১“ভাইয়েরা ও পিতারা, এখন নিজের পক্ষে আমার উত্তর শুনুন।” ২তারা তাঁকে ইব্রানী ভাষায় কথা বলতে শুনে একেবারে চুপ হয়ে গেলো।
৩তখন তিনি বললেন, “আমি একজন ইহুদি। কিলিকিয়ার তার্সো শহরে আমার জন্ম। তবে এই শহরেই বড়ো হয়েছি। গমলিয়েলের পায়ের কাছে বসে আমি আমাদের পূর্বপুরুষদের শরিয়ত স¤পূর্ণভাবে শিক্ষা লাভ করেছি। আল্লাহ্ সম্বন্ধে আপনাদের মতো আমিও সমানভাবে অহংকারী। ৪যারা হযরত ইসা আ.-এর পথে চলতো, আমি তাঁদের ওপর নির্যাতন চালিয়ে হত্যা পর্যন্ত করতাম, আর পুরুষ ও স্ত্রীলোকদের ধরে জেলখানায় দিতাম।
৫মহাইমাম ও মহা-সভার বুজুর্গরা সবাই এ-ব্যাপারে আমার সাক্ষী। আমি তাদের কাছ থেকে দামেস্ক শহরের ভাইদের দেবার জন্য চিঠি নিয়ে গিয়েছিলাম। এবং ঐ ধরনের লোকদের বন্দি করে জেরুসালেমে এনে শাস্তি দেবার জন্য সেখানে যাচ্ছিলাম। ৬তখন বেলা প্রায় দুপুর। আমি দামেস্কের কাছাকাছি এলে পর হঠাৎ আসমান থেকে আমার চারদিকে একটি উজ্জ্বল আলো পড়লো। ৭আমি মাটিতে পড়ে গেলাম এবং শুনলাম, একটি কণ্ঠস্বর আমাকে বলছেন, ‘শৌল, শৌল, তুমি কেনো আমার ওপর জুলুম করছো?’
৮আমি উত্তরে বললাম, ‘মালিক, আপনি কে?’ ৯তখন তিনি আমাকে বললেন, ‘আমি নাসরতের ইসা ইবনে মারিয়াম, যাঁর ওপর তুমি জুলুম করছো।’
যারা আমার সংগে ছিলো, তারা সেই আলো দেখলো কিন্তু যিনি আমার সংগে কথা বলছিলেন, তাঁর আওয়াজ শুনতে পেলো না। ১০আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘হুজুর, আমি কী করবো?’ তিনি আমাকে বললেন, ‘ওঠো এবং দামেস্কে যাও। তোমার জন্য যা ঠিক করে রাখা হয়েছে, সেখানেই তোমাকে তা বলা হবে।’
১১আমার সঙ্গীরা হাতধরেআমাকে দামেস্কে নিয়েচললো, কারণ সেই উজ্জ্বল আলোতেআমি অন্ধ হয়েগিয়েছিলাম। ১২হযরত অননিয় র. নামে এক লোক আমার কাছে এলেন। তিনি অত্যন্ত যত্নের সংগে হযরত মুসা আ. এর শরিয়ত পালন করেন, আর সেখানকার ইহুদিরা তাঁকে খুব সম্মান করে। ১৩তিনি এসে আমার পাশে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘ভাই শৌল, তোমার দেখার শক্তি ফিরে আসুক।’ আর তখনই আমি দেখার শক্তি ফিরে পেলাম ও তাঁকে দেখলাম।
১৪তারপর তিনি বললেন, ‘আমাদের পূর্বপুরুষদের আল্লাহ্ তোমাকে বেছে নিয়েছেন, যেনো তুমি তাঁর ইচ্ছা জানতে পারো, আর সেই ন্যায়বান ব্যক্তিকে দেখতে পাও এবং তাঁর মুখের কথা শুনতে পাও। ১৫তুমি যা দেখেছো ও শুনেছো, সব মানুষের কাছে তুমি সে-সবের সাক্ষী হবে। ১৬এখন কেনো দেরি করছো? উঠে বায়াত নাও। তাঁর নামে তোমার সব গুনাহ্ ধুয়ে ফেলো।’
১৭জেরুসালেমে ফিরে এসে যখন আমি বায়তুল-মোকাদ্দসে মোনাজাত করছিলাম, তখন আমি তন্দ্রার মতো অবস্থায় পড়লাম। ১৮এবং দেখলাম যে, হযরত ইসা আ. আমাকে বলছেন- ‘তাড়াতাড়ি ওঠো। এখনই জেরুসালেম ছেড়ে চলে যাও, কারণ আমার বিষয়ে তোমার সাক্ষ্য এরা গ্রহণ করবে না।’
১৯আমি বললাম, ‘হুজুর, এই লোকেরা জানে যে, যারা তোমার ওপর ইমান আনতো, তাঁদের মারধর করে জেলে দেবার জন্য আমি প্রত্যেক সিনাগোগে যেতাম। ২০যখন তোমার সাক্ষী স্তিফানকে হত্যা করা হচ্ছিলো, তখন আমি সেখানে দাঁড়িয়ে সায়-দিচ্ছিলাম; আর যারা তাঁকে হত্যা করছিলো, তাদের কাপড়-চোপড় পাহারা দিচ্ছিলাম।’ ২১তখন তিনি আমাকে বললেন, ‘তুমি যাও, কারণ আমি তোমাকে দূরে, অইহুদিদের কাছে পাঠাবো।’”
২২এ-পর্যন্ত তারা তাঁর কথা শুনছিলো, কিন্তু এরপর তারা জোরে চিৎকার করে বলতে লাগলো, “ওকে দুনিয়া থেকে দূর করে দাও। ও বেঁচে থাকার উপযুক্ত নয়।”
২৩লোকেরা যখন চিৎকার করছিলো এবং কাপড়-চোপড় ছুঁড়ে আকাশে ধুলো ছড়াচ্ছিলো, তখন প্রধান সেনাপতি তাঁকে সেনানিবাসে নিয়ে যাবার হুকুম দিলেন। ২৪এবং কেনো লোকেরা তাঁর বিরুদ্ধে এভাবে চিৎকার করছে, তা জানার জন্য তাকে চাবুক মেরে জেরা করার হুকুম দিলেন।
২৫কিন্তু যখন ত্াকে চাবুক মারার জন্য বাঁধা হলো, তখন যে-লেফটেন্যান্ট সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন, হযরত পৌল রা. তাকে বললেন, “যাকে এখনো দোষী বলে ঠিক করা হয়নি, এমন একজন রোমীয় নাগরিককে চাবুক মারা কি আপনাদের পক্ষে আইন-সম্মত কাজ হচ্ছে?” ২৬এ-কথা শুনে সেই লেফটেন্যান্ট প্রধান সেনাপতির কাছে গিয়ে বললেন, “আপনি কী করতে যাচ্ছেন? এই লোকটি তো রোমীয় নাগরিক।”
২৭তখন প্রধান সেনাপতি পৌলের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “আমাকে বলো দেখি, তুমি কি রোমীয় নাগরিক?” তিনি বললেন, “হ্যাঁ।” ২৮প্রধান সেনাপতি বললেন, “নাগরিকত্ব পাবার জন্য আমার অনেক টাকা-পয়সা খরচ করতে হয়েছে।” পৌল বললেন, “কিন্তু আমি রোমীয় নাগরিক হয়েই জন্মেছি।”
২৯এ-কথা শুনে যারা তাঁকে জেরা করতে যাচ্ছিলো, তারা তখনই চলে গেলো। প্রধান সেনাপতি ভয় পেলেন, কারণ তিনি বুঝতে পারলেন যে, তিনি একজন রোমীয় নাগরিক এবং তিনি তাকে বেঁধে ছেন। ৩০ইহুদীরা কেনো হযরত পৌল রা.-কে দোষ দিচ্ছে, তা ঠিকভাবে জানার জন্য পরদিন প্রধান সেনাপতি পৌলের বাঁধন খুলে দিলেন এবং প্রধান ইমামদের ও মহাসভার লোকদের এক সংগে মিলিত হবার হুকুম দিলেন। তারপর তিনি হযরত পৌল রা.-কে নিয়ে এসে তাদের সামনে দাঁড় করালেন।
Facebook
WhatsApp
Telegram
Email
হাওয়ারিনামা: রুকু – ১
১,২মাননীয় থিয়ফিল, হযরত ইসা আ.কে বেহেস্তে তুলে নেবার আগ পর্যন্ত তিনি যা করেছিলেন ও শিক্ষা দিয়েছিলেন, তার সমস্তই আমি আগের ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ২
১পঞ্চাশতম দিনের ইদে যখন তারা সবাই এক জায়গায় মিলিত হলেন, ২তখন হঠাৎ আসমান থেকে জোর বাতাসের শব্দের মতো একটি শব্দ ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ৩
১এক দিন বিকেল তিনটার এবাদতের সময় হযরত সাফওয়ান রা. ও হযরত ইউহোন্না রা. বায়তুল-মোকাদ্দসে যাচ্ছিলেন। এবং জন্ম থেকেই খোঁড়া এক ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ৪
১হযরত সাফওয়ান রা. ও হযরত ইউহোন্না রা. যখন লোকদের সংগে কথা বলছিলেন, তখন ইমামেরা, বায়তুল-মোকাদ্দসের প্রধান কর্মচারী ও সদ্দুকিরা তাদের ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ৫
১আনানিয়াস নামে এক লোক ও তার স্ত্রী সাফিরা একটি সম্পত্তি বিক্রি করলো। ২তার স্ত্রীর জানা মতেই বিক্রির কিছু টাকা সে ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ৬
১ঐ দিনগুলোতে যখন উম্মতদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছিলো, তখন গ্রীকরা ইহুদিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলো যে, প্রতিদিন খাবার বিতরণের সময় তাদের বিধবাদের ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ৭
১তখন প্রধান ইমাম হযরত স্তিফান র.কে জিজ্ঞেস করলেন, “এসব কি সত্যি?”২হযরত স্তিফান র. উত্তর দিলেন, “হে আমার ভাইয়েরা ও আমার ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ৮
১ হযরত শৌল রা. তাকে হত্যার অনুমোদন দিচ্ছিলেন।সেদিন জেরুসালেমে হযরত ইসা আ. এর অনুসারীদের ওপরে ভীষণ জুলুম শুরু হলো। তাতে ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ৯
১-২এদিকে হযরত শৌল রা. হযরত ইসা মসিহের উম্মতদের হত্যা করার ভয় দেখাচ্ছিলেন।তিনি মহা-ইমামের কাছে গিয়ে দামেস্ক শহরের সিনাগোগগুলোতে দেবার জন্য ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ১০
১কৈসরিয়া শহরে কর্নেলিয়াস নামে একজন লোক ইতালিয় সৈন্যদলের লেফটেন্যান্ট ছিলেন। ২তিনি আল্লাহ্ভক্ত ছিলেন এবং তিনি ও তার পরিবারের সবাই আল্লাহর ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ১১
১অইহুদিরাও যে আল্লাহর কালামের ওপর ইমান এনেছেন, সে-কথা হাওয়ারিরা এবং সমস্ত ইহুদিয়ার ইমানদার ভাইয়েরা শুনলেন। ২এ-জন্য হযরত সাফওয়ান রা. যখন ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ১২
১সেই সময় বাদশাহ হেরোদ জুলুম করার জন্য কওমের কয়েকজনকে ধরে এনেছিলেন। ২তিনি হযরত ইউহোন্না রা.-র ভাই হযরত ইয়াকুব রা.-কে তরবারি ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ১৩
১ আন্তিয়খিয়ার অনুসারীদের মধ্যে কয়েকজন ওলি ও শিক্ষক ছিলেন। তাদের নাম হযরত বার্নবাস র., হযরত নিগের র. নামে পরিচিত সিমোন, ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ১৪
১ইকোনিয়ম শহরেও একই ঘটনা ঘটলো। সেখানে হযরত পৌল রা. ও হযরত বার্নবাস র. ইহুদিদের সিনাগোগে গিয়ে এমনভাবে কথা বললেন যে, ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ১৫
১সেই সময় ইহুদিয়া থেকে কয়েকজন লোক এলেন এবং ভাইদের এই শিক্ষা দিতে লাগলেন যে, “হযরত মুসা আ. এর শরিয়ত মতে ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ১৬
১পরে হযরত পৌল রা. দেব্রা ও লুস্ত্রা শহরে গেলেন। সেখানে হযরত তিমথীয় র. নামে একজন উম্মত থাকতেন। তাঁর মা ছিলেন ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ১৭
১হযরত পৌল রা. ও হযরত সিল র. আমফিপলি ও আপল্লো নিয়া হয়ে থিসালোনিকিতে এসে পৌঁছলেন। সেখানে ইহুদিদের একটি সিনাগোগ ছিলো। ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ১৮
১এরপর হযরত পৌল রা. এথেন্স ছেড়ে করিন্থ শহরে গেলেন। সেখানে আকুইলা নামে এক ইহুদির সংগে তার দেখা হলো, জন্মসূত্রে তিনি ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ১৯
১আপল্লো যখন করিন্থে ছিলেন, সেই সময় হযরত পৌল রা. সে-সব এলাক ঘুরে ইফিসে এলেন। ২সেখানে তিনি কয়েকজন ইমানদারের দেখা পেলেন। ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ২০
১গোলমাল থামার পর হযরত পৌল রা. ইমানদারদের ডেকে পাঠালেন। তাঁদের উৎসাহ দেবার পর তাঁদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে তিনি মেসিডোনিয়ার ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ২১
১তাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আমরা সোজা কোস দ্বীপে গেলাম। পরদিন আমরা রোডস দ্বীপে এলাম। তারপর সেখান থেকে পাতারা গেলাম। ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ২২
১“ভাইয়েরা ও পিতারা, এখন নিজের পক্ষে আমার উত্তর শুনুন।” ২তারা তাঁকে ইব্রানী ভাষায় কথা বলতে শুনে একেবারে চুপ হয়ে গেলো।৩তখন ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ২৩
১হযরত পৌল রা. সোজা মহাসভার লোকদের দিকে তাকিয়ে বললেন, “আমার ভাইয়েরা, আজ পর্যন্ত আমি আল্লাহর সামনে পরিষ্কার বিবেকে জীবন-যাপন করছি।” ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ২৪
১পাঁচদিন পরে মহাইমাম অননিয় কয়েকজন ইহুদি বুজুর্গকে ও তর্তুল্লস নামে একজন উকিলকে নিয়ে সেখানে এলেন এবং গভর্নরের কাছে হযরত পৌল ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ২৫
১ফাস্তুস সেই প্রদেশে আসার তিনদিন পর কৈসরিয়া থেকে জেরুসালেমে গেলেন। ২সেখানে প্রধান ইমামেরা ও নেতারা তার কাছে গিয়ে পৌলের বিরুদ্ধে ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ২৬
১তখন আগ্রিপ্প হযরত পৌল রা.-কে বললেন, “তোমার নিজের পক্ষে কথা বলার জন্য তোমাকে অনুমতি দেয়া গেলো।” ২তখন তিনি হাত বাড়িয়ে ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ২৭
১যখন জাহাজে করে আমাদের ইতালিতে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হলো, তখন হযরত পৌল রা. এবং আরো কয়েকজন বন্দিকে জুলিয়াস নামে সম্রাটের ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ২৮
১,২আমরা নিরাপদে কিনারে পৌঁছে জানতে পারলাম যে, দ্বীপটার নাম মাল্টা। এর অধিবাসীরা আমাদের সংগে খুব দয়া দেখালো। তখন বৃষ্টি আরম্ভ ...