হাওয়ারিনামা: রুকু – ১

75754
Total
Visitors

১,২মাননীয় থিয়ফিল, হযরত ইসা আ.কে বেহেস্তে তুলে নেবার আগ পর্যন্ত তিনি যা করেছিলেন ও শিক্ষা দিয়েছিলেন, তার সমস্তই আমি আগের কিতাবে লিখেছি। যে হাওয়ারিদের তিনি বেছে নিয়েছিলেন, তাঁকে তুলে নেবার আগে তিনি তাদের আল্লাহর রুহের মধ্য দিয়ে নির্দেশ দিয়েছিলেন। ৩তাঁর দুঃখভোগের পরে তাদের কাছে তিনি দেখা দিয়েছিলেন এবং তিনি যে জীবিত আছেন, তার অনেক বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ দিয়েছিলেন। চল্লিশ দিন পর্যন্ত তিনি তাদের দেখা দিয়ে আল্লাহর রাজ্যের বিষয়ে বলেছিলেন। ৪সেই সময় যখন তিনি তাদের সংগে ছিলেন, তখন তাদের এই হুকুম দিয়েছিলেন, যেনো তারা জেরুসালেম ছেড়ে না-যান, বরং আল্লাহর ওয়াদা করা দানের জন্য অপেক্ষা করেন।

৫তিনি বলেছিলেন, “তোমরা আমার কাছে শুনেছ যে, যদিও হযরত ইয়াহিয়া আ. পানিতে বায়াত দিতেন; কিন্তু আর বেশি দিন দেরি নেই, আল্লাহর রুহে তোমাদের বায়াত দেয়া হবে।” ৬তাই পরে যখন তারা এক সংগে মিলিত হলেন, তখন তারা তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, “হুজুর, এই সময় কি আপনি বনি-ইস্রাইলের হাতে রাজ্য ফিরিয়ে দেবেন?” ৭উত্তরে তিনি বললেন, “যেদিন বা সময় প্রতিপালক নিজের অধিকারে রেখেছেন, তা তোমাদের জানার বিষয় নয়। ৮কিন্তু আল্লাহর রুহ তোমাদের ওপর এলে পর তোমরা শক্তি পাবে; আর জেরুসালেম, সমগ্র ইহুদিয়া ও সামেরিয়া প্রদেশ এবং দুনিয়ার শেষ সীমা পর্যন্ত তোমরা আমার সাক্ষী হবে।”

৯এ-কথা বলার পরে তাদের চোখের সামনেই তাঁকে তুলে নেয়া হলো এবং একখন্ড মেঘ তাঁকে তাদের চোখের আড়াল করে দিলো। ১০তিনি যখন ওপরে উঠে যাচ্ছিলেন এবং তারা একদৃষ্টে আসমানের দিকে তাকিয়ে ছিলেন, তখনই সাদা কাপড় পরা দু’জন লোক তাদের পাশে দাঁড়িয়ে বললেন, ১১“হে গালিলের লোকেরা, এখানে দাঁড়িয়ে আসমানের দিকে তাকিয়ে রয়েছো কেনো?

এই হযরত ইসা আ., যাঁকে তোমাদের কাছ থেকে তুলে নেয়া হলো, তাঁকে যেভাবে তোমরা বেহেস্তে যেতে দেখলে, সেভাবেই তিনি আবার আসবেন।”

১২তখন তারা জৈতুন পাহাড় থেকে নেমে জেরুসালেমে ফিরে এলেন। এই পাহাড়টি জেরুসালেম শহরের কাছে, এক সাব্বাত দিনের যাত্রার সমান দূরে অবস্থিত। ১৩শহরে পৌঁছে তারা ওপরের তলার যে-ঘরে থাকতেন, সেখানে গেলেন। হযরত পিতর রা., হযরত ইউহোন্ন ারা., হযরত ইয়াকুব রা., হযরত আন্দ্রিয়ান রা., হযরত ফিলিপ রা., হযরত থোমা রা., হযরত বরথলময় রা., হযরত মথি রা., হযরত ইয়াকুব ইবনে আলফিয়াস রা. ও দেশপ্রেমিক হযরত সিমোন রা. এবং হযরত ইহুদা ইবনে ইয়াকুব রা.। ১৪তারা সবাই বিশেষ কয়েকজন মহিলাসহ হযরত ইসা আ. এর মা হযরত মরিয়ম আ. ও তাঁর ভাইদের সংগে সব সময় একমত হয়ে মোনাজাত করতেন।

১৫সেই সময় এক দিন হযরত পিতর রা. মসিহের ওপর ইমানদার প্রায় একশো কুড়িজন উম্মতের মধ্যে দাঁড়িয়ে বললেন, ১৬“ভাইয়েরা, আল্লাহর রুহ হযরত দাউদ আ. এর মুখ দিয়ে ইহুদার বিষয়ে যা বলেছিলেন, আল্লাহর সেই কালাম পূর্ণ হবার দরকার ছিলো। ১৭কারণ যারা হযরত ইসা মসিহকে ধরে ছিলো, সে-ই তাদের পথ দেখিয়ে নিয়ে গিয়েছিলো। সে আমাদেরই একজন ছিলো এবং আমাদের সংগে কাজ করার জন্য তাকে বেছে নেয়া হয়েছিলো। ১৮তার খারাপ কাজের টাকা দিয়ে সে একখন্ড জমি কিনে ছিলো। আর সেখানে পড়ে গিয়ে তার পেট ফেটে গেলো এবং নাড়ি ভুঁড়ি বের হয়ে পড়লো। জেরুসালেমের সবাই সে-কথা শুনেছিলো। ১৯এ-জন্য তাদের ভাষায় ঐ জমিকে তারা হাকেল্দামা বা রক্তের ক্ষেত বলে।

২০কারণ জবুর শরীফে এ-কথা লেখা আছে, তার বাড়ি খালি থাকুক; সেখানে কেউ বাসনা করুক।’ এবং ‘তার উঁচু পদ অন্য লোক নিয়ে যাক।’ ২১এ-জন্য হযরত ইসা মসিহ যে মৃত থেকে জীবিত হয়ে উঠেছেন, আমাদের সংগে তার সাক্ষী হবার জন্য আরেকজনকে আমাদের দলে নিতে হবে।

২২তাই হযরত ইয়াহিয়া আ. এর বায়াত দেয়া থেকে আরম্ভ করে তাঁকে আমাদের কাছ থেকে তুলে না-নেয়া পর্যন্ত, তিনি যতদিন আমাদের সংগে চলাফেরা করেছিলেন, ততদিন যে-লোকেরা আমাদের দলে ছিলো,

সে যেনো তাদের মধ্যে একজন হয়।” ২৩তাই তারা ইউসুফ, যাকে বারসাবা বলা হতো, এবং মাত্তিয়াস- এই দু’জনের নাম প্রস্তাব করলেন।

২৪-২৫অতঃপর তারা এই বলে মোনাজাত করলেন, “ইয়া আল্লাহ্ রাব্বুল আ’লামিন, তুমি সকলের অন্তর জানো। যে-ইহুদা তার পাওনা শাস্তি পাবার জন্য হাওয়ারি পদের কাজ ছেড়ে দিয়েছে, তার জায়গায় এই দু’জনের মধ্যে যাকে তুমি বেছে নিয়েছো, তাকে আমাদের দেখিয়ে দাও।” ২৬এবং তারা ভাগ্য পরীক্ষা করলে মাত্তিয়াসের নাম উঠলো এবং তিনি এগারোজনের সংগে যোগ দিলেন।

Facebook
WhatsApp
Telegram
Email
হাওয়ারিনামা: রুকু - ১

হাওয়ারিনামা: রুকু – ১

১,২মাননীয় থিয়ফিল, হযরত ইসা আ.কে বেহেস্তে তুলে নেবার আগ পর্যন্ত তিনি যা করেছিলেন ও শিক্ষা দিয়েছিলেন, তার সমস্তই আমি আগের ...
হাওয়ারিনামা: রুকু - ২

হাওয়ারিনামা: রুকু – ২

১পঞ্চাশতম দিনের ইদে যখন তারা সবাই এক জায়গায় মিলিত হলেন, ২তখন হঠাৎ আসমান থেকে জোর বাতাসের শব্দের মতো একটি শব্দ ...
হাওয়ারিনামা: রুকু - ৩

হাওয়ারিনামা: রুকু – ৩

১এক দিন বিকেল তিনটার এবাদতের সময় হযরত সাফওয়ান রা. ও হযরত ইউহোন্না রা. বায়তুল-মোকাদ্দসে যাচ্ছিলেন। এবং জন্ম থেকেই খোঁড়া এক ...
হাওয়ারিনামা: রুকু - ৪

হাওয়ারিনামা: রুকু – ৪

১হযরত সাফওয়ান রা. ও হযরত ইউহোন্না রা. যখন লোকদের সংগে কথা বলছিলেন, তখন ইমামেরা, বায়তুল-মোকাদ্দসের প্রধান কর্মচারী ও সদ্দুকিরা তাদের ...
হাওয়ারিনামা: রুকু - ৫

হাওয়ারিনামা: রুকু – ৫

১আনানিয়াস নামে এক লোক ও তার স্ত্রী সাফিরা একটি সম্পত্তি বিক্রি করলো। ২তার স্ত্রীর জানা মতেই বিক্রির কিছু টাকা সে ...
হাওয়ারিনামা: রুকু - ৬

হাওয়ারিনামা: রুকু – ৬

১ঐ দিনগুলোতে যখন উম্মতদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছিলো, তখন গ্রীকরা ইহুদিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলো যে, প্রতিদিন খাবার বিতরণের সময় তাদের বিধবাদের ...
হাওয়ারিনামা: রুকু - ৭

হাওয়ারিনামা: রুকু – ৭

১তখন প্রধান ইমাম হযরত স্তিফান র.কে জিজ্ঞেস করলেন, “এসব কি সত্যি?”২হযরত স্তিফান র. উত্তর দিলেন, “হে আমার ভাইয়েরা ও আমার ...
হাওয়ারিনামা: রুকু - ৮

হাওয়ারিনামা: রুকু – ৮

১ হযরত শৌল রা. তাকে হত্যার অনুমোদন দিচ্ছিলেন।সেদিন জেরুসালেমে হযরত ইসা আ. এর অনুসারীদের ওপরে ভীষণ জুলুম শুরু হলো। তাতে ...
হাওয়ারিনামা: রুকু - ৯

হাওয়ারিনামা: রুকু – ৯

১-২এদিকে হযরত শৌল রা. হযরত ইসা মসিহের উম্মতদের হত্যা করার ভয় দেখাচ্ছিলেন।তিনি মহা-ইমামের কাছে গিয়ে দামেস্ক শহরের সিনাগোগগুলোতে দেবার জন্য ...
হাওয়ারিনামা: রুকু - ১০

হাওয়ারিনামা: রুকু – ১০

১কৈসরিয়া শহরে কর্নেলিয়াস নামে একজন লোক ইতালিয় সৈন্যদলের লেফটেন্যান্ট ছিলেন। ২তিনি আল্লাহ্ভক্ত ছিলেন এবং তিনি ও তার পরিবারের সবাই আল্লাহর ...
হাওয়ারিনামা: রুকু - ১১

হাওয়ারিনামা: রুকু – ১১

১অইহুদিরাও যে আল্লাহর কালামের ওপর ইমান এনেছেন, সে-কথা হাওয়ারিরা এবং সমস্ত ইহুদিয়ার ইমানদার ভাইয়েরা শুনলেন। ২এ-জন্য হযরত সাফওয়ান রা. যখন ...
হাওয়ারিনামা: রুকু - ১২

হাওয়ারিনামা: রুকু – ১২

১সেই সময় বাদশাহ হেরোদ জুলুম করার জন্য কওমের কয়েকজনকে ধরে এনেছিলেন। ২তিনি হযরত ইউহোন্না রা.-র ভাই হযরত ইয়াকুব রা.-কে তরবারি ...
হাওয়ারিনামা: রুকু - ১৩

হাওয়ারিনামা: রুকু – ১৩

১ আন্তিয়খিয়ার অনুসারীদের মধ্যে কয়েকজন ওলি ও শিক্ষক ছিলেন। তাদের নাম হযরত বার্নবাস র., হযরত নিগের র. নামে পরিচিত সিমোন, ...
হাওয়ারিনামা: রুকু - ১৪

হাওয়ারিনামা: রুকু – ১৪

১ইকোনিয়ম শহরেও একই ঘটনা ঘটলো। সেখানে হযরত পৌল রা. ও হযরত বার্নবাস র. ইহুদিদের সিনাগোগে গিয়ে এমনভাবে কথা বললেন যে, ...
হাওয়ারিনামা: রুকু - ১৫

হাওয়ারিনামা: রুকু – ১৫

১সেই সময় ইহুদিয়া থেকে কয়েকজন লোক এলেন এবং ভাইদের এই শিক্ষা দিতে লাগলেন যে, “হযরত মুসা আ. এর শরিয়ত মতে ...
হাওয়ারিনামা: রুকু - ১৬

হাওয়ারিনামা: রুকু – ১৬

১পরে হযরত পৌল রা. দেব্রা ও লুস্ত্রা শহরে গেলেন। সেখানে হযরত তিমথীয় র. নামে একজন উম্মত থাকতেন। তাঁর মা ছিলেন ...
হাওয়ারিনামা: রুকু - ১৭

হাওয়ারিনামা: রুকু – ১৭

১হযরত পৌল রা. ও হযরত সিল র. আমফিপলি ও আপল্লো নিয়া হয়ে থিসালোনিকিতে এসে পৌঁছলেন। সেখানে ইহুদিদের একটি সিনাগোগ ছিলো। ...
হাওয়ারিনামা: রুকু - ১৮

হাওয়ারিনামা: রুকু – ১৮

১এরপর হযরত পৌল রা. এথেন্স ছেড়ে করিন্থ শহরে গেলেন। সেখানে আকুইলা নামে এক ইহুদির সংগে তার দেখা হলো, জন্মসূত্রে তিনি ...
হাওয়ারিনামা: রুকু - ১৯

হাওয়ারিনামা: রুকু – ১৯

১আপল্লো যখন করিন্থে ছিলেন, সেই সময় হযরত পৌল রা. সে-সব এলাক ঘুরে ইফিসে এলেন। ২সেখানে তিনি কয়েকজন ইমানদারের দেখা পেলেন। ...
হাওয়ারিনামা: রুকু - ২০

হাওয়ারিনামা: রুকু – ২০

১গোলমাল থামার পর হযরত পৌল রা. ইমানদারদের ডেকে পাঠালেন। তাঁদের উৎসাহ দেবার পর তাঁদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে তিনি মেসিডোনিয়ার ...
হাওয়ারিনামা: রুকু - ২১

হাওয়ারিনামা: রুকু – ২১

১তাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আমরা সোজা কোস দ্বীপে গেলাম। পরদিন আমরা রোডস দ্বীপে এলাম। তারপর সেখান থেকে পাতারা গেলাম। ...
হাওয়ারিনামা: রুকু - ২২

হাওয়ারিনামা: রুকু – ২২

১“ভাইয়েরা ও পিতারা, এখন নিজের পক্ষে আমার উত্তর শুনুন।” ২তারা তাঁকে ইব্রানী ভাষায় কথা বলতে শুনে একেবারে চুপ হয়ে গেলো।৩তখন ...
হাওয়ারিনামা: রুকু - ২৩

হাওয়ারিনামা: রুকু – ২৩

১হযরত পৌল রা. সোজা মহাসভার লোকদের দিকে তাকিয়ে বললেন, “আমার ভাইয়েরা, আজ পর্যন্ত আমি আল্লাহর সামনে পরিষ্কার বিবেকে জীবন-যাপন করছি।” ...
হাওয়ারিনামা: রুকু - ২৪

হাওয়ারিনামা: রুকু – ২৪

১পাঁচদিন পরে মহাইমাম অননিয় কয়েকজন ইহুদি বুজুর্গকে ও তর্তুল্লস নামে একজন উকিলকে নিয়ে সেখানে এলেন এবং গভর্নরের কাছে হযরত পৌল ...
হাওয়ারিনামা: রুকু - ২৫

হাওয়ারিনামা: রুকু – ২৫

১ফাস্তুস সেই প্রদেশে আসার তিনদিন পর কৈসরিয়া থেকে জেরুসালেমে গেলেন। ২সেখানে প্রধান ইমামেরা ও নেতারা তার কাছে গিয়ে পৌলের বিরুদ্ধে ...
হাওয়ারিনামা: রুকু - ২৬

হাওয়ারিনামা: রুকু – ২৬

১তখন আগ্রিপ্প হযরত পৌল রা.-কে বললেন, “তোমার নিজের পক্ষে কথা বলার জন্য তোমাকে অনুমতি দেয়া গেলো।” ২তখন তিনি হাত বাড়িয়ে ...
হাওয়ারিনামা: রুকু - ২৭

হাওয়ারিনামা: রুকু – ২৭

১যখন জাহাজে করে আমাদের ইতালিতে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হলো, তখন হযরত পৌল রা. এবং আরো কয়েকজন বন্দিকে জুলিয়াস নামে সম্রাটের ...
হাওয়ারিনামা: রুকু - ২৮

হাওয়ারিনামা: রুকু – ২৮

১,২আমরা নিরাপদে কিনারে পৌঁছে জানতে পারলাম যে, দ্বীপটার নাম মাল্টা। এর অধিবাসীরা আমাদের সংগে খুব দয়া দেখালো। তখন বৃষ্টি আরম্ভ ...