১অতঃপর তিনি সাহাবিদেরকে বললেন, “কোনো এক ধনী লোকের ম্যানেজারকে এই বলে দোষ দেয়া হলো যে, সে তার মালিকের ধন-সম্পত্তি নষ্ট করেছে। ২তখন সে তাকে ডেকে জিজ্ঞেস করলো, ‘তোমার সম্বন্ধে এসব কী শুনছি? তোমার কাজের হিসাব দাও; কারণ তুমি আর ম্যানেজার থাকতে পারবে না।’ ৩তখন ম্যানেজার মনে মনে বললো, ‘আমি এখন কী করি? আমার মালিক তো আমাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করছেন। মাটি কাটার শক্তিও আমার নেই, আবার ভিক্ষা করতেও লজ্জা লাগে। ৪যা হোক, বরখাস্ত হলে লোকে যাতে আমাকে তাদের বাড়িতে থাকতে দেয়, সেজন্য আমি কী করবো তা আমি জানি।’
৫সুতরাং যারা তার মালিকের কাছ থেকে ধার নিয়েছিলো, সে তাদেরকে এক এক করে ডাকলো। তারপর সে প্রথমজনকে জিজ্ঞেস করলো, ‘আমার মালিকের কাছে তোমার ধার কতো?’ ৬সে বললো, ‘একশো ব্যারেল অলিভ অয়েল।’ সে তাকে বললো, ‘তোমার বিলটি আনো এবং তাড়াতাড়ি পঞ্চাশ ব্যারেল লেখো।’ ৭তারপর সে আরেকজনকে বললো, ‘তোমার ধার কতো? সে বললো, ‘একশো টন গম।’ সে তাকে বললো, ‘তোমার কাগজে আশি টন লেখো’। ৮সেই ম্যানেজার অসৎ হলেও বুদ্ধি করে কাজ করলো বলে মালিক তার প্রশংসা করলো। এ-কালের লোকেরা নিজের লোকদের সাথে আচার-ব্যবহারে আলোর রাজ্যের লোকদের চেয়ে বুদ্ধিমান। ৯আমি তোমাদের বলছি, এই খারাপ দুনিয়ার ধন দিয়ে লোকদের সাথে বন্ধুত্ব করো, যেনো এই ধন ফুরিয়ে গেলে তারা তোমাদের চিরকালের থাকার জায়গায় স্বাগত জানাতে পারে।
১০সামান্য ব্যাপারে যে বিশ্বস্ত, সে বড়ো ব্যাপারেও বিশ্বস্ত এবং সামান্য ব্যাপারে যে অবিশ্বস্ত, বড়ো ব্যাপারেও সে অবিশ্বস্ত। ১১তোমরা যদি এই খারাপ দুনিয়ার ধন-সম্পত্তির ব্যাপারে বিশ্বস্ত না থাকো, তাহলে কে তোমাদের আসল ধন দিয়ে বিশ্বাস করবে? ১২এবং যা-কিছু অন্যের, সে-বিষয়ে যদি তোমাদের বিশ্বাস করা না যায়, তাহলে যা তোমাদের নিজেদের তা তোমাদের কে দেবে? ১৩কোনো গোলাম দুই মনিবের সেবা করতে পারে না।
কারণ সে একজনকে ঘৃণা করবে ও অন্যজনকে মহব্বত করবে; অথবা সে একজনের প্রতি মনোযোগ দেবে ও অন্যজনকে তুচ্ছ করবে। তোমরা একই সাথে আল্লাহ ও ধন-সম্পত্তির সেবা করতে পারো না।”
১৪এসব কথা শুনে ফরিসিরা তাঁকে ঠাট্টা করতে লাগলেন, কারণ তারা টাকা-পয়সা বেশি ভালোবাসতেন। ১৫তাই তিনি তাদের বললেন, “আপনারা লোকদের সামনে নিজেদের দীনদার দেখিয়ে থাকেন কিন্তু আল্লাহ আপনাদের মনের অবস্থা জানেন। মানুষ যা সম্মানের বিষয় বলে মনে করে, আল্লাহর চোখে তা ঘৃণার যোগ্য।
১৬হযরত ইয়াহিয়া আ. পর্যন্ত তওরাত ও সহিফাগুলো কাজ করছিলো, আপনাদের পথ দেখাচ্ছিলো। তারপর থেকে আল্লাহর রাজ্যের সুখবর প্রচার করা হচ্ছে এবং সবাই জোর করে সেই রাজ্যে ঢুকতে চেষ্টা করছে। ১৭কিন্তু তওরাতের সব থেকে ছোটো একটি অক্ষরের একটি বিন্দুও বাদ পড়ার চেয়ে বরং আসমান-জমিন শেষ হওয়া সহজ।
১৮যে নিজের স্ত্রীকে তালাক দিয়ে আরেকজনকে বিয়ে করে, সে জিনা করে এবং যে কেউ স্বামীর কাছ থেকে কোনো তালাক পাওয়া স্ত্রীকে বিয়ে করে, সেও জিনা করে।
১৯এক ধনী লোক ছিলো। সে বেগুনি কাপড় ও অন্যান্য দামি জামা-কাপড় পরতো এবং প্রত্যেক দিন খুব জাঁক-জমকের সাথে আমোদ-প্রমোদ করতো। ২০তার গেইটের কাছে প্রায়ই লাসার নামে এক গরিব লোককে এনে রাখা হতো। তার সারা গায়ে ঘা ছিলো। ২১ধনী লোকটির টেবিল থেকে যে-খাবার পড়তো তা খেয়েই সে পেট ভরাতে চাইতো; এবং কুকুর এসে তার ঘা চাটতো।
২২এক সময় গরিব লোকটি মারা গেলো এবং ফেরেস্তারা এসে তাকে হযরত ইব্রাহিম আ.-র কাছে নিয়ে গেলেন। সেই ধনী লোকটিও মারা গেলো এবং তাকে দাফন করা হলো। ২৩কবরে খুব যন্ত্রণার মধ্যে থেকে সে ওপরের দিকে তাকালো এবং দূরে হযরত ইব্রাহিম আ. ও তার পাশে লাসারকে দেখতে পেলো। ২৪তখন সে চিৎকার করে বললো, ‘পিতা ইব্রাহিম, আমার প্রতি দয়া করুন এবং লাসারকে পাঠিয়ে দিন,
যেনো সে তার আঙ্গুলের মাথাটি পানিতে ডুবিয়ে আমার জিভ ঠাণ্ডা করে, কারণ এই আগুনের মধ্যে আমি বড়ো কষ্ট পাচ্ছি।’
২৫কিন্তু হযরত ইব্রাহিম আ. বললেন, ‘মনে করে দেখো, বাছা, তুমি যখন বেঁচে ছিলে, তখন কতো সুখভোগ করেছো আর লাসার কতো কষ্টভোগ করেছে। কিন্তু এখন সে এখানে সান্তনা পাচ্ছে আর তুমি কষ্ট পাচ্ছো। ২৬এছাড়া তোমাদের ও আমাদের মাঝে একটি বিরাট ফাঁকা জায়গা রয়েছে, যাতে ইচ্ছা করলেও কেউ এখান থেকে পার হয়ে তোমাদের কাছে যেতে এবং ওখান থেকে পার হয়ে আমাদের কাছে আসতে না পারে।’ ২৭সে বললো, ‘তাহলে পিতা, দয়া করে তাকে আমার বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দিন- ২৮কারণ সেখানে আমার আরো পাঁচ ভাই আছে- যেনো সে তাদেরকে সাবধান করতে পারে। তা না হলে তারাও তো এই যন্ত্রণার জায়গায় আসবে।’ ২৯ হযরত ইব্রাহিম আ. জবাব দিলেন, ‘তওরাত ও সহিফাগুলো তাদের কাছেই আছে। তারা ওগুলোর প্রতি মনোযোগ দিক।’ ৩০সে বললো, ‘না, না, পিতা ইব্রাহিম; মৃতদের মধ্য থেকে কেউ যদি তাদের কাছে যায়, তাহলেই তারা তওবা করবে।’ ৩১তিনি তাকে বললেন, ‘যদি তারা তওরাত ও সহিফাগুলোর কথা না শোনে, তাহলে মৃতদের মধ্য থেকে কেউ উঠলেও তারা ইমান আনবে না।’”
Facebook
WhatsApp
Telegram
Email
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ১
১,২মাননীয় থিয়ফিল, আমাদের মধ্যে যেসব ঘটনা ঘটেছে তা যারা প্রথম থেকে নিজের চোখে দেখেছেন ও আল্লাহর কালাম প্রচার করেছেন, তারা ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ২
১সেই সময় আগস্ত কাইসার তার গোটা সাম্রাজ্যে আদম-শুমারির হুকুম দিলেন। ২সিরিয়ার গভর্নর কুরিনিয়ের সময় এই প্রথমবারের মতো আদম-শুমারি হয়। ৩নাম ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ৩
১সম্রাট টাইবেরিয়াসের রাজত্বের পনের বছরের সময় পন্তিয়াস পিলাত যখন ইহুদিয়া প্রদেশের গভর্নর, হেরোদ গালিল প্রদেশ এবং তার ভাই ফিলিপ ইতুরিয়া ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ৪
১হযরত ইসা আ. আল্লাহর রুহে পূর্ণ হয়ে জর্দান থেকে ফিরে এলেন এবং সেই রুহের পরিচালনায় তাঁকে মরু প্রান্তরে যেতে হলো। ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ৫
১এক সময় হযরত ইসা আ. গিনেসরত লেকের পাড়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন এবং লোকেরা আল্লাহর কালাম শোনার জন্য তাঁর চারপাশে ভিড় করে ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ৬
১কোনো এক সাব্বাতে হযরত ইসা আ. ফসলের মাঠ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তাঁর হাওয়ারিরা শিষ ছিঁড়ে হাতে ঘষে ঘষে খেতে লাগলেন।২এতে কয়েকজন ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ৭
১তিনি লোকদের কাছে তাঁর সব কথা শেষ করে কফরনাহুমে চলে গেলেন। ২সেখানে একজন শত-সৈন্যের সেনাপতির এক গোলাম ছিলো, যে তার ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ৮
১এরপরই তিনি গ্রামে গ্রামে ও শহরে শহরে ঘুরে আল্লাহর রাজ্যের সুখবর প্রচার করতে লাগলেন। তাঁর সাথে সেই বারোজনও ছিলেন। ২কয়েকজন ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ৯
১অতঃপর তিনি সেই বারোজনকে একত্রে ডাকলেন এবং তাদেরকে সমস্ত ভূতের ওপরে ক্ষমতা ও অধিকার এবং রোগ ভালো করার ক্ষমতাও দিলেন। ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ১০
১অতঃপর মসিহ আরো সত্তরজনকে মনোনীত করলেন। তিনি নিজে যে যে গ্রামে ও যে যে জায়গায় যাবেন বলে ঠিক করেছিলেন, সেসব ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ১১
১তিনি কোনো এক জায়গায় মোনাজাত করছিলেন। মোনাজাত শেষ হলে তাঁর কোনো এক হাওয়ারি তাঁকে বললেন, “হুজুর, হযরত ইয়াহিয়া আ. যেভাবে ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ১২
১এর মধ্যে হাজার হাজার লোক এমনভাবে জড়ো হলো যে, তারা ঠেলাঠেলি করে একে অন্যের ওপর পড়তে লাগলো। তিনি প্রথমে তাঁর ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ১৩
১ঠিক ওই সময় যারা উপস্থিত ছিলো, তারা হযরত ইসা আ.কে বললো, গালিলের কিছু লোক যখন কোরবানি করছিলো, তখন তাদেরকে হত্যা ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ১৪
১এক সাব্বাতে হযরত ইসা আ. ফরিসিদের এক নেতার বাড়িতে খেতে গেলেন। তারা গভীরভাবে তাঁকে লক্ষ্য করছিলেন। ২ঠিক ওই সময় তাঁর ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু ১৫
১সমস্ত কর-আদায়কারী ও গুনাহগাররা যখন তাঁর কথা শোনার জন্য তাঁর কাছে আসছিলো, ২তখন ফরিসিরা ও আলিমরা বিরক্তি প্রকাশ করে বলতে ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ১৬
১অতঃপর তিনি সাহাবিদেরকে বললেন, “কোনো এক ধনী লোকের ম্যানেজারকে এই বলে দোষ দেয়া হলো যে, সে তার মালিকের ধন-সম্পত্তি নষ্ট ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ১৭
১হযরত ইসা আ. তাঁর সাহাবিদের বললেন, “বাধা অবশ্যই আসবে কিন্তু দুর্ভাগ্য সেই লোকের, যার মধ্য দিয়ে বাধা আসে! ২কেউ যদি ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ১৮
১মোনাজাতের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে হযরত ইসা আ. তাদেরকে একটি দৃষ্টান্ত দিলেন, যেনো তারা সব সময় মোনাজাত করেন এবং নিরাশ না হোন। ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ১৯
১তিনি জিরিহোতে এসে শহরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন। ২সেখানে সক্কেয় নামে এক লোক ছিলেন। তিনি প্রধান কর-আদায়কারী এবং ধনী ছিলেন। ৩হযরত ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ২০
১একদিন তিনি যখন বায়তুল-মোকাদ্দসে লোকদের শিক্ষা দিচ্ছিলেন এবং ইঞ্জিল প্রচার করছিলেন, তখন বুজুর্গদের সাথে প্রধান ইমামেরা ও আলিমরা এলেন। ২তারা ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ২১
১পরে তিনি চেয়ে দেখলেন, ধনী লোকেরা বায়তুল-মোকাদ্দসের দানবাক্সে তাদের দান রাখছে। ২তিনি এও দেখলেন যে, এক গরিব বিধবা ছোট্ট দুটো ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ২২
১সেই সময় ইদুল-মাত্ছ কাছে এসে গিয়েছিলো। এটিকে ইদুল-ফেসাখও বলা হয়। ২প্রধান ইমামেরা ও আলিমরা তাঁকে হত্যা করার পথ খুঁজছিলেন, কারণ ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ২৩
১তখন মহাসভার সবাই উঠে হযরত ইসা আ.কে পিলাতের কাছে নিয়ে গেলেন। ২তারা এই বলে তাঁর বিরুদ্ধে দোষ দিতে লাগলেন, “আমরা ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ২৪
১কিন্তু সপ্তাহের প্রথম দিন খুব সকালে সেই মহিলারা তাদের তৈরি করা সুগন্ধি মসলা নিয়ে কবরের কাছে গেলেন। ২তারা দেখলেন, কবরের ...