১নিকদিম নামে একজন ফরিসি ছিলেন; তিনি ছিলেন ইহুদিদের একজন নেতা। ২তিনি রাতের বেলায় হযরত ইসা আ.র কাছে এলেন এবং বললেন, “হুজুর, আমরা জানি যে, আপনি আল্লাহর কাছ থেকে আগত একজন শিক্ষক। কারণ আপনি চিহ্ন হিসেবে যে-মোজেজা দেখাচ্ছেন, আল্লাহ সাথে না থাকলে কেউ তা করতে পারে না।”
৩হযরত ইসা আ. তাকে উত্তর দিলেন, “আমি তোমাকে সত্যি সত্যিই বলছি, ওপর থেকে জন্ম না হলে কেউই আল্লাহর রাজ্য দেখতে পারে না।” ৪নিকদিম তাঁকে বললেন, “মানুষ বৃদ্ধ হলে পর কীভাবে আবার জন্ম নিতে পারে? সে কি দ্বিতীয়বার মায়ের গর্ভে গিয়ে জন্ম নিতে পারে?” ৫হযরত ইসা আ. উত্তরে বললেন, “আমি তোমাকে সত্যি সত্যিই বলছি, পানি ও রুহ থেকে জন্ম না নিলে কেউই আল্লাহর রাজ্যে ঢুকতে পারবে না। ৬যা মাংস থেকে জন্মে তা মাংস এবং যা রুহ থেকে জন্মে তা রুহ।
৭আমি তোমাকে একথা বলায় আশ্চর্য হয়ো না যে, ‘তোমাকে ওপর থেকে জন্ম নিতে হবে’। ৮বাতাস যেদিকে ইচ্ছে সেদিকে যায় এবং তুমি তার শব্দ শুনতে পাও কিন্তু জানো না তা কোথা থেকে আসে এবং কোথায় যায়। তাই যারা রুহ থেকে জন্ম নেয়, তাদেরও অমন হয়।”
৯নিকদিম তাঁকে বললেন, “এটি কীভাবে সম্ভব?” ১০হযরত ইসা আ. তাকে উত্তর দিলেন, “তুমি বনি-ইস্রাইলের শিক্ষক হয়েও এসব বোঝো না? ১১আমি তোমাকে সত্যিই বলছি, আমরা যা জানি, তাই বলি এবং যা দেখেছি, সে-বিষয়ে সাক্ষ্য দেই; তবুও তোমরা আমাদের সাক্ষ্য গ্রহণ করো না। ১২আমি যদি তোমাকে দুনিয়ার বিষয়ে বলি আর তুমি বিশ্বাস না করো,
১৩তাহলে আমি বেহেস্তের বিষয়ে বললে কীভাবে বিশ্বাস করবে? যিনি বেহেস্ত থেকে নেমে এসেছেন, সেই ইবনুল-ইনসান ছাড়া কেউই বেহেস্তে যায়নি। ১৪এবং যেভাবে মরুপ্রান্তরে মুসা সাপকে ওপরে তুলেছিলেন, সেভাবে ইবনুল-ইনসানকেও ওপরে তোলা হবে, ১৫যেনো যে তাঁর ওপর ইমান আনে, সে আল্লাহর সান্নিধ্য পায়।
১৬কারণ আল্লাহ দুনিয়াকে এতো মহব্বত করলেন যে, তাঁর একমাত্র একান্ত প্রিয় মনোনীতজনকে দিলেন, যেনো যারা তাঁর ওপর ইমান আনে, তারা ধ্বংস না হয় কিন্তু তাঁর সান্নিধ্য লাভ করে। ১৭নিশ্চয়ই দুনিয়াকে দোষী করার জন্য আল্লাহ তাঁর একান্ত প্রিয় মনোনীতজনকে পাঠাননি, বরং পাঠিয়েছেন যেনো তাঁর দ্বারা দুনিয়া নাজাত পায়। ১৮যারা তাঁর ওপর ইমান আনে তাদের দোষী করা হয় না কিন্তু যারা ইমান আনে না তারা দোষী হয়েই গেছে, কারণ তারা আল্লাহর একান্ত প্রিয় মনোনীতজনের নামে ইমান আনেনি।
১৯এটাই বিচার যে, দুনিয়াতে আলো এসেছে এবং মানুষ আলোর বদলে অন্ধকারকে ভালোবাসলো, কারণ তাদের কাজগুলো খারাপ। ২০যারা খারাপ কাজ করে, তারা আলো ঘৃণা করে এবং আলোর কাছে আসে না, যেনো তাদের কাজ প্রকাশ না পায়। ২১কিন্তু যারা যা সত্য তা করে, তারা আলোর কাছে আসে, যেনো পরিষ্কার দেখা যায় যে, তাদের কাজ আল্লাহর পছন্দের কাজ।”
২২অতঃপর হযরত ইসা আ. ও তাঁর সাহাবিরা ইহুদিয়ার গ্রামাঞ্চলে গেলেন। তিনি তাদের সাথে সেখানে কিছুদিন থাকলেন এবং তাদের বায়াত দিলেন। ২৩হযরত ইয়াহিয়া আ.ও সালিমের কাছে, ঐনোনে, বায়াত দিচ্ছিলেন, কারণ সেখানে বেশি পানি ছিলো। এবং লোকেরা আসতেই থাকলো ও বায়াত নিলো। ২৪হযরত ইয়াহিয়া আ.কে তখনো জেলে বন্দি করা হয়নি। ২৫সেখানে হযরত ইয়াহিয়া আ.র সাহাবি ও এক ইহুদির মধ্যে পাকসাফের বিষয়ে বাদানুবাদ দেখা দিলো। ২৬তারা হযরত ইয়াহিয়া আ.র কাছে এসে বললো, “হুজুর, জর্দানের ওপারে যিনি আপনার সাথে ছিলেন, যাঁর বিষয়ে আপনি সাক্ষ্য দিয়েছিলেন, তিনি এখানে বায়াত দিচ্ছেন এবং সবাই তাঁর কাছে যাচ্ছে।”
২৭হযরত ইয়াহিয়া আ. উত্তর দিলেন, “বেহেস্ত থেকে দেয়া না হলে কেউ কিছুই পেতে পারে না। ২৮তোমরা নিজেরাই আমার সাক্ষী যে, আমি বলেছি, ‘আমি মসিহ নই কিন্তু আমাকে তাঁর আগে পাঠানো হয়েছে।’ ২৯যার কনে আছে সেই তো বর। বরের বন্ধুরা বরের পক্ষে দাঁড়ায় ও তার কথা শোনে। বরের আওয়াজ পেলে তারা ভীষণভাবে আনন্দিত হয়। ৩০আর এই কারণেই আমার আনন্দ পূর্ণ হয়েছে। তাঁকে বেড়ে উঠতে হবে এবং আমাকে হ্রাস পেতে হবে।”
৩১যিনি ওপর থেকে আসেন তিনি সবার ওপরে। যে দুনিয়া থেকে আসে সে দুনিয়ার এবং দুনিয়াদারির বিষয়ে কথা বলে। যিনি বেহেস্ত থেকে আসেন তিনি সবার ওপরে। ৩২তিনি যা দেখেছেন ও শুনেছেন, সেই বিষয়েই সাক্ষ্য দেন, তবুও কেউ তাঁর সাক্ষ্য গ্রহণ করে না। ৩৩যে তাঁর সাক্ষ্য গ্রহণ করে, সে সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহই সত্য। ৩৪আল্লাহ যাঁকে পাঠিয়েছেন তিনি আল্লাহর কালাম বলেন, কারণ রুহকে তিনি মেপে দেন না। ৩৫আল্লাহ তাঁর একান্ত প্রিয় মনোনীতজনকে মহব্বত করেন এবং তিনি সবকিছুই তাঁর হাতে দিয়েছেন। ৩৬যে কেউ একান্ত প্রিয় মনোনীতজনের ওপর ইমান আনে, সে আল্লাহর সান্নিধ্য পায়; যে কেউ একান্ত প্রিয় মনোনীতজনের অবাধ্য হয়, সে জীবন পাবে না কিন্তু অবশ্যই আল্লাহর লা’নতের মধ্যে পড়বে।”
Facebook
WhatsApp
Telegram
Email
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ১
১-৫শুরু থেকেই আল্লাহ আছেন। আল্লাহর কালাম তাঁর নিজের মধ্যেই ছিলো, এই কালামই হলো আল্লাহর কথা। আল্লাহ্ তাঁর কথা দ্বারাই সব ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ২
১তৃতীয় দিনে গালিলের কান্না গ্রামে একটি বিয়ের অনুষ্ঠান ছিলো এবং হযরত ইসা আ.র মা সেখানে ছিলেন। ২হযরত ইসা আ. এবং ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ৩
১নিকদিম নামে একজন ফরিসি ছিলেন; তিনি ছিলেন ইহুদিদের একজন নেতা। ২তিনি রাতের বেলায় হযরত ইসা আ.র কাছে এলেন এবং বললেন, ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ৪
১যখন হযরত ইসা আ. বুঝতে পারলেন যে, ফরিসিরা শুনতে পেয়েছেন, “ হযরত ইসা আ. হযরত ইয়াহিয়া আ.র থেকে বেশি উম্মত ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ৫
১এরপর ইহুদিদের আরেকটি ইদের সময় হলো এবং হযরত ইসা আ. জেরুসালেমে গেলেন। ২জেরুসালেমের মেষ-দরজার কাছে একটি পুকুর ছিলো। ৩হিব্রু ভাষায় ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ৬
১অতঃপর হযরত ইসা আ. গালিল লেকের ওপারে গেলেন। একে তিবিরিয়া লেকও বলা হয়। ২বিশাল এক জনতা তাঁর পেছনে পেছনে যাচ্ছিলো, ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ৭
১এরপর হযরত ইসা আ. গালিলে চলাফেরা করছিলেন। তিনি ইহুদিয়ায় যেতে চাইলেন না, কারণ ইহুদিরা তাঁকে হত্যা করার সুযোগ খুঁজছিলো। ২এই ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ৮
১অতঃপর তারা প্রত্যেকে বাড়ি চলে গেলেন। এদিকে হযরত ইসা আ.ও জৈতুন পাহাড়ে চলে গেলেন। ২এবং খুব ভোরে উঠে তিনি আবার ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ৯
১যেতে যেতে তিনি এক জন্মান্ধকে দেখতে পেলেন। ২তাঁর সাহাবিরা তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, “হুজুর, কার গুনাহর কারণে এই লোকটি অন্ধ হয়ে ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ১০
১আমি তোমাদের সত্যি সত্যিই বলছি, যে কেউ দরজা দিয়ে না ঢুকে অন্য উপায়ে ভেড়ার খোঁয়াড়ে ঢোকে, সে চোর ও ডাকাত। ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ১১
১বেথানিয়া গ্রামের লাসার নামে এক লোকের অসুখ হয়েছিলো। মরিয়ম ও তার বোন মার্থা সেই একই গ্রামে থাকতেন। ২ইনি সেই মরিয়ম, ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ১২
১ইদুল-ফেসাখের ছয়দিন আগে হযরত ইসা আ. বেথানিয়ায় লাসারের বাড়িতে এলেন। এই লাসারকেই তিনি মৃত থেকে জীবিত করে তুলেছিলেন। ২সেখানে তারা ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ১৩
১ইদুল-ফেসাখের আগে হযরত ইসা আ. বুঝতে পারলেন যে, তাঁর এই দুনিয়া ছেড়ে প্রতিপালকের কাছে চলে যাবার সময় হয়ে গেছে। এই ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ১৪
১তোমরা অন্তরে অস্থির হয়ো না। আল্লাহর ওপর ইমান রাখো, আমার ওপরও ইমান রাখো। ২আমার প্রতিপালকের কাছে থাকার অনেক জায়গা আছে। ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ১৫
১আমি প্রকৃত আঙুরগাছ এবং আমার প্রতিপালক চাষী। ২আমার যেসব ডালে ফল ধরে না, সেগুলো তিনি কেটে ফেলেন আর যেসব ডালে ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ১৬
১আমি এসব কথা তোমাদের জানাচ্ছি, যেনো তোমরা বাধা না পাও। ২তারা তোমাদেরকে সিনাগোগ থেকে বের করে দেবে। প্রকৃতপক্ষে এমন এক ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ১৭
১এসব কথা বলার পর হযরত ইসা আ. আকাশের দিকে তাকিয়ে বললেন, “হে আমার প্রতিপালক, সময় এসেছে, তোমার একান্ত প্রিয় মনোনীতজনকে ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ১৮
১এসব কথা বলার পর হযরত ইসা আ. তাঁর হাওয়ারিদের নিয়ে কিদরোন উপত্যকা পার হয়ে একটি জায়গায় গেলেন। সেখানে একটি বাগান ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ১৯
১অতঃপর পিলাত হযরত ইসা আ.কে চাবুক মারালেন। ২আর সৈন্যরা কাঁটালতা দিয়ে মুকুট বানিয়ে তাঁর মাথায় পরালো এবং তাঁকে একটি বেগুনি ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ২০
১সপ্তাহের প্রথম দিন খুব ভোরে অন্ধকার থাকতে মগ্দলিনি মরিয়ম কবরের কাছে এলেন এবং দেখলেন যে, কবরের মুখ থেকে পাথরটি সরিয়ে ...
কালিমাতুল্লাহ: রুকু – ২১
১এসবের পরে তিবিরিয়া লেকের পাড়ে হযরত ইসা আ. আবার তাঁর হাওয়ারিদের দেখা দিলেন। তিনি নিজেকে তাদের কাছে এভাবে দেখালেন: ২হযরত ...