অডিও শুনতে এখানে ক্লিক করুন
১সেই সময় আগস্ত কাইসার তার গোটা সাম্রাজ্যে আদম-শুমারির হুকুম দিলেন। ২সিরিয়ার গভর্নর কুরিনিয়ের সময় এই প্রথমবারের মতো আদম-শুমারি হয়। ৩নাম লেখানোর জন্য প্রত্যেকে নিজ নিজ গ্রামে গেলো।
৪হযরত ইউসুফ আ.ও গালিল প্রদেশের নাসরত গ্রাম থেকে ইহুদিয়ার বৈতলেহেম নামক দাউদের শহরে গেলেন, কারণ তিনি ছিলেন হযরত দাউদ আ.র বংশের লোক। ৫তিনি হযরত মরিয়ম রা.কে- যার সাথে তার বিয়ে ঠিক হয়েছিলো এবং যিনি ছিলেন সন্তান-সম্ভবা- সাথে নিয়ে নাম লেখাতে গেলেন। ৬সেখানে থাকতেই তার সন্তান জন্মের সময় এসে গেলো। ৭এবং তিনি তার প্রথম সন্তান, একটি ছেলে, জন্ম দিলেন ও ছেলেটিকে কাপড়ে জড়িয়ে জাবপাত্রে রাখলেন; কারণ তাদের থাকার জন্য মুসাফিরখানায় কোনো জায়গা ছিলো না।
৮ওই এলাকার রাখালেরা মাঠে বসবাস করছিলো এবং রাতে তারা তাদের ভেড়ার পাল পাহারা দিচ্ছিলো। ৯এমন সময় আল্লাহর এক ফেরেস্তা তাদের সামনে উপস্থিত হলেন এবং আল্লাহর মহিমা তাদের চারদিকে উজ্জ্বল হয়ে দেখা দিলো। এতে রাখালেরা খুব ভয় পেলো। ১০কিন্তু ফেরেস্তা তাদের বললেন, “ভয় করো না, কারণ আমি তোমাদের কাছে মহানন্দের সুখবর এনেছি। এই আনন্দ সব লোকেরই জন্য। ১১আজ দাউদের শহরে তোমাদের নাজাতদাতা জন্মেছেন। তিনিই মসিহ, তিনিই মালিক। ১২তোমাদের জন্য তাঁর চিহ্ন হলো এই- তোমরা কাপড়ে জড়ানো এবং জাবপাত্রে শোয়ানো একটি শিশুকে দেখতে পাবে।” ১৩এ-সময় হঠাৎ সেই ফেরেস্তার সাথে সেখানে আরো অনেক ফেরেস্তাকে দেখা গেলো। তারা আল্লাহর প্রশংসা করে বলতে লাগলেন, ১৪“বেহেস্তের সর্বত্র আল্লাহর প্রশংসা হোক এবং দুনিয়াতে যাদের ওপর তিনি সন্তুষ্ট, তাদের প্রতি শান্তি হোক।”
১৫ফেরেস্তারা তাদের কাছ থেকে বেহেস্তে চলে যাবার পর রাখালেরা একে অন্যকে বললো, “চলো, আমরা বৈতলেহেমে যাই এবং যে-ঘটনার কথা আল্লাহপাক আমাদের জানালেন তা গিয়ে দেখি।” ১৬তারা তাড়াতাড়ি গিয়ে হযরত মরিয়ম রা., হযরত ইউসুফ আ. ও জাবপাত্রে শোয়ানো সেই শিশুটিকে দেখতে পেলো। ১৭তারা যখন দেখলো, তখন তাদের কাছে ওই শিশুটির বিষয়ে যা বলা হয়েছিলো তা লোকদের জানালো। ১৮রাখালদের কথা শুনে সবাই আশ্চর্য হলো। ১৯কিন্তু মরিয়ম এই সমস্ত কথা তার মনে গেঁথে রাখলেন এবং চিন্তা করতে থাকলেন।
২০রাখালদের কাছে যা বলা হয়েছিলো, সবকিছু সেই রকম দেখে ও শুনে তারা আল্লাহর প্রশংসা ও গৌরব করতে করতে ফিরে গেলো। ২১আট দিন পর শিশুটির খতনা করানোর সময় হলো এবং তাঁর নাম রাখা হলো হযরত ইসা আ.। মায়ের গর্ভে আসার আগেই ফেরেস্তা তাঁর এই নাম দিয়েছিলেন।
২২পরে হযরত মুসা আ.র শরিয়ত অনুসারে তাদের পাকসাফ হওয়ার সময় এলে তারা তাঁকে আল্লাহর সামনে উপস্থিত করার জন্য জেরুসালেমে নিয়ে গেলেন। ২৩কারণ আল্লাহর শরিয়তে লেখা আছে, “প্রত্যেক প্রথমজাত ছেলে-সন্তানকে আল্লাহর জন্য পবিত্র বলে ধরা হবে।” ২৪এবং তারা আল্লাহর শরিয়ত অনুসারে “দুটো ঘুঘু কিম্বা দুটো কবুতরের বাচ্চা” কোরবানি দিলেন।
২৫জেরুসালেমে তখন হযরত সামাউন আ. নামে একজন দীনদার ও আল্লাহভক্ত লোক ছিলেন। তিনি বনি-ইস্রাইলের নাজাতের জন্য অপেক্ষা করছিলেন এবং আল্লাহর রুহ তার ওপর ছিলেন। ২৬আল্লাহর রুহ তার কাছে প্রকাশ করেছিলেন যে, আল্লাহর সেই মসিহকে না দেখে তিনি ইন্তেকাল করবেন না। ২৭হযরত সামাউন আ. আল্লাহর রুহের দ্বারা চালিত হয়ে বায়তুল-মোকাদ্দসে এলেন। আর শিশু- হযরত ইসা আ.র বাবা-মা শরিয়ত অনুসারে যা ফরজ তা আদায় করতে তাঁকে সেখানে নিয়ে এলেন। ২৮হযরত সামাউন আ. তখন তাঁকে কোলে নিলেন এবং আল্লাহর প্রশংসা করে বললেন, ২৯“পরওয়ারদেগার, তুমি তোমার কথামতো তোমার গোলামকে এখন শান্তিতে বিদায় দিচ্ছো। ৩০কারণ আমার চোখ তোমার নাজাত দেখেছে, ৩১যা তুমি সমস্ত মানুষের সামনে প্রস্তুত করেছো। ৩২অইহুদিদের কাছে এটি পথ দেখানোর আলো, আর তোমার ইস্রাইলের কাছে গৌরব।”
৩৩শিশুটির বিষয়ে যা বলা হলো, এতে তাঁর মা ও হযরত ইউসুফ আ. খুবই আশ্চর্য হলেন। ৩৪পরে হযরত সামাউন আ. তাদের দোয়া করলেন এবং তাঁর মা হযরত মরিয়ম রা.কে বললেন, “এই শিশুটি হযরত ইয়াকুব আ.র বংশের অনেকের উত্থান-পতনের কারণ হবেন এবং এমন একটি চিহ্ন হবেন, যার বিরুদ্ধে অনেকেই কথা বলবে। ৩৫তাতে অনেকের মনের চিন্তা প্রকাশ হয়ে পড়বে আর তরবারির আঘাতের মতো তোমার অন্তর বিদ্ধ করবে।
৩৬সেখানে হান্না নামে একজন নবিও ছিলেন। তিনি আসের বংশের ফানুয়েলের মেয়ে। তার অনেক বয়স হয়েছিলো।
৩৭সাত বছর স্বামীর ঘর করার পর চুরাশি বছর পর্যন্ত তিনি বিধবার জীবন কাটাচ্ছিলেন। তিনি বায়তুল-মোকাদ্দস ছেড়ে কোথাও যেতেন না, বরং রোজা ও মোনাজাতের মধ্য দিয়ে দিনরাত এবাদত করতেন। ৩৮তিনিও ঠিক সেই সময় এগিয়ে এসে আল্লাহর প্রশংসা করতে লাগলেন; এবং যারা জেরুসালেমের মুক্তির অপেক্ষায় ছিলো, তাদের কাছে শিশুটির বিষয়ে কথা বলতে লাগলেন। ৩৯আল্লাহর শরিয়ত অনুসারে সবকিছু শেষ করে হযরত ইউসুফ আ. ও হযরত মরিয়ম রা. গালিলে, তাদের নিজেদের গ্রাম নাসরতে ফিরে গেলেন।
৪০শিশু- হযরত ইসা আ. বয়সে বেড়ে বলিষ্ঠ হয়ে উঠলেন এবং জ্ঞানে পূর্ণ হতে থাকলেন। আর তাঁর ওপরে আল্লাহর রহমত ছিলো। ৪১প্রত্যেক বছর ইদুল-ফেসাখের সময় তাঁর মা ও হযরত ইউসুফ আ. জেরুসালেমে যেতেন। ৪২এবং তাঁর বয়স যখন বারো বছর, তখন নিয়ম অনুসারে তারা সেই ইদে গেলেন। ৪৩ইদের শেষে তারা যখন বাড়ি ফিরছিলেন, তখন হযরত ইসা আ. জেরুসালেমেই থেকে গেলেন কিন্তু তাঁর মা ও হযরত ইউসুফ আ. সেকথা জানতেন না। ৪৪তিনি সঙ্গীদের মাঝে আছেন মনে করে তারা এক দিনের পথ চলে গেলেন। পরে তারা তাদের আত্মীয় ও জানাশোনা লোকদের মধ্যে তাঁর খোঁজ করতে লাগলেন। ৪৫তাঁকে না পেয়ে, খোঁজ করতে করতে, তারা আবার জেরুসালেমে ফিরে গেলেন।
৪৬তিন দিন পর তারা তাঁকে বায়তুল-মোকাদ্দসে পেলেন। তিনি আলিমদের মধ্যে বসে তাদের কথা শুনছিলেন ও তাদের প্রশ্ন জিজ্ঞেস করছিলেন। ৪৭যারা তাঁর কথা শুনছিলেন, তারা সবাই তাঁর জ্ঞান দেখে ও তাঁর জবাব শুনে অবাক হলেন।
৪৮তাঁর মা ও হযরত ইউসুফ আ. তাঁকে দেখে আশ্চর্য হলেন। তাঁর মা তাঁকে বললেন, “বাবা, তুমি আমাদের সাথে কেনো এমন করলে? দেখো, তোমার বাবা ও আমি কতো ব্যাকুল হয়ে তোমার খোঁজ করছিলাম।” ৪৯তিনি তাদের বললেন, “তোমরা কেনো আমার খোঁজ করছিলে? তোমরা কি জানতে না যে, আমার প্রতিপালকের ঘরে আমাকে থাকতে হবে?” ৫০কিন্তু তিনি যা বললেন তা তারা বুঝলেন না।
৫১এরপর তিনি তাদের সাথে নাসরতে ফিরে গেলেন এবং তাদের বাধ্য হয়েই রইলেন। তাঁর মা এই সবকিছু মনে গেঁথে রাখলেন। ৫২ হযরত ইসা আ. জ্ঞানে, বয়সে এবং আল্লাহ ও মানুষের মহব্বতে বেড়ে উঠতে লাগলেন।
Facebook
WhatsApp
Telegram
Email
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ১
১,২মাননীয় থিয়ফিল, আমাদের মধ্যে যেসব ঘটনা ঘটেছে তা যারা প্রথম থেকে নিজের চোখে দেখেছেন ও আল্লাহর কালাম প্রচার করেছেন, তারা ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ২
১সেই সময় আগস্ত কাইসার তার গোটা সাম্রাজ্যে আদম-শুমারির হুকুম দিলেন। ২সিরিয়ার গভর্নর কুরিনিয়ের সময় এই প্রথমবারের মতো আদম-শুমারি হয়। ৩নাম ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ৩
১সম্রাট টাইবেরিয়াসের রাজত্বের পনের বছরের সময় পন্তিয়াস পিলাত যখন ইহুদিয়া প্রদেশের গভর্নর, হেরোদ গালিল প্রদেশ এবং তার ভাই ফিলিপ ইতুরিয়া ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ৪
১হযরত ইসা আ. আল্লাহর রুহে পূর্ণ হয়ে জর্দান থেকে ফিরে এলেন এবং সেই রুহের পরিচালনায় তাঁকে মরু প্রান্তরে যেতে হলো। ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ৫
১এক সময় হযরত ইসা আ. গিনেসরত লেকের পাড়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন এবং লোকেরা আল্লাহর কালাম শোনার জন্য তাঁর চারপাশে ভিড় করে ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ৬
১কোনো এক সাব্বাতে হযরত ইসা আ. ফসলের মাঠ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তাঁর হাওয়ারিরা শিষ ছিঁড়ে হাতে ঘষে ঘষে খেতে লাগলেন।২এতে কয়েকজন ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ৭
১তিনি লোকদের কাছে তাঁর সব কথা শেষ করে কফরনাহুমে চলে গেলেন। ২সেখানে একজন শত-সৈন্যের সেনাপতির এক গোলাম ছিলো, যে তার ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ৮
১এরপরই তিনি গ্রামে গ্রামে ও শহরে শহরে ঘুরে আল্লাহর রাজ্যের সুখবর প্রচার করতে লাগলেন। তাঁর সাথে সেই বারোজনও ছিলেন। ২কয়েকজন ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ৯
১অতঃপর তিনি সেই বারোজনকে একত্রে ডাকলেন এবং তাদেরকে সমস্ত ভূতের ওপরে ক্ষমতা ও অধিকার এবং রোগ ভালো করার ক্ষমতাও দিলেন। ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ১০
১অতঃপর মসিহ আরো সত্তরজনকে মনোনীত করলেন। তিনি নিজে যে যে গ্রামে ও যে যে জায়গায় যাবেন বলে ঠিক করেছিলেন, সেসব ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ১১
১তিনি কোনো এক জায়গায় মোনাজাত করছিলেন। মোনাজাত শেষ হলে তাঁর কোনো এক হাওয়ারি তাঁকে বললেন, “হুজুর, হযরত ইয়াহিয়া আ. যেভাবে ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ১২
১এর মধ্যে হাজার হাজার লোক এমনভাবে জড়ো হলো যে, তারা ঠেলাঠেলি করে একে অন্যের ওপর পড়তে লাগলো। তিনি প্রথমে তাঁর ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ১৩
১ঠিক ওই সময় যারা উপস্থিত ছিলো, তারা হযরত ইসা আ.কে বললো, গালিলের কিছু লোক যখন কোরবানি করছিলো, তখন তাদেরকে হত্যা ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ১৪
১এক সাব্বাতে হযরত ইসা আ. ফরিসিদের এক নেতার বাড়িতে খেতে গেলেন। তারা গভীরভাবে তাঁকে লক্ষ্য করছিলেন। ২ঠিক ওই সময় তাঁর ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু ১৫
১সমস্ত কর-আদায়কারী ও গুনাহগাররা যখন তাঁর কথা শোনার জন্য তাঁর কাছে আসছিলো, ২তখন ফরিসিরা ও আলিমরা বিরক্তি প্রকাশ করে বলতে ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ১৬
১অতঃপর তিনি সাহাবিদেরকে বললেন, “কোনো এক ধনী লোকের ম্যানেজারকে এই বলে দোষ দেয়া হলো যে, সে তার মালিকের ধন-সম্পত্তি নষ্ট ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ১৭
১হযরত ইসা আ. তাঁর সাহাবিদের বললেন, “বাধা অবশ্যই আসবে কিন্তু দুর্ভাগ্য সেই লোকের, যার মধ্য দিয়ে বাধা আসে! ২কেউ যদি ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ১৮
১মোনাজাতের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে হযরত ইসা আ. তাদেরকে একটি দৃষ্টান্ত দিলেন, যেনো তারা সব সময় মোনাজাত করেন এবং নিরাশ না হোন। ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ১৯
১তিনি জিরিহোতে এসে শহরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন। ২সেখানে সক্কেয় নামে এক লোক ছিলেন। তিনি প্রধান কর-আদায়কারী এবং ধনী ছিলেন। ৩হযরত ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ২০
১একদিন তিনি যখন বায়তুল-মোকাদ্দসে লোকদের শিক্ষা দিচ্ছিলেন এবং ইঞ্জিল প্রচার করছিলেন, তখন বুজুর্গদের সাথে প্রধান ইমামেরা ও আলিমরা এলেন। ২তারা ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ২১
১পরে তিনি চেয়ে দেখলেন, ধনী লোকেরা বায়তুল-মোকাদ্দসের দানবাক্সে তাদের দান রাখছে। ২তিনি এও দেখলেন যে, এক গরিব বিধবা ছোট্ট দুটো ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ২২
১সেই সময় ইদুল-মাত্ছ কাছে এসে গিয়েছিলো। এটিকে ইদুল-ফেসাখও বলা হয়। ২প্রধান ইমামেরা ও আলিমরা তাঁকে হত্যা করার পথ খুঁজছিলেন, কারণ ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ২৩
১তখন মহাসভার সবাই উঠে হযরত ইসা আ.কে পিলাতের কাছে নিয়ে গেলেন। ২তারা এই বলে তাঁর বিরুদ্ধে দোষ দিতে লাগলেন, “আমরা ...
ইবনুল-ইনসান: রুকু – ২৪
১কিন্তু সপ্তাহের প্রথম দিন খুব সকালে সেই মহিলারা তাদের তৈরি করা সুগন্ধি মসলা নিয়ে কবরের কাছে গেলেন। ২তারা দেখলেন, কবরের ...