১এরপর হযরত ইসা আ. গালিলে চলাফেরা করছিলেন। তিনি ইহুদিয়ায় যেতে চাইলেন না, কারণ ইহুদিরা তাঁকে হত্যা করার সুযোগ খুঁজছিলো। ২এই সময় ইহুদিদের ইদুল-খিয়াম কাছে এসে পড়েছিলো। ৩তাই তাঁর ভাইয়েরা তাঁকে বললেন, “ইহুদিয়াতে যাও, যেনো তুমি যেসব কাজ করছো তা তোমার উম্মতরাও দেখতে পায়। ৪যদি কেউ চায় মানুষ তার সম্বন্ধে জানুক, তাহলে সে গোপনে কাজ করে না। যদি তুমি এসব করো, তাহলে দুনিয়ার সামনে নিজেকে দেখাও।”
৫কারণ তাঁর ভাইয়েরাও তাঁর ওপর ইমান আনেননি। ৬হযরত ইসা আ. তাঁদের বললেন, “আমার সময় এখনো আসেনি কিন্তু তোমাদের সময় তো সব সময়ই। ৭দুনিয়া তোমাদের ঘৃণা করতে পারে না কিন্তু আমাকে ঘৃণা করে, কারণ আমি তার খারাপ কাজের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেই। ৮তোমরাই ইদে যাও, আমি এই ইদে যাচ্ছি না, কারণ আমার সময় এখনো পূর্ণ হয়নি।” ৯একথা বলে তিনি গালিলেই থেকে গেলেন। ১০কিন্তু তাঁর ভাইয়েরা ইদে চলে যাবার পর তিনিও গেলেন; প্রকাশ্যে নয় কিন্তু গোপনে গেলেন। ১১ইদের সময় ইহুদিরা তাঁর খোঁজ করছিলো এবং বলছিলো, “তিনি কোথায়?”
১২জনতার মধ্যে তাঁর সম্পর্কে অনেক মতবিরোধ ছিলো। কেউ কেউ বলছিলো যে, “তিনি একজন ভালো মানুষ,” অন্যরা বলছিলো, “না, তিনি জনতাকে ঠকাচ্ছেন।” ১৩তবুও ইহুদিদের ভয়ে কেউই খোলাখুলিভাবে কথা বলার সাহস করছিলো না। ১৪ইদের মাঝামাঝি সময়ে তিনি বায়তুল-মোকাদ্দসে গেলেন এবং শিক্ষা দিতে লাগলেন। ১৫এতে ইহুদিরা খুবই অবাক হয়ে বললো, “এই লোক এসব কীভাবে শিখলো, তাকে তো কখনো কেউ শেখায়নি?
১৬তখন হযরত ইসা আ. তাদের উত্তর দিলেন, “আমি যে-শিক্ষা দেই তা আমার নয়, বরং যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন তাঁরই। ১৭যে কেউ আল্লাহর ইচ্ছা পালন করতে চায় সে জানবে যে, এই শিক্ষা আল্লাহর কাছ থেকে এসেছে নাকি আমি নিজ থেকে বলছি। ১৮যারা নিজের থেকে কথা বলে, তারা নিজের প্রশংসা চায়; কিন্তু সেই ব্যক্তিই সত্য, যিনি তার প্রেরণকারীর প্রশংসা চান এবং তার মধ্যে কোনো মিথ্যা নেই।
১৯হযরত মুসা আ. কি তোমাদের শরিয়ত দেননি? কিন্তু তোমরা শরিয়ত পালন করো না। কেনো তোমরা আমাকে হত্যা করার সুযোগ খুঁজছো?”
২০জনতা উত্তর দিলো, “তোমার মধ্যে একটি ভূত আছে! কে তোমাকে হত্যা করতে চেষ্টা করছে?” ২১হযরত ইসা আ. তাদের উত্তর দিলেন, “আমি একটি কাজ করেছি আর তোমরা সবাই আশ্চর্য হচ্ছো। ২২হযরত মুসা আ. তোমাদের খতনা দিয়েছেন- অবশ্য তা হযরত মুসা আ.-র কাছ থেকে নয় কিন্তু পূর্বপুরুষ হযরত ইব্রাহিম আ.-র কাছ থেকে- এবং তোমরা সাব্বাতে লোকের খতনা করে থাকো। ২৩হযরত মুসা আ.-র শরিয়ত যাতে ভঙ্গ না হয়, এজন্য মানুষ যদি সাব্বাতে খতনা করায়, তাহলে আমি একজনের সমস্ত শরীর সুস্থ করেছি বলেই কি তোমরা আমার ওপর রাগ করেছো? ২৪মুখ দেখে বিচার করো না, বরং ন্যায়বিচার করো।”
২৫জেরুসালেমের কিছু লোক বলছিলো, “এই লোককেই কি তারা হত্যা করতে চেষ্টা করছে না? ২৬তিনি এখানে খোলাখুলিভাবে কথা বলছেন কিন্তু তারা তাঁকে কিছু বলছে না! তাহলে ক্ষমতাশালীরা কি আসলেই জানেন যে, ইনিই মসিহ? ২৭আমরা জানি তিনি কোথা থেকে এসেছেন; কিন্তু যখন মসিহ আসবেন, তখন কেউ জানবে না তিনি কোথা থেকে এলেন।” ২৮তখন হযরত ইসা আ. বায়তুল-মোকাদ্দসে শিক্ষা দিচ্ছিলেন এবং চিৎকার করে বললেন, “তোমরা আমাকে চেনো এবং আমি কোথা থেকে এসেছি তাও জানো। আমি নিজের ইচ্ছায় আসিনি। কিন্তু যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন, তিনি সত্য এবং তোমরা তাঁকে জানো না। ২৯আমি তাঁকে জানি, কারণ আমি তাঁর কাছ থেকে এসেছি এবং তিনি আমাকে পাঠিয়েছেন।” ৩০তখন তারা তাঁকে ধরতে চাইলো কিন্তু কেউ তাঁর গায়ে হাত দিলো না, কারণ তখনো তাঁর সময় আসেনি। ৩১তবুও জনতার মধ্যে অনেকেই তাঁর ওপর ইমান আনলো এবং বলতে লাগলো, “ইনি চিহ্ন হিসেবে যতো মোজেজা দেখিয়েছেন, মসিহ এলে কি তার থেকে বেশি করবেন?” ৩২জনতা তাঁর বিষয়ে যা যা বলছিলো, ফরিসিরা তা শুনলেন। প্রধান ইমামেরা ও ফরিসিরা তাঁকে ধরে আনার জন্য বায়তুল-মোকাদ্দসের পুলিশ পাঠালেন।
৩৩তখন হযরত ইসা আ. বললেন, “আমি আর অল্প কিছুদিন তোমাদের সাথে থাকবো। অতঃপর যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন, তাঁর কাছে চলে যাবো। ৩৪তোমরা আমার খোঁজ করবে কিন্তু পাবে না; এবং আমি যেখানে, তোমরা সেখানে আসতে পারো না।” ৩৫ইহুদিরা একে অন্যকে বললো, “এই লোক কোথায় যাবে যে, আমরা তাকে খুঁজে পাবো না? সে কি গ্রিকদের কাছে চলে যেতে চাচ্ছে এবং তাদেরকে শিক্ষা দেবে? ৩৬‘তোমরা আমার খোঁজ করবে কিন্তু পাবে না;’ এবং ‘আমি যেখানে, তোমরা সেখানে আসতে পারো না’ বলে সে কী বোঝাতে চায়?”
৩৭ইদের শেষ দিন হচ্ছে প্রধান দিন। হযরত ইসা আ. সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তিনি চিৎকার করে বললেন, “যে কেউ পিপাসিত, আমার কাছে এসো। ৩৮এবং যে আমার ওপর ইমান এনেছে সে পান করুক। পূর্বের কিতাবে যেমন লেখা আছে, ‘ইমানদারদের অন্তর থেকে জীবন-পানির নদী বইবে।’”
৩৯আল্লাহর রুহ সম্পর্কে তিনি একথা বলেছিলেন, যারা তাঁর ওপরে ইমান আনবে, তারা তাঁকে গ্রহণ করবে; হযরত ইসা আ. তখনো মহিমা পাননি বলে আল্লাহ-রুহও আসেননি। ৪০একথা শুনে ভিড়ের মধ্য থেকে কেউ কেউ বললো, “নিশ্চয়ই ইনি সেই নবি।” ৪১অন্যরা বললো, “ইনিই মসিহ।” ৪২আবার কেউ কেউ বললো, “নিশ্চয়ই মসিহ গালিল থেকে আসবেন না, তাই না? পূর্বের কিতাব কি একথা বলেনি যে, মসিহ হবেন হযরত দাউদের বংশধর এবং হযরত দাউদ আ. বৈতলেহেমের যে-শহরে থাকতেন, সেখান থেকে আসবেন?” ৪৩তাই তাঁকে নিয়ে জনতার মধ্যে বিভেদ দেখা দিলো। ৪৪তাদের কয়েকজন তাঁকে বন্দি করতে চাইলো কিন্তু কেউই তাঁর গায়ে হাত দিলো না।
৪৫তখন বায়তুল-মোকাদ্দসের পুলিশরা প্রধান ইমামদের ও ফরিসিদের কাছে ফিরে গেলো। তারা তাদের জিজ্ঞেস করলেন, “কেনো তোমরা তাকে ধরে আনোনি?” ৪৬পুলিশরা উত্তর দিলো, “এর আগে কেউ কখনো এরকম কথা বলেনি!” ৪৭তখন ফরিসিরা বললেন, “নিশ্চয়ই তোমরা তার ধোঁকায় পড়ে যাওনি, পড়েছো কি? ৪৮নেতাদের বা ফরিসিদের মধ্যে কেউ কি তার ওপর ইমান এনেছেন? ৪৯কিন্তু এই জনতা, যারা শরিয়ত জানে না, লা’নতপ্রাপ্ত।”
৫০যে-নিকদিম আগে একবার হযরত ইসা আ.র কাছে গিয়েছিলেন, তিনিও তাদের মধ্যে ছিলেন। ৫১তিনি জিজ্ঞেস করলেন, “আমাদের শরিয়ত প্রথমে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কারো বিচার করে না, করে কি?”
৫২তারা উত্তর দিলেন, “নিশ্চয়ই তুমিও গালিলের লোক নও? খোঁজ করে দেখো, গালিল থেকে কোনো নবি আসার কথা নয়।”
Facebook
WhatsApp
Telegram
Email
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ১
১-৫শুরু থেকেই আল্লাহ আছেন। আল্লাহর কালাম তাঁর নিজের মধ্যেই ছিলো, এই কালামই হলো আল্লাহর কথা। আল্লাহ্ তাঁর কথা দ্বারাই সব ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ২
১তৃতীয় দিনে গালিলের কান্না গ্রামে একটি বিয়ের অনুষ্ঠান ছিলো এবং হযরত ইসা আ.র মা সেখানে ছিলেন। ২হযরত ইসা আ. এবং ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ৩
১নিকদিম নামে একজন ফরিসি ছিলেন; তিনি ছিলেন ইহুদিদের একজন নেতা। ২তিনি রাতের বেলায় হযরত ইসা আ.র কাছে এলেন এবং বললেন, ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ৪
১যখন হযরত ইসা আ. বুঝতে পারলেন যে, ফরিসিরা শুনতে পেয়েছেন, “ হযরত ইসা আ. হযরত ইয়াহিয়া আ.র থেকে বেশি উম্মত ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ৫
১এরপর ইহুদিদের আরেকটি ইদের সময় হলো এবং হযরত ইসা আ. জেরুসালেমে গেলেন। ২জেরুসালেমের মেষ-দরজার কাছে একটি পুকুর ছিলো। ৩হিব্রু ভাষায় ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ৬
১অতঃপর হযরত ইসা আ. গালিল লেকের ওপারে গেলেন। একে তিবিরিয়া লেকও বলা হয়। ২বিশাল এক জনতা তাঁর পেছনে পেছনে যাচ্ছিলো, ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ৭
১এরপর হযরত ইসা আ. গালিলে চলাফেরা করছিলেন। তিনি ইহুদিয়ায় যেতে চাইলেন না, কারণ ইহুদিরা তাঁকে হত্যা করার সুযোগ খুঁজছিলো। ২এই ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ৮
১অতঃপর তারা প্রত্যেকে বাড়ি চলে গেলেন। এদিকে হযরত ইসা আ.ও জৈতুন পাহাড়ে চলে গেলেন। ২এবং খুব ভোরে উঠে তিনি আবার ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ৯
১যেতে যেতে তিনি এক জন্মান্ধকে দেখতে পেলেন। ২তাঁর সাহাবিরা তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, “হুজুর, কার গুনাহর কারণে এই লোকটি অন্ধ হয়ে ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ১০
১আমি তোমাদের সত্যি সত্যিই বলছি, যে কেউ দরজা দিয়ে না ঢুকে অন্য উপায়ে ভেড়ার খোঁয়াড়ে ঢোকে, সে চোর ও ডাকাত। ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ১১
১বেথানিয়া গ্রামের লাসার নামে এক লোকের অসুখ হয়েছিলো। মরিয়ম ও তার বোন মার্থা সেই একই গ্রামে থাকতেন। ২ইনি সেই মরিয়ম, ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ১২
১ইদুল-ফেসাখের ছয়দিন আগে হযরত ইসা আ. বেথানিয়ায় লাসারের বাড়িতে এলেন। এই লাসারকেই তিনি মৃত থেকে জীবিত করে তুলেছিলেন। ২সেখানে তারা ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ১৩
১ইদুল-ফেসাখের আগে হযরত ইসা আ. বুঝতে পারলেন যে, তাঁর এই দুনিয়া ছেড়ে প্রতিপালকের কাছে চলে যাবার সময় হয়ে গেছে। এই ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ১৪
১তোমরা অন্তরে অস্থির হয়ো না। আল্লাহর ওপর ইমান রাখো, আমার ওপরও ইমান রাখো। ২আমার প্রতিপালকের কাছে থাকার অনেক জায়গা আছে। ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ১৫
১আমি প্রকৃত আঙুরগাছ এবং আমার প্রতিপালক চাষী। ২আমার যেসব ডালে ফল ধরে না, সেগুলো তিনি কেটে ফেলেন আর যেসব ডালে ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ১৬
১আমি এসব কথা তোমাদের জানাচ্ছি, যেনো তোমরা বাধা না পাও। ২তারা তোমাদেরকে সিনাগোগ থেকে বের করে দেবে। প্রকৃতপক্ষে এমন এক ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ১৭
১এসব কথা বলার পর হযরত ইসা আ. আকাশের দিকে তাকিয়ে বললেন, “হে আমার প্রতিপালক, সময় এসেছে, তোমার একান্ত প্রিয় মনোনীতজনকে ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ১৮
১এসব কথা বলার পর হযরত ইসা আ. তাঁর হাওয়ারিদের নিয়ে কিদরোন উপত্যকা পার হয়ে একটি জায়গায় গেলেন। সেখানে একটি বাগান ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ১৯
১অতঃপর পিলাত হযরত ইসা আ.কে চাবুক মারালেন। ২আর সৈন্যরা কাঁটালতা দিয়ে মুকুট বানিয়ে তাঁর মাথায় পরালো এবং তাঁকে একটি বেগুনি ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ২০
১সপ্তাহের প্রথম দিন খুব ভোরে অন্ধকার থাকতে মগ্দলিনি মরিয়ম কবরের কাছে এলেন এবং দেখলেন যে, কবরের মুখ থেকে পাথরটি সরিয়ে ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ২১
১এসবের পরে তিবিরিয়া লেকের পাড়ে হযরত ইসা আ. আবার তাঁর হাওয়ারিদের দেখা দিলেন। তিনি নিজেকে তাদের কাছে এভাবে দেখালেন: ২হযরত ...