হাওয়ারিনামা: রুকু – ১৮

75383
Total
Visitors

১এরপর হযরত পৌল রা. এথেন্স ছেড়ে করিন্থ শহরে গেলেন। সেখানে আকুইলা নামে এক ইহুদির সংগে তার দেখা হলো, জন্মসূত্রে তিনি ছিলেন পন্তীয়। ২মাত্র কয়েকদিন আগেই তিনি তার স্ত্রী প্রিস্কিল্লাকে নিয়ে ইতালি থেকে এসেছিলেন।

কারণ ক্লাউডিয়াস সকল ইহুদিকে রোম ছেড়ে চলে যেতে হুকুম দিয়েছিলেন। পৌলতাদের দেখতে গেলেন। ৩এবং তিনিও তাদের মতো তাঁবু তৈরির কাজ করতেন বলে তাদের সংগে থেকে কাজ করতে লাগলেন।

৪প্রত্যেক সাব্বাতে তিনি সিনাগোগে গিয়ে গ্রীক ও ইহুদিদের সংগে আলোচনা করতেন, যেনো তাদের বোঝাতে পারেন। ৫হযরত সিল র. ও হযরত তিমথীয় র. মেসিডোনিয়া থেকে আসার পর হযরত পৌল রা. কেবল আল্লাহর কালাম প্রচারে তাঁর সমস্ত সময় কাটাতে লাগলেন। ইহুদিদের কাছে তিনি এই সাক্ষ্য দিতেন যে, হযরত ইসা আ.-ই ছিলেন মসিহ।

৬কিন্তু তারা যখন তাকে বাধা দিলো ও তিরস্কার করতে লাগলো, তখন তিনি তাদের বিরুদ্ধে তার কাপড় ঝেড়ে ফেললেন এবং বললেন, “আপনাদের রক্তের দায় আপনাদের নিজেদের মাথার ওপরেই থাকুক; আমি নির্দোষ। এখন থেকে আমি অইহুদিদের কাছেই যাবো।” ৭অতঃপর তিনি সিনাগোগ ছেড়ে তিতিওস-ইওস্তোস নামে এক লোকের ঘরে চলে গেলেন। সে আল্লাহর এবাদত করতো। সিনাগোগের পাশেই ছিলো তার বাড়ি। ৮সিনাগোগের প্রধান, ক্রিসপাস ও তার বাড়ির সবাই হযরত ইসা আ.এর ওপর ইমান আনলেন। এবং করিন্থীয়দের মধ্যে অনেকেই হযরত পৌলরা কথা শুনে ইমান আনলো এবং বায়াত নিলো।

৯একদিন রাতের বেলা আল্লাহ্ দর্শনের মধ্যদিয়ে হযরত পৌল রা.-কে বললেন, “ভয় করো না। কথা বলতে থাকো। চুপ করে থেকো না, ১০কারণ আমি তোমার সংগে-সংগে আছি। তোমার ক্ষতি করার জন্য কেউই তোমাকে আক্রমণ করবে না, কারণ এই শহরে আমার অনেক লোক আছে।” ১১হযরত পৌল রা. দেড় বছর সেই শহরে থেকে লোকদের আল্লাহর কালাম শিক্ষা দিলেন।

১২কিন্তু গাল্লিয়ো যখন আখায়া প্রদেশের শাসনকর্তা ছিলেন, তখন সব ইহুদি এক হয়ে হযরত পৌল রা.-কে ধরে বিচারের জন্য আদালতে আনলো। ১৩তারা বললো, “এই লোকটা এমনভাবে আল্লাহর এবাদত করতে লোকদের উস্কে দিচ্ছে, যা শরিয়তের বিরুদ্ধে।”

১৪হযরত পৌল রা. কথা বলতে যাবেন, এমন সময় গাল্লিয়ো ইহুদিদের বললেন, “হে ইহুদিরা, এটা যদি কোনো অন্যায় বা ভীষণ কোনো দোষের ব্যাপার হতো, তাহলে তোমাদের অভিযোগ আমি শুনতাম। ১৫যেহেতু এটা বিশেষ কোনো কথার ব্যাপার, কারো নামের ব্যাপার ও তোমাদের শরিয়তের ব্যাপার, সেহেতু তোমরা নিজেরাই এর মীমাংসা করো। আমি ওসব ব্যাপারে বিচার করতে চাই না।” ১৬এবং তিনি আদালত থেকে তাদের বের করে দিলেন।

১৭তখন তারা সবাই মিলে সিনাগোগের প্রধান, সোস্থিনিকে ধরে আদালতের সামনে মারধর করলো। কিন্তু গাল্লিয়ো এর কোনো কিছু চেয়েও দেখলেন না। ১৮বেশ কিছুদিন এখানে কাটানোর পর হযরত পৌল রা. ইমানদার ভাইদের কাছ থেকে বিদায় নিলেন। এবং আকুইলা ও প্রিস্কিল্লাকে সংগে নিয়ে সমুদ্র পথে সিরিয়ায় গেলেন। তিনি একটি মানত করেছিলেন বলে কিংক্রিয়া বন্দরে তার মাথার চুল কেটে ফেললেন ।

১৯ইফিসে পৌঁছে তিনি তাঁদের সংগ ছাড়লেন। কিন্তু প্রথমে তিনি সিনাগোগে গেলেন এবং ইহুদিদের সংগে আলোচনা করলেন। ২০যখন তাঁরা তাকে তাদের সংগে কিছুদিন থাকতে বললো, তখন তিনি রাজি হলেন না। ২১কিন্তু সেখান থেকে চলে যাবার সময় তিনি বললেন, “ইনশা-আল্লাহ্, আমি আবার ফিরে আসবো।” তারপর তিনি ইফিস থেকে জাহাজে করে রওনা হলেন।

২২যখন তিনি কৈসরিয়ায় পৌঁছলেন, তখন জাহাজ থেকে নেমে জেরুসালেমে গেলেন। কওমের লোকদের সালাম জানাবার পর তিনি আন্তিয়খিয়াতে চলে গেলেন। ২৩সেখানে কিছুদিন কাটানোর পর তিনি সেখান থেকে যাত্রা করলেন এবং গালাতিয়া ও ফরুগিয়া এলাকার এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ঘুরে-ঘুরে ইমানদারদের সবাইকে উৎসাহ দিয়ে শক্তিশালী করে তুললেন।

২৪এর মধ্যে আপল্লো নামে একজন ইহুদি ইফিসে এলেন। আলেকজান্দ্রিয়া ছিলো তার জন্মস্থান। তিনি একজন সুবক্তা ছিলেন, এবং আল্লাহর কালাম খুব ভালোভাবে জানতেন। ২৫আল্লাহর পথের বিষয়ে তাকে বলা হয়েছিলো।

তিনি আল্লাহর রুহের প্রবল উৎসাহে কথা বলতেন এবং হযরত ইসা আ. এর বিষয়ে সঠিক শিক্ষা দিতেন। যদিও তিনি কেবল হযরত ইয়াহিয়া আ. এর বায়াতের কথা জানতেন।

২৬তিনি খুব সাহসের সংগে সিনাগোগে কথা বলতে আরম্ভ করলেন। কিন্তু যখন প্রিস্কিল্লা ও আকুইলা তাঁর কথা শুনলেন, তখন তাঁকে এক পাশে নিয়ে গিয়ে আল্লাহর পথের বিষয়ে সঠিকভাবে জানালেন। ২৭যখন তিনি আখায়াতে যেতে চাইলেন, তখন ইমানদার ভাইয়েরা তাঁকে উৎসাহ দিলেন এবং তাঁকে গ্রহণ করার জন্য সেখানকার ইমানদার ভাইদের কাছে চিঠি লিখলেন। সেখানে পৌঁছে তিনি আল্লাহর রহমতে যারা ইমান এনেছিলো, তাঁদের খুব সাহায্য করলেন। ২৮তিনি খুব জোরালো যুক্তি দিয়ে প্রকাশ্যে ইহুদিদের হারিয়ে দিলেন এবং পাক-কিতাবের মধ্য থেকে প্রমাণ করলেন যে, হযরত ইসা আ.-ই মসিহ।

Facebook
WhatsApp
Telegram
Email
হাওয়ারিনামা: রুকু - ১

হাওয়ারিনামা: রুকু – ১

১,২মাননীয় থিয়ফিল, হযরত ইসা আ.কে বেহেস্তে তুলে নেবার আগ পর্যন্ত তিনি যা করেছিলেন ও শিক্ষা দিয়েছিলেন, তার সমস্তই আমি আগের ...
হাওয়ারিনামা: রুকু - ২

হাওয়ারিনামা: রুকু – ২

১পঞ্চাশতম দিনের ইদে যখন তারা সবাই এক জায়গায় মিলিত হলেন, ২তখন হঠাৎ আসমান থেকে জোর বাতাসের শব্দের মতো একটি শব্দ ...
হাওয়ারিনামা: রুকু - ৩

হাওয়ারিনামা: রুকু – ৩

১এক দিন বিকেল তিনটার এবাদতের সময় হযরত সাফওয়ান রা. ও হযরত ইউহোন্না রা. বায়তুল-মোকাদ্দসে যাচ্ছিলেন। এবং জন্ম থেকেই খোঁড়া এক ...
হাওয়ারিনামা: রুকু - ৪

হাওয়ারিনামা: রুকু – ৪

১হযরত সাফওয়ান রা. ও হযরত ইউহোন্না রা. যখন লোকদের সংগে কথা বলছিলেন, তখন ইমামেরা, বায়তুল-মোকাদ্দসের প্রধান কর্মচারী ও সদ্দুকিরা তাদের ...
হাওয়ারিনামা: রুকু - ৫

হাওয়ারিনামা: রুকু – ৫

১আনানিয়াস নামে এক লোক ও তার স্ত্রী সাফিরা একটি সম্পত্তি বিক্রি করলো। ২তার স্ত্রীর জানা মতেই বিক্রির কিছু টাকা সে ...
হাওয়ারিনামা: রুকু - ৬

হাওয়ারিনামা: রুকু – ৬

১ঐ দিনগুলোতে যখন উম্মতদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছিলো, তখন গ্রীকরা ইহুদিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলো যে, প্রতিদিন খাবার বিতরণের সময় তাদের বিধবাদের ...
হাওয়ারিনামা: রুকু - ৭

হাওয়ারিনামা: রুকু – ৭

১তখন প্রধান ইমাম হযরত স্তিফান র.কে জিজ্ঞেস করলেন, “এসব কি সত্যি?”২হযরত স্তিফান র. উত্তর দিলেন, “হে আমার ভাইয়েরা ও আমার ...
হাওয়ারিনামা: রুকু - ৮

হাওয়ারিনামা: রুকু – ৮

১ হযরত শৌল রা. তাকে হত্যার অনুমোদন দিচ্ছিলেন।সেদিন জেরুসালেমে হযরত ইসা আ. এর অনুসারীদের ওপরে ভীষণ জুলুম শুরু হলো। তাতে ...
হাওয়ারিনামা: রুকু - ৯

হাওয়ারিনামা: রুকু – ৯

১-২এদিকে হযরত শৌল রা. হযরত ইসা মসিহের উম্মতদের হত্যা করার ভয় দেখাচ্ছিলেন।তিনি মহা-ইমামের কাছে গিয়ে দামেস্ক শহরের সিনাগোগগুলোতে দেবার জন্য ...
হাওয়ারিনামা: রুকু - ১০

হাওয়ারিনামা: রুকু – ১০

১কৈসরিয়া শহরে কর্নেলিয়াস নামে একজন লোক ইতালিয় সৈন্যদলের লেফটেন্যান্ট ছিলেন। ২তিনি আল্লাহ্ভক্ত ছিলেন এবং তিনি ও তার পরিবারের সবাই আল্লাহর ...
হাওয়ারিনামা: রুকু - ১১

হাওয়ারিনামা: রুকু – ১১

১অইহুদিরাও যে আল্লাহর কালামের ওপর ইমান এনেছেন, সে-কথা হাওয়ারিরা এবং সমস্ত ইহুদিয়ার ইমানদার ভাইয়েরা শুনলেন। ২এ-জন্য হযরত সাফওয়ান রা. যখন ...
হাওয়ারিনামা: রুকু - ১২

হাওয়ারিনামা: রুকু – ১২

১সেই সময় বাদশাহ হেরোদ জুলুম করার জন্য কওমের কয়েকজনকে ধরে এনেছিলেন। ২তিনি হযরত ইউহোন্না রা.-র ভাই হযরত ইয়াকুব রা.-কে তরবারি ...
হাওয়ারিনামা: রুকু - ১৩

হাওয়ারিনামা: রুকু – ১৩

১ আন্তিয়খিয়ার অনুসারীদের মধ্যে কয়েকজন ওলি ও শিক্ষক ছিলেন। তাদের নাম হযরত বার্নবাস র., হযরত নিগের র. নামে পরিচিত সিমোন, ...
হাওয়ারিনামা: রুকু - ১৪

হাওয়ারিনামা: রুকু – ১৪

১ইকোনিয়ম শহরেও একই ঘটনা ঘটলো। সেখানে হযরত পৌল রা. ও হযরত বার্নবাস র. ইহুদিদের সিনাগোগে গিয়ে এমনভাবে কথা বললেন যে, ...
হাওয়ারিনামা: রুকু - ১৫

হাওয়ারিনামা: রুকু – ১৫

১সেই সময় ইহুদিয়া থেকে কয়েকজন লোক এলেন এবং ভাইদের এই শিক্ষা দিতে লাগলেন যে, “হযরত মুসা আ. এর শরিয়ত মতে ...
হাওয়ারিনামা: রুকু - ১৬

হাওয়ারিনামা: রুকু – ১৬

১পরে হযরত পৌল রা. দেব্রা ও লুস্ত্রা শহরে গেলেন। সেখানে হযরত তিমথীয় র. নামে একজন উম্মত থাকতেন। তাঁর মা ছিলেন ...
হাওয়ারিনামা: রুকু - ১৭

হাওয়ারিনামা: রুকু – ১৭

১হযরত পৌল রা. ও হযরত সিল র. আমফিপলি ও আপল্লো নিয়া হয়ে থিসালোনিকিতে এসে পৌঁছলেন। সেখানে ইহুদিদের একটি সিনাগোগ ছিলো। ...
হাওয়ারিনামা: রুকু - ১৮

হাওয়ারিনামা: রুকু – ১৮

১এরপর হযরত পৌল রা. এথেন্স ছেড়ে করিন্থ শহরে গেলেন। সেখানে আকুইলা নামে এক ইহুদির সংগে তার দেখা হলো, জন্মসূত্রে তিনি ...
হাওয়ারিনামা: রুকু - ১৯

হাওয়ারিনামা: রুকু – ১৯

১আপল্লো যখন করিন্থে ছিলেন, সেই সময় হযরত পৌল রা. সে-সব এলাক ঘুরে ইফিসে এলেন। ২সেখানে তিনি কয়েকজন ইমানদারের দেখা পেলেন। ...
হাওয়ারিনামা: রুকু - ২০

হাওয়ারিনামা: রুকু – ২০

১গোলমাল থামার পর হযরত পৌল রা. ইমানদারদের ডেকে পাঠালেন। তাঁদের উৎসাহ দেবার পর তাঁদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে তিনি মেসিডোনিয়ার ...
হাওয়ারিনামা: রুকু - ২১

হাওয়ারিনামা: রুকু – ২১

১তাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আমরা সোজা কোস দ্বীপে গেলাম। পরদিন আমরা রোডস দ্বীপে এলাম। তারপর সেখান থেকে পাতারা গেলাম। ...
হাওয়ারিনামা: রুকু - ২২

হাওয়ারিনামা: রুকু – ২২

১“ভাইয়েরা ও পিতারা, এখন নিজের পক্ষে আমার উত্তর শুনুন।” ২তারা তাঁকে ইব্রানী ভাষায় কথা বলতে শুনে একেবারে চুপ হয়ে গেলো।৩তখন ...
হাওয়ারিনামা: রুকু - ২৩

হাওয়ারিনামা: রুকু – ২৩

১হযরত পৌল রা. সোজা মহাসভার লোকদের দিকে তাকিয়ে বললেন, “আমার ভাইয়েরা, আজ পর্যন্ত আমি আল্লাহর সামনে পরিষ্কার বিবেকে জীবন-যাপন করছি।” ...
হাওয়ারিনামা: রুকু - ২৪

হাওয়ারিনামা: রুকু – ২৪

১পাঁচদিন পরে মহাইমাম অননিয় কয়েকজন ইহুদি বুজুর্গকে ও তর্তুল্লস নামে একজন উকিলকে নিয়ে সেখানে এলেন এবং গভর্নরের কাছে হযরত পৌল ...
হাওয়ারিনামা: রুকু - ২৫

হাওয়ারিনামা: রুকু – ২৫

১ফাস্তুস সেই প্রদেশে আসার তিনদিন পর কৈসরিয়া থেকে জেরুসালেমে গেলেন। ২সেখানে প্রধান ইমামেরা ও নেতারা তার কাছে গিয়ে পৌলের বিরুদ্ধে ...
হাওয়ারিনামা: রুকু - ২৬

হাওয়ারিনামা: রুকু – ২৬

১তখন আগ্রিপ্প হযরত পৌল রা.-কে বললেন, “তোমার নিজের পক্ষে কথা বলার জন্য তোমাকে অনুমতি দেয়া গেলো।” ২তখন তিনি হাত বাড়িয়ে ...
হাওয়ারিনামা: রুকু - ২৭

হাওয়ারিনামা: রুকু – ২৭

১যখন জাহাজে করে আমাদের ইতালিতে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হলো, তখন হযরত পৌল রা. এবং আরো কয়েকজন বন্দিকে জুলিয়াস নামে সম্রাটের ...
হাওয়ারিনামা: রুকু - ২৮

হাওয়ারিনামা: রুকু – ২৮

১,২আমরা নিরাপদে কিনারে পৌঁছে জানতে পারলাম যে, দ্বীপটার নাম মাল্টা। এর অধিবাসীরা আমাদের সংগে খুব দয়া দেখালো। তখন বৃষ্টি আরম্ভ ...