কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ১০

75977
Total
Visitors

১আমি তোমাদের সত্যি সত্যিই বলছি, যে কেউ দরজা দিয়ে না ঢুকে অন্য উপায়ে ভেড়ার খোঁয়াড়ে ঢোকে, সে চোর ও ডাকাত। ২যে দরজা দিয়ে ঢোকে, সে হচ্ছে ভেড়ার রাখাল। ৩দারোয়ান তাকে দরজা খুলে দেয় এবং ভেড়াগুলো তার আওয়াজ চেনে। সে তার নিজের ভেড়াগুলোকে নাম ধরে ডাকে এবং বাইরে নিয়ে যায়।

৪তার নিজের সবগুলোকে বাইরে নিয়ে যাবার পর সে তাদের আগে আগে চলে এবং ভেড়াগুলো তার পেছনে পেছনে যায়, কারণ তারা তার আওয়াজ চেনে। ৫তারা অপরিচিত কারো পেছনে যাবে না বরং তার কাছ থেকে পালিয়ে যাবে, কারণ তারা অপরিচিত লোকের আওয়াজ চেনে না।” ৬হযরত ইসা আ. দৃষ্টান্তের মাধ্যমে তাদের সাথে কথা বললেন কিন্তু তারা বুঝলেন না তিনি তাদের কী বলছেন।

৭তাই আবার তিনি তাদের বললেন, “আমি সত্যি সত্যিই তোমাদের বলছি, আমিই ভেড়ার খোঁয়াড়ের দরজা। ৮আমার আগে যারা এসেছিলো তারা সবাই ছিলো চোর ও ডাকাত কিন্তু ভেড়াগুলো তাদের কথা শোনেনি। ৯আমিই দরজা। যে আমার মধ্য দিয়ে ভেতরে আসে সে নাজাত পাবে, সে আমার মধ্য দিয়ে ভেতরে আসবে ও বাইরে যাবে এবং খাবার পাবে। ১০চোর আসে কেবল চুরি, হত্যা ও ধ্বংস করতে। আমি এসেছি যেনো তারা জীবন পায় এবং সেই জীবন উপচে পড়ে।

১১আমিই উত্তম রাখাল। উত্তম রাখাল ভেড়াগুলোর জন্য তার জীবন দেয়। ১২বেতনভোগী রাখাল ভেড়ার মালিক নয়; বাঘ আসতে দেখলে সে পালিয়ে যায় এবং বাঘ ভেড়াগুলোকে ধরে নিয়ে যায় এবং ক্ষতবিক্ষত করে। ১৩বেতনভোগী রাখাল পালিয়ে যায়, কারণ সে ভেড়াগুলোর যত্ন নেয় না।

১৪আমি উত্তম রাখাল। আমি নিজেরগুলো চিনি এবং তারা আমাকে চেনে। ১৫যেভাবে প্রতিপালক আমাকে জানেন, সেভাবে আমিও তাঁকে জানি। আমি ভেড়াগুলোর জন্য আমার জীবন দেই। ১৬আমার আরো ভেড়া আছে, যারা এই দলের মধ্যে নেই। তাদেরও আমাকে আনতে হবে এবং তারা আমার কথা শুনবে, যেনো সব মিলে একটি দল হয় এবং একজন রাখাল হয়। ১৭এজন্যই প্রতিপালক আমাকে মহব্বত করেন, কারণ আমি আমার জীবন দেই, যেনো আবার তা গ্রহণ করতে পারি। ১৮কেউ আমার কাছ থেকে তা নেয় না কিন্তু আমি নিজের ইচ্ছায় তা দেই। এটি দিয়ে দেবার ক্ষমতা এবং আবার নিয়ে নেবার ক্ষমতা আমার আছে। এই হুকুম আমি আমার প্রতিপালকের কাছ থেকে পেয়েছি।”

১৯এসব কথার জন্য ইহুদিদের মধ্যে আবার মতভেদ দেখা দিলো। ২০তাদের অনেকে বললো, “এর মধ্যে ভূত আছে এবং সে পাগল হয়ে গেছে। কেনো তার কথা শুনবো?” ২১অন্যেরা বললো, “এসব কোনো ভূতে পাওয়া মানুষের কথা নয়। কোনো ভূত কি অন্ধের চোখ খুলে দিতে পারে?”

২২সেই সময়টা ছিলো জেরুসালেমে ইদুল-তাশদিদের সময়। তখন শীতকাল ছিলো। ২৩এবং হযরত ইসা আ. বায়তুল-মোকাদ্দসের সোলায়মান নামের বারান্দায় ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন। ২৪ইহুদিরা তাঁর চারপাশে জমা হয়ে বললো, “আর কতো দিন আমাদের সন্দেহের মধ্যে রাখবেন? যদি আপনি মসিহ হন, তাহলে আমাদের সোজাসুজি বলুন।” ২৫হযরত ইসা আ. উত্তর দিলেন, “আমি তোমাদের বলেছি কিন্তু তোমরা ইমান আনোনি। আমি আমার প্রতিপালকের নামে যেসব কাজ করি, সেগুলো আমার বিষয়ে সাক্ষ্য দেয়; ২৬কিন্তু তোমরা ইমান আনো না, কারণ তোমরা পালের মধ্যে নও। ২৭আমার ভেড়াগুলো আমার কথা শোনে। আমি তাদের চিনি এবং তারা আমাকে চেনে। আমি তাদের আল্লাহর সান্নিধ্যে নিয়ে যাই, ২৮এবং তারা কখনো ধ্বংস হবে না। কেউই তাদেরকে আমার হাত থেকে কেড়ে নিতে পারবে না।

২৯আমার প্রতিপালক আমাকে যা দিয়েছেন তা সব থেকে মহান এবং কেউই তা তাঁর হাত থেকে কেড়ে নিতে পারে না। ৩০আমার প্রতিপালক এবং আমি, আমরা এক।”

৩১ইহুদিরা আবারো তাঁকে পাথর মারতে চাইলো। ৩২হযরত ইসা আ. উত্তর দিলেন, “আমি প্রতিপালকের কাছ থেকে তোমাদের অনেক ভালো কাজ দেখিয়েছি। সেগুলোর কোনটার জন্য তোমরা আমাকে পাথর মারতে চাও?” ৩৩ইহুদিরা উত্তর দিলো, “ভালো কাজের জন্য নয়, বরং তোমার কুফরির জন্যই আমরা তোমাকে পাথর মারতে যাচ্ছি। তুমি একজন সাধারণ মানুষ হয়ে নিজেকে আল্লাহর সমান করে তুলছো।”

৩৪হযরত ইসা আ. উত্তর দিলেন, “তোমাদের কিতাবে কি একথা লেখা নেই যে, ‘আমি বলছি, তোমরা আল্লাহ?’ ৩৫আল্লাহর কালাম যাদের কাছে এসেছিলো, তাদের যদি ‘আল্লাহ’ বলা হয়, তাহলে পূর্বের কিতাব তো বাদ দেয়া যায় না। ৩৬প্রতিপালক যাকে পবিত্র করেছেন এবং এই দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন, তিনি নিজেকে ‘আমিই আল্লাহর একান্ত প্রিয় মনোনীতজন’ বলায় তোমরা কেনো বলছো তিনি কুফরি করছেন?

৩৭যদি আমি আমার প্রতিপালকের কাজ না করি, তাহলে আমার ওপর ইমান এনো না। ৩৮কিন্তু যদি আমি সেগুলো করি, আমার ওপর ইমান না আনলেও কাজগুলোর ওপর ইমান আনো, যেনো জানতে ও বুঝতে পারো যে, প্রতিপালক আমার মধ্যে আছেন এবং আমি প্রতিপালকের মধ্যে আছি।”

৩৯তারা আবারো তাঁকে গ্রেফতার করতে চেষ্টা করলো কিন্তু তিনি তাদের হাত থেকে বেরিয়ে চলে গেলেন। ৪০আবার তিনি জর্দান পার হয়ে যেখানে হযরত ইয়াহিয়া আ. বায়াত দিতেন, সেখানে চলে গেলেন এবং সেখানেই থাকলেন। ৪১অনেকে তাঁর কাছে এলো এবং বলতে লাগলো, “হযরত ইয়াহিয়া আ. কোনো মোজেজা দেখাননি কিন্তু এই লোক সম্পর্কে তিনি যা যা বলেছিলেন তার সবই সত্য।” ৪২এবং সেখানে অনেকে তাঁর ওপর ইমান আনলো।

Facebook
WhatsApp
Telegram
Email
কালিমাতুল্লাহ: রুকু - ১

কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ১

১-৫শুরু থেকেই আল্লাহ আছেন। আল্লাহর কালাম তাঁর নিজের মধ্যেই ছিলো, এই কালামই হলো আল্লাহর কথা। আল্লাহ্ তাঁর কথা দ্বারাই সব ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু - ২

কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ২

১তৃতীয় দিনে গালিলের কান্না গ্রামে একটি বিয়ের অনুষ্ঠান ছিলো এবং হযরত ইসা আ.র মা সেখানে ছিলেন। ২হযরত ইসা আ. এবং ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু - ৩

কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ৩

১নিকদিম নামে একজন ফরিসি ছিলেন; তিনি ছিলেন ইহুদিদের একজন নেতা। ২তিনি রাতের বেলায় হযরত ইসা আ.র কাছে এলেন এবং বললেন, ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু - ৪

কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ৪

১যখন হযরত ইসা আ. বুঝতে পারলেন যে, ফরিসিরা শুনতে পেয়েছেন, “ হযরত ইসা আ. হযরত ইয়াহিয়া আ.র থেকে বেশি উম্মত ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু - ৫

কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ৫

১এরপর ইহুদিদের আরেকটি ইদের সময় হলো এবং হযরত ইসা আ. জেরুসালেমে গেলেন। ২জেরুসালেমের মেষ-দরজার কাছে একটি পুকুর ছিলো। ৩হিব্রু ভাষায় ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু - ৬

কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ৬

১অতঃপর হযরত ইসা আ. গালিল লেকের ওপারে গেলেন। একে তিবিরিয়া লেকও বলা হয়। ২বিশাল এক জনতা তাঁর পেছনে পেছনে যাচ্ছিলো, ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু - ৭

কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ৭

১এরপর হযরত ইসা আ. গালিলে চলাফেরা করছিলেন। তিনি ইহুদিয়ায় যেতে চাইলেন না, কারণ ইহুদিরা তাঁকে হত্যা করার সুযোগ খুঁজছিলো। ২এই ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু - ৮

কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ৮

১অতঃপর তারা প্রত্যেকে বাড়ি চলে গেলেন। এদিকে হযরত ইসা আ.ও জৈতুন পাহাড়ে চলে গেলেন। ২এবং খুব ভোরে উঠে তিনি আবার ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু - ৯

কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ৯

১যেতে যেতে তিনি এক জন্মান্ধকে দেখতে পেলেন। ২তাঁর সাহাবিরা তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, “হুজুর, কার গুনাহর কারণে এই লোকটি অন্ধ হয়ে ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু - ১০

কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ১০

১আমি তোমাদের সত্যি সত্যিই বলছি, যে কেউ দরজা দিয়ে না ঢুকে অন্য উপায়ে ভেড়ার খোঁয়াড়ে ঢোকে, সে চোর ও ডাকাত। ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু - ১১

কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ১১

১বেথানিয়া গ্রামের লাসার নামে এক লোকের অসুখ হয়েছিলো। মরিয়ম ও তার বোন মার্থা সেই একই গ্রামে থাকতেন। ২ইনি সেই মরিয়ম, ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু - ১২

কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ১২

১ইদুল-ফেসাখের ছয়দিন আগে হযরত ইসা আ. বেথানিয়ায় লাসারের বাড়িতে এলেন। এই লাসারকেই তিনি মৃত থেকে জীবিত করে তুলেছিলেন। ২সেখানে তারা ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু - ১৩

কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ১৩

১ইদুল-ফেসাখের আগে হযরত ইসা আ. বুঝতে পারলেন যে, তাঁর এই দুনিয়া ছেড়ে প্রতিপালকের কাছে চলে যাবার সময় হয়ে গেছে। এই ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু - ১৪

কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ১৪

১তোমরা অন্তরে অস্থির হয়ো না। আল্লাহর ওপর ইমান রাখো, আমার ওপরও ইমান রাখো। ২আমার প্রতিপালকের কাছে থাকার অনেক জায়গা আছে। ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু - ১৫

কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ১৫

১আমি প্রকৃত আঙুরগাছ এবং আমার প্রতিপালক চাষী। ২আমার যেসব ডালে ফল ধরে না, সেগুলো তিনি কেটে ফেলেন আর যেসব ডালে ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু - ১৬

কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ১৬

১আমি এসব কথা তোমাদের জানাচ্ছি, যেনো তোমরা বাধা না পাও। ২তারা তোমাদেরকে সিনাগোগ থেকে বের করে দেবে। প্রকৃতপক্ষে এমন এক ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু - ১৭

কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ১৭

১এসব কথা বলার পর হযরত ইসা আ. আকাশের দিকে তাকিয়ে বললেন, “হে আমার প্রতিপালক, সময় এসেছে, তোমার একান্ত প্রিয় মনোনীতজনকে ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু - ১৮

কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ১৮

১এসব কথা বলার পর হযরত ইসা আ. তাঁর হাওয়ারিদের নিয়ে কিদরোন উপত্যকা পার হয়ে একটি জায়গায় গেলেন। সেখানে একটি বাগান ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু - ১৯

কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ১৯

১অতঃপর পিলাত হযরত ইসা আ.কে চাবুক মারালেন। ২আর সৈন্যরা কাঁটালতা দিয়ে মুকুট বানিয়ে তাঁর মাথায় পরালো এবং তাঁকে একটি বেগুনি ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু - ২০

কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ২০

১সপ্তাহের প্রথম দিন খুব ভোরে অন্ধকার থাকতে মগ্‌দলিনি মরিয়ম কবরের কাছে এলেন এবং দেখলেন যে, কবরের মুখ থেকে পাথরটি সরিয়ে ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু - ২১

কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ২১

১এসবের পরে তিবিরিয়া লেকের পাড়ে হযরত ইসা আ. আবার তাঁর হাওয়ারিদের দেখা দিলেন। তিনি নিজেকে তাদের কাছে এভাবে দেখালেন: ২হযরত ...