১মোনাজাতের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে হযরত ইসা আ. তাদেরকে একটি দৃষ্টান্ত দিলেন, যেনো তারা সব সময় মোনাজাত করেন এবং নিরাশ না হোন। ২তিনি বললেন, “কোনো এক শহরে এক বিচারক ছিলো। সে আল্লাহকে ভয় করতো না এবং মানুষকে কোনো দামই দিতো না। ৩সেই শহরে এক বিধবা ছিলো। সে বারবার এসে তাকে বলতো, ‘আমার বিপক্ষের বিরুদ্ধে ন্যায়বিচার করে দিন।’ ৪অনেকদিন সে কিছুই করলো না। কিন্তু শেষে মনে মনে বললো, ‘যদিও আমি আল্লাহকে ভয় করি না এবং মানুষকেও কোনো দাম দেই না, ৫তবুও এই বিধবা আমাকে বিরক্ত করছে বলে আমি তার পক্ষে ন্যায়বিচার করবো। তা না হলে সে বারবার এসে আমাকে ক্লান্ত করে ছাড়বে।’”
৬অতঃপর হযরত ইসা আ. বললেন, “ন্যায়বিচারক না হলেও সে যা বললো তা ভেবে দেখো। ৭তাহলে রাতদিন যারা আল্লাহকে ডাকে, তিনি কি তাঁর সেই মনোনীত বান্দাদের পক্ষে ন্যায়বিচার করবেন না? তিনি কি তাদের সাহায্য করতে দেরি করবেন? ৮আমি তোমাদের বলছি, নিশ্চয়ই তিনি তাড়াতাড়ি তাদের পক্ষে ন্যায়বিচার করবেন। তবুও যখন ইবনুল-ইনসান আসবেন, তখন কি তিনি পৃথিবীতে ইমান খুঁজে পাবেন?”
৯যারা নিজেদের দীনদার ভেবে অন্যদের তুচ্ছ করতো, তাদের তিনি এই দৃষ্টান্ত দিলেন- ১০“দু’ব্যক্তি মোনাজাত করার জন্য বায়তুল-মোকাদ্দসে গেলো। তাদের একজন ফরিসি ও অন্যজন কর-আদায়কারী। ১১ফরিসি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নিজের বিষয়ে এই মোনাজাত করলো, ‘হে আল্লাহ, আমি তোমাকে শুকরিয়া জানাই যে, আমি অন্য লোকদের মতো চোর, অসৎ ও জিনাকারী নই। এমনকি ওই কর-আদায়কারীর মতোও নই। ১২আমি সপ্তায় দু’বার রোজা রাখি এবং আমার সমস্ত আয়ের দশ ভাগের এক ভাগ দিয়ে থাকি।’ ১৩কিন্তু কর-আদায়কারী সামান্য দূরে দাঁড়ালো। ওপর দিকে তাকাতেও তার সাহস হলো না। সে বুক চাপড়ে বললো, ‘হে আল্লাহ! আমি গুনাহগার; আমার ওপর রহম করুন।’ ১৪আমি তোমাদের বলছি, ওই লোক নয়, বরং এই লোকই দীনদার হিসেবে বাড়ি ফিরে গেলো। যে নিজেকে উঁচু করে, তাকে নীচু করা হবে এবং যে নিজেকে নীচু করে, তাকে উঁচু করা হবে।”
১৫লোকেরা শিশুদের তাঁর কাছে নিয়ে এলো, যেনো তিনি তাদের ওপর হাত রেখে ছুঁয়ে দেন। সাহাবিরা তা দেখে লোকদের কড়াভাবে নিষেধ করতে লাগলেন। ১৬কিন্তু হযরত ইসা আ. তাদের ডেকে বললেন, ‘ছোটো ছেলে- মেয়েদের আমার কাছে আসতে দাও, বাধা দিয়ো না, কারণ আল্লাহর রাজ্য এদের মতো লোকদেরই। ১৭আমি তোমাদের সত্যি বলছি, যে কেউ এই ছোটো শিশুর মতো আল্লাহর রাজ্য গ্রহণ না করে, সে কোনোমতেই আল্লাহর রাজ্যে ঢুকতে পারবে না।’
১৮কোনো এক শাসক তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, “হে উত্তম শিক্ষক, আল্লাহর দিদার পেতে হলে আমাকে কী করতে হবে?” ১৯হযরত ইসা আ. তাকে বললেন, “আমাকে কেনো তুমি উত্তম বলছো? এক আল্লাহ ছাড়া আর কেউই উত্তম নয়। ২০তুমি তো হুকুমগুলো জানো, ‘জিনা করো না, খুন করো না, চুরি করো না, মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়ো না, বাবা-মাকে সম্মান করো।’” ২১সে জবাব দিলো, “তরুণ বয়স থেকেই আমি এসব পালন করে আসছি।” ২২একথা শুনে হযরত ইসা আ. তাকে বললেন, “এখনো একটি জিনিস তোমার বাকি আছে। তোমার যা-কিছু আছে তা বিক্রি করে গরিবদের মাঝে বিলিয়ে দাও, তাতে তুমি বেহেস্তে ধন পাবে; তারপর এসে আমাকে অনুসরণ করো।”
২৩কিন্তু একথা শুনে সে খুব দুঃখিত হলো, কারণ সে খুব ধনী ছিলো। ২৪হযরত ইসা আ. তার দিকে তাকিয়ে বললেন, “যাদের ধন আছে, তাদের পক্ষে আল্লাহর রাজ্যে ঢোকা কতো কঠিন! ২৫নিশ্চয়ই ধনীর পক্ষে আল্লাহর রাজ্যে ঢোকার চেয়ে সুচের ছিদ্র দিয়ে উটের যাওয়া সহজ।”
২৬একথা যারা শুনলো তারা বললো, “তাহলে কে নাজাত পেতে পারে?” ২৭তিনি উত্তর দিলেন, “মানুষের পক্ষে যা অসম্ভব, আল্লাহর পক্ষে তা সম্ভব।” ২৮তখন হযরত পিতর রা. বললেন, “দেখুন, আমরা তো ঘরবাড়ি ছেড়ে দিয়ে আপনার অনুসারী হয়েছি।” ২৯তিনি তাদের বললেন, “আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, এমন কেউ নেই, যে আল্লাহর রাজ্যের জন্য ঘরবাড়ি, স্ত্রী, ভাইবোন, বাবামা বা ছেলেমেয়ে ছেড়ে এসেছে, ৩০সে এ-কালেই তার অনেক বেশি এবং আগামী যুগে আল্লাহর দিদার পাবে না।”
৩১অতঃপর তিনি সেই বারোজনকে একপাশে ডেকে নিয়ে বললেন, “দেখো, আমরা জেরুসালেমে যাচ্ছি এবং ইবনুল-ইনসানের বিষয়ে নবিরা যা লিখে গেছেন, তার সবই পূর্ণ হবে। ৩২কারণ তাঁকে অইহুদিদের হাতে তুলে দেয়া হবে। তারা তাঁকে ঠাট্টা ও অপমান করবে এবং তাঁর গায়ে থুথু দেবে। ৩৩ভীষণভাবে চাবুক মারার পরে তারা তাঁকে হত্যা করবে এবং তৃতীয় দিনে তিনি জীবিত হয়ে উঠবেন।” ৩৪কিন্তু তারা এসবের কিছুই বুঝলেন না। তিনি যা বললেন তা তাদের কাছে গোপন রাখা হলো এবং তারা কিছুই উপলব্ধি করতে পারলেন না।
৩৫তিনি যখন জিরিহো শহরের কাছে এলেন, তখন সেখানে এক অন্ধ পথের পাশে বসে ভিক্ষা করছিলো। ৩৬অনেক লোক সেই পথ দিয়ে যাচ্ছে শুনে সে কী ঘটছে তা জানতে চাইলো। ৩৭তারা তাকে বললো, “নাসরতের হযরত ইসা আ. এই পথ দিয়ে যাচ্ছেন।” ৩৮তখন সে চিৎকার করে বললো, “হে দাউদ-সন্তান, ইসা, আমার প্রতি রহম করুন!” ৩৯ভিড়ের সামনে যারা ছিলো, তারা তাকে ধমক দিয়ে চুপ করতে বললো কিন্তু সে আরো জোরে চিৎকার করে বললো, “হে দাউদ-সন্তান, আমার প্রতি দয়া করুন।”
৪০হযরত ইসা আ. থামলেন এবং সেই অন্ধকে তাঁর কাছে আনতে বললেন। সে কাছে এলে তিনি বললেন, ৪১“তুমি কী চাও, তোমার জন্য আমি কী করবো?” সে বললো, “হুজুর, আমি যেনো আবার দেখতে পাই।” ৪২হযরত ইসা আ. তাকে বললেন, “তুমি আবার দেখো। তোমার ইমান তোমাকে রক্ষা করেছে।” ৪৩সে তখনই আবার দেখতে পেলো এবং আল্লাহর গুণগান করতে করতে তাঁর পেছনে পেছনে চললো। এসব দেখে সমস্ত লোক আল্লাহর প্রশংসা করলো।
Facebook
WhatsApp
Telegram
Email
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ১
১,২মাননীয় থিয়ফিল, আমাদের মধ্যে যেসব ঘটনা ঘটেছে তা যারা প্রথম থেকে নিজের চোখে দেখেছেন ও আল্লাহর কালাম প্রচার করেছেন, তারা ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ২
১সেই সময় আগস্ত কাইসার তার গোটা সাম্রাজ্যে আদম-শুমারির হুকুম দিলেন। ২সিরিয়ার গভর্নর কুরিনিয়ের সময় এই প্রথমবারের মতো আদম-শুমারি হয়। ৩নাম ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ৩
১সম্রাট টাইবেরিয়াসের রাজত্বের পনের বছরের সময় পন্তিয়াস পিলাত যখন ইহুদিয়া প্রদেশের গভর্নর, হেরোদ গালিল প্রদেশ এবং তার ভাই ফিলিপ ইতুরিয়া ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ৪
১হযরত ইসা আ. আল্লাহর রুহে পূর্ণ হয়ে জর্দান থেকে ফিরে এলেন এবং সেই রুহের পরিচালনায় তাঁকে মরু প্রান্তরে যেতে হলো। ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ৫
১এক সময় হযরত ইসা আ. গিনেসরত লেকের পাড়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন এবং লোকেরা আল্লাহর কালাম শোনার জন্য তাঁর চারপাশে ভিড় করে ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ৬
১কোনো এক সাব্বাতে হযরত ইসা আ. ফসলের মাঠ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তাঁর হাওয়ারিরা শিষ ছিঁড়ে হাতে ঘষে ঘষে খেতে লাগলেন।২এতে কয়েকজন ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ৭
১তিনি লোকদের কাছে তাঁর সব কথা শেষ করে কফরনাহুমে চলে গেলেন। ২সেখানে একজন শত-সৈন্যের সেনাপতির এক গোলাম ছিলো, যে তার ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ৮
১এরপরই তিনি গ্রামে গ্রামে ও শহরে শহরে ঘুরে আল্লাহর রাজ্যের সুখবর প্রচার করতে লাগলেন। তাঁর সাথে সেই বারোজনও ছিলেন। ২কয়েকজন ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ৯
১অতঃপর তিনি সেই বারোজনকে একত্রে ডাকলেন এবং তাদেরকে সমস্ত ভূতের ওপরে ক্ষমতা ও অধিকার এবং রোগ ভালো করার ক্ষমতাও দিলেন। ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ১০
১অতঃপর মসিহ আরো সত্তরজনকে মনোনীত করলেন। তিনি নিজে যে যে গ্রামে ও যে যে জায়গায় যাবেন বলে ঠিক করেছিলেন, সেসব ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ১১
১তিনি কোনো এক জায়গায় মোনাজাত করছিলেন। মোনাজাত শেষ হলে তাঁর কোনো এক হাওয়ারি তাঁকে বললেন, “হুজুর, হযরত ইয়াহিয়া আ. যেভাবে ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ১২
১এর মধ্যে হাজার হাজার লোক এমনভাবে জড়ো হলো যে, তারা ঠেলাঠেলি করে একে অন্যের ওপর পড়তে লাগলো। তিনি প্রথমে তাঁর ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ১৩
১ঠিক ওই সময় যারা উপস্থিত ছিলো, তারা হযরত ইসা আ.কে বললো, গালিলের কিছু লোক যখন কোরবানি করছিলো, তখন তাদেরকে হত্যা ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ১৪
১এক সাব্বাতে হযরত ইসা আ. ফরিসিদের এক নেতার বাড়িতে খেতে গেলেন। তারা গভীরভাবে তাঁকে লক্ষ্য করছিলেন। ২ঠিক ওই সময় তাঁর ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু ১৫
১সমস্ত কর-আদায়কারী ও গুনাহগাররা যখন তাঁর কথা শোনার জন্য তাঁর কাছে আসছিলো, ২তখন ফরিসিরা ও আলিমরা বিরক্তি প্রকাশ করে বলতে ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ১৬
১অতঃপর তিনি সাহাবিদেরকে বললেন, “কোনো এক ধনী লোকের ম্যানেজারকে এই বলে দোষ দেয়া হলো যে, সে তার মালিকের ধন-সম্পত্তি নষ্ট ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ১৭
১হযরত ইসা আ. তাঁর সাহাবিদের বললেন, “বাধা অবশ্যই আসবে কিন্তু দুর্ভাগ্য সেই লোকের, যার মধ্য দিয়ে বাধা আসে! ২কেউ যদি ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ১৮
১মোনাজাতের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে হযরত ইসা আ. তাদেরকে একটি দৃষ্টান্ত দিলেন, যেনো তারা সব সময় মোনাজাত করেন এবং নিরাশ না হোন। ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ১৯
১তিনি জিরিহোতে এসে শহরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন। ২সেখানে সক্কেয় নামে এক লোক ছিলেন। তিনি প্রধান কর-আদায়কারী এবং ধনী ছিলেন। ৩হযরত ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ২০
১একদিন তিনি যখন বায়তুল-মোকাদ্দসে লোকদের শিক্ষা দিচ্ছিলেন এবং ইঞ্জিল প্রচার করছিলেন, তখন বুজুর্গদের সাথে প্রধান ইমামেরা ও আলিমরা এলেন। ২তারা ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ২১
১পরে তিনি চেয়ে দেখলেন, ধনী লোকেরা বায়তুল-মোকাদ্দসের দানবাক্সে তাদের দান রাখছে। ২তিনি এও দেখলেন যে, এক গরিব বিধবা ছোট্ট দুটো ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ২২
১সেই সময় ইদুল-মাত্ছ কাছে এসে গিয়েছিলো। এটিকে ইদুল-ফেসাখও বলা হয়। ২প্রধান ইমামেরা ও আলিমরা তাঁকে হত্যা করার পথ খুঁজছিলেন, কারণ ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ২৩
১তখন মহাসভার সবাই উঠে হযরত ইসা আ.কে পিলাতের কাছে নিয়ে গেলেন। ২তারা এই বলে তাঁর বিরুদ্ধে দোষ দিতে লাগলেন, “আমরা ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ২৪
১কিন্তু সপ্তাহের প্রথম দিন খুব সকালে সেই মহিলারা তাদের তৈরি করা সুগন্ধি মসলা নিয়ে কবরের কাছে গেলেন। ২তারা দেখলেন, কবরের ...