১হযরত পৌল রা. ও হযরত সিল র. আমফিপলি ও আপল্লো নিয়া হয়ে থিসালোনিকিতে এসে পৌঁছলেন। সেখানে ইহুদিদের একটি সিনাগোগ ছিলো। ২হযরত পৌল রা. তার নিয়ম মতো সেখানে গেলেন এবং পরপর তিন সাব্বাতে তাদের সংগে কালাম থেকে আলোচনা করলেন।
৩তিনি বোঝালেন এবং প্রমাণ করলেন যে, মসিহের কষ্টভোগ করার এবং মৃত থেকে জীবিত হয়ে ওঠার দরকার ছিলো। তিনি বললেন, “যে- হযরত ইসা আ. এর কথা আমি আপনাদের বলছি, তিনিই হলেন মসিহ।” ৪তাদের মধ্যে কয়েকজন ইমান এনে হযরত পৌল রা. ও হযরত সিল র. সংগে যোগ দিলেন। এছাড়া আল্লাহ্ভক্ত অনেক গ্রীক এবং অনেক বিশেষ-বিশেষ মহিলারাও তাঁদের সংগে যোগ দিলেন।
৫কিন্তু ইহুদিরা হিংসায় জ্বলে উঠলো। তারা বাজার থেকে কিছু খারাপ লোক যোগাড় করে এনে ভিড় জমালো ও শহরেরমধ্যে গোলমাল বাধিয়ে দিলো। তাঁরা হযরত পৌল রা. ও হযরত সিল র. খোঁজ করতে লাগলো, যেনো লোকদের কাছে তাঁদেরকে আনতে পারে। ৬তারা যাসোনের বাড়ি আক্রমণ করলো। কিন্তু সেখানে তাঁদের না-পেয়ে যাসোন ও কয়েকজন ইমানদার ভাইকে টেনে নিয়ে শহর-প্রশাসকদের কাছে গেলো এবং চিৎকার করে বলতে লাগলো, “যে-লোকেরা দুনিয়া তোলপাড় করে তুলেছে, তারা এখন এখানেও এসেছে। ৭এবং যাসোন তার নিজের বাড়িতে ওদের জায়গা দিয়েছে। ওরা সবাই সম্রাটের হুকুম অমান্য করে বলছে যে, অন্য একজন বাদশাহ আছেন, তাঁর নাম হযরত ইসা আ.।” ৮এসব শুনে শহর-প্রশাসকরা অস্থির হলেন।
৯কিন্তু যাসোন ও অন্যেরা জামিনের টাকা দিলে তারা তাদের ছেড়ে দিলেন। ১০সেইরাতেই ইমানদারেরা হযরত পৌল রা. ও হযরত সিল র.-কে বিরয়াতে পাঠিয়ে দিলেন। ১১সেখানে পৌঁছে তাঁরা ইহুদিদের সিনাগোগে গেলেন। থিসালোনিকির ইহুদিদের চেয়ে এখানকার ইহুদিদের মন অনেক খোলা ছিলো। তারা খুব আগ্রহের সংগে আল্লাহর কালাম শুনলো এবং তা সত্যি কি-না দেখার জন্য প্রত্যেক দিন কিতাবের মধ্যে খোঁজ করতে লাগলো। ১২ফলে তাদের অনেকেই ইমান আনলো। এছাড়া গ্রীকদের অনেক সম্ভ্রান্ত মহিলা এবং পুরুষও ইমান আনলেন।
১৩কিন্তু থিসালোনিকির ইহুদিরা যখন শুনতে পেলো যে, হযরত পৌল রা. বিরয়াতে আল্লাহর কালাম প্রচার করছেন, তখন তারা সেখানেও গেলো এবং লোকদের উত্তেজিত করে গোলমাল বাধিয়ে দিলো। ১৪ইমানদার ভাইয়েরা তখনই হযরত পৌল রা.কে সাগরের ধারে পাঠিয়ে দিলেন, কিন্তু হযরত সিল র. আর হযরত তিমথীয় র. সেখানেই থাকলেন।
১৫যে-লোকেরা হযরত পৌল রা.কে সংগে করে নিয়ে যাচ্ছিলেন, তাঁরা তাঁকে এথেন্স শহরে নিয়ে এলেন। এবং সেই লোকেরা হযরত সিল র. ও হযরত তিমথীয় র. জন্য এই হুকুম নিয়ে ফিরে গেলেন যে, তারা যেনো যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হযরত পৌল রা. সংগে যোগ দেন।
১৬যখন হযরত পৌল রা. এথেন্স শহরে তাঁদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন, তখন সেই শহর প্রতিমায় পূর্ণ দেখে তাঁর মন খুব খারাপ হয়ে গেলো। ১৭তাই তিনি সিনাগোগে গিয়ে ইহুদিদের ও আল্লাহ্ভক্ত গ্রীকদের সংগে আলোচনা করতে লাগলেন। এছাড়া যারা বাজারে আসতো, তাদের সংগেও তিনি দিনের পর দিন আলোচনা করতে থাকলেন।
১৮তখন কয়েকজন এপিকিউরীয় ও স্টোয়িকীয় দার্শনিকও তার সংগে তর্ক জুড়ে দিলেন। কেউ-কেউ বললেন, “এই বাচালটা কী বলতে চাচ্ছে?” আবার অন্যেরা বললেন, “মনে হয় উনি বিদেশি দেবদেবীর প্রচারক।” কারণ তিনি হযরত ইসা আ. ও পুনরুত্থান সম্পর্কে সুখবর প্রচার করছিলেন। ১৯তাই তাঁরা তাকে এরিয়োপেগসের সভার সামনে উপস্থিত করলো এবং জিজ্ঞেস করলো, “যে নতুন বিষয় আপনি প্রচার করছেন, সেটা কী, তা কি আমরা জানতে পারি? ২০কারণ এগুলো আমাদের কাছে অদ্ভুত শুনাচ্ছে। তাই আমরা এসবের অর্থ জানতে চাই।”
২১এথেন্সের সব লোক এবং সেই শহরে বসবাসকারী বিদেশিরা কেবল নতুন-নতুন বিষয় নিয়ে কথা বলে ও শুনে সময় কাটাতো। ২২তখন হযরত পৌল রা. এরিয়োপেগসের সামনে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, “এথেন্সের লোকেরা শুনুন, আমি দেখতে পাচ্ছি যে, আপনারা সবদিক থেকেই অসম্ভব ধর্মভীরু। ২৩কারণ আমি শহরে ঘুরে বেড়ানোর সময় আপনাদের উপাসনার জিনিসগুলো যখন দেখছিলাম, তখন এমন একটি বেদি দেখতে পেলাম, যার ওপরে লেখা আছে, ‘অজানা দেবতার উদ্দেশে।’ আপনারা না-জেনে যার উপাসনা করছেন, তাঁর সম্বন্ধেই আমি আপনাদের কাছে প্রচার করছি।
২৪আল্লাহ, যিনি এই দুনিয়া ও তার মধ্যে যা আছে, তার সবকিছু সৃষ্টি করেছেন, তিনিই আসমান ও জমিনের মালিক। তিনি মানুষের হাতে তৈরি কোনো ঘরে বাস করেন না।
মানুষের হাত থেকে সেবা গ্রহণ করারও তাঁর দরকার নেই। ২৫তাঁর কোনো অভাব নেই। কারণ তিনিই সব মানুষকে জীবন, মৃত্যু এবং সবকিছু দান করেন ।
২৬তিনি একজন মানুষ থেকে সমস্ত জাতির লোকদের সৃষ্টি করেছেন, যেনো তারা সারা দুনিয়া অধিকার করে। তারা কখন, কোথায় বাস করবে এবং কতো দিন বাঁচবে, তাও তিনি ঠিক করে দিয়েছেন, ২৭যেনো তারা আল্লাহর খোঁজ করে এবং হাতড়াতে-হাতড়াতে তাঁকে পেয়ে যায়। যদিও তিনি আমাদের কারো কাছ থেকে দূরে নন। ২৮তাঁর মধ্যেই আমরা জীবন কাটাই ও চলাফেরা করি এবং বেঁচেও আছি। আপনাদের কয়েকজন কবিও বলেছেন, ‘কারণ আমরাও তাঁর সন্তান।’
২৯তাহলে আমরা যখন আল্লাহর সন্তান, তখন আল্লাহকে মানুষের হাত ও চিন্তা শক্তি দিয়ে তৈরি সোনা ও রুপা বা পাথরের মূর্র্তি মনে করা আমাদের উচিত নয়। ৩০আগেকার দিনে মানুষের অবহেলাকে আল্লাহ্ দেখেও দেখেননি। এখন তিনি সব জায়গার সব লোককে তওবা করার হুকুম দিচ্ছেন। ৩১কারণ তিনি একটি দিন ঠিক করেছেন, যে-দিনে তাঁর নিযুক্ত লোকের দ্বারা তিনি ন্যায়ভাবে মানুষের বিচার করবেন। এবং তিনি তাঁকে মৃত থেকে জীবিত করে তুলে সবার কাছে এর নিশ্চয়তা দিয়েছেন।”
৩২যখন তারা মৃতদের পুনরুত্থানের কথা শুনলো, তখন কয়েকজন মুখ বাঁকালো। কিন্তু অন্যেরা বললো, “এ-বিষয়ে আমরা আবার আপনার কথা শুনবো।” ৩৩তখন হযরত পৌল রা. তাদের ছেড়ে চলে গেলেন। ৩৪কিন্তু কয়েকজন লোক হযরত পৌল রা. সংগে যোগ দিলো এবং ইমান আনলো। তাদের মধ্যে দিয়নুসিয় নামে এরিয়োপেগসের সভার এক সদস্য, দামারিস নামের একজন মহিলা এবং তাদের সংগে আরো কয়েকজন ছিলেন।
Facebook
WhatsApp
Telegram
Email
হাওয়ারিনামা: রুকু – ১
১,২মাননীয় থিয়ফিল, হযরত ইসা আ.কে বেহেস্তে তুলে নেবার আগ পর্যন্ত তিনি যা করেছিলেন ও শিক্ষা দিয়েছিলেন, তার সমস্তই আমি আগের ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ২
১পঞ্চাশতম দিনের ইদে যখন তারা সবাই এক জায়গায় মিলিত হলেন, ২তখন হঠাৎ আসমান থেকে জোর বাতাসের শব্দের মতো একটি শব্দ ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ৩
১এক দিন বিকেল তিনটার এবাদতের সময় হযরত সাফওয়ান রা. ও হযরত ইউহোন্না রা. বায়তুল-মোকাদ্দসে যাচ্ছিলেন। এবং জন্ম থেকেই খোঁড়া এক ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ৪
১হযরত সাফওয়ান রা. ও হযরত ইউহোন্না রা. যখন লোকদের সংগে কথা বলছিলেন, তখন ইমামেরা, বায়তুল-মোকাদ্দসের প্রধান কর্মচারী ও সদ্দুকিরা তাদের ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ৫
১আনানিয়াস নামে এক লোক ও তার স্ত্রী সাফিরা একটি সম্পত্তি বিক্রি করলো। ২তার স্ত্রীর জানা মতেই বিক্রির কিছু টাকা সে ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ৬
১ঐ দিনগুলোতে যখন উম্মতদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছিলো, তখন গ্রীকরা ইহুদিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলো যে, প্রতিদিন খাবার বিতরণের সময় তাদের বিধবাদের ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ৭
১তখন প্রধান ইমাম হযরত স্তিফান র.কে জিজ্ঞেস করলেন, “এসব কি সত্যি?”২হযরত স্তিফান র. উত্তর দিলেন, “হে আমার ভাইয়েরা ও আমার ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ৮
১ হযরত শৌল রা. তাকে হত্যার অনুমোদন দিচ্ছিলেন।সেদিন জেরুসালেমে হযরত ইসা আ. এর অনুসারীদের ওপরে ভীষণ জুলুম শুরু হলো। তাতে ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ৯
১-২এদিকে হযরত শৌল রা. হযরত ইসা মসিহের উম্মতদের হত্যা করার ভয় দেখাচ্ছিলেন।তিনি মহা-ইমামের কাছে গিয়ে দামেস্ক শহরের সিনাগোগগুলোতে দেবার জন্য ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ১০
১কৈসরিয়া শহরে কর্নেলিয়াস নামে একজন লোক ইতালিয় সৈন্যদলের লেফটেন্যান্ট ছিলেন। ২তিনি আল্লাহ্ভক্ত ছিলেন এবং তিনি ও তার পরিবারের সবাই আল্লাহর ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ১১
১অইহুদিরাও যে আল্লাহর কালামের ওপর ইমান এনেছেন, সে-কথা হাওয়ারিরা এবং সমস্ত ইহুদিয়ার ইমানদার ভাইয়েরা শুনলেন। ২এ-জন্য হযরত সাফওয়ান রা. যখন ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ১২
১সেই সময় বাদশাহ হেরোদ জুলুম করার জন্য কওমের কয়েকজনকে ধরে এনেছিলেন। ২তিনি হযরত ইউহোন্না রা.-র ভাই হযরত ইয়াকুব রা.-কে তরবারি ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ১৩
১ আন্তিয়খিয়ার অনুসারীদের মধ্যে কয়েকজন ওলি ও শিক্ষক ছিলেন। তাদের নাম হযরত বার্নবাস র., হযরত নিগের র. নামে পরিচিত সিমোন, ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ১৪
১ইকোনিয়ম শহরেও একই ঘটনা ঘটলো। সেখানে হযরত পৌল রা. ও হযরত বার্নবাস র. ইহুদিদের সিনাগোগে গিয়ে এমনভাবে কথা বললেন যে, ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ১৫
১সেই সময় ইহুদিয়া থেকে কয়েকজন লোক এলেন এবং ভাইদের এই শিক্ষা দিতে লাগলেন যে, “হযরত মুসা আ. এর শরিয়ত মতে ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ১৬
১পরে হযরত পৌল রা. দেব্রা ও লুস্ত্রা শহরে গেলেন। সেখানে হযরত তিমথীয় র. নামে একজন উম্মত থাকতেন। তাঁর মা ছিলেন ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ১৭
১হযরত পৌল রা. ও হযরত সিল র. আমফিপলি ও আপল্লো নিয়া হয়ে থিসালোনিকিতে এসে পৌঁছলেন। সেখানে ইহুদিদের একটি সিনাগোগ ছিলো। ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ১৮
১এরপর হযরত পৌল রা. এথেন্স ছেড়ে করিন্থ শহরে গেলেন। সেখানে আকুইলা নামে এক ইহুদির সংগে তার দেখা হলো, জন্মসূত্রে তিনি ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ১৯
১আপল্লো যখন করিন্থে ছিলেন, সেই সময় হযরত পৌল রা. সে-সব এলাক ঘুরে ইফিসে এলেন। ২সেখানে তিনি কয়েকজন ইমানদারের দেখা পেলেন। ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ২০
১গোলমাল থামার পর হযরত পৌল রা. ইমানদারদের ডেকে পাঠালেন। তাঁদের উৎসাহ দেবার পর তাঁদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে তিনি মেসিডোনিয়ার ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ২১
১তাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আমরা সোজা কোস দ্বীপে গেলাম। পরদিন আমরা রোডস দ্বীপে এলাম। তারপর সেখান থেকে পাতারা গেলাম। ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ২২
১“ভাইয়েরা ও পিতারা, এখন নিজের পক্ষে আমার উত্তর শুনুন।” ২তারা তাঁকে ইব্রানী ভাষায় কথা বলতে শুনে একেবারে চুপ হয়ে গেলো।৩তখন ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ২৩
১হযরত পৌল রা. সোজা মহাসভার লোকদের দিকে তাকিয়ে বললেন, “আমার ভাইয়েরা, আজ পর্যন্ত আমি আল্লাহর সামনে পরিষ্কার বিবেকে জীবন-যাপন করছি।” ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ২৪
১পাঁচদিন পরে মহাইমাম অননিয় কয়েকজন ইহুদি বুজুর্গকে ও তর্তুল্লস নামে একজন উকিলকে নিয়ে সেখানে এলেন এবং গভর্নরের কাছে হযরত পৌল ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ২৫
১ফাস্তুস সেই প্রদেশে আসার তিনদিন পর কৈসরিয়া থেকে জেরুসালেমে গেলেন। ২সেখানে প্রধান ইমামেরা ও নেতারা তার কাছে গিয়ে পৌলের বিরুদ্ধে ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ২৬
১তখন আগ্রিপ্প হযরত পৌল রা.-কে বললেন, “তোমার নিজের পক্ষে কথা বলার জন্য তোমাকে অনুমতি দেয়া গেলো।” ২তখন তিনি হাত বাড়িয়ে ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ২৭
১যখন জাহাজে করে আমাদের ইতালিতে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হলো, তখন হযরত পৌল রা. এবং আরো কয়েকজন বন্দিকে জুলিয়াস নামে সম্রাটের ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ২৮
১,২আমরা নিরাপদে কিনারে পৌঁছে জানতে পারলাম যে, দ্বীপটার নাম মাল্টা। এর অধিবাসীরা আমাদের সংগে খুব দয়া দেখালো। তখন বৃষ্টি আরম্ভ ...