রোমীয়: রুকু – ১১

214463
Total
Visitors
(১) তাহলে আমার প্রশ্ন, আল্লাহ কি তাঁর লোকদেরকে পরিত্যাগ করেছেন? কখনোই না! আমি নিজে একজন ইস্রাইলীয়, হযরত ইব্রাহিম আ.র বংশধর, এবং হযরত বিন্ইয়ামিন আ. এর-গোত্রের লোক।

(২) আল্লাহ তাঁর সেই লোকদেরকে, যাদের তিনি আগে থেকেই জানতেন, তাদেরকে পরিত্যাগ করেননি। তোমরা কি জানো না? হযরত ইলিয়াস আ. এর বিষয়ে পাক-কিতাব কি বলে, তিনি বনি-ইস্রাইলের বিরুদ্ধে আল্লাহর কাছে কীভাবে অনুরোধ জানিয়েছিলেন:  (৩) “হে আল্লাহ, এরা তোমার নবিদেরকে খুন করেছে, এরা তোমার কোরবানি দেবার স্থানগুলো ভেঙে ফেলেছে; কেবল আমি একাই বেঁচে আছি, আর খুন করার জন্য এরা আমাকেও খুঁজছে।” 

(৪) কিন্তু আল্লাহ তাঁকে কী জবাব দিয়েছিলেন? “যারা লাব্বাল দেবতার কাছে হাঁটু পাতেনি, এমন সাত হাজার লোককে আমি আমার নিজের জন্য রেখে দিয়েছি।”  (৫) ঠিক সেই ভাবে আজও তাঁর অনুগ্রহে মনোনীত কিছু লোক অবশিষ্ট রয়েছে।

(৬) কিন্তু যদি তা অনুগ্রহেই হয়, তাহলে তা আর কাজের ওপর নির্ভর করে না, তা না হলে অনুগ্রহ তো আর অনুগ্রহ থাকে না, (৭) তাহলে কী হবে? বনি-ইস্রাইল যা খুঁজছিলো, তা পেতে তারা ব্যর্থ হয়েছে। মনোনীতরা তা পেয়েছে কিন্তু বাকিদের মন কঠিন হয়ে গেছে;

(৮) যেমন কিতাবে লেখা আছে, “আল্লাহ তাদেরকে অসাড়তার রুহ দিয়েছেন, এমন চোখ দিয়েছেন যা দেখতে পায় না, এমন কান দিয়েছেন যা শুনতে পায় না- অতীত থেকে আজ পর্যন্ত।” 

(৯) এবং হযরত দাউদ আ. বলেছেন, “তাদের খানাপিনা হয়ে উঠুক তাদের জন্য ফাঁদ ও জাল, প্রতিবন্ধক-হোঁচট ও প্রতিশোধের কারণ হোক; (১০) তাদের চোখ অন্ধকার হোক, যেনো তারা দেখতে না পায়, এবং তারা চিরদিনের জন্য কুঁজো হয়ে থাকুক।” 

(১১) কাজেই আমি জিজ্ঞেস করি, যাতে তাদের পতন ঘটে সেজন্য কি তারা হোঁচট খেয়েছে? না! কিন্তু তাদের হোঁচট খাওয়ার কারণে অইহুদিদের কাছে নাজাত এসেছে, যেনো বনি-ইস্রাইল ঈর্ষাকাতর হয়ে ওঠে।  (১২) তাদের হোঁচট খাওয়ার অর্থ যদি হয় দুনিয়ার জন্য সমৃদ্ধি এবং তাদের ব্যর্থতার অর্থ যদি হয় অইহুদিদের জন্য সমৃদ্ধি, তাহলে তাদের পূর্ণ মাত্রায় অন্তর্ভুক্তির অর্থ হবে আরো কতোই না প্রাচুর্যপূর্ণ!

(১৩) তোমরা যারা অইহুদি, এখন আমি তোমাদের সাথে কথা বলছি। যেহেতু আমাকে অইহুদিদের কাছে পাঠানো হয়েছে, (১৪) যেনো আমার নিজের লোকদেরকে ঈর্ষাকাতর করে তুলতে পারি, আর এজন্য আমি আমার খেদমত কাজের গৌরব করি, যাতে তাদের কিছুলোককে নাজাতের পথ দেখাতে পারি।

(১৫) কারণ যদি তাদের প্রত্যাখ্যান করায় দুনিয়ার পুনর্মিলন হয়, তাহলে তাদের গ্রহণ করা মৃতদের মধ্য থেকে জীবন লাভ ছাড়া আর কী হবে!

(১৬) যদি প্রথম ফলের মতো আল্লাহর নামে দান করা খামির প্রথম অংশটা যদি পবিত্র হয়, তাহলে তো গোটা খামিই পবিত্র এবং মূল যদি পবিত্র হয়, তাহলে তো ডালপালাগুলোও পবিত্র।

(১৭) কিন্তু কতকগুলো ডাল যদি ভেঙে ফেলা হয় এবং জলপাই গাছের মূলের যে-রস, তার অংশীদার হওয়ার জন্য তোমাদেরকে, অর্থাৎ জংলী ডুমুর গাছের নতুন ডালকে, ভেঙে পড়া ডালের জায়গায় কলম করে জুড়ে দেওয়া হয়,

(১৭) কিন্তু যদি কিছু ডাল ভেঙে ফেলা হয়, আর যে তুমি জংলী জলপাই গাছের ডাল, তোমাকে যদি সেই ভালো জলপাই গাছের শেকড়ের অংশীদার হওয়ার জন্য তাদের জায়গায় কলম কওে লাগানো হয়, (১৮) তাহলে শাখা-প্রশাখার জন্য গর্ব করো না। যদি তুমি অহঙ্কার করো, তাহলে মনে রেখো যে, তুমি মূলকে বাঁচিয়ে রাখছো না কিন্তু মূলই তোমাকে বাঁচিয়ে রাখছে।

(১৯) তুমি হয়তো বলবে, “আমাকে কলম করে জুড়ে দেবার জন্যই ডালগুলো ভেঙে ফেলা হয়েছে।” (২০) একথা সত্য। তাদের অবিশ্বাসের কারণে তাদের ভেঙে ফেলা হয়েছে, কিন্তু তুমি দাঁড়িয়ে আছো কেবলমাত্র ইমানের কারণে। সুতরাং অহঙ্কার করো না, কিন্তু ভয় ও শ্রদ্ধামাখা সম্মানবোধ নিয়ে স্থির থাকো। (২১) কারণ আল্লাহ যখন আসল ডালগুলোকেই রেহাই দেননি, তখন হয়তো তিনি তোমাকেও রেহাই দেবেন না।

(২২) কাজেই আল্লাহর দয়াশীলতা ও কঠোরতার প্রতি দৃষ্টি দাও: যারা পতিত হয়েছে, তাদের প্রতি কঠোরতা কিন্তু তোমার প্রতি আল্লাহর দয়াশীলতা- অবশ্য যতোদিন তুমি তাঁর দয়াশীলতায় থাকো, তা না হলে তোমাকেও কেটে ফেলা হবে।

(২৩) এবং ঐ সব বনি-ইস্রাইল যদি তাদের অবিশ্বাসে অনড় না থাকে, তাহলে তাদেরকেও কলম করে জুড়ে দেওয়া হবে, কেননা আবারো তাদেরকে কলম করে জুড়ে দেবার ক্ষমতা আল্লাহর আছে।

(২৪) কারণ প্রকৃতিগতভাবে যে জংলী জলপাইগাছ, সেই গাছ থেকে কেটে নিয়ে তোমাদেরকে যদি প্রকৃতির বিপরীতে গিয়ে, চাষ করা জলপাই গাছে কলম করে জুড়ে দেওয়া হয়ে থাকে, তাহলে এটি কতো না নিশ্চিত যে, এই স্বাভাবিক ডালগুলোকে কলম করে তাদের নিজ নিজ জলপাই গাছের সাথে আবারো জুড়ে দেওয়া হবে।

(২৫) ভাই ও বোনেরা, তোমরা যতোটুকু জ্ঞানী তার চেয়ে যাতে নিজেদেরকে অধিক জ্ঞানী বলে মনে না-করো, সে-জন্য আমি চাই তোমরা যেনো এই গোপন তত্ত্বটি বা রহস্যটি বুঝতে পারো: অইহুদিদের পূর্ণসংখ্যা যতোদিন না ভেতরে আসছে, ততোদিন পর্যন্ত বনি-ইস্রাইলের একটি অংশের ওপরে কঠিনতা নেমে এসেছে।

(২৬) আর এভাবেই বনি-ইস্রাইলের সবাই রক্ষা পাবে; যেমন কিতাবে লেখা আছে, “সিয়োন থেকে নাজাতদাতা আসবেন; তিনি ইয়াকুব সন্তানদের থেকে অধার্মিকতা দূর করবেন।”  (২৭) “এবং আমি যখন তাদের গুনাহ দূর করবো, তখন তাদের কাছে এটাই হবে আমার ওয়াদা।”

(২৮) সুখবরের দিক থেকে, তোমাদের খাতিরে তারা শত্রু; কিন্তু মনোনয়নের দিক থেকে, পিতৃপুরুষদের খাতিরে তারা প্রিয়পাত্র; (২৯) কারণ আল্লাহর দান ও আহ্বান অপরিবর্তনীয়।

(৩০) যেভাবে তোমরা  একসময় আল্লাহর অবাধ্য ছিলে কিন্তু এখন তাদের অবাধ্যতার কারণে তোমরা অনুগ্রহ লাভ করেছো, (৩১) ঠিক সেভাবে তারাও এখন অবাধ্য হয়েছে, যেনো যে-অনুগ্রহ তোমাদের প্রতি দেখানো হয়েছে, তার দ্বারা তারাও অনুগ্রহ লাভ করতে পারে।

(৩২) বস্তুত আল্লাহ যাতে সকলের প্রতি অনুগ্রহ দেখাতে পারেন, সেজন্য তিনি সকলকেই অবাধ্যতার বন্দি করে রেখেছেন। (৩৩) আল্লাহর প্রাচুর্য, বা ধন-সম্পদ, বিজ্ঞতা ও জ্ঞান কতোই না গভীর! তাঁর বিচার মানুষের বুঝার বাইরে এবং তাঁর পথ কতোই না রহস্যময় খোঁজে পাওয়া অসাধ্য!

(৩৪) “কারণ, কে রাব্বুল আ’লামিনের মন জেনেছে? অথবা কে তাঁর পরামর্শদাতা হয়েছে?”  (৩৫) “অথবা বিনিময় পাবার জন্য কে তাঁকে কিছু উপহার দিয়েছে?”

(৩৬) কারণ সবকিছুই তাঁর কাছ থেকে, তাঁর মাধ্যমে এবং তাঁরই জন্য। চিরকাল ধরে সমস্ত প্রশংসা তাঁরই হোক, আমিন।
Facebook
WhatsApp
Telegram
Email
রোমীয়: রুকু - ১

রোমীয়: রুকু – ১

১:১ আমি পৌল, হযরত ইসা মসিহের গোলাম, হাওয়ারি হওয়ার জন্য আমাকে ডাকা হয়েছে। আল্লাহর সুখবর প্রচারের জন্য আমাকে আলাদা করা ...
রোমীয়: রুকু - ২

রোমীয়: রুকু – ২

(২:১) অতএব, তুমি যে-ই হও না কেনো, তুমি যখন অন্যের বিচার করো, তখন তোমার কোনো অজুহাত নেই; কারণ অন্যের বিচারের ...
রোমীয়: রুকু - ৩

রোমীয়: রুকু – ৩

(৩:১) তাহলে একজন ইহুদির কি সুবিধা আছে? বা খত্‌না করানোর কি মূল্য আছে? (২) সবদিক দিয়েই অনেক লাভ আছে। প্রথমত ...
রোমীয়: রুকু - ৪

রোমীয়: রুকু – ৪

(৪:১) তাহলে দৈহিক সম্পর্কের দিক থেকে আমাদের পূর্বপুরুষ হযরত ইব্রাহিম আ. সম্বন্ধে আমরা কী বলবো? তিনি কী পেয়েছিলেন? (২) হযরত ...
রোমীয়: রুকু - ৫

রোমীয়: রুকু – ৫

(১) অতএব, ইমানের দ্বারা ধার্মিক বলে গণ্য হওয়ায়, আমাদের নেতা হযরত ইসা মসিহের মাধ্যমে আল্লাহর সাথে আমাদের শান্তি আছে, (২) ...
রোমীয়: রুকু - ৬

রোমীয়: রুকু – ৬

(৬:১) তাহলে আমরা কী বলবো? অনুগ্রহ যাতে উপচে পড়ে সেজন্য আমরা কি গুনাহ করতেই থাকবো? (২) কখনোই না! আমরা যারা ...
রোমীয়: রুকু - ৭

রোমীয়: রুকু – ৭

(৭:১) প্রিয় ভাই ও বোনেরা, তোমরা কি জানো না, কারণ আমি তাদের সাথে কথা বলছি, যারা শরিয়ত জানে একজন মানুষ ...
রোমীয়: রুকু - ৮

রোমীয়: রুকু – ৮

(৮:১) অতএব, যারা মসিহ ইসাকে গ্রহণ করেছে, তাদের ওপর আর কোনো শাস্তি নেই। (২) কারণ হযরত ইসা মসিহের জীবন দায়ী ...
রোমীয়: রুকু - ৯

রোমীয়: রুকু – ৯

(১) মসিহের সাথে যুক্ত থেকে আমি সত্য বলছি- আমি মিথ্যা বলছি না; আল্লাহর রুহের দ্বারা আমার বিবেক নিশ্চিত করছে যে- ...
রোমীয়: রুকু - ১০

রোমীয়: রুকু – ১০

(১) ভাই ও বোনেরা, তাদের জন্য আমার অন্তরের আকাঙ্ক্ষা ও আল্লাহর কাছে মোনাজাত এই যে, তারা যেনো নাজাত পায়।২) তাদের ...
রোমীয়: রুকু - ১১

রোমীয়: রুকু – ১১

(১) তাহলে আমার প্রশ্ন, আল্লাহ কি তাঁর লোকদেরকে পরিত্যাগ করেছেন? কখনোই না! আমি নিজে একজন ইস্রাইলীয়, হযরত ইব্রাহিম আ.র বংশধর, ...
রোমীয়: রুকু - ১২

রোমীয়: রুকু – ১২

(১) সুতরাং, ভাই ও বোনেরা, আল্লাহর অপার অনুগ্রহের জন্য, আমি তোমাদেরকে বিনীতভাবে অনুরোধ করছি, তোমরা তোমাদের শরীরকে আল্লাহর কাছে কবুল ...
রোমীয়: রুকু - ১৩

রোমীয়: রুকু – ১৩

(১৩:১) প্রত্যেক ব্যাক্তি শাসনকর্তাদের অধীনতা মেনে চলুক; কারণ এমন কোনো কর্তৃত্ব নেই, যা আল্লাহর কাছ থেকে আসে না, এবং প্রচলিত ...
রোমীয়: রুকু - ১৪

রোমীয়: রুকু – ১৪

(১৪:১) যাদের ইমান দুর্বল, তাদেরকে সাদরে গ্রহণ করো, কিন্তু অভিমত বা মতবাদ নিয়ে ঝগড়া করার জন্য নয়। (২) কেউ কেউ ...
রোমীয়: রুকু - ১৫

রোমীয়: রুকু – ১৫

(১) আমরা যারা সবল, আমাদের উচিত নিজেদের সন্তুষ্ট না করে বরং দুর্বলদের দুর্বলতাগুলো সহ্য করা। (২) আমাদের প্রত্যেকের উচিত আমাদেও ...
রোমীয়: রুকু - ১৬

রোমীয়: রুকু – ১৬

(১) আমি তোমাদের কাছে আমাদের বোন ফৈবির প্রশংসা করছি, তিনি কিংক্রিয়ার ইমানদার দলের একজন খাদেম, (২) তাই আল্লাহর দরবেশদের যেভাবে ...