা ওদের সাথে কী নিয়ে তর্ক করছো?”
১৭ ভিড়ের মধ্য থেকে একজন উত্তর দিলো, “হুজুর, আমার ছেলেকে আপনার কাছে এনেছিলাম। তাকে ভূতে পেয়েছে। সে তাকে কথা বলতে দেয় না। ১৮ এবং সে যখনই তাকে ধরে, তখনই আছাড় দিয়ে মাটিতে ফেলে দেয়। তার মুখ থেকে ফেনা বের হয় আর সে দাঁতে দাঁত ঘষে এবং শক্ত হয়ে যায়। আমি আপনার হাওয়ারিদেরকে বললাম তাকে ছাড়িয়ে দিতে কিন্তু তারা যথেষ্ট ক্ষমতাসম্পন্ন নন।”
১৯ জবাবে তিনি তাদের বললেন, “অবিশ্বাসীর দল! আর কতোদিন আমি তোমাদের সাথে থাকবো? আর কতোদিন তোমাদের সহ্য করবো? তাকে আমার কাছে আনো।” ২০ তারা ছেলেটিকে তাঁর কাছে আনলেন। তাঁকে দেখেই সেই ভূত ছেলেটিকে খুব জোরে মুচড়ে ধরলো। ছেলেটি মুখ থেকে ফেনা বের করতে করতে মাটিতে গড়াগড়ি দিতে লাগলো।
২১ হযরত ইসা আ. তার পিতাকে জিজ্ঞেস করলেন, “কতোদিন হলো এর এরকম হয়েছে?” ২২ সে বললো, “ছোটোবেলা থেকে। এই ভূত তাকে ধ্বংস করার জন্য প্রায়ই আগুন আর পানিতে ফেলে দেয়। তবে আপনি যদি কোনোকিছু করতে পারেন, তাহলে দয়া করে আমাদের উপকার করুন।” ২৩ তিনি তাকে বললেন, “‘যদি করতে পারেন!’ যে ইমান আনে তার জন্য সবকিছুই করা সম্ভব।” ২৪ তখনই ছেলেটির পিতা চিৎকার করে কেঁদে উঠে বললো, “আমি ইমান এনেছি; আমার অবিশ্বাস দূর করুন।”
২৫ অনেক লোক দৌড়ে আসছে দেখে হযরত ইসা আ. নোংরা-ভূতকে ধমক দিয়ে বললেন, “কালা ও বোবা-ভূত, আমি তোমাকে হুকুম দিচ্ছি, এর ভেতর থেকে বেরিয়ে যাও এবং আর কখনো এর মধ্যে ঢুকবে না।” ২৬ তখন সেই ভূত চিৎকার করে ছেলেটিকে জোরে মুচড়ে ধরলো এবং তার ভেতর থেকে বেরিয়ে গেলো। তাতে ছেলেটি মরার মতো পড়ে রইলো দেখে অনেকে বললো, “সে মারা গেছে।” ২৭ কিন্তু হযরত ইসা আ. তাকে হাত ধরে তুললেন আর তাতে সে উঠে দাঁড়ালো।
২৮ যখন তিনি একটি ঘরের ভেতরে গেলেন, তখন তাঁর হাওয়ারিরা গোপনে তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, “আমরা ভূতকে ছাড়াতে পারলাম না কেনো?” ২৯ তিনি তাদের বললেন, “মোনাজাত ছাড়া আর কোনোভাবেই এরকম ভূত ছাড়ানো যায় না।”
৩০ তারা সেই জায়গা ছেড়ে গালিলের মধ্য দিয়ে চলে গেলেন। তিনি চেয়েছিলেন যেনো কেউ তা জানতে না পারে। ৩১ কারণ তিনি তাঁর হাওয়ারিদেরকে শিক্ষা দিচ্ছিলেন। তিনি তাদের বলছিলেন, “ইবনুল-ইনসানকে মানুষের হাতে তুলে দেয়া হবে। তারা তাঁকে মেরে ফেলবে এবং মৃত্যুও তিন দিন পর তিনি আবার জীবিত হবেন।” ৩২ কিন্তু তারা একথার অর্থ বুঝতে পারলেন না এবং তাঁকে জিজ্ঞেস করতেও ভয় পেলেন।
৩৩ অতঃপর তারা কফরনাহুমে এলেন। তিনি ঘরের ভেতর গিয়ে তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, “তোমরা পথে কী নিয়ে তর্ক করছিলে?” ৩৪ তারা চুপ করে রইলেন; কারণ কে সবচেয়ে বড়ো তা নিয়ে তারা পথে তর্ক করছিলেন। ৩৫ তিনি বসলেন এবং সেই বারোজনকে ডেকে বললেন, “কেউ যদি প্রথম হতে চায়, তাহলে তাকে অবশ্যই সকলের শেষে থাকতে হবে এবং সকলের সেবাকারী হতে হবে।”
৩৬ তিনি একটি শিশুকে নিয়ে তাদের মধ্যে দাঁড় করালেন। তারপর তাকে কোলে নিয়ে তাদের বললেন, ৩৭ “যে কেউ আমার নামে এর মতো কোনো শিশুকে গ্রহণ করে, সে আমাকেই গ্রহণ করে; আর যে আমাকে গ্রহণ করে, সে কেবল আমাকে গ্রহণ করে না কিন্তু যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন, তাঁকেই গ্রহণ করে।”
৩৮ হযরত ইউহোন্না রা. তাঁকে বললেন, “হুজুর, আমরা একজনকে আপনার নামে ভূত ছাড়াতে দেখে তাকে নিষেধ করেছি, কারণ সে আমাদের অনুসরণ করছিলো না।” ৩৯ কিন্তু হযরত ইসা আ. বললেন, “তাকে নিষেধ করো না। কারণ আমার নামে আশ্চর্যকাজ করার পরে কেউ ফিরে আমার নিন্দা করতে পারে না। ৪০ যে আমাদের বিপক্ষে থাকে না, সে তো আমাদের পক্ষে। ৪১ তোমরা মসিহের লোক বলে যে কেউ তোমাদের এক গ্লাস পানি পান করতে দেয়, আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, সে কোনো মতে তার পুরস্কার হারাবে না। ৪২ কেউ যদি আমার ওপর বিশ্বাসী এই ছোটোদের মধ্যে কারো পথে বাধা সৃষ্টি করে, তাহলে নিজের গলায় নিজে পাথর বেঁধে সমুদ্রে নিক্ষিপ্ত হওয়াই বরং তার জন্য ভালো।
৪৩,৪৪ তোমার হাত যদি তোমার বাধার কারণ হয়, তাহলে তা কেটে ফেলে দাও। দু’হাত নিয়ে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হওয়ার চেয়ে বরং নুলা হয়ে বেহেস্তে ঢোকা তোমার পক্ষে উত্তম। সেই জাহান্নামের আগুন কখনো নেভে না। ৪৫,৪৬ তোমার পা যদি তোমার বাধার কারণ হয়, তাহলে তা কেটে ফেলে দাও। দু’পা নিয়ে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হওয়ার চেয়ে বরং খোঁড়া হয়ে বেহেস্তে ঢোকা তোমার পক্ষে উত্তম।
৪৭ তোমার চোখ যদি তোমার বাধার কারণ হয়, তাহলে তা তুলে ফেলো। দু’চোখ নিয়ে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হওয়ার চেয়ে বরং এক চোখ নিয়ে আল্লাহর রাজ্যে ঢোকা তোমার পক্ষে উত্তম। ৪৮ সেই জাহান্নামের পোকা কখনো মরে না আর সেখানকার আগুন কখনো নেভে না। ৪৯ লবণ দেবার মতো প্রত্যেকের ওপর আগুন দেয়া হবে ।
৫০ লবণ ভালো জিনিস কিন্তু যদি লবণের স্বাদ নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে তা কেমন করে আবার নোনতা করবে? তোমাদের হৃদয়ের মাঝে লবণ রাখো এবং তোমরা একজন অন্যজনের সাথে শান্তিতে থাকো।”
রুকু - ১০
১ সেই জায়গা ছেড়ে হযরত ইসা আ. ইহুদিয়া ও জর্দান নদীর অন্য পারে গেলেন এবং অনেক লোক তাঁর কাছে এসে জড়ো হলো। তখন তিনি তাঁর নিয়ম অনুসারে তাদের শিক্ষা দিতে লাগলেন।
২ কয়েকজন ফরিসি এসে তাঁকে পরীক্ষা করার জন্য জিজ্ঞেস করলেন, “স্ত্রীকে তালাক দেয়া কি শরিয়ত-সম্মত?” ৩ তিনি তাদের উত্তর দিলেন, “হযরত মুসা আ. তোমাদের কী আদেশ দিয়েছেন?” ৪ তারা বললেন, “হযরত মুসা আ. তালাকনামা লিখে স্ত্রীকে তালাক দেবার অনুমতি দিয়েছেন ।” ৫ কিন্তু হযরত ইসা আ. তাদের বললেন, “তোমাদের হৃদয় কঠিন বলেই তিনি তোমাদের জন্য এ-আদেশ লিখেছিলেন। ৬ কিন্তু সৃষ্টির শুরুতে ‘আল্লাহ তাদের স্ত্রী ও পুরুষ করে সৃষ্টি করেছেন । ৭ এজন্যই মানুষ তার পিতামাতাকে ছেড়ে নিজের স্ত্রীর সাথে যুক্ত হবে আর তারা দু’জন একদেহ হবে।’ ৮ তাই তারা আর দুই নয় কিন্তু একদেহ । ৯ সুতরাং আল্লাহ যা যুক্ত করেছেন, মানুষ তা আলাদা না করুক।”
১০ অতঃপর হাওয়ারিরা ঘরের ভেতরে তাঁকে আবার এ-বিষয়ে জিজ্ঞেস করতে লাগলেন। ১১ তিনি তাদের বললেন, “যে কেউ নিজের স্ত্রীকে তালাক দিয়ে অন্যকে বিয়ে করে, সে তার সাথে জিনা করে। ১২ আবার স্ত্রী যদি স্বামীকে তালাক দিয়ে অন্যকে বিয়ে করে, তাহলে সেও জিনা করে।”
১৩ লোকেরা কয়েকটি শিশুকে তাঁর কাছে নিয়ে এলো, যেনো তিনি তাদের স্পর্শ করেন; কিন্তু হাওয়ারিরা তাদের তিরস্কার করতে লাগলেন। ১৪ হযরত ইসা আ. তা দেখে অসন্তুষ্ট হলেন এবং তাদের বললেন, “শিশুদেরকে আমার কাছে আসতে দাও, বাধা দিয়ো না; কারণ আল্লাহর রাজ্য এদের মতো লোকদেরই। ১৫ আমি তোমাদের সত্যি বলছি, শিশুদের মতো আল্লাহর রাজ্য গ্রহণ না করলে কেউ কোনোভাবেই তাতে ঢুকতে পারবে না।” ১৬ তিনি সেই শিশুদেরকে কোলে নিলেন ও তাদের মাথায় হাত রেখে দোয়া করলেন।
১৭ তিনি আবার যখন পথে বের হলেন, তখন এক লোক দৌড়ে এসে তাঁর সামনে নতজানু হয়ে বললো, “হে ভালো ওস্তাদ, আল্লাহর দিদার পেতে হলে আমাকে কী করতে হবে?” ১৮ হযরত ইসা আ. তাকে বললেন, “আমাকে তুমি ভালো বলছো কেনো? এক আল্লাহ ছাড়া আর কেউই ভালো নয়। ১৯ তুমি তো হুকুমগুলো জানো, ‘খুন করো না, জিনা করো না, চুরি করো না, মিথ্যাসাক্ষ্য দিয়ো না, অন্যকে ঠকিয়ো না, বাবা-মাকে সম্মান করো ।’” ২০ লোকটি তাঁকে বললো, “হুজুর, তরুণ বয়স থেকে আমি এসব পালন করে আসছি।”
২১ হযরত ইসা আ. তার দিকে তাকালেন এবং মমতায় পূর্ণ হয়ে বললেন, “একটি জিনিস তোমার বাকি আছে। যাও, তোমার যা-কিছু আছে তা বিক্রি করে গরিবদের দান করে দাও। তাতে তুমি বেহেস্তে ধন পাবে। তারপর এসে আমাকে অনুসরণ করো।” ২২ একথা শুনে লোকটির মুখ কালো হয়ে গেলো। তার অনেক ধনসম্পত্তি ছিলো বলে সে দুঃখিত হয়ে চলে গেলো।
২৩ তখন হযরত ইসা আ. চারদিকে তাকিয়ে তাঁর হাওয়ারিদের বললেন, “ধনীদের পক্ষে আল্লাহর রাজ্যে ঢোকা কতোই-না কঠিন!” ২৪ তাঁর কথা শুনে হাওয়ারিরা আশ্চর্য হলেন। তিনি আবার তাদের বললেন, “সন্তানেরা, আল্লাহর রাজ্যে ঢোকা কতোই-না কঠিন! ২৫ কোনো ধনীর পক্ষে আল্লাহর রাজ্যে ঢোকার চেয়ে সুচের ছিদ্র দিয়ে উটের চলে যাওয়া সহজ।” ২৬ তারা আরো অবাক হয়ে নিজেদের মধ্যে বলাবলি করতে লাগলেন, “তাহলে কে নাজাত পাবে?” ২৭ তাদের দিকে তাকিয়ে তিনি বললেন, “মানুষের পক্ষে এটি অসম্ভব হলেও আল্লাহর কাছে অসম্ভব নয়- তাঁর পক্ষে সবই সম্ভব।”
২৮ হযরত সাফওয়ান রা. তাঁকে বললেন, “দেখুন, আমরা তো সবকিছু ছেড়ে দিয়ে আপনার পেছনে এসেছি।” ২৯ হযরত ইসা আ. বললেন, “আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, যে কেউ আমার ও ইঞ্জিলের জন্য বাড়ি-ঘর, ভাই-বোন, বাবা-মা, ছেলে-মেয়ে ও জায়গা-জমি ছেড়ে দিয়েছে, ৩০ সে এ-যুগেই তার একশ গুণ বেশি বাড়ি-ঘর, ভাই-বোন, মা, ছেলে-মেয়ে ও জায়গা-জমি পাবে এবং সাথে সাথে অত্যাচারও ভোগ করবে আর পরকালে আল্লাহর দিদারলাভ করবে। ৩১ কিন্তু যারা প্রথমে আছে, তাদের মধ্যে অনেকে শেষে পড়বে আর যারা শেষে আছে, তারা প্রথম হবে।”
৩২ অতঃপর তারা জেরুসালেমের পথে রওনা দিলেন। হযরত ইসা আ. তাদের আগে আগে যাচ্ছিলেন। তারা অবাক হলেন এবং যে-লোকেরা পেছনে পেছনে আসছিলো, তারা ভয় পেলো।
তিনি আবার সেই বারোজনকে কাছে ডেকে নিজের ওপর কী হতে যাচ্ছে তা বলতে লাগলেন। বললেন, “দেখো, আমরা জেরুসালেমে যাচ্ছি। ৩৩ সেখানে ইবনুল-ইনসানকে প্রধান ইমামদের ও আলিমদের হাতে তুলে দেয়া হবে। তারা তাঁকে মৃত্যুর উপযুক্ত বলে দোষী করবেন, তারপর তাঁকে অইহুদিদের হাতে তুলে দেবেন। ৩৪ তারা তাঁকে ঠাট্টাবিদ্রূপ করবে, তাঁর মুখে থুতু দেবে, তাঁকে চাবুক মারবে এবং হত্যা করবে। আর তিন দিন পর তিনি আবার জীবিত হয়ে উঠবেন।”
৩৫ হযরত ইয়াকুব রা. ও হযরত ইউহান্না রা ইবনে জাবিদি তাঁর কাছে এসে বললেন, “হুজুর, আমাদের ইচ্ছা এই যে, আমরা যা চাবো, আপনি আমাদের জন্য তাই করবেন।” ৩৬ তিনি তাদের বললেন, “তোমরা কী চাও? আমি তোমাদের জন্য কী করবো?” ৩৭ তারা তাঁকে বললেন, “আমাদের এই বর দিন, আপনি মহিমাপ্রাপ্ত হলে আমরা যেনো একজন আপনার ডান পাশে ও অন্যজন বাঁ পাশে বসতে পারি।”
৩৮ কিন্তু হযরত ইসা আ. তাদের বললেন, “তোমরা যা চাচ্ছো তা তোমরা জানো না। যে-গ্লাসে আমি পান করতে যাচ্ছি তাতে কি তোমরা পান করতে পারো? কিংবা যে-বায়াত আমি গ্রহণ করতে যাচ্ছি তা কি তোমরা গ্রহণ করতে পারো?” ৩৯ তারা তাঁকে বললেন, “হ্যাঁ, আমরা পারি।” তখন হযরত ইসা আ. তাদের বললেন, “যে-গ্লাসে আমি পান করবো, তোমরা অবশ্যই তাতে পান করবে; আর যে-বায়াত আমি গ্রহণ করবো তা তোমরাও গ্রহণ করবে; ৪০ কিন্তু যাদের জন্য স্থান প্রস্তুত করা হয়েছে, তাদের ছাড়া অন্য কাউকেই আমার ডান কিংবা বাঁ পাশে বসতে দেবার অধিকার আমার নেই।”
৪১ বাকি দশজন এসব কথা শুনে হযরত ইয়াকুব রা. ও হযরত ইউহোন্না রা ওপর বিরক্ত হলেন। ৪২ তখন হযরত ইসা আ. তাদেরকে কাছে ডেকে বললেন, “তোমরা জানো যে, অইহুদিদের শাসনকর্তারা তাদের ওপর প্রভু হয় এবং তাদের নেতারা তাদের ওপর হুকুম চালায়। ৪৩ তোমাদের তা হওয়া উচিত নয়। তোমাদের মধ্যে যে বড়ো হতে চায়, তাকে অবশ্যই তোমাদের সেবাকারী হতে হবে ৪৪ আর তোমাদের মধ্যে যে মহান হতে চায়, তাকে অবশ্যই সকলের গোলাম হতে হবে। ৪৫ বস্তুত ইবনুল-ইনসান সেবা পেতে আসেননি বরং সেবা করতে এবং অনেক লোকের মুক্তিপণ হিসেবে নিজের প্রাণ দিতে এসেছেন।”
৪৬ পরে তারা জিরিহোতে এলেন। যখন তিনি হাওয়ারিদের ও অনেক লোকের সাথে জিরিহো থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন বরতিময় নামে এক অন্ধ ভিখারি পথের পাশে বসে ছিলো। ৪৭ “নাসরত গ্রামের হযরত ইসা আ. আসছেন”- একথা শুনে সে চিৎকার করে বলতে লাগলো, “হযরত দাউদ আ. এর বংশধর হযরত ইসা আ., আমার প্রতি রহম করুন।” ৪৮ এতে অনেকে তাকে ধমক দিলো, যেনো সে চুপ করে কিন্তু সে আরো চিৎকার করে বললো, “হযরত দাউদ আ. এর বংশধর, আমার প্রতি রহম করুন।”
৪৯ হযরত ইসা আ. থেমে বললেন, “ওকে ডাকো।” তারা অন্ধ লোকটিকে ডেকে বললো, “সাহস করো, ওঠো; উনি তোমাকে ডাকছেন।” ৫০ তখন সে তার গায়ের চাদরটি ফেলে লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়ালো এবং হযরত ইসা আ. এর কাছে গেলো। ৫১ তিনি তাকে বললেন, “তুমি কী চাও? আমি তোমার জন্য কী করবো?” অন্ধ লোকটি তাঁকে বললো, “হুজুর, আমি যেনো আবার দেখতে পাই।” ৫২ হযরত ইসা আ. তাকে বললেন, “যাও, তোমার ইমান তোমাকে সুস্থ করেছে।” তাতে তখনই লোকটি আবার দেখতে পেলো এবং পথ দিয়ে তাঁর পেছনে পেছনে চলতে লাগলো।
Facebook
WhatsApp
Telegram
Email
আল-মসিহঃ রুকু -১ ও ২
রুকু: ১ বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম ১ হযরত ইসা মসিহ আ. এর ইঞ্জিলের শুরু; ইনি আল্লাহর একান্ত প্রিয় মনোনীতজন । ২ ...
আল-মসিহঃ রুকু -৩ ও ৪
রুকু ৩ ১ হযরত ইসা আ. আবার সিনাগোগে গেলেন। সেখানে এক লোক ছিলো, যার একটি হাত শুকিয়ে গিয়েছিলো। ২ সাব্বাতে ...
আল মসিহঃ রুকু – ৫ ও ৬
রুকু ৫ ১ তারা লেক পার হয়ে গেরাসেনিদের এলাকায় গেলেন। ২ তিনি নৌকা থেকে নামার সাথে সাথেই ভূতে পাওয়া এক ...
আল-মসিহঃ রুকু ৭ ও ৮
রুকু - ৭ ১ কয়েকজন ফরিসি ও আলিম জেরুসালেম থেকে এসে তাঁর চারপাশে জড়ো হলেন। ২ তারা দেখলেন, কয়েকজন উম্মত ...
আল-মসিহঃ রুকু ৯ ও ১০
রুকু - ৯ ১ তিনি তাদের বললেন, “আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, এখানে এমন কয়েকজন আছে, যাদের কাছে আল্লাহর রাজ্য মহাশক্তিতে ...
আল-মসিহঃ রুকু ১১ ও ১২
রুকু - ১১ ১ তারা জেরুসালেম যাবার পথে জৈতুন পাহাড়ের গায়ের বৈতফগি ও বেথানিয়া গ্রামের কাছে এলেন। সেখানে পৌঁছে তিনি ...
আল-মসিহ, রুকুঃ ১৩ ও ১৪
রুকু ১৩ ১ বায়তুল-মোকাদ্দস থেকে বেরিয়ে যাবার সময় হাওয়ারিদের মধ্যে একজন তাঁকে বললেন, “হুজুর, দেখুন, কেমন বাছাই করা পাথর আর ...
আল-মসিহঃ রুকু- ১৫ ও ১৬
রুকু ১৫ ১ফজরের পরেই প্রধান ইমামেরা বুজুর্গ, আলেম ও মহাসভার সমস্ত লোকের সাথে পরামর্শ করলেন। তারা হযরত ইসা আ.কে বেঁধে ...