১সেই সময় বাদশাহ হেরোদ জুলুম করার জন্য কওমের কয়েকজনকে ধরে এনেছিলেন। ২তিনি হযরত ইউহোন্না রা.-র ভাই হযরত ইয়াকুব রা.-কে তরবারি দিয়ে হত্যা করিয়ে ছিলেন। ৩যখন তিনি দেখলেন ইহুদিরা তাতে খুশি হয়েছে, তখন তিনি হযরত সাফওয়ান রা.-কে ধরতে গেলেন। ৪এই ঘটনা ইদুল-মাত্ছের সময় হয়েছিলো। তিনি হযরত সাফওয়ান রা.-কে ধরে জেলে দিলেন। চারজন-চারজন করে চার দল সৈন্যের ওপর তাকে পাহারা দেবার ভার দেয়া হলো। তিনি ঠিক করলেন, ইদুল-ফেসাখের পরে বিচার করার জন্য তাঁকে লোকদের সামনে আনবেন।
৫হযরত সাফওয়ান রা. জেলখানায় বন্দি থাকা অবস্থায় কওমের লোকেরা তাঁর জন্য আল্লাহর কাছে আকুলভাবে মোনাজাত করছিলেন। ৬যেদিন হেরোদ বিচারের জন্য হযরত সাফওয়ান রা.-কে বের করে আনবেন, তার আগের রাতে দু’জন সৈন্যের মাঝখানে তিনি দু’টো শেকল দিয়ে বাঁধা অবস্থায় ঘুমাচ্ছিলেন। এবং পাহারাদাররা দরজায় পাহারা দিচ্ছিলো।
৭এমন সময় হঠাৎ আল্লাহর এক ফেরেস্তা সেখানে উপস্থিত হলেন এবং জেলখানার সেই কামরাটা আলোয় উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। তিনি হযরত সাফওয়ান রা. গায়ে জোরে ঠেলা দিয়ে তাঁকে জাগিয়ে বললেন, “তাড়াতাড়ি ওঠো।” এতে তাঁর দু’হাত থেকে শেকল খুলে পড়ে গেলো। ৮তখন ফেরেস্তা তাঁকে বললেন, “তোমার কোমরে কোমর-বাঁধনি লাগাও, পায়ে জুতা পরো।” তিনি তা-ই করলেন। অতঃপর তিনি তাঁকে বললেন, “তোমার চাদরখানা গায়ে জড়িয়ে আমার পেছনে-পেছনে এসো।”
৯হযরত সাফওয়ান রা. তাঁর পেছনে-পেছনে বাইরে এলেন, কিন্তু ফেরেস্তা যা করছিলেন তা যে সত্যি সত্যিই ঘটছে, তার কিছুই তিনি বুঝতে পারলেন না। তিনি মনে করলেন দর্শন দেখছেন।
১০তাঁরা প্রথম ও দ্বিতীয় পাহারাদারদের দল পার হয়ে শহরে ঢোকার লোহার দরজার কাছে এলেন। দরজাটা তাঁদের জন্য নিজে-নিজেই খুলে গেলো। তাঁরা তার মধ্য দিয়ে বের হয়ে একটি রাস্তা ধরে হেঁটে চললেন। এই সময় ফেরেস্তা হঠাৎ তাকে ছেড়ে চলে গেলেন। ১১তখন হযরত সাফওয়ান রা. যেনো চেতনা ফিরে পেলেন এবং বললেন, “এখন আমি সত্যিই বুঝতে পারলাম যে, আল্লাহ্ তাঁর ফেরেস্তাকে পাঠিয়ে হেরোদের হাত থেকে এবং ইহুদিরা যা করার ষড়যন্ত্র করছিলো, তা থেকে আমাকে রক্ষা করলেন।”
১২এ-কথা বুঝতে পেরে তিনি হযরত ইউহোন্না রা.-র মা মরিয়মের বাড়িতে গেলেন। এই হযরত ইউহোন্না রা.-কে মার্ক বলেও ডাকা হতো। সেখানে অনেকে এক সংগে মিলিত হয়ে মোনাজাত করছিলেন। ১৩তিনি বাইরের দরজায় আঘাত করলে পর রোদা নামে এক দাসী দরজা খুলতে এলো। ১৪সে হযরত সাফওয়ান রা.-র গলার আওয়াজ চিনতে পেরে এতো আনন্দিত হলো যে, দরজা না-খুলেই দৌড়ে ভেতরের ঘরে গিয়ে সংবাদ দিলো যে, হযরত সাফওয়ান রা. দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছেন। ১৫তাঁরা তাকে বললেন, “তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে।” কিন্তু সে বার বার জোর দিয়ে বলাতে তারা বললেন, “তবে এ তার আত্মা।”
১৬এদিকে তিনি দরজায় আঘাত করতেই থাকলেন। তখন তাঁরা দরজা খুলে তাঁকে দেখে অবাক হলেন। ১৭তিনি হাতের ইশারায় তাঁদের চুপ করতে বললেন এবং জেলখানা থেকে আল্লাহ্ তাঁকে কীভাবে বের করে এনেছেন, তা তাঁদের জানালেন। তিনি এও বললেন, “এই খবর হযরত ইয়াকুব রা. ও অন্য ভাইদেরও দিয়ো।” এ-কথা বলে তিনি বের হয়ে অন্য জায়গায় চলে গেলেন।
১৮সকাল হলে পর হযরত সাফওয়ান রা. কোথায় গেলেন, তা নিয়ে সৈন্যদের মধ্যে হুলস্থুল পড়ে গেলো। ১৯হেরোদ খুব ভালো করে খোঁজাখুঁজি করলেন। কিন্তু তাঁকে না-পেয়ে পাহারাদারদের জেরা করলেন এবং পরে তাদের হত্যা করার হুকুম দিলেন। এরপর তিনি ইহুদিয়া থেকে কৈসরিয়াতে চলে গেলেন এবং সেখানেই থাকলেন।
২০সেই সময় হেরোদ টায়ার ও সিডন শহরের লোকদের ওপরে খুব রেগে গেলেন। তখন সেখানকার লোকেরা এক সংগে মিলে হেরোদের সংগে দেখা করতে গেলো। ব্লাস্ত নামে বাদশাহর শোবার ঘরের বিশ্বস্ত কর্মচারীকে নিজেদের পক্ষে এনে তারা বাদশাহর সংগে একটি মীমাংসা করতে চাইলো। কারণ বাদশাহ হেরোদের দেশ থেকেই তাদের দেশে খাদ্য সামগ্রী আসতো। ২১তখন হেরোদ পূর্ব নির্ধারিত একটি দিনে রাজ-পোশাক পরে সিংহাসনে বসে সেই লোকদের কাছে কথা বলতে লাগলেন। ২২তার কথা শুনে লোকেরা চিৎকার করে বলতে থাকলো, “এ দেবতার কণ্ঠস্বর, মানুষের কথা নয়।” ২৩হেরোদ আল্লাহর গৌরব করেননি বলে তখনই আল্লাহর এক ফেরেস্তা তাকে আঘাত করলেন। আর কৃমি তাকে খেলো এবং তিনি মারা গেলেন।
২৪কিন্তু আল্লাহর কালাম ছড়িয়ে পড়তে থাকলো এবং অনেক লোক তাঁর ওপর ইমান আনতে লাগলো। ২৫এদিকে হযরত বার্নবাস রা. ও হযরত শৌল রা. তাঁদের কাজ শেষ করে হযরত ইউহোন্না র.-কে সংগে নিয়ে জেরুসালেমে ফিরে গেলেন। এই ইউহোন্নাকে মার্ক নামেও ডাকা হতো।
Facebook
WhatsApp
Telegram
Email
হাওয়ারিনামা: রুকু – ১
১,২মাননীয় থিয়ফিল, হযরত ইসা আ.কে বেহেস্তে তুলে নেবার আগ পর্যন্ত তিনি যা করেছিলেন ও শিক্ষা দিয়েছিলেন, তার সমস্তই আমি আগের ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ২
১পঞ্চাশতম দিনের ইদে যখন তারা সবাই এক জায়গায় মিলিত হলেন, ২তখন হঠাৎ আসমান থেকে জোর বাতাসের শব্দের মতো একটি শব্দ ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ৩
১এক দিন বিকেল তিনটার এবাদতের সময় হযরত সাফওয়ান রা. ও হযরত ইউহোন্না রা. বায়তুল-মোকাদ্দসে যাচ্ছিলেন। এবং জন্ম থেকেই খোঁড়া এক ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ৪
১হযরত সাফওয়ান রা. ও হযরত ইউহোন্না রা. যখন লোকদের সংগে কথা বলছিলেন, তখন ইমামেরা, বায়তুল-মোকাদ্দসের প্রধান কর্মচারী ও সদ্দুকিরা তাদের ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ৫
১আনানিয়াস নামে এক লোক ও তার স্ত্রী সাফিরা একটি সম্পত্তি বিক্রি করলো। ২তার স্ত্রীর জানা মতেই বিক্রির কিছু টাকা সে ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ৬
১ঐ দিনগুলোতে যখন উম্মতদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছিলো, তখন গ্রীকরা ইহুদিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলো যে, প্রতিদিন খাবার বিতরণের সময় তাদের বিধবাদের ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ৭
১তখন প্রধান ইমাম হযরত স্তিফান র.কে জিজ্ঞেস করলেন, “এসব কি সত্যি?”২হযরত স্তিফান র. উত্তর দিলেন, “হে আমার ভাইয়েরা ও আমার ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ৮
১ হযরত শৌল রা. তাকে হত্যার অনুমোদন দিচ্ছিলেন।সেদিন জেরুসালেমে হযরত ইসা আ. এর অনুসারীদের ওপরে ভীষণ জুলুম শুরু হলো। তাতে ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ৯
১-২এদিকে হযরত শৌল রা. হযরত ইসা মসিহের উম্মতদের হত্যা করার ভয় দেখাচ্ছিলেন।তিনি মহা-ইমামের কাছে গিয়ে দামেস্ক শহরের সিনাগোগগুলোতে দেবার জন্য ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ১০
১কৈসরিয়া শহরে কর্নেলিয়াস নামে একজন লোক ইতালিয় সৈন্যদলের লেফটেন্যান্ট ছিলেন। ২তিনি আল্লাহ্ভক্ত ছিলেন এবং তিনি ও তার পরিবারের সবাই আল্লাহর ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ১১
১অইহুদিরাও যে আল্লাহর কালামের ওপর ইমান এনেছেন, সে-কথা হাওয়ারিরা এবং সমস্ত ইহুদিয়ার ইমানদার ভাইয়েরা শুনলেন। ২এ-জন্য হযরত সাফওয়ান রা. যখন ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ১২
১সেই সময় বাদশাহ হেরোদ জুলুম করার জন্য কওমের কয়েকজনকে ধরে এনেছিলেন। ২তিনি হযরত ইউহোন্না রা.-র ভাই হযরত ইয়াকুব রা.-কে তরবারি ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ১৩
১ আন্তিয়খিয়ার অনুসারীদের মধ্যে কয়েকজন ওলি ও শিক্ষক ছিলেন। তাদের নাম হযরত বার্নবাস র., হযরত নিগের র. নামে পরিচিত সিমোন, ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ১৪
১ইকোনিয়ম শহরেও একই ঘটনা ঘটলো। সেখানে হযরত পৌল রা. ও হযরত বার্নবাস র. ইহুদিদের সিনাগোগে গিয়ে এমনভাবে কথা বললেন যে, ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ১৫
১সেই সময় ইহুদিয়া থেকে কয়েকজন লোক এলেন এবং ভাইদের এই শিক্ষা দিতে লাগলেন যে, “হযরত মুসা আ. এর শরিয়ত মতে ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ১৬
১পরে হযরত পৌল রা. দেব্রা ও লুস্ত্রা শহরে গেলেন। সেখানে হযরত তিমথীয় র. নামে একজন উম্মত থাকতেন। তাঁর মা ছিলেন ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ১৭
১হযরত পৌল রা. ও হযরত সিল র. আমফিপলি ও আপল্লো নিয়া হয়ে থিসালোনিকিতে এসে পৌঁছলেন। সেখানে ইহুদিদের একটি সিনাগোগ ছিলো। ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ১৮
১এরপর হযরত পৌল রা. এথেন্স ছেড়ে করিন্থ শহরে গেলেন। সেখানে আকুইলা নামে এক ইহুদির সংগে তার দেখা হলো, জন্মসূত্রে তিনি ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ১৯
১আপল্লো যখন করিন্থে ছিলেন, সেই সময় হযরত পৌল রা. সে-সব এলাক ঘুরে ইফিসে এলেন। ২সেখানে তিনি কয়েকজন ইমানদারের দেখা পেলেন। ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ২০
১গোলমাল থামার পর হযরত পৌল রা. ইমানদারদের ডেকে পাঠালেন। তাঁদের উৎসাহ দেবার পর তাঁদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে তিনি মেসিডোনিয়ার ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ২১
১তাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আমরা সোজা কোস দ্বীপে গেলাম। পরদিন আমরা রোডস দ্বীপে এলাম। তারপর সেখান থেকে পাতারা গেলাম। ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ২২
১“ভাইয়েরা ও পিতারা, এখন নিজের পক্ষে আমার উত্তর শুনুন।” ২তারা তাঁকে ইব্রানী ভাষায় কথা বলতে শুনে একেবারে চুপ হয়ে গেলো।৩তখন ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ২৩
১হযরত পৌল রা. সোজা মহাসভার লোকদের দিকে তাকিয়ে বললেন, “আমার ভাইয়েরা, আজ পর্যন্ত আমি আল্লাহর সামনে পরিষ্কার বিবেকে জীবন-যাপন করছি।” ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ২৪
১পাঁচদিন পরে মহাইমাম অননিয় কয়েকজন ইহুদি বুজুর্গকে ও তর্তুল্লস নামে একজন উকিলকে নিয়ে সেখানে এলেন এবং গভর্নরের কাছে হযরত পৌল ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ২৫
১ফাস্তুস সেই প্রদেশে আসার তিনদিন পর কৈসরিয়া থেকে জেরুসালেমে গেলেন। ২সেখানে প্রধান ইমামেরা ও নেতারা তার কাছে গিয়ে পৌলের বিরুদ্ধে ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ২৬
১তখন আগ্রিপ্প হযরত পৌল রা.-কে বললেন, “তোমার নিজের পক্ষে কথা বলার জন্য তোমাকে অনুমতি দেয়া গেলো।” ২তখন তিনি হাত বাড়িয়ে ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ২৭
১যখন জাহাজে করে আমাদের ইতালিতে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হলো, তখন হযরত পৌল রা. এবং আরো কয়েকজন বন্দিকে জুলিয়াস নামে সম্রাটের ...
হাওয়ারিনামা: রুকু – ২৮
১,২আমরা নিরাপদে কিনারে পৌঁছে জানতে পারলাম যে, দ্বীপটার নাম মাল্টা। এর অধিবাসীরা আমাদের সংগে খুব দয়া দেখালো। তখন বৃষ্টি আরম্ভ ...