রোমীয়: রুকু – ৪

214459
Total
Visitors
(৪:১) তাহলে দৈহিক সম্পর্কের দিক থেকে আমাদের পূর্বপুরুষ হযরত ইব্রাহিম আ. সম্বন্ধে আমরা কী বলবো? তিনি কী পেয়েছিলেন? (২) হযরত ইব্রাহিম আ. যদি তাঁর কাজের কারণে ধার্মিক বলে গণ্য হয়ে থাকেন, তাহলে তাঁর গর্ব করার মতো কিছু কারণ আছে, তবে তা আল্লাহর সামনে নয়। (৩) কারণ পাককিতাব কী বলে? “হযরত ইব্রাহিম আ. বিশ্বাস করেছিলেন, আর তা তার ধার্মিকতা হিসাবে গণ্য হলো।” 

(৪) যে কাজ করে, তার মজুরি তো দান হিসেবে বিবেচিত হয় না, এটা তার পাওনা। (৫) কিন্তু যে ব্যক্তি কাজ ছাড়াই আল্লাহভক্তদের ধার্মিক হিসাবে গ্রহনকারীর (ধার্মিক প্রতিপন্নকারীর) উপর বিশ্বাস করে, তার বিশ্বাস ধার্মিকতা বলে গণ্য হয়।

(৬) একইভাবে হযরত দাউদ আ. সেই সব লোকদের সৌভাগ্যবান বলেন, যাদেরকে আল্লাহ কাজ ছাড়াই ধার্মিক বলে গ্রহণ করেন: (৭) “ভাগ্যবান তারা, যাদের গুনাহ মাফ করা হয়েছে, এবং যাদের গুনাহ ঢেকে দেয়া হয়েছে; (৮) ভাগ্যবান সেই ব্যক্তি, আল্লাহ যার বিরুদ্ধে গুনাহ ধরবেন না।” 

(৯) তাহলে রহমত কি কেবল খতনাকারী লোকদের জন্য, নাকি খতনা না করানো লোকদের জন্যও? আমরা তো বলি, “ইমানই হযরত ইব্রাহিম আ.র জন্য ধার্মিকতা হিসাবে গণ্য হয়েছিলো।”  (১০) তাহলে কোন অবস্থায় ইমান তাঁর জন্য ধার্মিকতা হিসাবে গণিত হয়েছিলো? তার খতনা করানোর আগে, নাকি পরে? বরং খতনা করানোর আগেই হয়েছিলো, পরে নয়। (১১) তিনি খতনা করানোর আগেই ইমানের মাধ্যমে তার যে ধার্মিকতা ছিলো, সেই ধার্মিকতার সীলমোহর হিসাবে তিনি খতনার চিহ্ন গ্রহণ করেছিলেন। উদ্দেশ্য ছিলো এই যে, খতনাবিহীন অবস্থায় যারা বিশ্বাস করে এবং এর ফলে তা তাদের ধার্মিকতা বলে গনিত হয়, যেনো তিনি তাদের সকলের আদি পিতা হতে পারেন।

(১২) সেইভাবে তারা কেবল খত্‌না প্রাপ্ত হয়েছে তা নয়, বরং আমাদের আদি পিতা হযরত ইব্রাহিম আ. এর খতনা হওয়া আগে যে বিশ্বাস ছিলো সেই বিশ্বাস আদর্শও অনুসরণ করে। (১৩) কারণ দুনিয়তে উত্তরাধিকার লাভ করার ওয়াদা হযরত ইব্রাহিম আ. ও তাঁর বংশধরদের কাছে শরিয়তের মাধ্যমে আসেনি বরং ইমানের ধার্মিকতার মাধ্যমে এসেছিলো। (১৪) যদি শরিয়ত পালনের দ্বারা উত্তরাধিকার লাভ করা যায়, তাহলে ইমান তো অকেজো হয়ে পড়লো এবং ওয়াদারও কোনো মূল্য রইলো না।

(১৫) কারণ শরিয়ত বয়ে আনে শাস্তি ও ক্রোধ; কিন্তু যেখানে শরিয়ত নেই, সেখানে তা অমান্য করারও প্রশ্ন নেই। (১৬-১৭) এজন্য ওয়াদা ইমানের ওপর নির্ভর করে, যেনো ওয়াদা অনুগ্রহের উপর নির্ভর করে এবং হযরত ইব্রাহিম আ. এর বংশধরদের সকলের জন্যে নিশ্চিত হয়- কেবলমাত্র শরিয়তের অনুসারীদের জন্যে নয় বরং যারা হযরত ইব্রাহিম আ. এর মতো বিশ্বাসের অংশীদার তাদের জন্যও হয়।- কারণ তিনি আমাদের সবার আদি-পিতা।

যেমন লেখা আছে, “আমি তোমাকে অনেক জাতির পিতা করেছি”  - সেই আল্লাহর সামনে, যাঁর উপর তিনি বিশ্বাস করেছিলেন, যিনি মৃতদের জীবন দান করেন এবং যা অস্তিত্বহীন তা অস্তিত্বে আনেন।

(১৮) তিনি আশার বিপরিতে বিশ্বাস করেছিলেন যে তিনি “অনেক জাতির পিতা হবেন”. তাকে যা বলা হয়েছিলো তা হলো “তোমার বংশধরদের সংখ্যা অগণণীয় হবে।”  (১৯) তিনি যখন তার নিজের শরীরের কথা ভাবলেন যা ইতমধ্যেই মৃতপ্রায় (কারণ তার বয়স ১০০ বছর) তাঁ স্ত্রী বিবি সায়েরার বন্ধ্যা হওয়ার কথা ভাবলেন, তখনও তিনি বিশ্বাসে বা ইমানে দুর্বল হননি।

(২০) আল্লাহর ওয়াদার ব্যাপারে তিনি কোনো সন্দেহ পোষণ করেননি, বরং আল্লাহর প্রশংসা করতে করতে তিনি ইমানে শক্তিশালী হয়ে উঠলেন, (২১) তিনি এবিষয়ে পুরোপুরি নিশ্চিত ছিলেন যে, আল্লাহ যে ওয়াদা করেছেন তা পুরণ করতে তিনি সম্পূর্ণরূপে সক্ষম। (২২) কাজেই তাঁর ইমান বা বিশ্বাস “তার জন্য ধার্মিকতা হিসাবে গণ্য হয়েছিলো।”

(২৩) “তার জন্য গনিত বা গন্য হলো” , এই কথাগুলো কেবল তাঁর জন্য লেখা হয়নি, (২৪) বরং লেখা হয়েছে আমাদের জন্যও। যিঁনি আমাদের মালিক হযরত ইসা আ.-কে মৃতদের মধ্য থেকে জীবিত করে তুলেছেন, তাঁর ওপর আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের প্রতিও একথাটি বর্তায়,  (২৫) আমাদের গুনাহের জন্য তাঁকে মৃত্যুর হাতে তুলে দেয়া হয়েছিলো এবং আমাদেরকে ধার্মিক প্রতিপন্ন করার জন্য তাঁকে জীবিত করে তোলা হয়েছিলো।
Facebook
WhatsApp
Telegram
Email
রোমীয়: রুকু - ১

রোমীয়: রুকু – ১

১:১ আমি পৌল, হযরত ইসা মসিহের গোলাম, হাওয়ারি হওয়ার জন্য আমাকে ডাকা হয়েছে। আল্লাহর সুখবর প্রচারের জন্য আমাকে আলাদা করা ...
রোমীয়: রুকু - ২

রোমীয়: রুকু – ২

(২:১) অতএব, তুমি যে-ই হও না কেনো, তুমি যখন অন্যের বিচার করো, তখন তোমার কোনো অজুহাত নেই; কারণ অন্যের বিচারের ...
রোমীয়: রুকু - ৩

রোমীয়: রুকু – ৩

(৩:১) তাহলে একজন ইহুদির কি সুবিধা আছে? বা খত্‌না করানোর কি মূল্য আছে? (২) সবদিক দিয়েই অনেক লাভ আছে। প্রথমত ...
রোমীয়: রুকু - ৪

রোমীয়: রুকু – ৪

(৪:১) তাহলে দৈহিক সম্পর্কের দিক থেকে আমাদের পূর্বপুরুষ হযরত ইব্রাহিম আ. সম্বন্ধে আমরা কী বলবো? তিনি কী পেয়েছিলেন? (২) হযরত ...
রোমীয়: রুকু - ৫

রোমীয়: রুকু – ৫

(১) অতএব, ইমানের দ্বারা ধার্মিক বলে গণ্য হওয়ায়, আমাদের নেতা হযরত ইসা মসিহের মাধ্যমে আল্লাহর সাথে আমাদের শান্তি আছে, (২) ...
রোমীয়: রুকু - ৬

রোমীয়: রুকু – ৬

(৬:১) তাহলে আমরা কী বলবো? অনুগ্রহ যাতে উপচে পড়ে সেজন্য আমরা কি গুনাহ করতেই থাকবো? (২) কখনোই না! আমরা যারা ...
রোমীয়: রুকু - ৭

রোমীয়: রুকু – ৭

(৭:১) প্রিয় ভাই ও বোনেরা, তোমরা কি জানো না, কারণ আমি তাদের সাথে কথা বলছি, যারা শরিয়ত জানে একজন মানুষ ...
রোমীয়: রুকু - ৮

রোমীয়: রুকু – ৮

(৮:১) অতএব, যারা মসিহ ইসাকে গ্রহণ করেছে, তাদের ওপর আর কোনো শাস্তি নেই। (২) কারণ হযরত ইসা মসিহের জীবন দায়ী ...
রোমীয়: রুকু - ৯

রোমীয়: রুকু – ৯

(১) মসিহের সাথে যুক্ত থেকে আমি সত্য বলছি- আমি মিথ্যা বলছি না; আল্লাহর রুহের দ্বারা আমার বিবেক নিশ্চিত করছে যে- ...
রোমীয়: রুকু - ১০

রোমীয়: রুকু – ১০

(১) ভাই ও বোনেরা, তাদের জন্য আমার অন্তরের আকাঙ্ক্ষা ও আল্লাহর কাছে মোনাজাত এই যে, তারা যেনো নাজাত পায়।২) তাদের ...
রোমীয়: রুকু - ১১

রোমীয়: রুকু – ১১

(১) তাহলে আমার প্রশ্ন, আল্লাহ কি তাঁর লোকদেরকে পরিত্যাগ করেছেন? কখনোই না! আমি নিজে একজন ইস্রাইলীয়, হযরত ইব্রাহিম আ.র বংশধর, ...
রোমীয়: রুকু - ১২

রোমীয়: রুকু – ১২

(১) সুতরাং, ভাই ও বোনেরা, আল্লাহর অপার অনুগ্রহের জন্য, আমি তোমাদেরকে বিনীতভাবে অনুরোধ করছি, তোমরা তোমাদের শরীরকে আল্লাহর কাছে কবুল ...
রোমীয়: রুকু - ১৩

রোমীয়: রুকু – ১৩

(১৩:১) প্রত্যেক ব্যাক্তি শাসনকর্তাদের অধীনতা মেনে চলুক; কারণ এমন কোনো কর্তৃত্ব নেই, যা আল্লাহর কাছ থেকে আসে না, এবং প্রচলিত ...
রোমীয়: রুকু - ১৪

রোমীয়: রুকু – ১৪

(১৪:১) যাদের ইমান দুর্বল, তাদেরকে সাদরে গ্রহণ করো, কিন্তু অভিমত বা মতবাদ নিয়ে ঝগড়া করার জন্য নয়। (২) কেউ কেউ ...
রোমীয়: রুকু - ১৫

রোমীয়: রুকু – ১৫

(১) আমরা যারা সবল, আমাদের উচিত নিজেদের সন্তুষ্ট না করে বরং দুর্বলদের দুর্বলতাগুলো সহ্য করা। (২) আমাদের প্রত্যেকের উচিত আমাদেও ...
রোমীয়: রুকু - ১৬

রোমীয়: রুকু – ১৬

(১) আমি তোমাদের কাছে আমাদের বোন ফৈবির প্রশংসা করছি, তিনি কিংক্রিয়ার ইমানদার দলের একজন খাদেম, (২) তাই আল্লাহর দরবেশদের যেভাবে ...