১সমস্ত কর-আদায়কারী ও গুনাহগাররা যখন তাঁর কথা শোনার জন্য তাঁর কাছে আসছিলো, ২তখন ফরিসিরা ও আলিমরা বিরক্তি প্রকাশ করে বলতে লাগলেন, “এই লোকটি গুনাহগারদের সাথে মেলামেশা ও খাওয়া-দাওয়া করে।”
৩তখন তিনি তাদের এই দৃষ্টান্ত দিলেন-
৪“মনে করো তোমাদের মধ্যে কোনো একজনের একশটি ভেড়া আছে এবং তাদের মধ্য থেকে একটি যদি হারিয়ে যায়, তাহলে কি সে নিরানব্বইটি মাঠে রেখে সেই একটিকে না পাওয়া পর্যন্ত খুঁজতে থাকে না? ৫সেটি খুঁজে পাবার পর সে খুশি হয়ে তাকে কাঁধে তুলে নেয়। ৬এবং পরে বাড়ি ফিরে গিয়ে তার বন্ধু-বান্ধব ও প্রতিবেশীদের একত্রে ডেকে বলে, ‘আমার সাথে আনন্দ করো, কারণ আমার হারানো ভেড়াটি আমি খুঁজে পেয়েছি।’ ৭আমি আপনাদের বলছি, ঠিক সেভাবে, তওবা করার প্রয়োজন নেই, এমন নিরানব্বইজন ধার্মিকের চেয়ে বরং একজন গুনাহগার তওবা করলে বেহেস্তে আরো বেশি আনন্দ হয়।
৮অথবা এক মহিলার দশটি রূপার টাকা আছে, সে যদি তার ভেতর থেকে একটি হারিয়ে ফেলে, তাহলে বাতি জ্বেলে ঘর ঝাড় দিয়ে না পাওয়া পর্যন্ত সে কি তা সতর্কতার সাথে খুঁজতে থাকে না? ৯যখন সে তা খুঁজে পায়, তখন তার বন্ধু-বান্ধব ও প্রতিবেশীদের একত্রে ডেকে বলে, ‘আমার সাথে আনন্দ করো, কারণ আমার হারানো টাকাটি আমি খুঁজে পেয়েছি।’ ১০আমি আপনাদের বলছি, ঠিক সেভাবে, একজন গুনাহগার তওবা করলে আল্লাহর ফেরেস্তাদের মধ্যে আনন্দ হয়।”
১১অতঃপর হযরত ইসা আ. বললেন, “এক লোকের দুই ছেলে ছিলো। ১২ছোটো ছেলেটি তার বাবাকে বললো, ‘বাবা, তোমার সম্পত্তিতে আমার যে অংশ আছে তা আমাকে দাও।’ তাতে সে তার দুই ছেলের মধ্যে তার স¤পত্তি ভাগ করে দিলো। ১৩কিছুদিন পর ছোটো ছেলেটি তার সম্পত্তি বিক্রি করে টাকাপয়সা নিয়ে দূর দেশে চলে গেলো। সেখানে সে খারাপ পথে জীবন কাটিয়ে তার সব টাকাপয়সা উড়িয়ে দিলো। ১৪যখন সে তার সবকিছু খরচ করে ফেললো, তখন সেই দেশের সব জায়গায় ভীষণ দুর্ভিক্ষ দেখা দিলো এবং সে খুব কষ্টে পড়লো। ১৫তখন সে গিয়ে সেই দেশের এক লোকের কাছে চাকরি চাইলো। লোকটি তাকে তার শূকর চরাতে মাঠে পাঠিয়ে দিলো। ১৬শূকরে যে গুড়োগাড়া খেতো, সে তাই খেয়ে পেট ভরাতে চাইতো কিন্তু কেউ তাকে কিছুই দিতো না।
১৭তার চেতনা হলে সে মনে মনে বললো, ‘আমার বাবার কতো মজুর কতো বেশি খাবার পাচ্ছে অথচ আমি এখানে না খেয়ে মরছি!
১৮আমি আমার বাবার কাছে গিয়ে বলবো, “বাবা, আমি আল্লাহ ও তোমার বিরুদ্ধে গুনাহ করেছি। ১৯তোমার ছেলে বলে পরিচয় দেবার যোগ্য আমি নই। তোমার মজুরদের মতো করে আমাকে রাখো।” ২০সুতরাং সে উঠে তার বাবার কাছে গেলো। সে দূরে থাকতেই তাকে দেখে তার বাবার খুব মমতা হলো। ২১তিনি দৌড়ে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে চুমু দিলেন। তখন ছেলেটি বললো, ‘বাবা, আমি আল্লাহ ও তোমার বিরুদ্ধে গুনাহ করেছি। আমি তোমার ছেলে বলে পরিচয় দেবার যোগ্য নই।’ ২২কিন্তু তার বাবা তার গোলামদের বললেন, ‘তাড়াতাড়ি করে সবচেয়ে ভালো জুব্বাটি এনে ওকে পরিয়ে দাও। ওর হাতে আংটি ও পায়ে জুতা দাও, ২৩আর মোটাসোটা বাছুরটি এনে জবাই করো। এসো, আমরা খাওয়া-দাওয়া করে আনন্দ করি। ২৪কারণ আমার এই ছেলেটি মারা গিয়েছিলো কিন্তু আবার বেঁচে উঠেছে। হারিয়ে গিয়েছিলো, পাওয়া গেছে!’ এবং তারা আমোদ-প্রমোদ করতে লাগলো।
২৫সেই সময় তার বড়ো ছেলেটি মাঠে ছিলো। বাড়ির কাছে এসে সে নাচ ও গান-বাজনার শব্দ শুনতে পেলো। ২৬সে একজন গোলামকে ডেকে জিজ্ঞেস করলো, ‘এসব কী হচ্ছে?’ ২৭সে জবাব দিলো, ‘আপনার ভাই এসেছে এবং আপনার বাবা তাকে সুস্থ অবস্থায় ফিরে পেয়েছেন বলে মোটাসোটা বাছুরটি জবাই করেছেন।’ ২৮তখন সে রাগ করে ভেতরে যেতে চাইলো না। তার বাবা বেরিয়ে এসে তাকে সাধাসাধি করতে লাগলো। ২৯কিন্তু সে তার বাবাকে বললো, ‘দেখো, এতো বছর ধরে আমি গোলামদের মতো তোমার কাজ করে আসছি, একবারও আমি তোমার আদেশের অবাধ্য হইনি। তবুও আমার বন্ধুদের সাথে আমোদ-প্রমোদ করার জন্য তুমি কখনো আমাকে একটি ছাগলের বাচ্চাও দাওনি। ৩০কিন্তু তোমার এই ছেলে, যে পতিতাদের পেছনে তোমার টাকাপয়সা উড়িয়ে দিয়েছে, সে যখন ফিরে এসেছে, তখন তার জন্য তুমি মোটাসোটা বাছুরটি জবাই করেছো!’ ৩১তার বাবা তাকে বললেন, ‘বাবা, তুমি তো সব সময়ই আমার সাথে সাথে আছো। আমার যা-কিছু আছে, সবই তো তোমার। ৩২আমাদের অবশ্যই খুশি হয়ে আনন্দ-উল্লাস করা উচিত। কারণ তোমার ভাই মারা গিয়েছিলো, আবার বেঁচে উঠেছে; সে হারিয়ে গিয়েছিলো, আবার তাকে পাওয়া গেছে।’”
Facebook
WhatsApp
Telegram
Email
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ১
১,২মাননীয় থিয়ফিল, আমাদের মধ্যে যেসব ঘটনা ঘটেছে তা যারা প্রথম থেকে নিজের চোখে দেখেছেন ও আল্লাহর কালাম প্রচার করেছেন, তারা ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ২
১সেই সময় আগস্ত কাইসার তার গোটা সাম্রাজ্যে আদম-শুমারির হুকুম দিলেন। ২সিরিয়ার গভর্নর কুরিনিয়ের সময় এই প্রথমবারের মতো আদম-শুমারি হয়। ৩নাম ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ৩
১সম্রাট টাইবেরিয়াসের রাজত্বের পনের বছরের সময় পন্তিয়াস পিলাত যখন ইহুদিয়া প্রদেশের গভর্নর, হেরোদ গালিল প্রদেশ এবং তার ভাই ফিলিপ ইতুরিয়া ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ৪
১হযরত ইসা আ. আল্লাহর রুহে পূর্ণ হয়ে জর্দান থেকে ফিরে এলেন এবং সেই রুহের পরিচালনায় তাঁকে মরু প্রান্তরে যেতে হলো। ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ৫
১এক সময় হযরত ইসা আ. গিনেসরত লেকের পাড়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন এবং লোকেরা আল্লাহর কালাম শোনার জন্য তাঁর চারপাশে ভিড় করে ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ৬
১কোনো এক সাব্বাতে হযরত ইসা আ. ফসলের মাঠ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তাঁর হাওয়ারিরা শিষ ছিঁড়ে হাতে ঘষে ঘষে খেতে লাগলেন।২এতে কয়েকজন ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ৭
১তিনি লোকদের কাছে তাঁর সব কথা শেষ করে কফরনাহুমে চলে গেলেন। ২সেখানে একজন শত-সৈন্যের সেনাপতির এক গোলাম ছিলো, যে তার ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ৮
১এরপরই তিনি গ্রামে গ্রামে ও শহরে শহরে ঘুরে আল্লাহর রাজ্যের সুখবর প্রচার করতে লাগলেন। তাঁর সাথে সেই বারোজনও ছিলেন। ২কয়েকজন ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ৯
১অতঃপর তিনি সেই বারোজনকে একত্রে ডাকলেন এবং তাদেরকে সমস্ত ভূতের ওপরে ক্ষমতা ও অধিকার এবং রোগ ভালো করার ক্ষমতাও দিলেন। ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ১০
১অতঃপর মসিহ আরো সত্তরজনকে মনোনীত করলেন। তিনি নিজে যে যে গ্রামে ও যে যে জায়গায় যাবেন বলে ঠিক করেছিলেন, সেসব ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ১১
১তিনি কোনো এক জায়গায় মোনাজাত করছিলেন। মোনাজাত শেষ হলে তাঁর কোনো এক হাওয়ারি তাঁকে বললেন, “হুজুর, হযরত ইয়াহিয়া আ. যেভাবে ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ১২
১এর মধ্যে হাজার হাজার লোক এমনভাবে জড়ো হলো যে, তারা ঠেলাঠেলি করে একে অন্যের ওপর পড়তে লাগলো। তিনি প্রথমে তাঁর ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ১৩
১ঠিক ওই সময় যারা উপস্থিত ছিলো, তারা হযরত ইসা আ.কে বললো, গালিলের কিছু লোক যখন কোরবানি করছিলো, তখন তাদেরকে হত্যা ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ১৪
১এক সাব্বাতে হযরত ইসা আ. ফরিসিদের এক নেতার বাড়িতে খেতে গেলেন। তারা গভীরভাবে তাঁকে লক্ষ্য করছিলেন। ২ঠিক ওই সময় তাঁর ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু ১৫
১সমস্ত কর-আদায়কারী ও গুনাহগাররা যখন তাঁর কথা শোনার জন্য তাঁর কাছে আসছিলো, ২তখন ফরিসিরা ও আলিমরা বিরক্তি প্রকাশ করে বলতে ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ১৬
১অতঃপর তিনি সাহাবিদেরকে বললেন, “কোনো এক ধনী লোকের ম্যানেজারকে এই বলে দোষ দেয়া হলো যে, সে তার মালিকের ধন-সম্পত্তি নষ্ট ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ১৭
১হযরত ইসা আ. তাঁর সাহাবিদের বললেন, “বাধা অবশ্যই আসবে কিন্তু দুর্ভাগ্য সেই লোকের, যার মধ্য দিয়ে বাধা আসে! ২কেউ যদি ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ১৮
১মোনাজাতের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে হযরত ইসা আ. তাদেরকে একটি দৃষ্টান্ত দিলেন, যেনো তারা সব সময় মোনাজাত করেন এবং নিরাশ না হোন। ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ১৯
১তিনি জিরিহোতে এসে শহরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন। ২সেখানে সক্কেয় নামে এক লোক ছিলেন। তিনি প্রধান কর-আদায়কারী এবং ধনী ছিলেন। ৩হযরত ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ২০
১একদিন তিনি যখন বায়তুল-মোকাদ্দসে লোকদের শিক্ষা দিচ্ছিলেন এবং ইঞ্জিল প্রচার করছিলেন, তখন বুজুর্গদের সাথে প্রধান ইমামেরা ও আলিমরা এলেন। ২তারা ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ২১
১পরে তিনি চেয়ে দেখলেন, ধনী লোকেরা বায়তুল-মোকাদ্দসের দানবাক্সে তাদের দান রাখছে। ২তিনি এও দেখলেন যে, এক গরিব বিধবা ছোট্ট দুটো ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ২২
১সেই সময় ইদুল-মাত্ছ কাছে এসে গিয়েছিলো। এটিকে ইদুল-ফেসাখও বলা হয়। ২প্রধান ইমামেরা ও আলিমরা তাঁকে হত্যা করার পথ খুঁজছিলেন, কারণ ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ২৩
১তখন মহাসভার সবাই উঠে হযরত ইসা আ.কে পিলাতের কাছে নিয়ে গেলেন। ২তারা এই বলে তাঁর বিরুদ্ধে দোষ দিতে লাগলেন, “আমরা ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ২৪
১কিন্তু সপ্তাহের প্রথম দিন খুব সকালে সেই মহিলারা তাদের তৈরি করা সুগন্ধি মসলা নিয়ে কবরের কাছে গেলেন। ২তারা দেখলেন, কবরের ...