মামলুকাতুল্লাহ: রুকু ২৫ ও ২৬

76368
Total
Visitors
অডিও শুনতে এখানে ক্লিক করুন

রুকু ২৫

১তখন বেহেস্তি রাজ্য হবে এমন দশ কুমারীর মতো, যারা বরকে বরণ করার জন্য তাদের বাতি নিয়ে বাইরে গেলো। ২তাদের মধ্যে পাঁচজন ছিলো বোকা এবং পাঁচজন ছিলো বুদ্ধিমতী। ৩বোকারা তাদের বাতি সাথে নিলো ঠিকই কিন্তু সাথে করে তেল নিলো না। ৪আর বুদ্ধিমতীরা তাদের বাতির সাথে আলাদা পাত্রে করে তেলও নিলো।

৫বর আসতে দেরি হওয়াতে তারা সবাই ঝিমাতে-ঝিমাতে ঘুমিয়ে পড়লো। ৬কিন্তু মাঝরাতে চিৎকার শোনা গেলো, ‘দেখো, বর আসছে! তাকে বরণ করতে বেরিয়ে এসো।’ ৭তখন সেই কুমারীরা উঠে তাদের বাতি ঠিকঠাক করলো।

৮বোকারা বুদ্ধিমতীদের বললো, ‘তোমাদের তেল থেকে আমাদের কিছু তেল দাও; কারণ আমাদের বাতি নিভে যাচ্ছে।’ ৯কিন্তু বুদ্ধিমতীরা জবাব দিলো, ‘না! তেল যা আছে তাতে আমাদের ও তোমাদের কুলাবে না। তোমরা বরং দোকানে গিয়ে নিজেদের জন্য তেল কিনে আনো।’ ১০তারা তেল কিনতে গেলো আর তখনই বর এসে পড়লো। যারা প্রস্তুত ছিলো তারা তার সাথে বিয়ে-উৎসবে যোগ দিলো এবং দরজা বন্ধ করে দেয়া হলো। ১১পরে অন্য কুমারীরা এসে বললো, ‘মালিক, আমাদের জন্য দরজাটি খুলুন।’ ১২কিন্তু উত্তরে সে বললো, ‘আমি সত্যিই বলছি, আমি তোমাদের চিনি না।’

১৩সুতরাং সতর্ক থাকো। কারণ সেই দিন বা সেই সময়ের কথা তোমরা জানোই না।

১৪মনে করো, কোনো এক লোক ভ্রমণে যাচ্ছে। সে তার গোলামদের ডেকে তার ধন-সম্পত্তির দায়িত্ব তাদের হাতে তুলে দিলো। ১৫সে একজনকে পাঁচ হাজার, একজনকে দু’হাজার এবং একজনকে এক হাজার দিনার দিলো। প্রত্যেককে তার ক্ষমতা অনুসারে দিলো। তারপর ভ্রমণে বেরিয়ে গেলো। ১৬যে পাঁচ হাজার দিনার পেলো, সে তখনই তা দিয়ে ব্যবসা শুরু করলো এবং আরো পাঁচ হাজার দিনার লাভ করলো। ১৭যে দু’হাজার দিনার পেলো, সেও একইভাবে আরো দু’হাজার দিনার লাভ করলো। ১৮কিন্তু যে এক হাজার দিনার পেলো, সে গিয়ে মাটিতে গর্ত খুঁড়ে তার মালিকের টাকাগুলো সেখানে লুকিয়ে রাখলো।

১৯অনেকদিন পর ওই গোলামদের মালিক ফিরে এসে তাদের কাছে হিসেব চাইলো। ২০অতঃপর যে পাঁচ হাজার দিনার পেয়েছিলো, সে আরো পাঁচ হাজার দিনার নিয়ে এসে বললো, ‘মালিক, আপনি আমাকে পাঁচ হাজার দিনার দিয়েছিলেন; ২১দেখুন, আমি আরো পাঁচ হাজার দিনার লাভ করেছি।’ তার মালিক তাকে বললো, ‘বেশ করেছো, তুমি উত্তম ও বিশ্বস্ত গোলাম। তুমি অল্প বিষয়ে বিশ্বস্ত বলে আমি তোমাকে অনেক বিষয়ের দায়িত্ব দেবো। এসো, তোমার মালিকের আনন্দে শরিক হও।’

২২যে দু’হাজার দিনার পেয়েছিলো, সেও এসে বললো, ‘মালিক, আপনি আমাকে দু’হাজার দিনার দিয়েছিলেন; দেখুন, আমি আরো দু’হাজার দিনার লাভ করেছি।’ ২৩তার মালিক তাকে বললো, ‘বেশ করেছো, তুমি উত্তম ও বিশ্বস্ত গোলাম। তুমি অল্প বিষয়ে বিশ্বস্ত বলে আমি তোমাকে অনেক বিষয়ের দায়িত্ব দেবো। এসো, তোমার মালিকের আনন্দে শরিক হও।’

২৪যে এক হাজার দিনার পেয়েছিলো, সেও এসে বললো, ‘মালিক, আমি জানতাম, আপনি ভয়ানক কঠিন লোক। আপনি যেখানে বোনেন না, সেখান থেকেই কাটেন এবং যেখানে বীজ ছড়ান না, সেখান থেকেই কুড়ান। ২৫সুতরাং আমি ভীত ছিলাম। আপনার দিনারগুলো আমি মাটিতে লুকিয়ে রেখেছিলাম। এই দেখুন, আপনার জিনিস আপনারই আছে।’

২৬উত্তরে তার মালিক তাকে বললো, ‘দুষ্ট ও অলস গোলাম! তুমি তো জানতে, যেখানে আমি বুনি না, সেখান থেকেই কাটি আর যেখানে ছড়াই না, সেখান থেকেই কুড়াই। ২৭আমার দিনারগুলো মহাজনদের কাছে গচ্ছিত রাখা তোমার উচিত ছিলো। তাহলে আমি ফিরে এসে লাভসহ আমার মূল দিনারগুলো ফেরত পেতাম।

২৮সুতরাং তোমরা ওর কাছ থেকে দিনারগুলো নিয়ে যার দশ হাজার দিনার আছে, তাকে দাও। ২৯যাদের আছে, তাদের আরো দেয়া হবে, তাতে তাদের অনেক বেশি হবে। কিন্তু যাদের নেই, তাদের যা আছে, তাও তাদের কাছ থেকে কেড়ে নেয়া হবে। ৩০ওই অকেজো গোলামটিকে তোমরা বাইরের অন্ধকারে ফেলে দাও। সেখানে সে কান্নাকাটি করবে ও দাঁতে দাঁত ঘষতে থাকবে।’

৩১ইবনুল-ইনসান যখন ফেরেস্তাদের সাথে করে নিজের মহিমায় আসবেন, তখন তিনি তাঁর মহিমার সিংহাসনে বসবেন। ৩২সেই সময় দুনিয়ার সমস্ত জাতিকে তাঁর সামনে জমায়েত করা হবে। এবং রাখাল যেমন ছাগলের ভেতর থেকে ভেড়া আলাদা করে, তেমনি তিনিও লোকদের একজনকে অন্যজন থেকে আলাদা করবেন। ৩৩তিনি নিজের ডান দিকে ভেড়াদের আর বাম দিকে ছাগলদের রাখবেন।

৩৪অতঃপর বাদশা তাঁর ডান দিকে যারা রয়েছে তাদের বলবেন, ‘তোমরা যারা আমার প্রতিপালকের রহমতপ্রাপ্ত, এসো, দুনিয়া সৃষ্টির শুরু থেকে যে-রাজ্য তোমাদের জন্য প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে তার অধিকারী হও।

৩৫কারণ আমি ক্ষুধার্ত ছিলাম আর তোমরা আমাকে খেতে দিয়েছিলে। আমি পিপাসিত ছিলাম, তোমরা আমাকে পান করিয়েছিলে। আমি বিদেশি হলেও তোমরা আমাকে স্বাগত জানিয়েছিলে। ৩৬যখন আমার জামা-কাপড় ছিলো না, তোমরা আমাকে জামা-কাপড় পরিয়েছিলে। আমি অসুস্থ ছিলাম, তোমরা আমার সেবাযত্ন করেছিলে। আমি জেলখানায় ছিলাম, তোমরা আমাকে দেখতে গিয়েছিলে।’

৩৭যারা দীনদার তারা তখন তাঁকে উত্তরে বলবেন, ‘মালিক, কবে আমরা আপনাকে ক্ষুধার্ত দেখে খাবার দিয়েছিলাম, কিংবা পিপাসিত দেখে পান করিয়েছিলাম?

৩৮কবে আমরা আপনাকে বিদেশি জেনেও স্বাগত জানিয়েছিলাম কিংবা জামা-কাপড় ছিলো না দেখে জামা-কাপড় পরিয়েছিলাম? ৩৯আর কবেই-বা আপনি অসুস্থ কিংবা জেলখানায় আছেন জেনে আমরা আপনাকে দেখতে গিয়েছিলাম?’ ৪০উত্তরে তখন বাদশা তাদের বলবেন, ‘আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, আমার এই তুচ্ছতম ভাইদের মধ্যে একজনের জন্য তোমরা যা-কিছু করেছো তা আমারই জন্য করেছো।’

৪১অতঃপর তিনি তাঁর বাম দিকের লোকদের বলবেন, ‘লা’নতপ্রাপ্ত লোকেরা, আমার কাছ থেকে দূর হয়ে জাহান্নামে যাও- যা ইবলিস ও তার সঙ্গীদের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে! ৪২কারণ আমি ক্ষুধার্ত ছিলাম কিন্তু তোমরা আমাকে খেতে দাওনি। আমি পিপাসিত ছিলাম, তোমরা আমাকে পান করাওনি। ৪৩আমি বিদেশি বলে তোমরা আমাকে স্বাগত জানাওনি। আমার জামা-কাপড় ছিলো না, তোমরা আমাকে জামা-কাপড় পরাওনি। অসুস্থ ও জেলখানায় ছিলাম, তোমরা আমাকে দেখতে যাওনি।’

৪৪তখন উত্তরে তারাও বলবে, ‘মালিক, কখন আমরা আপনাকে ক্ষুধার্ত বা পিপাসিত, বিদেশি বা জামা-কাপড়হীন, অসুস্থ বা জেলবন্দি দেখেও আপনার যত্ন নেইনি?’ ৪৫তখন তিনি তাদের উত্তর দেবেন, ‘আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, এই তুচ্ছতমদের মধ্যে একজনের জন্যও তোমরা যখন তা করোনি, তখন তা আমার জন্যও করোনি।’ ৪৬এবং এই লোকেরা যাবে জাহান্নামে কিন্তু দীনদারেরা হবে জান্নাতবাসী।

রুকু ২৬

১এসব কথা বলা শেষ করে হযরত ইসা আ. তাঁর হাওয়ারিদেরকে বললেন, ২“তোমরা তো জানো, আর দু’দিন পরেই ইদুল-ফেসাখ; এবং ইবনুল-ইনসানকে সলিববিদ্ধ করার জন্য তুলে দেয়া হবে।” ৩অতঃপর প্রধান ইমামেরা ও লোকদের বুজুর্গরা মহাইমাম কাইয়াফার প্রাসাদে একত্রিত হলেন ৪এবং হযরত ইসা আ.কে গোপনে ধরে এনে হত্যার ষড়যন্ত্র করলেন। ৫তবে তারা বললেন, “ইদের সময় নয়, তাতে লোকদের মধ্যে দাঙ্গা বেধে যেতে পারে।”

৬অতঃপর তিনি যখন বেথানিয়ার কুষ্ঠী সিমোনের বাড়িতে ছিলেন, ৭তখন এক মহিলা একটি সাদা পাথরের পাত্রে করে খুব দামি সুগন্ধি তেল নিয়ে তাঁর কাছে এলো এবং তিনি খেতে বসলে সে তা তাঁর মাথায় ঢেলে দিলো। ৮তা দেখে হাওয়ারিরা রেগে গিয়ে বললেন, “এই অপচয় কেনো? ৯এটি তো অনেক দামে বিক্রি করে টাকাগুলো গরিবদের দেয়া যেতো।”

১০কিন্তু হযরত ইসা আ. তা বুঝতে পেরে হাওয়ারিদের বললেন, “এই মহিলাকে তোমরা দুঃখ দিচ্ছো কেনো? ১১সে তো আমার জন্য ভালো কাজই করেছে। গরিবরা তো সব সময় তোমাদের কাছে আছে কিন্তু আমাকে তোমরা সব সময় পাবে না। ১২সে আমার শরীরে এই তেল ঢেলে আমাকে দাফনের জন্য প্রস্তুত করেছে। ১৩আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, সারা দুনিয়ার যেখানেই ইঞ্জিল প্রচার করা হবে, সেখানেই এই মহিলার কথা মনে করিয়ে দেবার জন্য তার এই কাজের কথাও বলা হবে।”

১৪এরপর সেই বারোজনের মধ্যে একজন, যার নাম হযরত ইহুদা ইস্কারিয়োত রা., প্রধান ইমামদের কাছে গেলেন এবং বললেন, ১৫“আমি যদি তাঁকে আপনাদের হাতে তুলে দেই, তাহলে আপনারা আমাকে কী দেবেন?” তারা তাকে তিরিশ টুকরো রুপা দিলেন। ১৬সেই সময় থেকেই তিনি তাঁকে তাদের হাতে তুলে দেবার জন্য সুযোগ খুঁজতে লাগলেন।

১৭ইদুল-মাত্ছের প্রথম দিনে হাওয়ারিরা হযরত ইসা আ.র কাছে এসে জিজ্ঞেস করলেন, “আপনার জন্য আমরা কোথায় ইদুল-ফেসাখের খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন  করবো? আপনার ইচ্ছা কী?” ১৮তিনি বললেন, “শহরের অমুক লোকের কাছে গিয়ে বলো, ‘হুজুর বলছেন, আমার সময় কাছে এসে গেছে; আমি আমার হাওয়ারিদের সাথে তোমার বাড়িতেই ইদুল-ফেসাখ পালন করবো।’” ১৯সুতরাং হাওয়ারিরা হযরত ইসা আ.র নির্দেশ মতো কাজ করলেন এবং ইদুল-ফেসাখের খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন করলেন।

২০তারপর সন্ধ্যায় তিনি সেই বারোজনকে সাথে নিয়ে খেতে বসলেন। ২১খাবার সময় তিনি বললেন, “আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, তোমাদের মধ্যে একজন আমার সাথে বেইমানি করবে।” ২২এতে তারা ভীষণ দুঃখ পেলেন এবং একজনের পর একজন বলতে লাগলেন, “হুজুর, নিশ্চয়ই আমি না?”

২৩তিনি উত্তর দিলেন, “যে আমার সাথে একই বাটিতে হাত ডুবিয়েছে, সে-ই আমাকে তুলে দেবে।

২৪ইবনুল-ইনসানের বিষয়ে যেভাবে লেখা আছে, তিনি সেভাবেই যাচ্ছেন কিন্তু আফসোস সেই লোকের জন্য, যে ইবনুল-ইনসানকে তুলে দেবে! এই লোকের জন্ম না হলেই বরং তার জন্য ভালো হতো।” ২৫যিনি তাঁকে তুলে দিতে যাচ্ছিলেন, সেই ইহুদা বললেন, “হুজুর, নিশ্চয়ই আমি না?” তিনি জবাব দিলেন, “একথা তুমি বললে।”

২৬খাওয়া-দাওয়া চলছে, এমন সময় হযরত ইসা আ. রুটি নিয়ে শুকরিয়া জানালেন এবং তা ভেঙে হাওয়ারিদের হাতে দিয়ে বললেন, “নাও, খাও, এ আমার শরীর।” ২৭তারপর তিনি গ্লাস নিয়ে শুকরিয়া জানালেন এবং তাদের হাতে দিয়ে বললেন, ২৮“তোমরা সবাই এটা থেকে পান করো, কারণ এ আমার রক্ত, চুক্তির রক্ত, যা অনেকের গুনাহ মাফের জন্য দেয়া হচ্ছে।

২৯আমি তোমাদের বলছি, আমার প্রতিপালকের রাজ্যে তোমাদের সাথে নতুনভাবে আঙুররস পান করার আগে আর কখনোই আমি তা পান করবো না।” ৩০অতঃপর তারা একটি হামদ গেয়ে জৈতুন পাহাড়ে গেলেন।

৩১তখন হযরত ইসা আ. তাদের বললেন, “আজ রাতে আমার কারণে তোমরা প্রত্যেকে পালাবে। কারণ লেখা আছে, ‘আমি রাখালকে আঘাত করবো এবং পালের ভেড়াগুলো ছড়িয়ে পড়বে।’ ৩২কিন্তু আমাকে মৃত থেকে জীবিত করার পর আমি তোমাদের আগেই গালিলে যাবো।” ৩৩পিতর তাঁকে বললেন, “আপনার কারণে সবাই পালিয়ে গেলেও আমি কখনো আপনাকে ছেড়ে যাবো না।” ৩৪হযরত ইসা আ. তাকে বললেন, “আমি তোমাকে সত্যিই বলছি, আজ রাতেই মোরগ ডাকার আগে তুমি আমাকে তিনবার অস্বীকার করবে।” ৩৫হযরত পিতর রা. তাঁকে বললেন, “যদি আমাকে আপনার সাথে মরতেও হয়, তবুও আমি আপনাকে অস্বীকার করবো না!” এবং হাওয়ারিরা সবাই একই কথা বললেন।

৩৬অতঃপর হযরত ইসা আ. তাদের সাথে গেতসিমানি নামে একটি জায়গায় এলেন। তিনি তাঁর হাওয়ারিদের বললেন, “আমি যতোক্ষণ ওখানে গিয়ে মোনাজাত করি, ততোক্ষণ তোমরা এখানে বসে থাকো।”

৩৭তিনি পিতর ও জাবিদির দুই ছেলেকে নিজের সাথে নিলেন এবং মনে গভীর দুঃখ ও অশান্তি বোধ করতে লাগলেন। ৩৮তখন তিনি তাদের বললেন, “দুঃখে যেনো আমার প্রাণ বেরিয়ে যাচ্ছে। তোমরা বরং এখানে অপেক্ষা করো এবং আমার সাথে জেগে থাকো।”

৩৯অতঃপর তিনি কিছুটা দূরে গিয়ে মাটিতে সেজদায় পড়ে মোনাজাত করলেন, “হে আমার প্রতিপালক, যদি সম্ভব হয়, এই গ্লাস আমার কাছ থেকে দূরে সরে যাক। তবু আমার ইচ্ছামতো না হোক কিন্তু তোমার ইচ্ছামতোই হোক।”

৪০তারপর তিনি হাওয়ারিদের কাছে ফিরে এসে দেখলেন তারা ঘুমাচ্ছেন। তিনি পিতরকে বললেন, “পিতর, তোমরা আমার সাথে এক ঘন্টাও কি জেগে থাকতে পারলে না! ৪১জেগে থাকো ও মোনাজাত করো, যেনো পরীক্ষায় না পড়ো। রুহে ইচ্ছা আছে বটে কিন্তু দেহ দুর্বল।”

৪২আবার তিনি ফিরে গিয়ে দ্বিতীয়বার মোনাজাত করে বললেন, “হে আমার প্রতিপালক, আমি পান না করলে যদি এটার সরে যাওয়া সম্ভব না হয়, তাহলে তোমার ইচ্ছাই পূর্ণ হোক।”

৪৩আবার তিনি ফিরে এসে দেখলেন তারা ঘুমাচ্ছেন; কারণ তাদের চোখ ভারি হয়ে এসেছিলো। ৪৪সুতরাং তিনি আবার তাদের ছেড়ে চলে গেলেন এবং তৃতীয়বার সেই একই কথা বলে মোনাজাত করলেন।

৪৫অতঃপর তিনি হাওয়ারিদের কাছে এলেন এবং তাদের বললেন, “এখনো তোমরা ঘুমাচ্ছো আর বিশ্রাম করছো? দেখো, সময় এসে গেছে। ইবনুল-ইনসানকে গুনাহগারদের হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে। ৪৬ওঠো, চলো, আমরা যাই। ওই দেখো, যে আমাকে ধরিয়ে দেবে সে এসে পড়েছে।” ৪৭তখনো তিনি কথা বলছেন, এমন সময় ইহুদা, সেই বারোজনের একজন, সেখানে এলেন। প্রধান ইমামদের ও বুজুর্গদের পাঠানো প্রচুর লোক তরবারি ও লাঠিসহ তার সাথে ছিলো। ৪৮যিনি তাঁকে ধরিয়ে দিয়েছিলেন, তিনি ওই লোকদের সাথে একটি চিহ্ন ঠিক করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “যাঁকে আমি চুমু দেবো, তিনিই সেই লোক; তোমরা তাঁকে গ্রেফতার কোরো।”

৪৯তখনই তিনি হযরত ইসা আ.র কাছে এসে বললেন, “হুজুর, আসসালামু আলাইকুম!”

এবং তাঁকে চুমু দিলেন। ৫০হযরত ইসা আ. তাকে বললেন, “বন্ধু, তুমি যা করতে এসেছো তা-ই করো।” ৫১অতঃপর তারা এগিয়ে এসে হযরত ইসা আ.কে গ্রেফতার করলো। হঠাৎ হযরত ইসা আ.র সঙ্গীদের মধ্যে একজন হাত বাড়িয়ে তার তরবারি বের করলেন এবং মহাইমামের গোলামকে আঘাত করে তার একটি কান কেটে ফেললেন। ৫২তখন হযরত ইসা আ. তাকে বললেন, “তোমার তরবারি খাপে রেখে দাও; কারণ তরবারি যারা ধরে, তারা তরবারির আঘাতেই মরে। ৫৩তুমি কি মনে করো যে, আমি আমার প্রতিপালকের কাছে চাইলে তিনি এখনই আমার জন্য বারো বাহিনীরও বেশি ফেরেস্তা পাঠিয়ে দেবেন না? ৫৪কিন্তু তাহলে পাককিতাবের কথা কীভাবে পূর্ণ হবে, যাতে বলা হয়েছে যে, এসব অবশ্যই এভাবে ঘটবে?”

৫৫সেই সময় হযরত ইসা আ. জনতার উদ্দেশে বললেন, “ডাকাত ধরার জন্য মানুষ যেভাবে যায়, সেভাবে তোমরা কি তরবারি ও লাঠি নিয়ে আমাকে গ্রেফতার করতে এসেছো? আমি দিনের পর দিন বায়তুল-মোকাদ্দসে বসে শিক্ষা দিয়েছি কিন্তু তখন তো তোমরা আমাকে ধরোনি! ৫৬কিন্তু এসব ঘটলো যেনো নবিদের কথা পূর্ণ হতে পারে।” তখন হাওয়ারিরা সকলেই তাঁকে ছেড়ে পালিয়ে গেলেন। ৫৭যারা হযরত ইসা আ.কে গ্রেফতার করেছিলো, তারা তাঁকে মহাইমাম কাইয়াফার কাছে নিয়ে গেলো। তার বাড়িতে আলিমরা ও বুজুর্গরা একত্রিত হয়েছিলেন। ৫৮হযরত পিতর রা. দূরে থেকে তাঁর পেছনে পেছনে মহাইমামের উঠোনে গিয়ে ঢুকলেন এবং শেষ পর্যন্ত কী হয় তা দেখার জন্য ভেতরে গিয়ে পাহারাদারদের সাথে বসলেন।

৫৯প্রধান ইমামেরা এবং মহাসভার সবাই হযরত ইসা আ.কে মেরে ফেলার জন্য তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যাসাক্ষ্য খুঁজছিলেন। ৬০যদিও অনেকেই মিথ্যাসাক্ষ্য দেবার জন্য এগিয়ে এসেছিলো কিন্তু তেমন কোনো সাক্ষ্যই তারা পেলেন না। অবশেষে দু’ব্যক্তি এগিয়ে এসে ৬১বললো, “এই লোকটি বলেছে, ‘আমি আল্লাহর ঘর ভেঙে ফেলে তিন দিনের মধ্যে আবার তা গড়তে পারি’।”

৬২তখন মহাইমাম উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, “তোমার কি কিছুই বলার নেই? এসব লোক তোমার বিরুদ্ধে কী সাক্ষ্য দিচ্ছে?” ৬৩কিন্তু হযরত ইসা আ. চুপ করেই রইলেন।

তখন মহাইমাম তাঁকে বললেন, “আমি তোমাকে আল্লাহ রাব্বুল আ’লামিনের কসম দিয়ে বলছি, তুমিই যদি মসিহ, আল্লাহর একান্ত প্রিয় মনোনীতজন, হয়ে থাকো, তাহলে আমাদের বলো?”

৬৪হযরত ইসা আ. তাকে বললেন, “আপনি নিজেই তা বললেন। কিন্তু আমি আপনাকে বলছি, এখন থেকে আপনারা ইবনুল-ইনসানকে সর্বশক্তিমানের ডান দিকে বসে থাকতে এবং আসমানের মেঘে চড়ে আসতে দেখবেন।”

৬৫তখন মহাইমাম তার জামা-কাপড় ছিঁড়ে বললেন, “ও তো কুফরি করলো! আমাদের আর সাক্ষীর কী দরকার? ৬৬আপনারা তো এইমাত্র ওর কুফরি শুনতে পেলেন। আপনাদের সিদ্ধান্ত কী?” তারা জবাব দিলেন, “ও মৃত্যুর উপযুক্ত।” ৬৭তখন লোকেরা তাঁর মুখে থুথু দিলো এবং তাঁকে ঘুষি মারলো। ৬৮কেউ কেউ আবার তাঁকে চড়-থাপ্পড় মেরে বললো, “এই মসিহ, তুই নাকি নবি! বল দেখি কে তোকে মারলো?”

৬৯এদিকে পিতর বাইরের উঠোনেই বসে ছিলেন। একজন চাকরানী তার কাছে এসে বললো, “তুমিও তো গালিলের ওই হযরত ইসা আ.র সাথে ছিলে।” ৭০কিন্তু পিতর সকলের সামনে একথা অস্বীকার করে বললেন, “তুমি যে কী বলছো, আমি তা বুঝতেই পারছি না!”

৭১এরপর হযরত পিতর রা. সদর দরজার কাছে গেলেন। তাকে দেখে অন্য এক চাকরানী সেখানকার লোকদের বললো, “এই লোকটি নাসরতের হযরত ইসা আ.র সাথে ছিলো।” ৭২আবারো তিনি কসম খেয়ে অস্বীকার করে বললেন, “ওই লোকটিকে আমি চিনি না।”

৭৩কিছুক্ষণ পরেই, যারা সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলো তারা এগিয়ে এসে পিতরকে বললো, “নিশ্চয়ই তুমি ওদেরই একজন। তোমার কথা বলার ধরণ তোমাকে ধরিয়ে দিচ্ছে।” ৭৪তখন তিনি নিজেকে অভিশাপ দিয়ে কসম খেয়ে বলতে লাগলেন, “ওই লোকটিকে আমি চিনিই না।” আর তখনই একটি মোরগ ডেকে উঠলো। ৭৫তখন হযরত পিতর রা.র মনে পড়লো যে, হযরত ইসা আ. বলেছিলেন, “মোরগ ডাকার আগেই তুমি আমাকে তিনবার অস্বীকার করবে।” এবং তিনি বাইরে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লেন।

Facebook
WhatsApp
Telegram
Email
মামলুকাতুল্লাহ: রুকু ১ ও ২
রুকু ১ ১হযরত ইসা মসিহের বংশতালিকা- হযরত ইসা মসিহ হযরত দাউদ আ.র বংশধর এবং হযরত দাউদ আ. হযরত ইব্রাহিম আ.র ...

মামলুকাতুল্লাহ: রুকু ১ ও ২

/
মামলুকাতুল্লাহ: রুকু - ৩ ও ৪
রুকু - ৩ ১ওই সময়ে হযরত ইয়াহিয়া আ. ইহুদিয়ার মরুপ্রান্তরে এসে একথা প্রচার করতে লাগলেন- ২“তওবা করো, কারণ বেহেস্তি রাজ্য ...

মামলুকাতুল্লাহ: রুকু – ৩ ও ৪

/
মামলুকাতুল্লাহ: রুকু - ৫ ও ৬
রুকু ৫ ১জনতার ঢল দেখে হযরত ইসা আ. পাহাড়ের ওপর উঠলেন। তিনি বসার পর তাঁর হাওয়ারিরা তাঁর কাছে এলেন। ২অতঃপর ...

মামলুকাতুল্লাহ: রুকু – ৫ ও ৬

/
মামলুকাতুল্লাহ: রুকু – ৭ ও ৮
রুকু ৭ ১বিচার করো না, তাহলে তোমরাও বিচারের মুখোমুখি হবে না। কারণ যেভাবে তোমরা বিচার করো, সেভাবেই তোমাদের বিচার করা ...

মামলুকাতুল্লাহ: রুকু – ৭ ও ৮

/
মামলুকাতুল্লাহ: রুকু – ৯ ও ১০
রুকু ৯ ১অতঃপর তিনি নৌকায় উঠে লেক পাড়ি দিয়ে তাঁর নিজের শহরে এলেন। ২তখনই কিছু লোক বিছানায় শোয়ানো এক অবশরোগীকে ...

মামলুকাতুল্লাহ: রুকু – ৯ ও ১০

/
মামলুকাতুল্লাহ: রুকু - ১১ ও ১২
রুকু ১১ ১অতঃপর হযরত ইসা আ. তাঁর বারোজন হাওয়ারিকে হুকুম দেয়া শেষ করে নিজে গ্রামে গ্রামে শিক্ষা দিতে ও প্রচার ...

মামলুকাতুল্লাহ: রুকু – ১১ ও ১২

/
মামলুকাতুল্লাহ: রুকু ১৩ ও ১৪
রুকু ১৩ ১ওই দিন হযরত ইসা আ. ঘর থেকে বেরিয়ে লেকের পাড়ে গিয়ে বসলেন। ২তাঁর কাছে এতো লোক এসে জড়ো ...

মামলুকাতুল্লাহ: রুকু ১৩ ও ১৪

/
মামলুকাতুল্লাহ: রুকু ১৫ ও ১৬
রুকু ১৫ ১অতঃপর জেরুসালেম থেকে কয়েকজন ফরিসি ও আলিম হযরত ইসা আ.র কাছে এসে বললেন, ২“বুজুর্গদের দেয়া যে-নিয়ম চলে আসছে, ...

মামলুকাতুল্লাহ: রুকু ১৫ ও ১৬

/
মামলুকাতুল্লাহ: রুকু ১৭ ও ১৮
রুকু ১৭ ১ছ’দিন পর হযরত ইসা আ. হযরত পিতর রা., হযরত ইয়াকুব রা. ও তার ভাই হযরত ইউহোন্না রা.কে সাথে ...

মামলুকাতুল্লাহ: রুকু ১৭ ও ১৮

/
মামলুকাতুল্লাহ: রুকু ১৯ ও ২০
রুকু ১৯ ১এসব কথা বলা শেষ করে হযরত ইসা আ. গালিল ছেড়ে জর্দান নদীর ওপারে ইহুদিয়ায় গেলেন। ২হাজার হাজার মানুষ ...

মামলুকাতুল্লাহ: রুকু ১৯ ও ২০

/
মামলুকাতুল্লাহ: রুকু ২১ ও ২২
রুকু ২১ ১তারা জেরুসালেমের কাছে জৈতুন পাহাড়ের বৈতফগি গ্রামে এলে হযরত ইসা আ. তাঁর দু’জন হাওয়ারিকে এই বলে পাঠিয়ে দিলেন, ...

মামলুকাতুল্লাহ: রুকু ২১ ও ২২

/
মামলুকাতুল্লাহ: রুকু ২৩ ও ২৪
রুকু ২৩ ১অতঃপর হযরত ইসা আ. জনতা ও তাঁর সাহাবিদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ২“আলিম ও ফরিসিরা নিজেরাই হযরত মুসা আ.র ...

মামলুকাতুল্লাহ: রুকু ২৩ ও ২৪

/
মামলুকাতুল্লাহ: রুকু ২৫ ও ২৬
রুকু ২৫ ১তখন বেহেস্তি রাজ্য হবে এমন দশ কুমারীর মতো, যারা বরকে বরণ করার জন্য তাদের বাতি নিয়ে বাইরে গেলো। ...

মামলুকাতুল্লাহ: রুকু ২৫ ও ২৬

/
মামলুকাতুল্লাহ: রুকু ২৭ ও ২৮
রুকু ২৭ ১ফজরের পরেই প্রধান ইমামেরা ও বুজুর্গরা একত্রে বসে হযরত ইসা আ.কে মেরে ফেলার বিষয়ে আলোচনা করলেন। ২তারা হযরত ...

মামলুকাতুল্লাহ: রুকু ২৭ ও ২৮

/